আজ আবারও আমরা হাজির কিছু শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প নিয়ে। আজ আমরা দুটি শিক্ষামূলক গল্প পড়ব। এই গল্প গুলি থেকে আশা করছি অনেক কিছুই শিখতে পাড়বেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে পৌঁছে দিতে ভুলবেন না যেন!

শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প

আত্মবিশ্বাসঃ-

গঙ্গা নদীর পাশে সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি গ্রাম, গ্রামের মানুষ সর্বদাই আনন্দিত। এককথায় সুখের কোনো কমতি নেই সেখানকার মানুষদের। তবে সব মানুষ হল সাধারণ খেঁটে খাওয়া মানুষ, সারাদিন কাজের পড় যেদিন ছুটি মেলে সবাই মিলে খুব আনন্দ করে।

এরকমই একটি গ্রামের পাশে একটি কুয়ো ছিল। স্থানীয়দের মধ্যে প্রবাদ প্রচলিত ছিল যে, সেই কুয়োতে নাকি রাত্রিবেলা ভূতের দল আসে, সেখানে নেমে জল খায়। যার কারণে রাত্রি বেলা কেউই সেই কুয়োর পাস দিয়ে যেত না। এই কুয়ো সম্পর্কিত নানান কাহিনী প্রচলিত হয়ে পড়ে।

কেউ ভূতের জল খাওয়ার কথা বলেন আবার কেউ বলেন স্থানীয় এক মানুষ সেই কুয়োতে পড়ে মারা যান, তার আত্মা সেখানে বাস করে। আর কেউ যদি সেখানে যায় তাহলে তাকে মেরে ফেলে। ইত্যাদি নানান গল্প প্রচলিত ছিল গ্রামবাসীদের মধ্যে।

শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প ভূতের কূয়ো
শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প ভূতের কূয়ো (bengali motivational story)

সবাই একদিন কাজের ফাঁকে বড় একটি গাছের ছায়ায় বসে সেই কুয়োটির ব্যাপারে কথা বলছে। এমন সময় স্থানীয় এক কামার সেখানে এলেন, সবার কথা উপেক্ষা করে তিনি জোড়ে বললেন- “আমি ভূত-ফুত বিশ্বাস করি না।“ এই কথাটি শোনার পড় স্থানীয়রা তার উপড়ে চটে যায় এবং নানান আজব-গজব গল্প তাকে শোনাতে থাকেন। কিন্তু কামার তবুও বলেই যাচ্ছেন-“আমি ভূত বিশ্বাস করি না, ভূত বলে কিছু হয়না, সবই আসলে মনের ভুল।“

এবার গ্রামের মানুষেরা বললেন- “তাহলে তুমি কি সেই কুয়োটির পাশে যেতে পাড়বে” এই কথা শুনে কামার বলল-“অবশ্যই পাড়ব, আমি সেই কুয়োর সামনে গিয়ে প্রমান করে দিতে পাড়ি যে ভূত বলে কিছু হয় না।

সেদিন রাতেই কামার কুয়োটির কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় এবং হাঁতে একটি কুড়ল নিয়ে কুয়োটির কাছে চলে যায়। পুরো রাত কেটে যায়, কিন্তু কামার আর বাড়ি ফিরে নি। পরের দিন সকালে কামারের মৃত দেহ কুয়োর জলে ভাসতে দেখে গ্রামের মানুষ। এই ঘটনাটির পড় থেকেই পুরো গ্রামে ভূতের ভয় জাঁকিয়ে বসে।

কেউই আর রাতের বেলা বাড়ির বাইরে বেড় হত না। কিছুদিন পরের ঘটনা। একজন ব্যক্তি তার কর্মস্থল থেকে অনেক দিন পড় বাড়ি ফিরেছে। সে তার ছেলেকে ডেকে বলে পাশের গ্রামে তার বন্ধুর বাড়ি থেকে সর্ষের বীজ নিয়ে আসার জন্য। কালই সে মাঠে সর্ষের চারা রোপণ করবে। সে আজই শহর থেকে ফিরেছে সে অনেক ক্লান্ত, তাই সে তার ছেলেকেই সর্ষের বীজ আনতে যেতে বলে।

কিন্তু তার ছেলে কিছুতেই যেতে চাইছে না, কারণ তার নাকি দারুন ভয় লাগছে। এরপর সেই মানুষটি তার ছেলেকে ভয়ের কারণ জিজ্ঞাসা করে। এরপর তার ছেলে আগাগোড়া সব ঘটনা তাকে বলে। এদিকে সেই লোকটি ঠিক করে নেয় যে তার ছেলের মন থেকে এই ভূতের ভয় তাকে দূর করতেই হবে। কারণ সে হল এক চাকুরীজীবীর ছেলে, উপরন্তু সে শহরে থাকে।

তাই সেই লোকটি জোর করেই তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে রাতের বেলা একটি টর্চ হাঁতে নিয়ে সেই ভূতুড়ে কুয়োটির কাছে গেল। তারা দেখল যে চারপাশ পরিষ্কার কোনো ভূতের দেখা নেই। তার ছেলে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। এটি দেখে সেই লোকটি হাঁসতে শুরু করে দিল। কিছুক্ষণ পড় কিছু অদ্ভুত শব্দ তাদের কানে এল, যেন মনে হল যেন কিছু একটা কুয়োর জলে ঝাঁপ দিল। এবার সেই লোকটির ছেলে পুরো ভয় পেয়ে গেল এবং তার বাবাকে জড়িয়ে ধরল।

শিক্ষামূলক গল্প BENGALI MOTIVATIONAL STORY
শিক্ষামূলক গল্প BENGALI MOTIVATIONAL STORY

লোকটি তার ছেলেকে জোর করে টেনে নিয়ে কুয়োতে দেখতে বলল। সেখানে কিছুই ছিল না। এবার সে বলল এবার ওই গাছটাকে গিয়ে একটু নারাও তো। গাছটা নাড়াতেই আবার জলের মধ্যে কিছু একটা পড়ল। এবার এই জিনিসটির ব্যাখ্যা লোকটি তার ছেলেকে বুঝিয়ে দিলেন। কুয়োর উপড়ে যে গাছটির ডাল গুলি রয়েছে সেটি হল আম গাছ। যখন গাছে আম আসে তখন অনেকেই পাথর দিয়ে ঢিল মেরে আম পাড়তে চায় কিন্তু কিছু পাথর ওই ডালটির মধ্যে লেগে আছে যার ফলে সেগুলিই সোজা কুয়োর জলে এসে পড়ছে এবং শব্দ সৃষ্টি করছে।

আর প্রথমে যে পাথরটি পরেছিল সেটি পড়ার কারণ হল দেখ ওই যে গাছের ওই ডালেই অনেক পাখির বাসা, আমি যখন লাইট জালাই তখন পাখিরা একটু সতর্ক হয়ে যায় যার ফলে তারা একটু নড়ে উঠে, তাদের এই নড়ে উঠার ফলেই একটি পাথর জলে পড়ে গেছে। তাহলে এবার হয়ত তোমার ভূতের ভয় শেষ হয়েছে।

আর যে কামার এর কথা তুমি বললে, ব্যাটা তো চোখে কম দেখে, আর এই কুয়োটি তো কাঁচা, চারপাশে কোনো রেলিং নেই, সে যখন এখানে আসে তখন ঠিক একই ভাবে পাখিরা নরে উঠে আর শব্দ হয়, আর সে একটু ভয় পেয়ে যায়, পালাতে গিয়ে এই কুয়োতে পড়ে সে মারা যায়। বুঝলে তো ওই সব আজগুবি ভূতের গল্পের পেছনে আসল সত্যটা কি।

এই গল্পটি থেকে যা শিখতে পারা যায়-

জীবনে কিছু করতে গেলে আত্মবিশ্বাস আর আত্মসম্মান থাকাটা অনেক জরুরী। তুমি যদি ভয় পেয়ে বসে থাকো সাহস করে এগিয়ে না আস তাহলে তোমার একটি আলাদা পরিচয় তুমি বানাতে পাড়বে না। নিজের একটি আলাদা পরিচয় বানানোর জন্য আত্মবিশ্বাসের সাথে বুকে সাহস রেখে এগিয়ে চলো। নিজের রেকর্ড নিজেই গড়ো।  

পড়ুনঃ- বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি

উপস্থিত বুদ্ধির কার্যকারিতাঃ-

এই গল্পটি আজ থেকে অনেক দিন আগের। কোনো এক গ্রামে একজন কৃষক বাস করত। বুঝতেই পাড়ছেন কৃষকের অবস্থা কেমন হতে পাড়ে! সেই কৃষক স্থানীয় এক জমিদারের কাছে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কৃষক পরিবার এমনিতেই দিন আনতে পান্তা ফুরোয়, ঋণ পরিশোধ করা তো দূরের কথা। কৃষকের একমাত্র সম্পদ বলতে যা ছিল তা হল তার চাঁদের মত উজ্জ্বল সুন্দর দেখতে একটি মেয়ে আর তার দুই বিঘা জমি।

ঋণ  শোধ করতে না পারায় এর পরিবর্তে সেই জমিদার কৃষকের মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। যে জমিদারের মাথার চুল একদম সাদা হয়ে গিয়েছে আর কয়েক বছর পড় ইহলোক ছেড়ে পরলোকে গমন করবেন, তার আবার শক অনেক, ভাবা যায়! কেবলমাত্র বৃদ্ধই নয়, সেই জমিদার দেখতেও অনেক খারাপ আর বদমেজাজী ছিলেন।

বুড়ো জমিদার কৃষকের সুন্দর মেয়ের স্বপ্নে বিভোর হতে থাকে, একদিন আর থাকতে না পেরে তিনি গেলেন কৃষকের বাড়ি, সরাসরি কৃষককে তার মেয়ের সামনেই বললেন- “তোমার অনেক ঋণ  পড়ে আছে, আমি জানি তুমি পরিশোধ করতে পাড়বে না, এক কাজ করো তোমার রূপবতীকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দাও এর পরিবর্তে তোমার সব ঋণ  মুকুব করে দিব।“ এই কথাটি শোনা মাত্রই কৃষক ও তার মেয়ে অবাক হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে জমিদারের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বাংলা শিক্ষণীয় গল্প MOTIVATIONAL STORY
বাংলা শিক্ষণীয় ছোট গল্প MOTIVATIONAL STORY
<

এরপর জমিদার বলে- “ আচ্ছা তাহলে এক কাজ কর, চল তোমরা আমার সাথে পঞ্চায়েতের কাছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিনিই নেবেন, আর তা আমাদের মানতে হবে।“ বাধ্য হয়ে কৃষক ও তার মেয়ে পঞ্চায়েতের কাছে গেলেন। আগাগোড়া সব কথা শোনার পড় পঞ্চায়েতও চিন্তায় পড়ে গেলেন।

এরপর পঞ্চায়েত বললেন- “আপনাদের সমস্যাটি আমাকে বড়ই চিন্তিত করছে, আচ্ছা আমি এই বিচারটি ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম। তোমাদের সামনে যে কালো আর রঙ্গিন বল গুলি দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে জমিদার একটি কালো আর একটি রঙ্গিন বল নিয়ে আমার কাছের এই ব্যাগে রাখবে, আর কৃষকের কন্যাকে না দেখে এই ব্যাগ থেকে যেকোনো একটি বল উঠিয়ে নিতে হবে। যদি সে কালো বল উঠায় তাহলে তাকে জমিদারকে বিয়ে করতে হবে আর পরিবর্তে জমিদার কৃষকের সব ঋণ  মুকুব করে দিবেন।

আর সে যদি রঙ্গিন বল উঠায় তাহলে জমিদারকে বিবাহ করতে হবে না, এবং জমিদারের অবিবেচনা প্রসুত চিন্তা-ভাবনার জন্য জমিদারকে কৃষকের ঋণ  মুকুব করে দিতে হবে। আর কৃষকের কন্যা যদি কোনো বল না উঠায় তাহলে তার পিতাকে আজীবনের জন্য জেলে বন্দী করা হবে।“

জমিদার রাজী হয়ে যায় এবং তাদের সামনে পড়ে থাকা বল গুলি থেকে পঞ্চায়েতের অগোচরে দুটি কালো বল উঠিয়ে থলির মধ্যে রেখে দেয়, সে ভেবেছিল দুটি বলই যদি কালো দেওয়া হয় তাহলে কৃষকের মেয়েকে বিবাহ করার ব্যাপারে সে নিশ্চিন্ত। কিন্তু তার এই চালাকি কৃষকের মেয়ে দেখে নেয়, সে ভাবতে থাকে কিভাবে এর সমাধান করা যায়।

এরপর সে উপস্থিত সবাইকে জমিদারের চালাকি বলে দিতে চাইল, কিন্তু সে আবার ভাবল সে যদি এটি বলে দেয় তাহলে, পড়ে আবার ব্যাগে বল রাখা হবে আর তখন রঙ্গিন এবং কালো দুটি বলই থাকবে, কিন্তু এখন দুটি বলই কালো তাহলে এর থেকে আরামেই বাঁচা যেতে পাড়ে।

শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প। শিক্ষামূলক গল্প
শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প। শিক্ষামূলক গল্প (motivational story) image

এরপর পঞ্চায়েতের নির্দেশে সে ব্যাগটিতে হাত দিল এবং একটি বল হাঁতে নিয়ে কায়দা করে ইচ্ছে করেই নীচে থাকা বল গুলির উপর সেই বলটি সে ফেলে দিল। এরপর সে বলল- “ হে ভগবান, বল টিতো পড়ে গিয়ে বাকি বলগুলোর সাথে মিশে গেল, এবার কি হবে?”

পঞ্চায়েত বললেন- “যে বলটি নীচে পড়ে গেছে সেটিই তুমি তুলেছ, তাহলে দেখ ব্যাগে কি রঙের বল আছে, যে রঙের বলটি নেই সেটিই তুমি তুলেছ। এরপর সবাই দেখল যে ব্যাগে কালো রঙের বলটি পড়ে আছে। তাই সবাই ধরে নিল যে, কৃষকের কন্যা রঙ্গিন বলটি তুলেছে। তাই শর্ত সাপেক্ষে জমিদার কৃষকের সব ঋণ  মুকুব করে দিতে বাধ্য হল এবং কৃষকের কন্যাও বেঁচে গেল।

এদিকে জমিদারের চালাকি তারই পায়ে কুড়ুল মেরে চলে গেল।

এই গল্পটি থেকে যা কিছু শেখা যায়- সবসময় চতুরের চালাকি ধরিয়ে দিতে নেই, সব বুঝেও ঠাণ্ডা মাথায় কাজ হাসিল করে নিতে হয়। বেশি চলাকি করতে গেলে অবশেষে নিরাশ হতেই হবে।

পড়ুনঃ- স্বামী বিবেকানন্দ এবং চাণক্যের বাণী

এই শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প। শিক্ষামূলক গল্প (bengali motivational story) সম্পর্কিত আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আর চাইলে আপনি আমাদের হয়ে লিখতে পাড়েন। আর প্রতিদিনের আপডেটের জন্য আমাদের গল্পের ফেসবুক পেজ গল্প আর গল্প অথবা অজানা তথ্যের পেজ অবাক বিশ্বের সাথে যুক্ত হতে পাড়েন।

Spread the love

Leave a Reply