মেয়েদের জীবন গল্প।” মেয়েদের দেখতে যতটা সরল মনে হয়, তাদের জীবন কিন্তু আদতেও অতটাও সহজ নয়। প্রতি পদে পদে তাদের হতে হয় বুলিং এর শিকার। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েদের সাথে ঘটে যাওয়া এই অসামাজিক ঘটনা গুলি প্রকাশ করতে পারে না তারা। কিন্তু চুপ থাকলেই কি অপরাধী চুপ থাকে! আজকের এই মেয়েদের জীবন গল্প টিতে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন লেখিকা।
মেয়েদের জীবন গল্প। ‘স্পর্শ’ ঃ-
ধর্মতলার একটা বাস স্ট্যান্ড। কিছু মানুষ সেখানে বাসের অপেক্ষা করছে। চতুর্দিকে বিচ্ছিরি যানজট। গাড়ি-ঘোরার শব্দ আর লোকজনের ভীড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
অপেক্ষারত কিছু লোকজন চলে যায় তাদের গন্তব্যস্থলের বাস বা অন্য গাড়ি এলে। সেইখানে একটু পরে রিয়াও আসে অটোর জন্য অপেক্ষা করতে। তাকে অটো করে রোজ তার মা স্কুলে নিয়ে যায়। আজ সে একা যাবে কারণ, তার মা মামার বাড়ি কোনো এক দরকারে গেছে। মা অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে যে, রিয়ার একা যেতে অসুবিধা কোনো হবে কিনা! কিন্তু রিয়া মা কে নিশ্চিন্ত মনে থাকতে বলেছে। বাবারও কাজ, তাই বাবাও আসতে পারবে না। যাই হোক রিয়া আজ একাই যাবে স্কুলে।
কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর সে অটো পেয়ে যায় স্কুলে যাওয়ার জন্য। সে উঠে পড়ে অটোতে।
অটোতে আরও একজন লোক ছিল। রিয়া তার পাশে গিয়ে বসে।
কিছুদূর যাওয়ার পর আরও একজন লোক ওঠে ওই অটোতে। রিয়া মাঝখানে হয়ে যায়। অটোটা চলতে শুরু করে। বেশ কিছুক্ষন পর রিয়া খেয়াল করে জানলার ধারের লোকটা যেন খুব বেশি বেশিই তার উপর হেলে পড়ছে। কেমন যেন একটা জড়িয়ে ধরার প্রবণতা। যেন রিয়াকে অনেক কিছু করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু পারছে না!

রিয়া প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে যখন বুঝতে পারে তখন সে ভদ্রতার খাতিরে নিজে কিছু বলে না বরং নিজেই ঠিক করে একটু সরে বসে। কিন্তু রিয়ার ভদ্রতাকে উপেক্ষা করে লোকটা ক্রমাগত তার সাথে অভদ্রতা করে চলে, রিয়া বেচারা কে কি ভাববে এই ভয়ে কিছু বলতে পারে না। গোটা রাস্তা সে এভাবেই আসে আর তারপর স্কুলের সামনে নেমে যায় ভাঁড়া দিয়ে।
রিয়ার মনটা খুব খারাপ লাগছে। মা কে সে কত বড় মুখ করে বলে এলো যে, ও ভালো মতো চলে যেতে পারবে স্কুলে অথচ…।
রিয়ার মন যে কোন কারণে খারাপ সেটা কেউ না বুঝলেও, বুঝে যায় রিয়ার ইংলিশ টিচার মধুশ্রী। মধুশ্রী সদ্য জয়েন করা অল্পবয়সী একজন মেয়ে। তিনি রিয়াকে পছন্দ করলেও সেটা রিয়া বা বাকি স্টুডেন্টদের বুঝতে দেন না। ওনার সবার প্রতিই একই রকম মিষ্টি, মিশুকে ব্যবহার। উনি ক্লাসের মধ্যে অমনোযোগী থাকা রিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, “রিয়া কি হয়েছে তোমার, কি ভাবছ ?”
রিয়া থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে উঠে বলে, “কৈ না তো ম্যাম, কিছু হয়নি তো।”
মধুশ্রী ম্যাম বলেন, “কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে তোমার কিছু হয়েছে।”
রিয়া চুপ করে থাকে। সে অটোর ঘটনাটা না বলে অন্য কথা বলে এড়িয়ে যায়। মধুশ্রী ম্যাম বুঝতে পারেন রিয়া সঠিক কথা বলছে না।
সেদিনটা কোনোরকমে যায়। এদিকে রিয়া এখন প্রায়দিনই একা যায় স্কুলে। আর নানারকম অশ্লীল অভিজ্ঞতা হতে থাকে। কিন্তু মুখ যেন তার সেসময় বোবা হয়ে থাকে। প্রতিবার ভাবে যে কিছু বলবে, কিছু বলবে, বলার জন্য মুখ নিশপিশ করে কিন্তু কিছু বলতে গেলেই কেমন যেন মুখ থেকে বেরোতে চায় না। সামান্য প্রতিবাদ টুকু করলেই ওর কেবল মনে হয় ‘লোকে যদি কিছু ভাবে, লোকে যদি উল্টে আমাকেই খারাপ ভাবে!’
অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে রিয়া যে সকলের কাছে ভালো থাকবে ভেবেছিল তা তার হয় না, পাড়ার বাসিন্দা কিছু মহিলা রিয়ার মায়ের কাছে নালিশ করে অত বড় মেয়েকে একা একা কেন স্কুলে বা অন্য জায়গায় পাঠাচ্ছে। মেয়ে তো নষ্ট হয়ে আসবে তারপর! রিয়ার মা বলে, এসব কি আজেবাজে কথা বলছেন আপনারা?
কাকিমারা বলে, ঠিকই বলেছি, খবর রাখো এখন কিছুর? শোনো মেয়েকে অত লাই দিয়ে মাথায় তুলো না। একটু ঘোরাঘুরি কম করাও মেয়েকে। যতটা পারবে ঘেরা পোষাক পরাবে। আর ছেলেবন্ধু আছে নাকি? যদি থাকে তো বেশি মিশতে দিও না। কখন বলতে কখন কি হবে, তখন কিছু করার থাকবে না। আমরা তোমায় বলে গেলাম , বয়স তো আমাদের কম হলো না, কতোই না দেখলাম, ওসব জানা আছে আমাদের, চলি গো রিয়ার মা।
রিয়ার মা কথা বাড়ায় না। শুধু সে রিয়ার খুব নজর রাখে। না তার মেয়ের উপর তার বিশ্বাস আছে। তার মেয়ে খারাপ কিছু করতে পারে না।
কিন্তু মুখচোরা, লাজুক রিয়া দিনের পর দিন বহু জনের বহু খারাপ স্পর্শ সহ্য করে আসতে আসতে কেমন যেন খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়। সে কেন কিছু বলতে পারছে না কাউকে, সহ্য কেন করছে?
তার কেবলই মনে হচ্ছে কেন যে, সে যদি মা বা কাউকে তার সব সমস্যা শেয়ার করে তাহলে সবাই তাকেই অবিশ্বাস করবে ? মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এইসব ভেবে ভেবে।
একদিন ভীড় বাস। রিয়া বসার জায়গা পায়নি। তারপর অনেক পরে একটা জায়গা পায়। তার সামনে এগিয়ে আসে একটা লোক, যে প্রথম কিছুক্ষণ ঠিক ভাবে দাঁড়ালেও পরে আপত্তিকর ভাবে রিয়ার কাঁধে টাচ করতে থাকে।
রিয়া অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করছিল কিন্তু চিরাচরিত স্বভাবের জেরে কিছু বলতে পারছিল না। কিন্তু এভাবে কতক্ষণ সহ্য করা যায় !
সে হঠাৎ করেই যেন আপনা থেকে একটা কথা বলে ওঠে, “আঙ্কেল, ঠিক করে দাঁড়ান, আপনার আপত্তিকর স্পর্শ আমাকে বিব্রত করছে, প্লিজ ঠিক করে দাঁড়ান।”
লোকটা সকলের সামনে লজ্জায় পড়ে যায়। বাকি সবাই তার দিকে তাকায়, কেউই এতক্ষণ কিছু বুঝতে পারেনি। রিয়া ভাবতেই পারছিল না যে সে এই কথাটা বলেছে? এবার তো লোকে তাকে অনেক কিছু ভেবে বসবে । কিন্তু রিয়ার সমস্ত ভুলের পাহাড় আজ এক নিমেষে ভেঙে যায় মধুশ্রী ম্যাম এর হাততালির শব্দে।
মধুশ্রী ম্যামও সেদিন ঐ বাসে করেই কোথাও যাচ্ছিল। সে ছাত্রী রিয়াকে প্রথমে খেয়াল করেনি কিন্তু তারপর এত ভালো ভাবে খেয়াল করেছে যে বাধ্য হয়ে হাততালির মাধ্যমে রিয়াকে অভিনন্দন জানায় “সাবাস!” বলে । বাসের যাত্রী এমনকি রিয়া নিজেও অবাক। রিয়ার অবাকের প্রথম কারণ ম্যাম উঠেছেন আর সে খেয়ালই করেনি আর দ্বিতীয় কারণ, ম্যাম এভাবে হাততালি দিলেন কেন ?
বাস চলছে। তার মধ্যেই মধুশ্রী ম্যাম সকল যাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলে, “আমাদের দেশের মেয়েরা যতদিন পর্যন্ত মেয়ের পরিচয়ের গন্ডী থেকে বেরিয়ে মানুষের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারছে, ততদিন মেয়েদেরই সমস্যা। আজ আমি ওই মেয়েটার(রিয়া) সাথে যা যা হয়েছে প্রতিটা মুহুর্তই খেয়াল করেছি। কিভাবে লোকটি অসভ্যের মতো অনবরত খারাপ স্পর্শ করে চলেছিলেন মেয়েটিকে, কিন্তু মেয়েটা কিছু বলতে পারছিল না। কারণ এটাই স্বাভাবিক। কারণটা আমাদের সোসাইটি।
আমরা শিক্ষিত হয়েও আদতে একটা আকাট, মূর্খ! শিক্ষিতর মুখোশ পরা অশিক্ষিত আমরা। যেখানে একটি মেয়ে তার সমস্যার কথা কাউকে বললে বা নিজে প্রতিবাদ করলে ‘সো কলড সোসাইটি’ কতক্ষণে মেয়েটার ঘাড়ে গোটা দোষটা চাপানো যায় সেটা ভাবে। আর অল্পবয়সী মেয়ে হলে তো দোষ চালানোর দায়িত্ব পালন আরো সহজ। অল্পবয়সী মেয়ে মানেই সে উচ্ছৃঙ্খল। তার সখ আহ্লাদ, সাজগোজ, পোষাক আশাক সম্পর্কে মানুষের মনের সমস্ত বিকৃত মতামত ফুটে ওঠে। একটা কথা আছে জানেন তো, ‘আপনার মেয়েকে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে না শিখিয়ে, আপনার ছেলেকে ধর্ষণ বন্ধ করা শেখান।’
বাসে, অটোতে, রাস্তায় বা অন্যান্য সব জায়গায় মানুষ বসে বসে খবরের কাগজ খুলে নারীদের অবস্থার কথা পড়ছে, দেখছে, জানছে, শুনছে, বলছে কিন্তু নিজের চোখের সামনে যেটা ঘটছে, সেইটা দেখে প্রতিবাদ করার সময় মানুষ অন্ধ ও মূক। অনেক সময় অপ্রিয় তিক্ত সত্য শুনতে বধির হতেও হয়।
কিছু কিছু মেয়ে আছে ঐ মুহূর্তে প্রতিবাদ করে দেয় কিন্তু এমন অনেক মেয়েই আছে যারা অন্য সবকিছুতে নয়, শুধুমাত্র এই সমস্ত নোংরা অপরাধের সময় প্রতিবাদ করে না বা করতে পারে না। কিন্তু আদতে এইক্ষেত্রেই প্রতিবাদ সবচেয়ে বেশি দরকার।”
হঠাৎ করে কথার তাল কেটে একজন লোক বলে ওঠে, “আপনি কি এখনকার দিনের মেয়েদের কোনো দোষই যে নেই, এইটা প্রমাণ করতে চাইছেন?”




“একদমই না।” বলে ওঠেন মধুশ্রী ম্যাম। আবার বলা শুরু হয়। তিনি বললেন, “একটা মানুষ কে বাইরের আবরণ দেখে ভালো বা খারাপ বিচার করা যায় না অত সহজে। সে ছোট পোষাক পরেছে বলে সে খারাপ আর আরেকটা মেয়ে শাড়ি পরেছে বলে খুব ভালো এইসবই হল অযৌক্তিক কথাবার্তা। এই দেখুন না, তার প্রমাণ তো এখানেই। পোষাক বা অন্য কোনো কিছুই আসলে ভালো বা খারাপ কোনোটাই নয়, আমরা আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করি। যার দৃষ্টিভঙ্গি যেমন অর্থাৎ যার ভালো সে ছোট পোষাককে যেমন সম্মানের চোখে দেখবে তেমন যার দৃষ্টিভঙ্গি খারাপ সে শাড়ির ফাঁকেও নারীর অঙ্গ দেখতে পাবে।
উল্টোদিকে যদি মেয়েরাও নিজেদের অনেক সচেতন, অনেক প্রতিবাদী রাখতে জানে, নিজেকে ঠিক রাখতে জানে তাহলে সে ছোট পোষাকটাকেও অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারবে। কিন্তু আর কি বলা বলুন, যেমন লোকজন, তেমনই মেয়েরা! কাকে বলব! মোট কথা, খারাপ মানুষদের অন্যায়, ভুল কাজের ভাগীদার ভালো মানুষদেরও হতে হয়।”
এরপর মধুশ্রী আততায়ী লোকটার দিকে তাকায়। লোকটার লজ্জায় বাস থেকে নেমে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মধুশ্রী ম্যাম বলেন, “শুনুন দাদা, আপনাদের মতো কিছু অসামাজিক মানুষদের জন্য, অনেক মেয়ে ডিপ্রেশনে চলে যায়। নিজের বাড়ির মেয়ের সাথে যদি ঠিক একই ঘটনা ঘটে, পারবেন তো মেনে নিতে? অন্যের মেয়ের সাথে হলে তো অন্যের মেয়েটা “খুব আকর্ষনীয়” তকমা পায়, নিজের মেয়ের বেলায় কোনো লোক যখন ঠিক একই মন্তব্য করবে ভালো লাগবে তো?
এখন প্রতিটা যানবাহনে অনেক নারীবাদী বাক্য লেখা থাকে, ওগুলো দেখে আমার প্রহসন মনে হয়। মনে হয় “নারীবাদীর পেছনে নারীহানী।” প্রতিটা মেয়েরই সম্মান পাওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে, পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। ভাববেন না আপনারা দয়া করে সম্মান করবেন আর আমরা হাত পেতে সেই দয়ার দান নেবো, যেটা অধিকার সেটা ভালো ভাবে না পেলে ছিনিয়ে নেবো, কিন্তু আপনাদের দলবদ্ধভাবে গলা ফাটিয়ে , ব্যানার হাতে, নারীবাদী দেখিয়ে ঐ প্রহসনের সম্মান চাই না বুঝেছেন!”
মধুশ্রী ম্যাম রিয়াকে নিয়ে নেমে যাওয়ার আগে বলেন, “প্রতিটা মহিলাকেই বলছি, একটু একটু করে সমাজকে খারাপ হতে দেবেন না। যেকোনো খারাপ কিছুর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করুন। স্পর্শ অতি পবিত্র। কিন্তু মানুষের মন যেখানে অপবিত্র সেখানে মন্দিরও অপবিত্র হতে পিছপা হয় না। অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেন না কখনো। আগে নিজের সম্মান তারপর অন্যকিছু।”
রিয়া ম্যাম এর সাথে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “ম্যাম আপনি সব দেখেছিলেন তখন?”
“হ্যাঁ রিয়া। আর আমি এও জানি যে তুমি এই কারণেই একদিন খুব আপসেট ছিলে।”
রিয়া চুপ করে থাকে।
মধুশ্রী ম্যাম বলেন, “রিয়া এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে প্রতিবাদ না করে, একা একা গুমড়ে মরাটা একটা বোকামি এবং আরো অনেক বেশী অন্যায়। তুমি তো একটা অন্যায়কারী কে সুযোগ দিচ্ছ বারবার কেন তুমি তা করবে বলো?”
“ম্যাম আমি বলতে চেয়েছি ওই লোকেদের উপর, কিন্তু বারবার লজ্জায় বলতে পারিনি, সবাই কি ভাববে তাই বলতে পারিনি।”
“এইটাই তো সবচেয়ে বড় ভুল করেছ রিয়া, লোকে কি ভাবল তোমার দেখার কোনো দরকার নেই, তুমি জানো তুমি কি করছ। তুমি জানো তুমি ঠিক আছো। লোকে তো বলার জন্যই আছে। বলতে বলতে একসময় থেমে যায়। তুমি এক কান দিয়ে শুনবে এক কান দিয়ে বার করে দেবে। একজীবনে অত লোকের কাছে ভালো থাকতে যেও না, গেলে নিজেরই ক্ষতি।
এই যে এতদিন ধরে কত লোক তোমাকে খারাপ ভাবে টাচ্ করেছে, তুমি কি করেছ, চুপচাপ বোকার মতো সহ্য করেছ প্রতিবাদ না করে। না রিয়া, এটা তুমি ঠিক করোনি। নিজেকে কেন এত দূর্বল ভাবো? মনে রাখবে তুমি যদি চাও তাহলে তুমিই সবচেয়ে সবল হতে পারো। তোমাকে দূর্বল তখনই সবাই ভাববে বা করতে পারবে যখন তুমি নিজেকে নিজে দূর্বল ভাববে। মেয়েদের শরীর কি এতোই সহজলভ্য, সস্তা বলো রিয়া বলো!” কড়া ধমক দিয়ে বলে ওঠেন মধুশ্রী ম্যাম।
রিয়া নিজের করা এতদিনের ভুল বুঝতে পারে। সে ম্যাম কে কথা দেয় সে আর কোনোরকম কোনো অন্যায় সহ্য করবে না। প্রতিবাদ করবে। আর যারা তার মতো মেয়ে, তাদেরকেও বোঝাবে।
মধুশ্রী খুশি মনে বলে, “বেশ, চলো কিছু খাওয়া দাওয়া করি।”




এই বলে সে একটা দোকানে যায় রিয়া কে দাঁড়াতে বলে। রিয়া অপেক্ষা করতে করতে দেখে একটা ছোটো মেয়েকে দু’টো বড় ছেলে অনবরত বিরক্ত করছে। ছোট মেয়েটা যতবার বলছে, দাদা কখন আসবে? ততবারই ছেলেদুটো বলছে, দাঁড়াও বাবু, তোমার দাদা আমাদের সবার জন্য আইসক্রিম আনতে গেছে।
রিয়া এগিয়ে যায় বাচ্চা মেয়েটা কেঁদে উঠেছে বলে।
আর সজোরে একটা থাপ্পড় মারে ছেলে দু’টোকে। বলে, “লজ্জা করে না, ছোট বোনের বয়সী মেয়ের সাথে অসভ্যতা করছিস! বাচ্চা টা কিছু বোঝে না এসব আর তার ফায়দা লুটছিস। এই বলে থু থু দেয় রিয়া তাদের। আর বাচ্চা মেয়েটাকে কাছে টেনে নেয়। হঠাৎ করে মেয়েটার দাদা আইসক্রিম নিয়ে চলে আসে আর এই কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়। রিয়া বলে, কীরকম অকৃতজ্ঞ, অসভ্য, নোংরা, বর্বরোচিত পশুমার্কা বন্ধুদের কাছে নিজের বোনটাকে রেখে গেছেন বুঝতে পারছেন! বন্ধু বলে খুব বিশ্বাস তাই না! বোনের সাথে অসভ্যতা করছিল। ওদের বুঝিয়ে দেবেন মেয়েরা ছেলেদের হাতের খেলনা নয় যে যখন যা ইচ্ছা করবে। মেয়েদের সম্মান করতে শিখলে তবেই যেন কারোর বোনের হাত ধরতে পারে, চলি।”
মধুশ্রী ম্যাম ফিরে এসে বলেন, “নাও রিয়া অনেক বলেছ, মেরেছ এবার কেকটা খেয়ে নাও আর বাড়ি চলো।”
গল্পের প্রেরিকা- সুস্মিতা গোস্বামী
গল্পটির পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি যার কলমে-
অতি সহজে আপনার গল্প পাঠান- charpatrablog@gmail.com -এ
সুস্মিতার লেখা যে গল্প গুলি পাঠকেরা পছন্দ করেছেন- অবহেলা থেকে ভালোবাসা। স্কুল লাইফের প্রেম স্কুল জীবনের দুষ্টুমি (হাসির গল্প)
অতি সহজে আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন- ফেসবুক গ্রুপ- গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২) টেলিগ্রাম- CharpatraOfficial
“মেয়েদের জীবন গল্প। জীবন নিয়ে বাস্তব গল্প। story on girls life”




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।
দারুন লিখেছেন। 🙏👌