আজকের এই রহস্যময় গল্প টিতে পাঠক দেখবেন, একটি অদ্ভুত পেইন্টিং -কে নিয়ে গড়ে উঠেছে এক অদ্ভুত রহস্য। আর সেই রহস্যের খোঁজে মেতে উঠেছে এই গল্পের মূল চরিত্র, এরপর তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়েই এই রহস্যের গল্প টি।
রহস্যময় গল্পঃ- অভিশপ্ত পেইন্টিং
আজ থেকে প্রায় ২০-২৫ বছর আগের কথা। তখন আমি হায়ার-সেকেন্ডারি ছাত্র। প্রতিদিনের মত সেদিনও স্কুলে গিয়ে দেখি এক জায়গায় সব ছাত্রের ভিড়। আমিও সেই ভিড়ের দিকে পা বাড়ালাম। গিয়ে দেখলাম, আমার প্রিয় বন্ধু অর্জুন সবাইকে কি যেন দেখাচ্ছে!
কৌতূহল ভঁরা মন নিয়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতেই দেখলাম, বন্ধু অর্জুন একটি সেকেলে আমলের পেইন্টিং বা সেইরকম কিছু সবাইকে দেখাচ্ছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও তার সেই জিনিসটি দেখতে পারলাম না। অপেক্ষা করতে লাগলাম শুভ সময়ের।
ইতিমধ্যে, প্রথম ক্লাসের ঘণ্টা পরতেই সবাই সবার জায়গায় হাজির। বন্ধু অর্জুন আর আমি যেহেতু একই বেঞ্চে বসি, সেহেতু সেও তার সেই জিনিসটি নিয়ে বসার জায়গায় চলে এল। হুম পেইন্টিং-ই বটে! আমি তার হাত থেকে পেইন্টিং টি নিয়ে দেখতে লাগলাম।
বড্ডই অদ্ভুত এই পেইন্টিংটি! এই সিংহটি মানুষ নাকি অন্য কোন প্রাণীর শরীর পা দিয়ে ছিরছে, সেই দৃশের ছবি রয়েছে। তবে ছবির শিকার প্রাণীটিকে আমি কিছুতেই চিনতে পারছিলাম না। আর আমার মত সেটা নিয়েই সবাই উৎসুক।
এরপর শিক্ষক মহাশয় ক্লাসে আসলে সবাই সবার জায়গায় চুপচাপ। তবে পেইন্টিংটি দেখার পর থেকে ক্লাসে আমার বিন্দু মাত্র মন নেই। বড্ডই অদ্ভুত সেই প্রাণীটি। এরকম প্রাণীর ছবি আমি কোথাও দেখি নি। ছবিটি দেখে যতটা বোঝা যাচ্ছে, মুণ্ডুটা দেখতে অনেকটা মানুষের মত। আবার মুখমণ্ডলটা অনেকটা অ্যাকসিডেন্টে ছেঁচরে যাওয়া বীভৎস মানুষের মত। শরীরটা আবার একদম ভিন্ন, পেইন্টিংটি অনেক পুরানো হওয়ায় কিছুতেই সেটি ভালো মত বোঝা যাচ্ছে না।
কোনো মতে আমি চারটি ক্লাস শেষ করে টিফিনের সময় বন্ধুর ব্যাগ থেকে পেইন্টিংটি নিয়ে আবার সেটা নিয়ে বসি। সত্যি এই পেইন্টিংটি যতই দেখছি ততই কেমন জানি নেশা পেয়ে যাচ্ছে। বন্ধুর কাছে জানতে পারলাম এই পেইন্টিংটি সে তাদের স্টোর রুমে পেয়েছে।
-“এরকম অ্যান্টিক জিনিস কে তোরা স্টোর রুমে ফেলে রেখেছিস? জানিস এটার মূল্য কত?”
-“মূল্য” পাগলের মত হাঁসতে থাকে অর্জুন। “এই সেকেলে পেইন্টিংটি আবার কে কিনতে যাবে শুনি?”
-“তুই জানিস না, আমার দাদুর কাছে আমি শুনেছি, এরকম পুরনো জিনিসের প্রচুর দাম হয়।“
-“তাই, উম্মম্মম, তাহলে এই পেইন্টিংটির দাম কত হতে পারে?”
-“দাদুকে বলতে হবে।“
-“তাহলে তুই এক কাজ কর, পেইন্টিংটি তুই বরং আজ বাড়ি নিয়ে যা, কাল তো রবিবার সোমবারে নিয়ে আসবি, আর দাদুর কাছে দামটা শুনে আসবি। আর এই সব জিনিস কোথায় বিক্রি করতে হয় সেটাও শুনে আসতে ভুলিস না আবার। তোকে তোর প্রিয় আঁচার কিনে দিব।“
পড়ুনঃ- ভূতের গল্প- ভূতুড়ে গুদামঘর
আঁচারের লোভে আমি এক কথাতেই রাজী হয়ে গেলাম। পেইন্টিংটি তার কাছ থেকে নিয়ে ব্যাগে ভড়ে নিলাম। এরপর দুটি ক্লাসে শেষে স্কুল শেষের ঘণ্টা বাজল।
বাড়ি ফেরার পথে সে আবার এক হুল স্থুল কাণ্ড! রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরার পথে, হঠাৎ করেই আমার মনে জানিনা কিসের আনন্দ অনুভূত হল, ইচ্ছে করল ওই মেইন রাস্তাটাতে গিয়ে নাচি। যেন নাচ একদম উগলে আসছে। আর কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছি না।
মেইন রাস্তাটার মাঝ খানে গিয়ে পাগলের মত নাচ শুরু করলাম। তবে আমি জোর বাঁচা বেঁচে গেছি, হরি কাকা ছুটে এসে আমাকে রাস্তা থেকে না সরালে ট্রাকটি হয়ত আমাকে পিষে দিয়েই চলে যেত।
হ্যাঁচকা টান মেরে হরি কাকা বললেন- “এরকম করতে আছে, অসীম! তুমি বড় হয়েচ না! রাস্তার মাঝে বাচ্চাদের মত নাচ ক্যা?”
-“এমনই ইচ্ছে করল তাই।“
আমি নিজেও অবাক। কেন জানিনা, রাস্তাটাকে দেখেই মনে হল সেখানে গিয়ে নাচি। এরপর বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছে জেগেছে, কিন্তু সেই ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রনে রেখেই বাড়ি ফিরি।
নদীর পাশ দিয়ে ফেরার সময় মনে হল, আচ্ছা আমি যদি নদীতে ডুবে যাওয়ার ভান করি, কেউ কি আমাকে বাঁচাতে আসবে? কেউ কি সিনেমার নায়কের মত আমাকে বাঁচাতে আসবে? এই কথাটা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে যেন আর নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারছিলাম না। হঠাৎ করে আজ আমার কি হল কে জানে!
অনেক সামলে বাড়ি ফিরে, নিজের এই অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছে গুলি জাগার ব্যাপারে নিজেরই সন্দেহ হচ্ছিল। এরকম অদ্ভুত ইচ্ছে তো আমার কোনো দিনই জাগে না!
এরপর স্কুল ব্যাগটা রেখে, পেইন্টিংটি পড়ার টেবিলে বের করে রেখে দিয়ে একটু ফ্রেস হতে চলে গেলাম। ফিরে এসে দেখি সে এক তাজ্জব কাণ্ড! কোথা থেকে যেন রক্তের ছিটে এসে আমার স্কুলের সাদা শার্টটায় লেগেছে। রক্তের উৎস খুঁজতে গিয়েও কোনো কিনারা পেলাম না।
পড়ুনঃ- ভূতের গল্প- মাঠের সেই ভূতুড়ে গাছ
বাড়ির সবাই এখন ভাত ঘুমে ব্যস্ত, এমনকি দাদুও। তাই পেইন্টিংটি দেখার জন্য কাউকেই ডেকে তুললাম না। তাছাড়াও আগামীকাল রবিবার।
রাতের বেলা বই নিয়ে পড়তে বসতে কিছুতেই মন চাইছিল না। মন শুধুই টেবিলের ওই পেইন্টিংটির দিকে চলে যাচ্ছে। সত্যি বড্ড আজব এই ছবিটি, না আর দর সইছে না আমার। আমাকে জানতেই হবে এটি কি প্রাণী!
পেইন্টিংটি হাঁতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে, হঠাৎ মনে হল- আচ্ছা মানুষ ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে কিভাবে! কেমন সেই অভিজ্ঞতা! আমার মধ্যেও সেই অভিজ্ঞতা চেখে দেখার ব্যাকুলতা সৃষ্টি হল। নিজেকে আর যেন কিছুতেই শান্ত রাখতে পারছি না।
আলমারি থেকে মাফলারটি বের করে, সিলিং-এ টাঙ্গাতে লাগলাম। নিজেকে সেখানে ঝোলাতে যাব, ভেবে কি মজাই না হচ্ছিল, হঠাৎ করেই মা চলে এলেন রুমে- “আরে আরে এই সব কি কু-কাজ করছিস তুই।“ বলেই আমাকে নীচে টেনে নামিয়ে দুই গালে দুইটা ঝপাৎ ঝপাৎ করে লাগিয়ে দিলেন।
খবরটা চাওর হতেই সবাই নিমেষে আমার রুমে হাজির। একেক জনের একেক রকম প্রশ্ন। ‘কি চাই তোর বল আমরা সব এনে দিব। কিছু সমস্যা হয়েছে নাকি স্কুলে…’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমার উত্তর শুধু একটাই- ‘আমি ফাঁস লাগানোর স্বাদ একটু অনুভব করতে চাইছিলাম।‘
এভাবেই কেটে গেল সেই সন্ধ্যেটা। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা সবাই মিলে ছাঁদে একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই আমার সেই পেইন্টিংটির কথা মনে হল। রুম থেকে দৌড়ে নিয়ে এলাম সেটি। এনেই দাদুর হাঁতে দিয়ে বললাম- “দাদু দেখ দেখ এটি কি! এটার দাম কত হতে পারে।“
দাদু পেইন্টিংটি দেখেই ‘থ’ বনে গেলেন। দাদু ভালো মত পেইন্টিংটি দেখছে। হঠাৎ করেই আমার মনে হল- আচ্ছা ছাঁদ থেকে যদি আমি লাফ দিই, তাহলে কি মরব, নাকি হাত ভাঙবে নাকি অজ্ঞান হয়ে যাব! উফফ এত চিন্তাই বা করছি কেন, ঝাঁপ দিয়েই দেখি না, কি হয়। আমি ঝাঁপ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম।
পড়ুনঃ- ব্লাডি মেরীর অজানা যত সব ঘটনা
বাবা দৌড়ে এসে আমাকে না ধরলে আমি হয়ত ঝাঁপ দিয়েই দিতাম। আমার এই কাণ্ড কারখানা দেখে সবাই একস্বরে জিজ্ঞাসা করল- “তোর হয়েছে টা কি বলত আজ?” আমি আবার বিজ্ঞের মত উত্তর দিলাম- “আসলে আমি একটু টেস্ট করে দেখতে চাইছিলাম, ছাঁদ থেকে ঝাঁপ দিলে আমি মরব, নাকি আমার পা ভাঙবে নাকি অজ্ঞান হয়ে যাব।“
-“না, তোর হাব-ভাব আমার কিছুই ভালো ঠেকছে না, আজ তুই আমাদের রুমে ঘুমাবি।“ বলেই বাবা আমার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলেন।
পরের দিন ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে। শুনলাম অর্জুনের দাদু আমাদের বাড়ি এসেছে। এত্ত সকাল সকাল অর্জুনের দাদু আমাদের বাড়ি! ব্যাপারটা কি।
তিনি বললেন- “ভাই অসীম তুমি ঠিক আছো দেখে বড্ড খুশি হলাম।“
মা বললেন- “কেন এরকম কথা বলছেন কেন?”
অর্জুনের দাদু বললেন- “ অসীম তোমাকে অর্জুন গতকাল যে পেইন্টিংটি দিয়েছিল সেটি কোনো সাধারণ পেইন্টিং নয় সেটি অভিশপ্ত পেইন্টিং। সেই পেইন্টিংটি আমাদের সরকার পরিবার ব্যাতিত যদি অন্য কোনো পরিবারের ব্যাক্তির হাঁতে আসে, তার মধ্যে আজব আজব ইচ্ছে জেগে উঠে। সে নানা ভাবে মৃত্যুর স্বাদ নিতে চায়।“
কথাটা শেষ হতে না হতেই, আমার মা গতকাল আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলি আগাগোড়া বর্ণনা দিতে লাগলেন। আমার দাদু পেইন্টিংটি অর্জুনের দাদুর হাঁতে দিয়ে বললেন- “প্রথমেই বুঝেছিলাম এটি কোনো সাধারণ পেইন্টিং নয়, দাদু ভাইয়ের আচরণ গুলি আমার সন্দেহ বৃদ্ধি করে, তাই পেইন্টিংটি আমার কাছে রেখে দিই, যাতে দাদু ভাইয়ের কিছু না হয়, আমি বুড়ো মানুষ আমার কিছু হলেও ক্ষতি নেই।“
দাদুর কথা শুনে আমার চোখে জল চলে এল। দৌড়ে গিয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরে বললাম- “এরকমটি বলো না দাদু।“
অর্জুনের দাদু বলতে শুরু করলেন- “আমাদের বাড়িটি বানানোর সময় যখন খোঁড়াখুঁড়ির কাজ হচ্ছিলা তখন একটি বাক্স তে এটি খুঁজে পাই। এরপর এই পেইন্টিং টি যতবারই আমাদের পরিবারের বাইরের কোনো মানুষের হাঁতে পড়েছে ততবারই অঘটন ঘটে গেছে। অর্জুনের কাছে যখন শুনলাম পেইন্টিংটি তোমার কাছে আছে, কোনো মতে রাতটা কাঁটিয়ে চলে এসেছি।“
অর্জুনের দাদুর কাছ থেকে সেই অদ্ভুত দর্শন প্রাণীটির নাম জেনে নিয়েছি। সেই প্রাণীটির নাম হল কিম্বিলুকিস। তবে আমার শার্টে রক্তের দাগ কিভাবে লেগেছিল, তার কিনারা আমি কিছুতেই করতে পারিনি।
গল্পটির স্বত্ব ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটিকে ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে পুনঃপ্রকাশিত করা নিয়ম বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে, অথবা charpatrablog@gmail.com -এই ইমেল ঠিকানায়।
পড়ুনঃ- কি ভয়ানক ছিল সেই রাত! ATM -এর সেই অদ্ভুতুড়ে মেয়েটি! ভূতের বশে তনু!
আমাদের সমস্ত আপডেটের জন্য-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
রহস্যময় গল্প। রহস্যের গল্প। অভিশপ্ত ছবি। ভূতের গল্প। 1 new mysterious short story. bengali story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।