মুরগী আগে না ডিম, এ এক মহা জটিল প্রশ্ন। অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মহান ধাঁধার মধ্যে পড়ে যান যে যদি মুরগী না থাকে, তাহলে ডিম আসল কোথা থেকে, আর ডিম ই যদি আগে এসেছে তাহলে সেই ডিমটি এল কোথা থেকে? চলুন আজ এই প্রশ্নটির সমাধান দিয়েই দেওয়া যাক যে, কে আগে এসেছে মুরগী নাকি ডিম!
আপনার আমার মত এই প্রশ্নটি যে বুদ্ধিজীবীদের ভাবায়নি তা কিন্তু নয়। এই প্রশ্ন তাদেরও যথেষ্ট পরিমাণে ভাবিয়েছে। অত দিন এই প্রশ্নটির উত্তর আমাদের কাছে ছিল না, কিন্তু বর্তমানে এই প্রশ্নটির উত্তর আমাদের কাছে আছে।
মুরগী আগে না ডিম আগে। মুরগি কোথা থেকে এসেছে?
আপনি যদি প্রশ্ন করেন ডিম আগে না মুরগী, তাহলে অবশ্যই ডিম আগে। কারণ যখন পৃথিবীতে মুরগির কোনো চিহ্ন ছিল না তখন ডাইনোসরেরা ডিম পেড়েছিল।
Ok jokes apart… প্রশ্ন মুরগির ডিম আগে এসেছে নাকি মুরগী ?
মুরগী আগে না ডিম আগেঃ-
ব্রিটেনের বার্কবেক ইউনিভার্সিটিতে একদল প্রফেসর প্রথমে মুরগী এসেছে নাকি ডিম, সেই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার জন্য মাঠে নেমে পড়েন। শুরু হয় গবেষণা, দীর্ঘ সময় পড় বিজ্ঞানীরা প্রমান সহ মুরগি আগে এসেছে নাকি মুরগির ডিম এই প্রশ্নটির যুক্তি সম্মত উত্তর দেওয়ার মত তথ্য হাতের কাছে পেয়ে যান।
এক কথায় বলতে গেলে, বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে প্রথমে মুরগি এসেছে, পড়ে এসেছে মুরগির ডিম। গবেষণায় মুরগির ডিমের খোলসে এক প্রকার প্রোটিন পাওয়া গেছে, আর সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল এই প্রোটিন শুধুমাত্র মুরগির শরীরেই পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে কি, ডিম থেকে মুরগীতেও তো এই প্রোটিন আসতে পাড়ে? একটু অপেক্ষা করুন এরও উত্তর আছে।

মুরগির শরীরে প্রাপ্ত এই বিশেষ প্রোটিনটির নাম হল ওভোক্লিডিন। জানেন কি এই প্রোটিনটির কাজ কি? মুরগির শরীরে প্রাপ্ত এই প্রোটিনটি ডিমের খোলস গঠন করতে সাহায্য করে। এই প্রোটিন ছাড়া ডিমের খোলস গঠিত হবে না। আর ডিমের খোলসে এই প্রোটিন আসবে তখনই যখন এটিকে বাইরে থেকে প্রয়োগ করা হবে। বাইরে থেকে প্রয়োগ করা হবে অর্থাৎ কোনো প্রাণী মারফত এটি তার অভ্যন্তরে সরবরাহ হবে।
সুতরাং খোলস গঠনে সাহায্য কারী এই প্রোটিন মুরগির শরীর থেকে ডিমের খোলসে সরবরাহ হয়েছে। মুরগির গর্ভাশয়ে উৎপন্ন এই প্রোটিন, যতক্ষণ পর্যন্ত ডিমের খোলস গঠনে সাহায্য করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত ডিম গঠন সম্ভব নয়, যা প্রমান করে যে, মুরগি প্রথমে এসেছে।
মুরগি আগে এসেছে নাকি মুরগির ডিম, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য যে গবেষকের দলটি গবেষণা চালিয়েছিলেন তাদের মুখপাত্র ছিলেন কলিন ফ্রিম্যান। তার মতে- “ওভোক্লিডিন প্রোটিন ছাড়া ডিমের গঠন সম্ভব নয়, আর এই প্রোটিন ছাড়া ডিম অসম্পূর্ণ। বিশেষ এই প্রোটিন মুরগির শরীরেই পাওয়া যায়।“
সুতরাং মুরগি আগে না মুরগির ডিম, সেটি প্রমাণিত। কিন্তু এই প্রশ্নের সমাধান হওয়ার সাথে সাথে আরেকটি প্রশ্নের উদয় হয় যে, তাহলে মুরগি টা এল কোথা থেকে? “সৃষ্টি কর্তার হাত ধরে?” উঁহু, আমি ধর্ম অবশ্যই মানি, কিন্তু সর্বক্ষেত্রে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসার পক্ষপাতী আমি নই।
তাহলে চলুন, জেনে নিই, মুরগি কোথা থেকে এসেছে?
পড়ুনঃ- অন্য প্রাণী মাকড়শার জালে আটকা পড়লেও মাকড়শা নিজের জালে আটকায় না কেন?
মুরগি কোথা থেকে এসেছে?
অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন যে, মুরগির উৎপত্তি স্থল দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া। সেখান থেকেই মুরগি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মুরগির পূর্বপুরুষ হল, লাল বনমোরগ, যার বৈজ্ঞানিক নাম হল- Gallus Gallus.

জীবন বিজ্ঞান বইটি ঘাঁটলেই ডারউইনের বিবর্তন বাদ নামে একটি তত্ত্ব আমরা জানতে পাড়ি। এই তত্ত্ব অনুসারে বর্তমান দিনে আমরা যে সমস্ত প্রাণীদের দেখি, সেগুলি আসলে, পূর্বের কোনো প্রাণীর বিবর্তনের রূপ।
এই গ্যালস গ্যালস –এর বাসস্থান ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গল। বিশেষ এই প্রজাতির সঙ্গে বনমোরগ অর্থাৎ Galliformes এর মিলনে একটি মিশ্রিত প্রজাতির জন্ম হয়। আর এই মিশ্রিত প্রজাতির বিবর্তিত রূপই আমাদের কাছে মুরগি নামে পরিচিত।
আবার আরেকদল বিজ্ঞানীর মতে, বিবর্তন অত্যন্ত মন্থর একটি প্রক্রিয়া। তাদের মতে, যখন পৃথিবীতে মুরগির কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তখন অনেকটা মুরগির মত দেখতে (পূর্বেই নাম বলা হয়েছে) দুটি ভিন্ন পাখি, পরস্পর মিলিত হয়। এদের মিলনে অনেকটা মুরগির মত দেখতে পাখির জন্ম হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এই পাখিটিকে বলা হয় প্রোটো চিকেন অর্থাৎ মুরগী ঠিক নয়, অনেকটা মুরগির মতন।
এরপর যখন আবার এদের মধ্যে মিলন ঘটে, তখন থেকেই মুরগির যাত্রাপথ শুরু হয়। এরপর পরিব্যাক্তির মাধ্যমে বর্তমান মুরগির রূপ ধারণ করে।
ঠিক যেমন ভাবে আর্কিওপ্টেরিক্স সরীসৃপ এবং পাখির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটায়, তেমনই পূর্বে উল্লিখিত মুরগী স্বরূপ পাখি দুটি মুরগির মধ্যে মেল বন্ধন ঘটায়।
এখানে আবার একটি প্রশ্নের উদয় হয়, বর্তমান দিনেও তো বনমুরগী এবং লাল বনমোরগ দেখা যায়, আর্কিওপ্টেরিক্স বিলুপ্ত হলে, সেগুলিও বিপুপ্ত হওয়ার কথা, কিন্তু সেগুলি বিলুপ্ত হয়নি কেন?
কোনো জীব পৃথিবীতে টিকে থাকবে তখনই যখন প্রকৃতিতে হওয়া বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পাড়বে। অন্তত প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব আমাদের তাইই জানান দেয়। ঠিক যেমন ভাবে মানুষের পূর্ব পুরুষ বানর পৃথিবীতে টিকে আছে, ঠিক সেইভাবেই দৈহিক পরিবর্তন ঘটিয়ে বনমুরগী এবং লাল বন মোরগও পৃথিবীতে টিকে আছে।
তবে তাদের বর্তমানের রূপ এবং পূর্ববর্তী রূপের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। কারণ পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হলে জীব তথা প্রাণীকে শারীরিক পরিবর্তন করতে হয়, অন্যথায় সে প্রাকৃতিক নির্বাচনে নির্বাচিত হবে না, এক কথায় প্রকৃতি থেকে সে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

এককথায় বলতে গেলে মুরগী এসেছে প্রোটো চিকেন থেকে, অর্থাৎ প্রোটো চিকেন হল মুরগির পূর্ব-পুরুষ। আর প্রোটো চিকেন এসেছে, পূর্বে উল্লিখিত পাখি দুটির মিলনের ফলে। সর্বদা মনে রাখা উচিত যে, সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতির জন্ম তখনই ঘটে যখন দুটি ভিন্ন গোত্রের প্রাণী পরস্পর মিলিত হয়, আর মুরগী হল তারই এক নমুনা।
এবার যদি পাগলের মত প্রশ্ন করেন সেই পাখি দুটি কোথা থেকে এসেছে, তাহলে আমি বলতে বাধ্য হব যে, অবশ্যই কোনো প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে।
from admin's desk © reserved by Admin.
আপনার যে লেখা গুলি পছন্দ হতে পাড়ে- ৯৯% মানুষ এই তথ্য গুলি জানেন না। কিছু প্রশ্ন যার উত্তর আপনার জানা জরুরী
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- WhatsApp-ছাড়পত্র (২) ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- CharpatraOFFICIAL
“ডিম আগে না মুরগি আগে। অজানা প্রশ্ন উত্তর। মুরগি কোথা থেকে এসেছে?”

কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।