দুটি নতুন শিক্ষণীয় গল্প নিয়ে আজকের এই লেখাটি। এই নীতি শিক্ষামূলক গল্প গুলির শেষে কাহিনী থেকে শিক্ষা নামে একটি নতুন বিভাগ রয়েছে। যেখানে, কাহিনিটি থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম, তা সংক্ষেপে দেওয়া রয়েছে।

শিক্ষণীয় গল্প। নীতি শিক্ষামূলক গল্পঃ-

বিদেশী শিক্ষামূলক গল্পঃ-

ইউরোপে কিছুকাল আগে ক্রেটাস নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। কিন্তু সেই রাজা খুবই লোভী ছিলেন। তার কাছে নিজের মেয়ের পড়েই, সোনা-হীরের স্থান। সে সোনা-হীরের প্রতি এতটাই মোহযুক্ত ছিল যে, সে রাতে ঘুমানোর সময়ও স্বপ্নে শুধুই সোনা দেখত।

একদিন রাজা ক্রেটাস তার কোষাগারে বসে স্বর্ণ মুদ্রা গণনা করছিলেন। এদিকে রাজদরবারে, একজন সন্ন্যাসী এসে বললেন তিনি রাজার সাথে দেখা করতে চান। বারংবার তাকে রাজামশাই দেখা করতে পাড়বেন না, বলা সত্যেও সে নাছোড়বান্দা, রাজার সাথে দেখা না করে সে যাবে না। রাজা মশাই তাকে কোষাগারেই আসতে বললেন। রাজা সবসময় চাইত, মানুষজন যেন তার স্বর্ণের ভাণ্ডার দেখে।

সন্ন্যাসী এসে রাজাকে বললেন- “মহারাজ আপনি কত্ত ধনী, রাশি রাশি সোনা, হীরে তাকে তাকে সাজানো আপনার কোষাগারে।“ এটি শুনে ক্রেটাস বললেন- “আমি কোথায় ধনী? আমি তো শুধু নাম মাত্র ধনী, আমি চাই আরও সোনা আরও সোনা, হীরে মতি। আমার তো কখনো কখনো মনে হয়, আমি যেন যেই বস্তুকে হাত দিয়ে স্পর্শ করব, সেটিই যদি সোনাতে পরিণত হত, কত্ত ভালো হত!” এটি শুনে সেই সন্ন্যাসী হেঁসে বললেন- “আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার মনস্কামনাই পূর্ণ হোক। আমার কমণ্ডলু থেকে তোমাকে একফোঁটা জল দিলাম, এটি খেয়ে নাও। কাল সকাল থেকে তুমি যেই বস্তুকে স্পর্শ করবে, সেটিই সোনাতে পরিণত হয়ে যাবে।“

বিদেশী শিক্ষণীয় গল্প শিক্ষণীয় গল্প
বিদেশী শিক্ষণীয় গল্প শিক্ষণীয় গল্প

জলটি খেয়ে রাজা হেঁসে বললেন- “তা কি কখনো হয় নাকি!” সন্ন্যাসী- “আর যদি হয়, তাহলে?” রাজা- “তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আমি আপনাকে ১০০০ পণ মোহর দিব।“ সন্ন্যাসী- “আমার মোহরের প্রয়োজন নেই বৎস। আমি এমনিতেই ভালো আছি।“ রাজা- “আচ্ছা ঠিক আছে, অপেক্ষা শুধু আজকের রাতের।“

এরপর সন্ন্যাসী সেখান থেকে চলে গেলেন। সেই রাতে ক্রেটাস ঠিক মত ঘুমাতে পাড়লেন না, শুধু এটা ভেবে যে যদি সন্ন্যাসীর কথা সত্যি হয়, তাহলে কেমন হবে! উফফ কি মজাই না হবে, শুধুই সোনা আর সোনা।

পরেরদিন সকাল হতেই তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে চেয়ারে বসার জন্য হাত বাড়ালেন, তিনি দেখলেন চেয়ারটি সঙ্গে সঙ্গে সোনায় পরিণত হয়ে গেল। “সত্যি তো সন্ন্যাসীর কথাই ঠিক হল।“ এটি দেখে সে পরম আনন্দে নাচতে লাগল। নাচতে নাচতে নিজের বাগানে চলে এলেন, হাত দিয়ে যেই ফুলের গাছটিকেই স্পর্শ করেন সেটিই সোনার হয়ে যায়। সূর্যের আলোয় সবকিছুই চকচক করতে লাগল।

এদিকে সবকিছুকে স্পর্শ করতে করতে সে ক্লান্ত, ইতিমধ্যে সে খেয়াল করল সে যে পোশাক গুলি পরিধান করে রয়েছে, সেগুলিও সোনায় পরিণত হয়েছে। হুম এর জন্যই তার শরীর ভাঁড়ি ভাঁড়ি মনে হচ্ছে আর সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ক্লান্ত হয়ে সে একজন দাসীকে জল আনতে বলল। ক্রেটাস হাত দিয়ে যেই না, জলের গ্লাস স্পর্শ করেছে, তেমনি জলটিও জমে গিয়ে সোনায় পরিণত হয়ে গেল। সে প্লেটে পড়ে থাকা রুটিগুলি খাওয়ার জন্য হাঁতে নিলে সেগুলিও সোনায় পরিণত হয়ে গেল। এদিকে পিপাসা আর খিদের জ্বালায় সে নাজেহাল হয়ে পড়েছে।

এরপর ক্রেটাস ক্লান্তি ভঁরা শরীর নিয়ে সেই চেয়ারেই শুয়ে পড়ল। এটি দেখে তার একমাত্র আদরের মেয়ে এসে তার বুকে মাথা রেখে জিজ্ঞাসা করল- “তোমার কি হয়েছে বাবা?” ক্রেটাস আদর করার জন্য তার মেয়ের মাথায় হাত রাখতেই, তার মেয়েও সোনার মূর্তিতে পরিণত হয়ে গেল। এটা দেখে ক্রেটাস কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। চারিদিকে এত সোনা কিন্তু সে হারিয়েছে তার অন্তরের সোনার টুকরোকে। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে তার সেই সন্ন্যাসীর কথা মনে পড়ে গেল, তাকে নিয়ে আসলে কিছু একটা ব্যবস্থা সে অবশ্যই করবে।

ক্রেটাষ তার কর্মচারীদের পাঠালেন সেই সন্ন্যাসীর খোঁজে। অনেক খোঁজাখুঁজির পড় অবশেষে তারা সেই সন্ন্যাসীকে খুঁজে পেল। ক্রেটাস, সেই সন্ন্যাসীর কাছে হাঁটু গেড়ে হাত জোর করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন- “আমি সোনা চাই না, আমি আমার মেয়েকে ফিরত চাই, সেই আমার কাছে সোনার চেয়েও অনেক বেশি মুল্যের। চারিদিকে এত সোনা, যেগুলিকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতাম, সবই এখন আমার আছে, কিন্তু নেই সামান্য রুটি জল গ্রহণ করার সামর্থ্য টুকু। ধনী হয়েও আজ আমি ক্ষুধার্ত। আমি সোনা চাই না, আমি আবার আগের মত হতে চাই। আজ থেকে আমি সোনা-হীরের লোভ ত্যাগ করলাম।“

এটি শুনে সন্ন্যাসী হেঁসে বললেন- “ সোনা হীরে সবই বিলাসিতা মাত্র, সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করো বৎস। এতে তুমি অনেক সুখী হবে।“ এরপর তিনি তার কমণ্ডলু থেকে কিছুটা জল দিয়ে বললেন- “এই জলটিকে সর্বত্র ছিটিয়ে দাও, সবকিছু আগের মত হয়ে যাবে।“ সন্ন্যাসীর কথা মত, জলটি সর্বত্র ছিটিয়ে দিতেই, সবকিছু আগের মত হয়ে গেল। এরপর রাজা আর কোনো দিনও সোনা-হীরের প্রতি লোভ করেননি। রাজকোষে যা সোনা- হীরে মোহর ছিল, নিজের চলার মত রেখে দিয়ে বাকিটা বিলিয়ে দিয়েছেন, জনসাধারণের কাজে।

কাহিনী থেকে শিক্ষাঃ-

আমরা যে যা, অবস্থায় আছি তাইই ভালো আছি। অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমাদের পতনের কারণ। অতিরিক্ত লোভে মানুষের বুদ্ধিভ্রম হয়। তাই অতিরিক্ত লোভ ভালো নয়।   

পড়ুনঃ- সফলতার ছোট গল্প। সফল ব্যক্তিদের জীবনী

শিক্ষণীয় গল্পঃ-

আজ থেকে অনেক কাল আগের কথা। এক গুরুর একজন অত্যন্ত স্নেহ ভাজন শিষ্য ছিল। অন্যদিকে সেই শিষ্যও তার গুরুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। কিন্তু সেই শিষ্যটি অধ্যয়নের প্রতি বিমুখ ছিল। সে সবসময় নিয়মিত অভ্যাস করা থেকে বিরত থাকতেই ভালবাসত। সে সর্বদা আজকের কাজ কাল, কালকের কাজ পরশু, এভাবেই কাটিয়ে দিত। শিষ্যের এরকম স্বভাব গুরুকে ব্যাথিত করে। এরকম করে চললে শিষ্য যে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে পাড়বে না। অন্যান্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে!

সেই শিষ্যটি কোনো কাজ দেখলেই, তা থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকত। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সর্বদা পিছিয়ে থাকত, অথবা সিদ্ধান্ত যদি নিয়েও নিত, তা ভুল সিদ্ধান্ত নিত। সে সর্বদা নিজের ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসী। তার মতে, ভাগ্যে যা আছে তাইই হবে। এদিকে গুরু ঠিক করলেন, এভাবে চললে শিষ্য সমাজে কোনো অবস্থান পাবে না। তাই শিষ্যকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। 

bangla motivational story শিক্ষণীয় গল্প
bangla motivational story শিক্ষণীয় গল্প

একদিন একটি সুন্দর কষ্টি পাথরের টুকরো হাঁতে নিয়ে গুরুদেব সেই শিষ্যটিকে ডাকলেন। তাকে বললেন- “আমি তোমাকে এই জাদুর পাথরটি দিচ্ছি, দুই দিনের জন্য তোমার কাছে এই পাথরটি থাকবে। কারণ আমি অন্য গ্রামে যাব। এটি তোমাকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলাম। মনে রাখবে এটি কোনো সাধারণ পাথর নয়, এই পাথর দিয়ে যদি কোনো লৌহ বস্তুর সংস্পর্শে নিয়ে আসা যায়, তাহলে সেই লৌহ বস্তুটি স্বর্ণতে পরিণত হয়ে যাবে। মনে রাখবে দুই দিন পড় সকালেই আমি তোমার কাছে থেকে এই পাথরটিকে নিয়ে নিব।“

পাঁথরটির দিব্য শক্তির কথা শুনে শিষ্যটি অত্যন্ত আনন্দ হল। এরপর সে একদিন শুধু এটা ভেবেই কাটিয়ে দিল যে, সে যদি এই পাঁথরটিকে অনেক অনেক লৌহ বস্তুর সংস্পর্শে নিয়ে আসে, তাহলে সেগুলি স্বর্ণে পরিণত হয়ে যাবে, এবং সে রাতারাতি অনেক ধনী হয়ে যাবে। যখন তার কাছে অনেক স্বর্ণ থাকবে, তখন সে অনেক সুখী, ধনবান হয়ে যাবে, সে বিশাল বড় প্রাসাদ বানাবে, তাতে অনেক চাকরবাকর থাকবে, সে শুধুই আরাম করবে আর জলের গ্লাসটা পর্যন্ত সে নিজে তুলে খাবে না, সবই চাকর দের দিয়ে করাবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

পড়ের দিন সকালে সে ভাবল, আজই ধনী হওয়ার শেষ দিন, কারণ গুরুদেব কালই তার কাছ থেকে এই অমূল্য পাঁথরটা  নিয়ে নিবেন। তাই যা করার আজকেই করতে হবে, এই পাঁথরটির দৈব শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সে ঠিক করল, সে বাজারে গিয়ে অনেক অনেক লৌহ বস্তু কিনে নিয়ে আসবে, আর সেগুলিকে স্বর্ণতে পরিণত করবে। কিন্তু পরক্ষনেই সে আবার ভাবল, সারাটা দিন পড়ে আছে, এত তারা কিসের? তার চেয়ে বরং একটু ঘুমিয়ে নিই। তার যখন ঘুম ভাঙল তখন দুপুর হতে চলেছে। সে স্নান করে, দুপুরের খাবার খেয়ে লৌহ জিনিস আনতে যাওয়ার কথা ভাবল। কিন্তু তার আবার দুপুরের খাবার খাওয়ার পড় একটু বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যেস রয়েছে।

এদিকে দুপুরের খাবার খাওয়ার পড়, কখন যে বিশ্রাম নিতে নিতে তার চোখ বুজে এসেছে, তা সে নিজেও জানে না। যখন তার ঘুম ভাঙল, তখন সূর্য দিগন্তে পৌঁছেছে। সে তড়িঘড়ি বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিন্তু যেতে যেতে রাস্তার মাঝেই সে তার গুরুদেবকে দেখল। সে গুরুদেবের চরণে প্রণাম জানিয়ে, আরেকদিন বেশি সেই পাঁথরটি তার কাছে রাখার আকুতি মিনতি করতে লাগল। কিন্তু গুরুদেব বললেন- “আমি কাল সকালেই এই পাঁথরটা নিয়ে নিব।“

এরপর গুরুদেবের সাথে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। গুরুদেব বিদায় নেওয়ার পড় সে লোহার দোকানে গিয়ে দেখে, দোকানী দোকানে তালা ঝোলাচ্ছে। অনেক মিনতি করেও দোকানী দোকান খুলল না।

মুহূর্তের মধ্যেই সেই শিষ্যটির ধনী হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সে বৃথা সময় ব্যয় করার জন্য নিজেই নিজে উপর দোষারোপ করতে লাগল। কিন্তু তখন আর নিজের উপর দোষারোপ করে কোনো লাভ ছিল কি?

নীতি শিক্ষামূলক গল্প নীতি মূলক গল্প
নীতি শিক্ষামূলক গল্প নীতি মূলক গল্প image
<

কাহিনী থেকে শিক্ষাঃ-

জীবনে চলার পথে কোনো না কোনো সময় কোনো সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েই যায়। কিন্তু আমরা নিজেদের আলস্যতার কারণে অনেক সময় সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলি। এরপর যখন কিছুই করার থাকে না, তখন নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকি, ভাবি- আমাদের ভাগ্যে ছিল না, তাই হয়নি বা পাইনি। কিন্তু আমরা নিজেদের ভাগ্য যে নিজেরাই লিখছি সেটার দিকে আমরা ভ্রুক্ষেপও করি না। জীবনে বড় বা ধনী বা মহান হতে গেলে বসে বসে চিন্তা করে হওয়া যায় না, হওয়া যায় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।

পড়ুনঃ- মায়ের ভালোবাসা। মোটিভেশনাল ছোট গল্প

জীবনে যে সমস্ত ব্যক্তিগণ কিছু করে দেখিয়েছেন, খোঁজ নিয়ে দেখবেন, তাদের ইতিহাস কত কঠিন, তাদের ভাঙ্গা-গড়ার লড়াইটা কত কঠিন। তবে শুধু পরিশ্রমই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি নয়, পরিশ্রম তো অনেকেই করে, কিন্তু সফলতা পায় মাত্র হাঁতে গোণা কয়েকজন। কারণ, সবাই চেনা রাস্তায় হাঁটতে পছন্দ করে, কিন্তু অন্যদিক দিয়েও যে সফলতার সিঁড়িতে উঠা যায়, সেটা বেশীরভাগ জনই লক্ষ্য করে না। আর আপনাকে সেই রাস্তাটাই খুঁজে নিতে হবে। তাই অলসতা নয়, সঠিক পরিশ্রম করুন। কোনো কাজ “কাল করব” ভাবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন- “কাজটা আজকেই করলে ক্ষতি কি?” 

“শিক্ষণীয় গল্প। নীতি মূলক গল্প। নীতি শিক্ষামূলক গল্প। বিদেশী শিক্ষণীয় গল্প। bengali motivational story”

নিয়মিত আপডেটের জন্য আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন-  CharpatraOFFICIAL 
ফেসবুক পেজ লিংকঃ- গল্প আর গল্প
Spread the love

Leave a Reply