মাকে নিয়ে লেখা গল্প টিতে প্রথমে মায়ের প্রতি অবহেলা এবং পরবর্তী ঘটনাক্রমে মায়ের প্রতি মেয়ের ভালোবাসার জাগরণ দেখানো হয়েছে।

মাকে নিয়ে লেখা গল্পঃ- ‘মা এক অপ্রকাশ্য ভালোবাসা’

রাইমা তার মায়ের মুখের দিকে চেয়ে , পলক ফেলতেই জড়িয়ে ধরলো । চোখে তার আত্মগ্লানির জল , মনে এক চরম বিষাদ…”মা , তুমি আমার সব ….।”

ছোট থেকেই রাইমা একটু বকবকে আর সিধে সাধা মনের মেয়ে । এটাই ওর স্বভাব গত বৈশিষ্ট্য । তাই সহজেই কাউকে বিশ্বাস করা ,আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করা , নিজের মর্জিতে জীবন যাপন করা, এটাই ওর চরিত্র। তবে এই জীবনে কার কাছে কতটুকু পেয়েছে আর কতটুকু অবহেলায় হারিয়েছে সেটা অনুমান করতে বসে, ওর জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বেড়েছে ।

সবাই কে গুরুত্ব দিলেও ওর মায়ের প্রতি অবহেলাটা যেন একটু বেশিই। এটাই শেষমেশ ও বুঝতে সক্ষম হয়েছে । মা সাধারণত বাড়ি থেকে বাইরে বেরোয় না । সভ্য দের ভাষায় যাকে বলে নাকি ” হাউস ওয়াইফ ” তবে আজ রাইমা নিজেও দ্বিধাগ্রস্ত, তার মা আদৌ কি শুধুমাত্র ” হাউস ওয়াইফ “না তার বাবার রাখা ” হাউস কিপার “।

যাই হোক ঘটনাক্রমে মা কে নিয়ে এমন ভাবনা আসার পেছনে অনেকগুলো কারণই দৃশ্যমান ।

মাকে নিয়ে লেখা গল্প
মাকে নিয়ে লেখা গল্প Image by Kate from Pixabay

রাইমা প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার আগে, বাবার কাছে টাকা খোঁজার আগেই , তার মা তার ব্যাগে টাকা ঢুকিয়ে রেখে দেয় । দরকারের চাইতেও কিছুটা বেশিই টাকা তার ব্যাগে থাকে। হয়ত যে টাকা তার বাবা তার মাকে সাধারণ খরচার জন্য দেন, তার থেকেই টাকা বাঁচিয়ে মেয়ের মানি ব্যাগ পূরণ করে রাইমার মা ।

রাইমা কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তার মা বলে ” বেটু , একা যাতায়াত করিস তো তাই কখন কি বিপদ আপদ হয় , তাই জন্য দিয়েছি । আর বন্ধুদের সাথেও খেতে যাস তো ,তখন টাকা না থাকলে লজ্জায় পড়তে হবে , তাই বেশি করেই দিই তোকে । তবে এই কথাটা আবার বাবার কানে তুলিশ না যেন …!

রাইমা হাসি মুখে রওনা দেয়। প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে এ – দোকান , ও – দোকান ঘুরে খাওয়া দাওয়া , জমিয়ে আড্ডা , পড়াশোনার চাপ , সবকিছু নিয়ে বেশ ব্যস্ত ওর জীবন ।

এর মাঝেই একদিন হঠাৎ করে রাইমার মায়ের শরীর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তার বাবা হসপিটালে ভর্তি করেন । কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে পাশের বাড়ির কাকিমার মুখে সবটা শুনে , মা , মা করে কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা হয়ে , যেন কোন ভাবনায় প্রবেশ করে । ভাবনাতেই ঘটে তার স্মৃতিচারণ ।

পড়ুনঃ- নিস্তব্ধতাই হল সবথেকে বেস্ট রিপ্লাই 

সেদিন যখন মায়ের সাথে বাজার গেছিলাম , মায়ের একটা শাড়ি খুব পছন্দ হয়েছিল । কিন্তু আমার পছন্দের সোয়েটারটা কিনতে গিয়ে মায়ের টাকা শেষ হয়ে গেলে , শাড়িটা আর কেনা হয়নি মায়ের । কিছুদিন পর যখন আবার অনলাইন থেকে একটা সোয়েটার কিনলাম তখন মা আবার বাবার কাছে মিথ্যে বলে টাকা নিয়ে আমার সখ মেটাতে সেই টাকা দিয়েছিল ।

কেন ? মা সবসময় এরকম করে কেন ? মায়ের পছন্দের কি কোনো দাম নেই? নাকি, আমার কাছে মায়ের কোনো দাম নেই ?
মা গৃহবধূ বলেই সব বাধানিষেধ মায়ের ওপরেই চাপানো হয়। তাই একা বাইরে বেরোনোর সুযোগ খুব কম হয় মায়ের । তবে মাসে একবার ওই ব্লকে না কোথায় যেন গ্রুপ মিটিং এ যায়, আর বাড়ি ফেরার সময় সবার পছন্দের খাবার , আলাদা আলাদা করে ঠিক মনে রেখে নিয়ে আসে। মানুষটা একদিন বাইরে বেরোয় তাতেই সবার পছন্দের জিনিস নিজের জমানো টাকায় কিনে নিয়ে আসে।

মায়ের জন্য ভালোবাসা
মায়ের জন্য ভালোবাসা

আমিও তো প্রতিদিন কলেজ টিউশন যাই , বন্ধুদের সাথে কতো ভালোভালো রেসুরেন্ট এ ঢুকি , নানান ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যেস আমার । আর সেই অভ্যেস এর মান রাখার দায়িত্বও তো মা-ই নেয়। তবে, কই কোনোদিনও তো আমার মন যায়নি মায়ের জন্য কিছু খাবার প্যাক করে নিয়ে যাওয়ার ! কষ্ট করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার ভয়েই হয়তো এই ভাবনার উদয় কখনো হয়নি । সত্যি বলতে আমি তো নিজে ঠিক করে জানিই না ” মায়ের পছন্দের খাবার কি “? তবে এটা কি শুধুই অবজ্ঞা নাকি অবহেলা ?

বাড়িতে এত কাজ একা হাতে সামলাতে সামলাতেও, কই কখনো তো মা বিরক্ত হয়ে কানে হেড ফোন গুঁজে , দাম করে দরজা টা মুখের ওপর লাগিয়ে দিয়ে বলেনি ? ‘তোমরা আমার কেউ হও না । সবাই স্বার্থপর , তুমিও স্বার্থপর।’ বরঞ্চ মায়ের মন খারাপ হলে আমায় জড়িয়ে ধরে নিজের শাড়ির আঁচলেই চোখ মুছে , ‘দেখ তো চোখে কি পড়লো আবার,’ বলে উঠে চলে গেছে।

কোনোদিন মা অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলেও , ‘ধুর ! যত্তসব ন্যাকামো’ , ভেবে খুব জরুরি ক্লাস আছে বা পরীক্ষা আছে বলে অজুহাত দিয়ে বেরিয়ে গেছি । একটা দিন ও মায়ের সেবা করার মনোভাব পোষণ করিনি । কিন্তু আমার একটু শরীর খারাপ হলেই , মা যত্ন করে সেবা করে সুস্থ করে তুলেছে আমাকে ।

এটাকি শুধু নিকৃষ্ট মনোভাব নাকি ব্যর্থতা ?

এভাবে এক এক করে যখন ওর সব ত্রুটি গুলো মনে পড়ছে আর আত্মগ্লানিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে মন যাচ্ছে তখন পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো ” বেটু” পেছন ফিরে সেই মায়ায় ভরা মুখটাকে এই প্রথম বার রাইমার খুব সুন্দর মনে হলো । সে জড়িয়ে ঝরলো তার মা কে ।

মা… ও মা … আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মা , খুব খুব … কথা দাও কোনোদিনও আমায় একা ফেলে কোথাও চলে যাবে না ।
‘কে বলেছে , আমি তোকে ছেড়ে চলে যাবো ? পাগলী একটা , সবসময় ছায়া হয়ে তোর পাশে থাকবো , মা আমার , আর কাঁদে না । চোখের জল মুছে ফেল পাগলী ।’

পড়ুনঃ- আধুনিক শিক্ষণীয় গল্প- অশ্লীল আসক্তি 

উপদেশ মূলক গল্প 

রাইমা চোখের জল মুছে লক্ষ্য করলো সে হাওয়াতে হাত দুটো গোল করে ধরে আছে । হাতের ফাঁকে আর তার মা নেই । মা… ও মা কোথায় গেলে তুমি ? এখুনি কথা দিলে যে কোথাও যাবে না আমায় ছেড়ে , তাহলে আবার চলে গেলে কেনো?

কানে গম গম আওয়াজে শুনতে পেলো রাইমা তার মায়ের গলার আওয়াজ ” আমি সবসময় ছায়া হয়ে পাশে থাকার কথা দিয়েছি মা । আর চাইলেও যে আমি ধরা দিতে পারবো না । নতুন জীবন সূচনার সময় আসন্ন ভালো থাকিস ।”

বাইরে অ্যাম্বুলেন্স আর কান্নার আওয়াজে হঠাৎ রাইমার ঘুম টা ভেঙে গেলো । ঘুমের মধ্যেই বিছানার বালিশ সব চোখের জলে ভিজে একাকার অবস্থা। কাঁদতে কাঁদতে রাইমা মা মা করে চিৎকার করে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলে , দেখতে পেলো তার বাবা সকাল সকাল খবরের চ্যানেল অন করে মনের আনন্দে কফির কাপে চুমুক দিয়ে খবর উপভোগ করছেন । তবে মেয়ের এরূপ চিৎকারে , একটু থতমত খেয়ে গরম কাপে ঠোঁট পুড়িয়ে , ধমক দিয়ে বলে উঠলেন ” সক্কাল সক্কাল , মায়ের ভুত চাপলো নাকি মাথায় ?”

রান্না ঘর থেকে শাড়ির আঁচলে রাইমার মা হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলে রাইমা চিৎকার করে কান্নায় মেঝেতেই লুটিয়ে পড়লো । তার মা তাকে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে , প্রথম ঝলকে বিশ্বাস না করলেও , তার মায়ের চোখ মুখ মাথা স্পর্শ করে বলে উঠলো ” মা তারমানে তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যাও নি ? সবটাই আমার দুঃস্বপ্ন ছিল !”

মা ও মেয়ের গল্প
মা ও মেয়ের গল্প
<

“দেখো মেয়ের কাণ্ড ! আমি তোকে ছেড়ে আবার কোথায় যাবো ? খেঁপি , সকাল সকাল কিসব স্বপ্ন দেখে বাচ্চাদের মত কাঁদতে বসেছে,” এই বলে রাইমার মা তার মেয়ের কপালে হামি দিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ।

একমুহুর্তের জন্য সারা পৃথিবীটা ওর মাথার ওপর ভেঙে পড়লেও পুনরায় মা কে ফিরে পাওয়ার আনন্দে যেন পুনর্জন্ম লাভ করলো রাইমা। এখন তার কাছে তার মা মানেই তার পৃথিবী । মায়ের প্রিয় খাবারই হোক বা প্রিয় শাড়ি, কোনোটাই মুখ ফুটে আর তার মা কে বলতে হয়না । রাইমা সবটুকু দিয়ে নিজের মায়ের খেয়াল রাখে । কারণ এটা যে তার পুনর্জন্ম।।

মা মানে ভালোবাসা , মান, অভিমান , হাসি , কান্না , অনুভূতি , এককথায় বলতে গেলে চলমান এই শরীরের গতি হলো মা । ভালোবাসা প্রাণ হলে, অনুভূতি মা। মা পাশে থাকলে জীবনে খামতি কিছু থাকে না। আর যাই হোক মায়ের সাথে কোনোদিনও হয়না কারুর তুলনা । মা এমন একটা বই যার শুরু হলেও শেষ হয় না, কারণ টা একটাই , তিনি যে মা … ।।

আলোরানি মিশ্র

অসাধারন ভাবনায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
আলোরানির কিছু জনপ্রিয় লেখা- 
হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প 

ভুতের গল্প- মুক্তির চাবিকাঠি 

বাবাকে নিয়ে লেখা একটি অসাধারন গল্প 

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial (অথবা, টেলিগ্রামে সার্চ করুন- charpatraofficial) 

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

মাকে নিয়ে লেখা গল্প। মায়ের জন্য ভালোবাসা। মা ও মেয়ের গল্প।

Spread the love

Leave a Reply