রোমান্টিক প্রেমের গল্প//বড় দের বাংলা গল্প

রোমান্টিক প্রেমের গল্পঃ- ‘শেষ চুম্বন’

এটা বোধহয় শেষ রাতের মেট্রো। ভীড় খুব পাতলা। আমার বেশ রাত হয়ে গেছে। জয়নগর গিয়েছিলাম। প্রান্তিক শহর গুলোর সাথে কোলকাতায় যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা খুবই খারাপ। তেলের দাম খুব বেড়েছে বলে নয়।  বারুইপুর পর থেকেই রাস্তা হাল বেহাল তাই নিজের গাড়ি নিয়ে যাওয়া ঝুঁকি পূর্ণ। পৃথিবীর অন্য মহানগর থেকে কোলকাতা অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে। রাত দশ টার পর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আসলে কোলকাতা বুড়ো হয়ে গেছে। কলকারখানা অফিস কাছারী সংখ্যা কমে গেছে বলেই হয়তো একে রাত জেগে অত কাজ করতে হয় না।

ভিড় খুব পাতলা ছিল। ছিপছিপে গড়নের হালকা পাতলা ঘসামাজা চকচকে মহিলা সিটে বসা একটা মেয়ের উপর আমার চোখ বারবার চলে যাচ্ছিলো। মেয়েটাও আমাকে দেখছিলো। কুঁদঘাট পৌঁছাতেই আমি নেমে পড়লাম। পিছনে থেকে কে যেন ডাকলো ” মানব দা”। পরে দেখি সেই মেয়েটা আমার নাম ধরে ডাকছে। বছর পাঁচেক পর দেখা ওর সাথে চিনবো কি করে। ছাপোষা ঘরের মেয়ে মধু। বেশ মোটা সোটা ছিলো। এখন চেহারা বানিয়ে ফেলেছে সুপারি গাছের মতো। কর্পোরেট সংস্কৃতি হয়তো ওর মধ্যে এই বদল এনেছে।

ওকে প্রথম চিনেতেই পারিনি আসলে। তবে চিনতে পেরে একটু ভয় হলো। ওর কপালের দিকে তাকিয়ে ,কিছু বুঝতে পারলাম না।মধুর আত্মসন্মান বোধটা খুব বেশি। তাই অবাক হয়ে গেলাম ওকে কুঁদঘাট অঞ্চলে দেখে। ও প্রেম করে বিয়ে করে তো কাকিনাড়া চলে গিয়েছিল। ও আমার প্রাক্তণ স্ত্রী নীলার বাল্য বন্ধু হলেও, ওর পরিবারের সাথে আমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। ওরা এ অঞ্চলে শেষ বেঁচে থাকা ঘটি পরিবার। ঘটি বলতে আমরা যারা এপার বাংলার মানে পশ্চিম বাংলার আদিবাসীন্দা , ওপার বাংলা মানে পূর্ব পাকিস্তান থেকে মোল্লাদের তাড়া খেয়ে আসা উদ্বাস্তু বাঙলারা তাদের ঘটি বলে। হয়তো পূজা তে আমরা ঘট প্রতিষ্ঠা করাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি, তাই ওরা আমাদের ঘটি বলে।

রোমান্টিক প্রেমের গল্প
রোমান্টিক প্রেমের গল্প

তবে ঘটি বাটির লড়াই পড়ে হবে না হয়।  মদ্দা কথায় আসি , ও বাড়ির এক মেয়ে। পড়াশোনায় মাঝামাঝি মেধাবী। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পড়াটাও না শেষ করে বিয়ে করে নিলো। ওর অবিবাহিত পিসি আমাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। উনার মুখে শুনেছি অনেক কথা। কিছুটা আফশোস করতো। মধু ছোট বেলায় থেকেই বেশ কয়েকটি প্রেম করেছে। নীলা আমার প্রেমের সময় সহযোগীতা করেছে। মধু দীপঙ্করের সাথে, তনু বাপ্পাদিত্য সাথে, আমি নীলার সাথে, দল বেঁধে প্রেম করতে যেতাম।

যার ফলে শহরে বাইরে গিয়ে রাতবাস করতাম আমরা। কখনো বোলপুর, কখনো দিঘা। ওঁরা তিন মেয়ে একসাথে বের হত ফলে কেউ সন্দেহ করার ছিলো না। মধুর বাড়ির লোক কিছুটা অনুমান করেছিলো , কিন্তু ওরা ভেবেছিলো ওর ঘনিষ্ঠা আমার সাথে । কিন্তু মাথা বাজ পড়লো ওদের দীপঙ্করকে মধু যখন বিয়ে করলো। কিডন্যাপের কেসে দীপঙ্করকে জেলে ঢুকিয়েছিলো মধুর কাকারা। কিন্তু দীপঙ্করকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছিল মধু। কারণ ওর আঠারো বছর বয়স হয়ে গিয়েছিল।

দীপঙ্কর চালচুলোহীন ছেলে ‌। তাই আপত্তি থাকার কথাই । একটা ছোট বিড়ি দোকান ছিলো। করোনা মহামারির পর সেটা বন্ধ। তাই ওরা কুঁদঘাট চলে এসেছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম মনে মনে। ওর কপালে সিঁদুর না থাকলেও ওদের সম্পর্কটা তাহলে ভাঙে নি। ঘর পোড়া গরুতো সিঁদুরে মেঘে দেখলে ভয় পায়। সব জায়গায় থেকে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া খবর পেয়ে খুব ভয় পেয়ে যাই আজকাল।

কথা বলতে বলতে ওর শেষ অটোরিকশাটা চলে গেলো বলে আপসোসে করলো মধু। আমি বললাম ” আমি ছেড়ে দিচ্ছি তোমাকে।”

ও বললো ” তাহলে তো ভালোই হয়। অনেক রাত হয়ে গেছে। রিক্সা ও পাবো না বাগনপাড়া যেতে।”

আমি বললাম-” বাগান পাড়া কেন ? তুমি তোমাদের বাড়ি থাকো না।”

পড়ুনঃ- বিরহের গল্প- গুড বাই! 

ও একটা তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বললো – ” ওরা মনে করে দীপঙ্কর আমাকে বিয়ে করেছে আমার সম্পত্তির লোভে। আর আমি ওকে নিয়ে ওদের বাড়িতে উঠব! ঘর জামাই অপবাদ ওকে আমি নিতে দেবো না।”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার বাইকটা নিতে গেলাম। আমার বাইক দেখে ও বললো- ” মানব তুমি এখনো বদলালে না,ফেসবুকে দেখেছিলাম,তুমি ছয় মাস আগে যখন এসেছিলে তখন একটা নতুন স্কুটি কিনেছিলে। সেটা নিশ্চিত খারাপ করে ফেলছো না! সেই আগের মতই রয়ে গেলে নিজের জিনিস যত্ন নিতে জান না”

আমি হেসে বললাম” নতুন নিয়েছি মানে ওটা নষ্ট করে ফেলেছি কে বললো। আমি ওটা ভাইকে দিয়ে দিয়েছি। এটা হাই স্পিড গাড়ি। পয়সা ইনকাম করছি তাই নিজের কিছু সখ আল্লাদ পূর্ণ করছি আর কি। তোমার বান্ধবী চলে যাওয়ার পর থেকে নিজের কাজ নিজেই করি। “

ও বললো -” বাহ উন্নতি করছো তাহলে,  কিন্তু পাঁচ বছর আগে তুমি জীবন নিয়ে উদাসীন ছিলে, সে সময় এই রকম টাকা পয়সা আয় এর প্রতি আগ্রহ যদি তুমি দেখাতে, তাহলে বোধহয়  তোমাদের সম্পর্কটা ভাঙতো না।”

আমি বললাম ” জীবনটা আশির দশকের সিনেমা নয়, যে রাতারাতি জীবন বদলে যাবে। তোমার বান্ধবীর সময় থেকে চেষ্টা করছি। তোমাদের কাছে ও গোপন করে গেছে, তোমার বান্ধবী রিয়া র বিয়েতে আমি যেতে পারি নি কারণ তখন মুম্বাই একটা হোটেলে ওয়েটারের কাজ করছি। টাকা পয়সা আমাদের তখন শেষের পথে। আমি ওয়েটারের কাজ করেছিলাম শুধু মাত্র তোমার বন্ধু যাতে চাকুরী ছেড়ে এ ম পরীক্ষা টা ভালো করে দিতে পারে। আমার জীবনের লড়াইটার কথা কেউ জানো না। সফলতা অর্জন সহজ কথা নয়।”

গভীর প্রেমের গল্প
গভীর প্রেমের গল্প

ও কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই ওকে আমি অনুরোধ করলাম ও যেনো আমাদের সম্পর্কটা একটু মেরামত করে , আমাদের মিল করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ও মিষ্টি হেসে প্রতিশ্রুতি দিলো , ও চেষ্টা করবে। মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।

নীলার কিছু টক ঝাল মিষ্টি স্মৃতিচারণ করতে করতে , পথ চলতে শুরু করলাম আমরা। কিছু দূর আসার পর কিছুটা সাপের মতো ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর শরীর ঘামে কিছুটা ভেজা বোধহয়। তাই ওর শরীর বেশ উপভোগ করতে পারছিলাম আমি। কিন্তু বহুদিন পর একটা মেয়ে মানুষের শরীরের ছোঁয়া পেয়ে বেশ ভালো লাগলো। তবু অস্বস্তি, পাপবোধ, ভদ্রতা, সততা, কিছুটা হবে বোধহয়, আমি ওকে বললাম” গাড়ির স্পীড কমাতে হবে নাকি! পরে যাবার ভয় পাচ্ছো নাকি।”

ও বললো” না না তুমি তো ভালোই চালাও। তোমার কথা শুনতে পারছি না বলে , কাছাকাছি এলাম। তোমার অসুবিধা হচ্ছে না তো।”

আমি বললাম ” না”..

ওর বাড়িতে পৌঁছাতেই বারোটা বেজে গেল। দরজা খুলে দীপঙ্কর বললো ” Happy birthday মধু ” । প্রিয় মানুষের থেকে নিজের জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেতে সবাই খুব ভালো বাসে।  কিন্তু মধু খুশি হলো না। দীপঙ্কর ওপর খেঁকিয়ে উঠলো। ” তুই এখনও চাকুরীর জন্য যাস নি জানোয়ার। আবার এই চাকুরীটা খোয়াবি নাকি। “

দীপঙ্কর একটা সিকিউরিটি গার্ড পোশাক পরেই ছিল। সৌজন্যেতার খাতিরে  আমাকে বলল ” ভালো আছো তো মানব, কবে দেশে ফিরলে! পরে কথা হবে, দিনের বেলায় আমি একাই বাড়িতে থাকি, চলে এসো কথা হবে। আজ তাড়া আছে বেড়ালাম। “
ও চলে যেতে দেখলাম ,মোমবাতি আলোয় ছোট ঘরটা বেশ সুন্দর লাগছে। ছোট হলেও বেশ সুন্দর কেকটা। আমি তাড়াতাড়ি পরিবেশ বদলাতে।  মধুকে wish করলাম। ও বললো ”  thanks.. কেক খেয়ে যাও। একটু বসো আমি একটু চেঞ্জ করে আসছি।”

পড়ুনঃ- অদ্ভুত এক প্রেম  কাহিনী 

ও চেঞ্জ করে নাইটি পরে এলো। ফলে ওকে মিষ্টি নয় লোভনীয়  লাগলো। ও বুঝতে পারল বোধহয় আমার লোলুপ মনোভাবকে। কারণ কেকটা কাটতে কাটতে ওর ঠোঁটের আগায় ফুটে উঠেছে জয়ের হাসি। নিজেকে সামলাতেই  বললাম ” তুমি দীপঙ্করকে ওভাবে না বলতেই পারতে , বেচারা অনেক দুঃখ পেয়েছে।”

ও বললো ” পাক। আমাদের সম্পর্কটা আর ভালো নেই। তুমি জানো তো আমার পেটে কতোখানি বিদ্যা আছে। চাকুরী আমি পেয়েছি সুপারিশে। আমার একবয় ফ্রেন্ড সঞ্জয়ের অফিসে। তুমি শুনেছি অনেককে বিদেশে চাকরিতে নিয়ে গেছো তোমার সাথে। ওর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দাও না। আমার টাকা পয়সা নেই, কিন্তু যা আছে তা উজাড় করে দেবো। সঞ্জয়ের দেওয়া চাকুরীটা না ছাড়লে ওর সাথে আমার সম্পর্কটা ভেঙে যাবেই।”

হঠাৎ ও আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলো। ওর চোখের জল আমার মনটা গলিয়ে দিল।

যাইহোক দীপঙ্করকে আমার প্রোজেক্ট ঢুকিয়ে দিলাম।  আমি ছুটি নিয়ে দেশে ফিরতাম সেভাবেই যাতে, মধুর  বিছানা দখল করতে আমার কোন অসুবিধা না হয়, আমি যখন দেশে দীপঙ্কর তখন বিদেশে। মধুর সাথে রাত কাটাতে ভালো লাগতো কারণ শুধু শরীরিক চাহিদা পূরণ নয় মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারতাম আমি ওর সাথে। মিলনের পর সারারাত নীলাকে নিয়ে না না কথা বলতে পারতাম। নীলা ওর ভালো বন্ধু। তাই আশা ছিলো এক দিন না একদিন নীলার সাথে আমার মিল করিয়ে দেবে মধু।

আজ ওকে আদর করা থামিয়ে হঠাৎ বলল উঠলাম ” তুমি কিন্তু আমার সাথে নীলা মিল করার জন্য উদ্যোগী হচ্ছো না । “
ও কিছুটা হক চকিয়ে গেলো। তারপর বলল- তোমার কি আমাকে দিয়ে আর মন ভরছে না। এই জন্য নীলা তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কারণ গীত বলছে, তুমি ওর সর্বনাশ করার পর বলেছ তুমি বিবাহিত। তারমানে এই এক বছরের মধ্যে আমি তোমার কাছে পুরোনো হয়ে গেলাম।”

আমি বুঝতে পারলাম ও আঘাত পেয়েছে। তবে আমি বললাম ” সেটা ঠিক নয়। গীতা মিথ্যা বলছে। ওর সাথে সম্পর্ক ভেঙেই নীলাকে আমি বিয়ে করেছি। ও সব সময় একটা বড়লোক ছেলেকেই বিয়ে করতে চাইতো। এখন দেখো যাকে বিয়ে করছে তার টাকা পয়সা ছাড়া কিছুই নেই।”

bengali romantic love story
bengali romantic love story
<

ওর অভিমান হয়েছে বুঝতে পারলাম । ওকে ঠোঁটে একটা দীর্ঘ চুম্বন করলাম, ও আরো কিছু প্রত্যাশা করছিলো। আমি ওকে বললাম ” তোমরা মেয়েরা ভাব ছেলেরা নিশ্চিন্ত, নিয়মিত যৌনতার লোভে একটা মেয়েকে বিয়ে করে। তুমি আমার রক্ষিতা হয়ে থেকে যাবে জানি সারাজীবন কিন্তু আমার সন্তানের মা হতে পারবে কি?”

ও কাঁপা কাঁপা ঠোঁটৈ বলে ওঠালো “আমি দীপঙ্করকে ছাড়তে পারবো না। লোক জন আত্মীয় স্বজনের কাছে আমি খুব ছোট হয়ে যাবো যে।”

ওর কাঁপা কাঁপা ঠোঁট এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার ঠোঁট। এটা যে ওকে আমার শেষ চুম্বন সেটা ও বুঝতে পেরেছিলো কি না জানিনা। ও আমাকে আস্টে পিষ্টে জড়িয়ে পাগলের মতো চুমু খাচ্ছিলো। আমি ওর ঘরে দরজা বন্ধ করে ওর জীবনে থেকে বেরিয়ে এলাম।

মানব মণ্ডল

গল্পের ভাবনায়-
পড়ুনঃ- 

মধ্যবিত্তের প্রেম- সাইকেল 

ছোট প্রেমের গল্প- ভালবাসার ঘৃণা 
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

রোমান্টিক প্রেমের গল্প। গভীর রাতের গভীর প্রেমের গল্প। । 1 new bengali romantic love story

Spread the love

Leave a Reply