রাতের বাসে আমরা এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাই। সেখানে রাস্তায় এক ভয়ানক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হই আমরা, আর তা নিয়েই আজকের রহস্যময় রাতের গল্প টি।

এক রহস্যময় রাতের গল্পঃ- ‘শুনশান রাস্তায় আমি ও নিলি’

কৃষ্ণনগরের শুনশান রাস্তায় বাসটা যখন আমাদের নামিয়ে দিল সময় তখন আনুমানিক রাত ২.৩০ টে। আনুমানিক বলার কারণ হল, কাকতালীয় ভাবে আমার ও নিলির মোবাইল সুইচ অফ হয়ে গেছে। আমার মোবাইল সুইচ অফ হয়েছে হাত থেকে পরে গিয়ে আর নিলির মোবাইল সুইচ অফ হয়েছে ব্যাটারি শেষ হওয়ার জন্য।

আমাদের ধারনা ছিল বাসটি হয়ত কৃষ্ণনগরের বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেবে। কিন্তু যেহেতু এটি নাকি কলকাতা গামী বাস সেহেতু বাসটি অন্য রুটে চলে যাবে আর আমাদের এইস শুনশান রাস্তায় নামিয়ে দিল যেখানে একটি ছোট্ট হোটেল ছাড়া আর কিছুই নেই।

সাথে কোন আলো নেই তার পর আবার পরশু অমাবস্যা গেছে, তাই চাঁদেরও দেখা নেই। ভোরের আলো ফুটতে তখন অনেকটা বাকি, তাই আমরা ঠিক করি এই সময় টুকুতে আমরা বরং আমাদের গন্তব্যে পা বাড়াই।

রহস্যময় রাতের গল্প
রহস্যময় রাতের গল্প

হোটেলের ভিতরে গিয়ে লোকটার কাছে জেনে নিলাম কোন দিক দিয়ে আমাদের গন্তব্যতে সহজে যাওয়া যাবে। লোকটা রাস্তা বুঝিয়ে দিল ঠিকই কিন্তু তার সাথে আবার বলল- “এত্ত আতে একা যাবেন আপনেরা! তার চেয়ে আপনেরা এহানে বসে কাটান। ভোর হলে বেড়িয়ে পরবেন” কিন্তু এতটা সময় এক জায়গায় বসে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

আমরা যাচ্ছি নিলির এক বন্ধুর বাড়ি। নিলি কোনদিন তার এই বন্ধুর বাড়িতে আসে নি। দক্ষিণবঙ্গের মেয়ে নিলি কে ভালবেসে বিবাহ করেছি আমি জলপাইগুড়ির অর্থাৎ উত্তর বঙ্গের ছেলে। সে যাই হোক আসল কথায় আসি।

আমরা লোকটার দেখানো রাস্তায় হাঁটা শুরু করলাম। রাস্তায় কয়েকটি কুকুর ছাড়া আর কোন জনমানবের দেখা নেই। প্রিয়জনের হাত ধরে এই শুনশান রাস্তায় একাকি হেঁটে যাওয়া কোন লং ড্রাইভে যাওয়ার থেকে কিন্তু কম নয়।

প্রায় ১৫ মিনিট হেঁটেছি। নিলি থেমে গিয়ে বলল, “আমার অদ্ভুত লাগছে। যেন মনে হচ্ছে পা গুলো খুব ভারী হয়ে যাচ্ছে।“ আমি বললাম- “হয়ত রাত জাগার কারণে এমন হচ্ছে।“ সে আমার কথায় সায় দিয়ে আবার চলা শুরু করল।

কিছুদূর এগোনর পর দেখি নিলি বারবার পিছনে ঘুরে দেখছে- “বারবার পিছনে কি দেখছ নিলি!” নিলি উত্তর দিল- “কেউ যেন আমাদের পিছু নিয়েছে। চোর ডাকাত নয়ত আবার!”

নিলির কথা শুনে আমিও পিছন ঘুরে দেখলাম, কিন্তু কেউই আমার নজরে এল না।

পড়ুনঃ- অদ্ভুত ও অমীমাংসিত ঘটনা যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানও দিতে পারে নি 

পশ্চিম আকাশে জমতে থাকা মেঘটা হঠাৎ করেই সিঁদুরে বর্ণ ধারন করে। যেন এই মুহূর্তে বৃষ্টি আসবে। আর মাত্র কয়েক পা এগিয়েছি, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এই মরশুমে যদি ভিজি তাহলে পরের দিন শয্যাশায়ী একদম নিশ্চিত।

বাধ্য হয়েই চোখ খোঁজ চালাতে লাগল কোন আশ্রয় স্থলের। দূরে একটা পুরনো হাভেলি টাইপের বাড়ি বেশ চোখে পরছে। সেই বাড়ি টি ভগ্নপ্রায়। রাস্তার অনেকটা কাছেই। দুইজনে ওইদিকে দৌড় লাগালাম। যাক অন্তত ভিজে যাওয়ার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলাম।

এই মরশুমে এরকম অঝোরে বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। দুইজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি হাভেলির মত বাড়ির বারান্দায়। বাড়ির ছাদ অনেক জায়গায় ফুটো। সমানে জল পরছে, তবে আমরা যে জায়গায় আছি সেটা বেশ নিরাপদ।

আমাদের চমকিয়ে দিয়ে সামনে একটি কুচকুচে কালো বেড়াল বৃষ্টির মধ্যে ছুটোছুটি শুরু করে দিল। আমরা কেউই পাত্তা দিলাম না। একটু পর একটি গাছের ডাল ঝরঝর শব্দ করে ভেঙে পরল। বড্ড আজব ব্যাপার। না আছে হাওয়া না আছে ঝড় অহেতুক ডালটি পরে গেল! আমরা এবারও বিষয়টা গুরুত্ব দিলাম না।

ভয়ানক রাতের অভিজ্ঞতা
ভয়ানক রাতের অভিজ্ঞতা

দেখে আছি বৃষ্টির দিকে। হঠাৎ করেই নিলি বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে চলে গেল, যেন কেউ ওকে ধাক্কা দিয়েছে। সে তাড়াতাড়ি আবার ভিতরে এসে আমাকে রাগ দেখিয়ে বলতে লাগল- “ধাক্কা দিলে কেন, বলো ধাক্কা দিলে কেন!”

আমি কিছুটা কাঁচুমাচু হয়ে বললাম- “আমি ধাক্কা দিই…”

কথাটা শেষ হতে না হতেই, আমার মনে হল কেউ যেন আমার পিঠে খুব জোরে একটি ধাক্কা দিল, আর আমি গিয়ে পরলাম উঠোনের মাঝে জমে থাকা বৃষ্টির জলে। নিলি আমাকে তুলতে ছুটে গেল।

“নিলি জায়গাটা আমার কিন্তু মোটেও ভাল লাগছে না। আবার আকাশের অবস্থাও কিন্তু খুব খারাপ।“

অন্ধকারে নিলির মুখ পরিষ্কার দেখা না গেলেও বেশ বুঝতে পারছিলাম যে, নিলি অনেক ভয় পেয়ে গেছে। আমরা আবার আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি হাত ধরে। এবার আমার মনে হতে লাগল কেউ যেন আমাদের দিকে দেখছে। না ব্যাপারটা একদম ভাল ঠেকছে না আমার।

পড়ুনঃ- এক ভূতুড়ে বাড়ির রাত 

সেখান থেকে ভিজে ভিজে চলে যাওয়াটাই আমাদের কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত হল। কিন্তু চলতে গিয়ে দেখি, পা যেন বালিয়াড়ির মধ্যে আটকে গেছে। কিছুতেই নড়ছে না। পা গুলো এত্ত ভারী যেন মনে হচ্ছে কেউ লোহার বল পায়ের বেধে দিয়েছে।

আজ নেহাত কিছু একটা ঘটবে আমাদের সাথে! কিছুক্ষণ আগে দৌড়াদৌড়ি করা কালো বেড়ালটি আবার চলে এল। এবার সে সমানে মরা কান্না কাঁদতে লাগল। সব কিছুই বড্ড অদ্ভুতুড়ে লাগছে। আমি নিলিকে বললাম- “নিলি ঠিক আছ তো।“ কিন্তু নিলির কোন জবাব নেই। আমি আবার বললাম- “নিলি নিলি এই নিলি।“ নিলির হাত আমার হাতে থাকলেও নিলি কোন জবাব দিচ্ছে না।

আবার এদিকে নিলি সমানেই আমার হাত জোরে চাপ দিয়ে যাচ্ছে- “আঃ নিলি করছ টা কি, লাগছে তো! হল টা কি তোমার!”

নিলি এক ঝটকায় আমার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার করে বলে উঠল- “মুক্তি চাই” এরপর নিলি মূর্ছা গেল- আমি নিলিকে বারবার ডাকতে লাগলাম। বৃষ্টির জল হাতে নিয়ে তার চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। পরিস্থিতির আকস্মিকতায় আমি নিজেও অবাক হয়ে গেছি। কোথা থেকে কি হচ্ছে আমি নিজেও জানি না।

bengali horror story
bengali horror story
<

এদিকে আমার খেয়াল হল, বৃষ্টিটা প্রায় কমে গেছে, আর পায়ের ভাঁড়টাও নেই। আমি তাড়াতাড়ি নিলিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম। ততক্ষণে ভোরের আলো বেশ ফুটেছে। আর আমাদের শরীর কর্দমাক্ত। কিন্তু নিলির তখনও জ্ঞান ফেরে নি।

একটা রিকশা ভাড়া করে, নিলিকে নিয়ে চলে গেলাম ওর বন্ধুর বাড়ি। প্রায় দুপুর নাগাদ নিলি জ্ঞান ফিরে পায়। নিলির বন্ধুকে গোটা ঘটনা বলার পর সে জানায়- “ওই বাড়িটি একজন জমিদারের ছিল। অদ্ভুত ভাবে একদিন নিজের ঘরেই জমিদারের মৃত দেহ পাওয়া যায়…” নিলির বন্ধু অনেক কিছুই বলে যাচ্ছিল কিন্তু আমার কানে শুধু একটি কথাই বারবার ভেসে আসছিল- “মুক্তি চাই!”

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

ভুতের গল্প- বদলা

মাঠের সেই ভূতুড়ে গাছ
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

এক রহস্যময় রাতের গল্প। ভয়ানক রাতের অভিজ্ঞতা।bengali horror story of a horrible night

Spread the love

Leave a Reply