এই রহস্যময় ছোট গল্প টিতে দেখবেন, অদ্ভুত ভাবেই রক্ষাকবজ হয়ে দাঁড়ায় একজন, কিন্তু কে জানত সেইই পরবর্তীকালে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে!! বিস্তারিত গল্পে…
রহস্যময় ছোট গল্পঃ- “নিখোঁজ”
সারাদিনের ব্যস্ততা থেকে একটু বিদায় নিতে , রত্না বাসে চড়েই ইউটিউব টা অন করে একটা লোফি সং চালিয়ে কানে হেড ফোন নিয়ে , শান্তিতে চোখ বুজে গানটা শুনতে শুরু করলো। ঘ্যানঘ্যানে ট্রাফিক জ্যামে ফেসে ছিল বাস টা বেশ কয়েক ঘন্টা । তবে এসি রয়েছে বলে যাত্রী দের খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি। এর মধ্যে রত্না ঘণ্টা দুয়েক ঘুম দিয়ে বেশ তরতাজা হয়ে , ফোন টা অন করতেই দেখলো চার্জ একেবারে তলাতে এসে ঠেকেছে।
বাস যখন কদমহাটি তে এসে পৌঁছাল তখন রাত্রি ন’ টা বেজে সতেরো মিনিট। রত্না বাস থেকে নেমে পড়লো। বাস স্ট্যান্ড থেকে ওর মেসের দূরত্ব পায়ে হেঁটে প্রায় আধ ঘণ্টা । টাকা বাঁচানোর জন্য, যত রাত্রিই হোক রত্না বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফেরে । কিপ্টে নয় এটাই মধ্যবিত্ত পরিবারের রোজগেরে মানুষটার কর্তব্য ।
রত্না গ্র্যাজুয়েশন এর পর স্বপ্ন পূরণের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় । যদিও পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তার বাবা বেশ কয়েকটা জমি বিক্রি করে দেন , এমনকি মেয়ের অগোচরে লোন ও নিয়েছিলেন। তাই রত্না চাকরি পাওয়ার পর তার মাইনের বেশিরভাগ টাকাটাই গ্রামে তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর অল্প খরচেই নিজের দিনযাপন সম্পন্ন করে। সবে মাত্র সাত মাস হয়েছে রত্না চাকরি পেয়েছে। তবে এরই মধ্যে ওকে দুই বার বদলি করা হয়েছে কিন্তু কারণ অপ্রকাশ্য।
এখন যেখানে কর্মরত রত্না , তার আশেপাশে ভালো ভালো ফ্ল্যাট আছে কিন্তু ভাড়ার দায় বাঁচাতে এই কদমহাটির ছোট্ট রুম টা তেই ও থাকে । প্রায় দিন বাড়ি ফিরতে দেড়ি হয় বলে বাড়ির মালিকের নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো ওকে। এতে বিরক্তির সাথে সাথে বিতৃষ্ণা ও জন্মায় রত্নার ।
তবে আজ এত দেড়ি হওয়ার পরেও বেশ খোস মেজাজে বাড়ি ফিরছে রত্না। কারণ বাড়ির মালিক নিখোঁজ হওয়াতে বাকিরা চিন্তিত হলেও রত্না বেশ আনন্দিত। ওকে আর কোনো প্রশ্নের কৈফিয়ত দিতে হবে না ভেবে শান্ত গতিতে ফিরছে । আর গুন গুন করে গাইছে ” আমাকে আমার মত থাকতে দাও , আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি “।
হটাৎ করে কে যেন পেছন থেকে খুব জোরে বাইক টা ঝড়ের গতিতে চালিয়ে , বারকয়েক রত্না কে গোলগোল করে প্রদক্ষিণ করতে লাগলো। না! রত্নার চোখে ভয়ের লেস মাত্র নেই । ও সেখানেই বসে পড়লো। বাইক থেকে একটি মেয়ে নেমে এসে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বললো ” তুই থাক তোর মতো, তবে আমি থাকবো তোর পাশে। কাল অফিস পৌঁছে তুই খুব আনন্দ পাবি দেখিস।” এই বলে মেয়েটা সেখান থেকে চলে গেলো । গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ল যেন রত্না। কোনোক্রমে বাড়ি ফিরলো।
পড়ুনঃ- রহস্যময় গল্প- আনিসা
পরের দিন অফিস পৌঁছে দেখলো , প্রতিদিন যে কলিকটি ওকে বারেবারে বিরক্ত করতো সে নিখোঁজ , তার জন্যই পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করেছে। রত্না দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। গিয়ে ফোন টা অন করতেই একটা unknown নাম্বার থেকে MSG এলো , যাতে লেখা “কি আনন্দ পেলি তো? ” । সত্যি রত্না খুব আনন্দ পেয়েছে , তবে সেটা প্রকাশ করার পরিস্থিতি সেখানে নেই।
কয়েকদিন পর অফিসে রত্না যখন প্রজেক্ট ফাইল রেডি করছিলো তখন এক গাড়ি পুলিশ এসে হাজির হলো , ওকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো পুলিশ স্টেশন । বারেবারে জানতে চাইলো রত্না :- ওর কি দোষ ?
উত্তরে পুলিশ বললো :- ক্রিমিনাল , দীর্ঘ চার বছর ধরে মোট পনেরো জনকে খুন করেছ , এত সুপরিকল্পিত ভাবে প্রতিটা কাজ করেছ যে আমরা তার কুল কিনারা ও পাইনি। আর জিজ্ঞাসা করছো তোমার কি দোষ?
রত্না নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারলো না , ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে বলল – “স্যার আমি খুনি নই। ওই মেয়েটা খুনি।”
এসিপি স্যার তাচ্ছিল্য সুরে বললেন – “তাহলে অফিসের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ ক্যামেরাটা কি মিথ্যা ! তোমার মুখ দেখা না গেলেও তোমার ব্যাগ আর একটা ফোন পাওয়া গেছে যেটাতে অনেক তথ্যই পেয়েছি আমরা ।”
রত্না কিছুতেই স্বীকার করলো না ও খুনি। বারেবারে শুধু একটাই কথা বলতে লাগলো ” ওই মেয়েটা খুনি , হ্যাঁ হ্যাঁ ওই মেয়েটাই ।”
এরপর কোর্টে হাজির করা হলে , রত্না বারবার বললো সে খুন করেনি , খুন গুলো করেছে , ” একটা অপরিচিত মেয়ে ” যার মুখ রত্না কখনও দেখেনি । রত্না কে কেউ বিরক্ত করলে , সে মেয়েটা নিজে থেকেই এসে রত্নার সাথে দেখা করতো আর ঠিক তার পরের দিনেই রত্না খবর পেতো ,তাকে বিরক্ত করা মানুষটা নিখোঁজ । এভাবেই চার চারটা বছর সেই মেয়েটা রত্নাকে রক্ষা করে এসেছে।
পড়ুনঃ- রক্ত খেঁকো ভুতুড়ে আয়না
সবটা শুনে মেয়েটির ব্যাপারে বিচারক বিস্তারিত জানতে চাইলে রত্না কিছুই বলতে পারলো না । কারণ মেয়েটি সবসময় রাত্রের অন্ধকারে বাইক নিয়ে হাজির হতো, আর তার মুখ ঢাকা থাকত কালো কাপড়ে। মেয়েটি যেদিন আসতো ঠিক সেদিনই ওর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যেতো তাই কোনোদিনও সে ছবি তোলার সুযোগ পায়নি।
এরপরেও রত্নাকে দোষীর খোঁজ করার সময় বিচারক দিয়েছিলেন। কিন্তু রত্নার উকিল কিছুই হদিস পায়নি। তবে দিনদিন রত্না কেমন যেন হতে লাগলো , কেউ কাছে এলেই তেড়ে মারতে আসতো , না খেয়ে থাকতো। এই অবস্থায় ওকে ডাক্তার দেখানো হলে মানসিক রোগীর হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হলো । কেস টা বিচার ছাড়াই রয়ে গেলো , রত্নার সুস্থতার কামনায় । মাঝে মধ্যে রত্নার বাবা ওর সাথে দেখা করতে এলেও, ও দেখা করে না।
কারণ ছোট থেকেই এটা যে ওর স্বভাব , কোনো বড়ো ভুল করলে , ও ওর বাবার সামনে দাঁড়াতে পারে না । তাই ওর বাবাও হয়তো মনে মনে জানেন আসল দোষী কে!
এর পর পাঁচ মাস হয়ে গেছে রত্নাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি । পুলিশ অনেক খোঁজ করেছে কিন্তু কোথাও কোনো হদিস পাইনি।
কারণ সেও বাকিদের মত নিখোঁজ। খোঁজ পাওয়া গেল না সেই রহস্যময়ী নারীর, এরকম অদ্ভুত ভাবে রক্ষা করে এসেছে।।
রহস্যের আঁচে যার ভাবনা-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
এই রহস্যের গল্প গুলি কি পড়েছেন ...!
ভৌতিক গল্প- রহস্যময় নারী
রহস্যময় গল্প- মুক্তির চাবিকাঠি
ভুতের গল্প- মাথা কাটা লাশ
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
রহস্যময় ছোট গল্প। rohossomoy choto golpo. 1 new bengali mysterious story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।