ভালোবাসাও যে ধীরে ধীরে ঘৃণায় পরিণত হতে পাড়ে তা এই ছোট্ট প্রেমের গল্পটি পড়ার পড় আপনার উপলব্ধি হবে। এই সময় এক অজানা আকর্ষণে পরস্পরের কাছাকাছি আসার এক রাতের স্মৃতি কিভাবে পরিণত হল ঘৃণায়, জানতে হলে অবশ্যই গল্পটিতে চোখ রাখতে হবে। গল্পটির প্রেরক- মানব মণ্ডল (writer of the month-April in charpatra.com)

ছোট্ট প্রেমের গল্প- ভালোবাসার ঘৃণাঃ-

গরমের ছুটিতে পিসির বাড়ি যেতাম, গ্রামটাকে উপভোগ করতে। বয়স বিশ্বাস ঘাতকতা করে তাই যেটুকু জমানো স্মৃতি মনে আছে তাই ভাগ করে নেবো আপনাদের সাথে। ভালোলাগাটা কখন যেন একটু ঘৃণাতে পরিনত হয়ে গিয়েছিল। ঝড়ে আম কুড়ানো, চৈত্রে ঝাঁপ মেলাতে পুতুল নাচ, রাত জেগে যাত্রা পালা দেখা, হরিলুটের বাতাসা কুড়ানোর গল্প গুলো পুরানো, আমার গল্পে পাবেন বিশ্বাস ভঙ্গের কথা।

সে বছর আমি মাধ্যমিক দিয়েছি। বালুদা আর ওর বন্ধুদের রাতে যাত্রা দেখবো বলে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে কথা বার্তায় বুঝলাম ওরা নিষিদ্ধ ছবি দেখতে যাচ্ছে। আমি যেতে রাজি হলাম না। ওরা বোঝালো গ্রামের দিকে এই সব সিনেমা দেখতে আঠারো বছর বয়স হতে হয় না। গোঁফ এর  রেখা থাকলেই হয়। আমি তখন বোকা ছিলাম, বাড়ি থেকে বোঝানো হয়েছিল, আঠারো বছরের আগে কোনো সিদ্ধান্ত তুমি নিজে নিতে পারো না। সেইদিন বালুদারা আমাকে বোঝালো এইরকম কোনো মাপকাঠি থাকে না। এটা আইনের একটা অংশ। বরং এই সুযোগে একটা সাতরো বছরের ছেলে ধর্ষণ করেও পার পেয়ে যায় আইনের চোখে।

সব বোঝানো ব্যর্থ হলো। আমি বাড়ি ফিরে আসতে শুরু করলাম একা একা, আর ভাবলাম টুসি যে আমার কাছে আসতে চায়, যে কোনো অজুহাতে আমার ছোঁয়া পেতে চায় তাতে কোন অন্যায় নেই। ভালো লাগাটার কোন বয়স নেই। চুপচাপ আমি শুয়ে পড়েছিলাম সেই দিন বালুদার ঘরে। হঠাৎ ঘরে দরজায় একটা ইতস্তত টোকা। ভাবনাটা মিলে গেলো, টুসি খোঁজ করতে এলো একা শুতে ভয় পাচ্ছি কিনা।

এত রাতে জেগে উঠেছে সে আমার জন্য কেন সেটা আমার জানা নয়, তাই ঘরে ভিতরে তাকে নিয়ে নিলাম অভিভাবক শুন্য এ বাড়িতে দুই কিশোর কিশোরী অজানা আকর্ষন, অজানা কৌতুহল, অজানা তৃষ্ণা মেটাতে আমার ঠোট বন্দী করলো ওর ঠোঁটকে। দুইজনে শ্বাস প্রশ্বাসে মিলে এক হয়ে গেলো সেই রাতে। হয়তো এখনো জমে আছে স্মৃতি হয়ে আজো ঐ ঘরটাতে সেই রাতের কাহিনী। এখনো ঘরটা দাঁড়িয়ে আছে এক ভাবে শুধু আরো রঙচঙে হয়েছে বাড়িটা।

বালুদা চাকরি পেয়ে শহরে থাকে। আমি শহুরে জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছিলাম। তবে পিসিমার সাথে আমরা সম্পর্ক রাখি নি বহুদিন। পিসিমার কোনো দোষ ছিলো না যদিও। পিসা মশাই ভিটে ছাড়া হলো। কোন এক তালাক প্রাপ্ত মুসলিম মহিলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে। মা বাবা পিসিকে আর ভাইদের কলকাতা নিয়ে চলে আসতে চাইলো।  দুই ছেলেকে শহরে পাঠালেও নিজে এলো না। পিসা মশাইের বাবা মাকে দেখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।

ছোট্ট প্রেমের গল্প ভালোবাসার গল্প
ছোট্ট প্রেমের গল্প ভালোবাসার গল্প

শোনা যায়, খিচুড়ি স্কুলের দিদিমুনি আমার পিসি পরের দিকে নাকি ঐ অসহায় মুসলিম মহিলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কারণ পিসা মশাইের ওখানেও মন টেকে নি বেশি দিন। যাইহোক পিসা মশাইের প্রতি যত ঘৃণা জমা থাক, আজ তার শ্রাদ্ধ, তার শ্রদ্ধা জানানো, তার শান্তি কামনার দিন।

অবশ্য অন্যকে ঘৃণা করার আগে নিজেকে ঘৃণা করা উচিত আমার। নিজের  মনের কোণে যেটুকু জমানো স্মৃতি আছে , তারদিকে তাকিয়ে অপরাধী মনে হচ্ছিল নিজেকে। টুসির সাথে আমি যোগযোগ করি নি ওর বিপদের দিনে। টুসির বাবা শহিদ হলো। পাঞ্জাবে বালুদা চলে গেলো চাকুরী পেয়ে। গুরু ছাগলকে যেমন খোঁটার সাথে বেঁধে দেওয়া হয় তেমন টুসির বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো , বিশুর সাথে। কারণ পাড়াতে খবর রটে ছিলো, টুসি নষ্ট মেয়ে শহরে গিয়ে নাকি বাচ্চা নষ্ট করে এসেছে।

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ওদের জানলার দিকে তাকিয়ে আছি, তখনই টুসি জানালা খুললো। বাড়ির ভিতরে ঢুকতে অনুরোধ করলো। আগে পিসির বাড়িতে এলে ওদের বাড়িতে সকাল বিকাল রাত কাটাতাম তাই ও বাড়িতে ঢোকাতে কোন আপত্তি বা কানাঘুষা হবার সম্ভাবনা নেই। বরং ওর সাথে কথা বলছি দেখে, খুড়ি মা বলে গেলো ” বিশু তো বাড়ি নেই, তোর ছোটদাদার ঘরে দুইদিন থাক তুই, টুসির ছোট দার ঘরে এসিও লাগনো আছে। তোর কোন অসুবিধা হবে না।” কি একটা অজানা আকর্ষণে রাজী হয়ে গেলাম।

ওর মুখে শুনলাম , ওকে এখন আর কেউ নষ্ট মেয়ে বলে না। ব্যবসার জন্য অনেক টাকার  বিনিময়ে পঞ্চায়েত কাছে বিশু স্বীকার করেছিল টুসিকে ও ধর্ষণ করেছে। তাই ওদের বিয়ে হয়ে গেলো। হুঁ ওর আজ এক সন্তানের মা কিন্তু ওদের মধ্যে কোন ভালোবাসা নেই। বরং আজ ও বিশুকে ঘৃণা করে। কারণ বিশুকে ভালোবাসতো রানি দি। ব্যবসা করতে ও অনেক টাকা দিয়েছিলো। কিন্তু বিশু ওকে (টুসিকে) বিয়ে করলো। রানি দি নিজের হাতে টুসির ফুল শয্যার খাট সাজিয়ে ছিল। কিন্তু পরেরদিনই ও সাদা চাদর মোরা অবস্থায় সাদাফুলখাটে শুয়ে বিদায় নিল চিরদিনের মত। ভীষন ঘৃণায় বিশুকে কোন দিন কাছে ঘেঁষেতে দেয়নি কোনো দিন।

ঐ দুই রাত শুধু ওর দৈহিক পিপাসা মেটালাম না। ওকে বললাম , সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসতে। ও বললো আর একটা বছর সময় চায়। ছেলেটার মাধ্যমিকটা হয়ে যাক। তারপর আমি ওদের যেখানে নিয়ে গিয়ে যেমন ভাবে রাখবো ও কোন আপত্তি থাকবে না।

ওদের দুইজনকে আমি মাঝে মাঝেই টাকা পয়সা  পাঠাতাম। কিন্তু সেইদিন বিশু হঠাৎ ফোন করে বললো -ওঁর  ৭০০০০ টাকা লাগবে, ঐ টাকা দেবার পর, আমি টুসি  আর ওর ছেলেকে নিয়ে যেতে পারি যেখানে খুশি। আমি একটু অবাক হলাম। কারণ আমি দেখলাম ফোনটা হয়েছে ওর ছেলের ফোন থেকে, ওর ছেলেকে খুব স্নেহ করি। আমাদের সম্পর্কের কথা ওর অজানা। কিন্তু কিছুদিন পর ফোন করে জানতে পারলাম, ওই রাত গুলো আমার জন্য একটা ফাঁদ ছিলো।

ভালোবাসার ঘৃণা
ভালোবাসার ঘৃণা

কিন্তু আজ টুসি আমার থেকে আর টাকা পয়সা নিতে চাইছে না। তাই বিশু ওকে খুব মারধর করেছে। টুসির ছেলে আমাকে অনুরোধ করলো। আমি ওর বাবাকে টাকাটা দিয়ে, ওর বাবার হাত থেকে যেন মাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে টুসি। আমার মনের মধ্যে একত্রিত হয়েছে ওর জন্য কিছুটা ঘৃণা, যেটা হয়তো মুছে দিতে চাইছে, মনের ভিতর ওর জন্য যেটুকু জমানো ভালোবাসা বেঁচে ছিলো সেটাকেও।

গল্প প্রেরক- মানব মণ্ডল facebook

ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসার ঘৃণা

লেখকের অন্যান্য কিছু লেখা-

3 টি বাংলা ছোট গল্প

ব্যর্থ প্রেমের গল্প

আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন যেভাবে-

by facebook- ছাড়পত্র-facebook

by WhatsApp- ছাড়পত্র- 

by Telegram- charpatraOfficial

“ছোট্ট প্রেমের গল্প। ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসার ঘৃণা। bengali love story”

আপনি এই অসাধারণ লেখাগুলি মিস করতে পাড়েন-

39 টি ছেলেদের সাইকোলজি

রহস্যজনক ঘটনা যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারেনি

যে লেখাগুলি আপনার ভালো লাগতে পাড়ে…
Spread the love

Leave a Reply