আজ দুটি শিক্ষণীয় গল্প নিয়ে তথা জ্ঞানমূলক গল্প নিয়ে আবারও হাজির আমরা। এই শিক্ষণীয় গল্প গুলি ভালোভাবে পড়ুন আর বোঝার চেষ্টা করুন যে, এই শিক্ষণীয় গল্প গুলির মাধ্যমে কি বলতে চাওয়া হয়েছে।

শিক্ষণীয় গল্পঃ-

শিক্ষণীয় গল্প- ০১

বিশালপুর গ্রামের বছর পঞ্চাশের একজন কৃষক হল কুশল। পৈতৃক সুত্রে পাওয়া জমিতে চাষবাস করেই সে দিন কাঁটায়। কুশল সর্বদাই একজন যত্নশীল কৃষক। কিন্তু তার চেয়েও সে বেশি যত্ন নেয় তার পিতার ফেলে যাওয়া শেষ স্মৃতি একটি হাতঘড়ির। সে যেখানেই যায় সেখানেই এই হাত ঘড়িকে নিয়ে যায়। সেটি পড়েই সে যাবতীয় কাজ করে। যদিও ঘড়িটি অনেক পুড়ানো, কিন্তু পিতার স্মৃতি সর্বদা বয়ে নিয়ে চলেছে কুশল।

সময়টা ছিল, জমি থেকে ধান ঘড়ে তোলার। কুশল তার খামার বাড়িতে ধান তুলছিল। হঠাৎ করেই সে লক্ষ্য করে যে, তার বাবার হাত ঘড়িটি তার হাঁতে নেই। সে অনেক খোঁজাখুঁজি করে, কিন্তু এত্ত এত্ত খড়ের ভিড়ে সে কিছুতেই ঘড়িটি খুঁজে পায় না সে। অনেকটা নিরাশ হয়ে মাটিতে বসে থেকে মাথায় হাত রেখে সে চিন্তা করতে থাকে- “বাবার যে শেষ স্মৃতি টুকুও ছিল, সেটিও হারিয়ে ফেললাম।“

শিক্ষণীয় গল্প প্রেরণামূলক গল্প
শিক্ষণীয় গল্প প্রেরণামূলক গল্প

খামার ঘড় থেকে হতাশ হয়ে সে বাড়ির দিকে পা বাড়াতে লাগল। রাস্তায় সে দেখল কয়েকজন ছেলে ক্রিকেট খেলছে। সে সেই ছেলে গুলিকে এবং তার ঘড়িটি যে খুঁজে দিতে পাড়বে তাকে ১০০ টাঁকা পুরস্কার দিবে সে। ১০০ টাঁকা পুরস্কারের কথা শুনে সব ছেলেগুলি দৌড়ে খামার ঘড়ের ভিতরে ঢুকে গেল, এবং কে আগে খুঁজে পায়, সেই চেষ্টা করতে লাগল।

কয়েক মিনিট কেটে যায়। মিনিটের কাটা ঘণ্টার কাঁটায় চলে যায়, কিন্তু ঘড়ি খুঁজে পাওয়া যায় না। একসময় সব ছেলে গুলি নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। কুশল আরও হতাশ হয়। সে মাটিতে বসে থেকে চিন্তা করতে থাকে। এভাবে কতটা সময় যে কেটে যায়, কিছুই মনে নেই তার। হঠাৎ এক ছেলের ডাকে তার চিন্তাজাল ভেঙ্গে গেল। ছেলেটা বলল- “আমি আরেকবার চেষ্টা করে দেখতে চাই।“

কুশল নিরাশ হয়ে বলে- “হ্যাঁ দেখ, যদি খুঁজে পাও।“

এরপর ছেলেটি খামার ঘড়ের ভিতরে চলে যায় এবং কয়েক মিনিট পড়েই হাঁতে ঘড়িটি নিয়ে ফিরে আসে। ঘড়ি দেখে কুশল খুবই আনন্দিত হয় এবং ছেলেটির কাছে জানতে চায় সে ঘড়িটি কিভাবে খুঁজে পেল। কারণ আগে অনেকজন খুঁজেও কোনো লাভ হয়নি।

এরপর ছেলেটি জানায়- “আমি শান্ত পরিবেশের ফায়দা উঠিয়েছি। ঘড়ে গিয়েই আমি চুপ করে শুনতে থাকি, কোথাও থেকে ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ ভেসে আসছে কি না! কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার নিরাবতা কাটিয়ে আমার কানে ঘড়ির টিক টিক শব্দ ভেসে আসে। এরপর শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়েই ঘড়িটি পেয়ে যাই।

কুশল অনেক আনন্দিত হয় এবং ছেলেটিকে বাহবা দিয়ে। ১০০ টাকার জায়গায় ১৫০ টাঁকা পুরস্কার দে। কারণ সে ঘড়িটি খুঁজে দেওয়ার সাথে সাথে কঠিন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার শিক্ষাও সে শিখিয়েছে। শুধু শান্ত থাকার শিক্ষাই সে প্রদান করে নি। সাথে সাথে তা হাতেকলমে প্রমানও করে দিয়েছে।

MOTIVATIONAL STORY ছোটদের শিক্ষণীয় গল্প
MOTIVATIONAL STORY ছোটদের শিক্ষণীয় গল্প image

শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ- আমাদের মন সর্বদাই চঞ্চল। বিশেষত কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা বেশি চঞ্চল হয়ে পড়ি। কিন্তু একটু শান্তভাবে সময় দিলেই সেই কাজটি আমরা হাসিল করে নিতে পাড়ব। আর এই চঞ্চল মনের জন্যই আমরা অনেক ভুল পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। তাই আমাদের মনকে যে কোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার ট্রেনিং দিতে হবে।

পড়ুনঃ- মজার শিক্ষণীয় গল্প

শিক্ষণীয় গল্প- ০২

একটি মাকড়শা, কিছুতেই বুঝতে পাড়ছিল না, যে সে কোথায় তার জাল বুনবে! সে এমন একটি জায়গা খুঁজছিল, যেখানে সে অনায়াসেই অনেক অনেক পোকা ধরতে পাড়বে আর আরামেই সে দিন কাঁটাতে পাড়বে। কারণ জাল বানানো অনেক কঠিন কাজ। খুব খাটুনি পোহাতে হয় এই কাজে, তাই সে একটি সুন্দর জায়গা খুঁজছিল। সে একটি ঘড়ের কোনে জাল বোনা শুরু করে দেয়।

তার জাল বোনা তখন প্রায় অর্ধেক। হঠাৎই কার হাসির শব্দে যেন তার একাগ্রতা ভেঙ্গে গেল। সে মাথা উঠিয়ে দেখল একটি বিড়াল তাকে দেখে হাসছে। সে বিড়ালটিকে তাকে দেখে হাসার কারণ জিজ্ঞাসা করল। বিড়ালটি হাঁসতে হাঁসতে বলল- “ভাই তোমার মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিছুই নেই নাকি? এমন পরিষ্কার জায়গায় জাল বুনছ কেন? এমন পরিষ্কার জায়গায় একটি পোকা তো দূর একটি ধূলিকণাও তোমার জালে আটকাবে না। তুমি কি জানো না যে, পোকামাকড় নোংরা জায়গায় বেশি দেখা যায়।“

বিড়ালের কথা শোনার পড়, মাকড়শার মনে হল বেড়াল ঠিক কথাই বলেছে। তাই সে আবার এমন একটি জায়গা খুঁজতে লাগল, যেখানে সহজেই পোকা পাওয়া যাবে। খুঁজতে খুঁজতে সে নোংরা জায়গা হিসেবে রান্নাঘড়ের ডাস্টবিনের পাশে জাল বুনতে শুরু করল। এরপর একটি শুয়োপোকা রান্নাঘরের তাক থেকে থেকে চেঁচিয়ে বলল- “আরে ভাই তোমার বুদ্ধি কি কারও কাছে বন্ধক রেখেছো নাকি?”

মাকড়শা এমন কথার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই, শুঁয়োপোকা জানাল- “এই ডাস্টবিন দুই দিন পড় পড়ই বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, নোংরা ফেলে দেওয়ার জন্য। তাই দুই দিন পড়ই তোমার জাল নষ্ট হয়ে যাবে। তোমাকে আবার খাটুনি করতে হবে।“ মাকড়শা শুঁয়োপোকার কথা ঠিক মনে হল এবং সে আরেকটি ভালো জায়গার সন্ধান করতে শুরু করল। এরপর সে জানালার পাশে তার জাল বুনতে শুরু করল।

কিছুক্ষণ পড় একটি পাখি পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। মাকড়শাকে দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়ল এবং বলতে থাকল- “আরে আরে মাকড় ভাই, তোমার মাথায় কোনো বুদ্ধিই নেই গো। জানালার পাশে জাল বুনছ! হাওয়ার চোটে তোমার জাল তো সহজেই ছিঁড়ে যাবে। ছিঁড়ে যাওয়া জালে কি আর পোকা ধরা যায়। শুঁকিয়ে মরবে তো।“

কিছুক্ষণ চিন্তা করার পড় মাকড়শা, পাখিটির কথা ঠিক মনে হল। সে জাল বুনা বন্ধ করল এবং আরেকটি নতুন জায়গার খোঁজ করতে থাকল। এবার সে একটি পুড়ানো সুটকেসের খোলা মুখে জাল বুনতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে একটি আরশোলা উপস্থিত হল এবং সে বলতে লাগল- “ভাই তুমি কি ব্যাংকে গেছ নাকি?”

মাকড়শা- “কেন? না তো” 

আরশোলা- “তাই তো দেখছি হে, বাংকে গিয়ে তোমার বুদ্ধি বুঝি জমা করে এসেছো।“

মাকড়শা- “কেন কেন?”

আরশোলা- “এই যে তুমি এই পুড়ানো সুটকেসে জাল বুনছ, মালিক তো দু’দিন পড়েই ভাঙ্গারি ওয়ালার কাছে এই সুটকেস বিক্রি করে দিবেন, তখন তুমি কি করবে?”

শিক্ষণীয় গল্প। জ্ঞানমূলক গল্প
শিক্ষণীয় গল্প। জ্ঞানমূলক গল্প
<

মাকড়শাটি ভাবল ঠিকই তো, আবার আমাকে খাটুনি করতে হবে। তাই সে জাল বোনা বন্ধ করল। এভাবেই সারাটা দিন কেটে গেল। মাকড়শা আর জাল বুনতে পাড়ল না। আরেকটি নতুন জায়গার সন্ধানে পা বাড়াল। কিন্তু পাড়ল না। ক্লান্ত হয়ে সে বসে পড়ল। তার শরীরে আর বিন্দুমাত্র শক্তিও নেই। সে বসে পড়তেই তার কাছে একটি মৌমাছি এসে বলল- “ভাই আমি যখন মধু সংগ্রহ করছি, তখন থেকে দেখছি তুমি শুধু অপরের কথা শুনেই যাচ্ছ, আর জায়গা পরিবর্তন করেই যাচ্ছ। দেখলে তো কি অবস্থা হল তোমার! নিজের মন যা বলবে সেটাই ঠিক বন্ধু। তুমি যদি তোমার প্রথম প্ল্যান মোতাবেক সেখানেই জাল বুনতে, তাহলে এতক্ষণে হয়ত তুমি আরামেই ঘুমিয়ে থাকতে। ফালতু ফালতু অপরের মতকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে তোমার নিজেরই অবস্থা কাহিল হয়ে গেল।“

পড়ুনঃ- সিনিয়র আপু যখন ক্রাশ

মাকড়শা নিজের ভুল বুঝতে পাড়ল। কিন্তু তখন আর কিছুই করার নেই। কারণ সে তার সমস্ত শক্তি খুইয়ে ফেলেছে।

শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ- অপরের মতামতের থেকে নিজের মতামতকে গুরুত্ব দিলে ঝামেলা পোহাতে হয় না। একেকজনের একেক মত। কিন্তু নিজের মন যা বলবে, তাইই সঠিক। অপরের কথায় কাজ করতে গিয়ে নিজের ভালোলাগাকে ত্যাগ করলে কিছুতেই আপনি সফলতা পাবেন না। কাজ করার সময় কানে অপরের কথা নিলে হবে না। কানে তুলো গুঁজে নিতে হবে। এরপর আপনার ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে থাকুন। যেদিন সফল হবেন, সেদিন সবাই অবাক হয়ে যাবে। তাই সময় শেষ হওয়ার আগেই কাজে নেমে পড়তে হবে। অযথা অপরের কথায় কর্ণপাত করে নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করবেন না।   

আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত হওয়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

Spread the love

Leave a Reply