সমস্যা, সমস্যা বিশাল বড় সমস্যা। আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন থেকেই ভূতুড়ে কাণ্ড হচ্ছিল। তাই আমি আর আমার দিদি ঠিক করি, এই ভূতুড়ে কাণ্ডের সমাধান করব। কারণ কয়েক মাস থেকে গোয়েন্দা বই পড়তে পড়তে নিজেদেরও কেমন যেন গোয়েন্দা গোয়েন্দা ফীল হচ্ছে। এই সময়টা আমাদের গোয়েন্দাগিরি প্রমাণ করার সময়।

মজার গোয়েন্দা গল্প। নতুন গোয়েন্দা গল্প। থ্রিলার ছোট গল্প।

“সর্বনাশ হয়েছে সর্বনাশ হয়েছে।“ নীচে থেকে কাকুর চেঁচামেচিতে আমাদের ঘুম ভাঙল। সবাই হন্ত-দন্ত হয়ে দৌড়ে আসলাম। নীচে দেখলাম কাকু আমাদের খাবার টেবিলে রাখা বিস্কুটের বয়ামটা ধরে রেখেছে। আমাদের দেখে কাকু বলতে শুরু করলেন, “কাল ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমি যথারীতি বয়ামে বিস্কুট ভর্তি করে রেখেছিলাম। কিন্তু আজ সকালে দেখি বয়াম ফাঁকা।“ আমি বয়ামটা হাঁতে নিয়ে বেশ ভালো করে পরোখ করে দেখলাম, তাতে গুটি কয়েক বিস্কুটের টুকরো ছাড়া আর কিছুই নেই।

বয়ামটা দিদির হাঁতে দিয়ে আমি বললাম- “সিম্পল ব্যাপার, চোর চুরি করতে এসে হয়ত, খিদের জ্বালায় বিস্কুট খেয়ে পালিয়েছে। দেখো অন্য কি কি চুরি গেছে!” আমার কথা শোনা মাত্রই সবাই জিনিস ঠিক-ঠাক আছে কি না দেখতে গেল। কিছুক্ষণ পর তারা সবাই ফিরে এসে বলল, না কিছুই চুরি হয়নি। আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। আশ্চর্য কোনো জিনিস চুরি হয়নি, অথচ বয়াম থেকে বিস্কুট চুরি হয়ে গেল। এ আবার কেমন চোর রে, এ যে দেখছি বিস্কুট চোর।

কিন্তু বেশ কয়েকদিন থেকেই আমাদের বাড়িতে এই ভূতুড়ে কাণ্ড চলতেই লাগল। নীচের খাওয়ার টেবিলে রাখা বিস্কুটের বয়াম থেকে রাতারাতি বিস্কুট উধাও হয়ে যাচ্ছে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বয়াম ভর্তি বিস্কুট রেখে দেওয়া হয়, যাতে পরের দিন সবাই সেখান থেকেই নিয়ে নিতে পাড়ে, আর রান্না ঘড়ে যাওয়ার দরকার না পড়ে। কিন্তু যখন সকাল হয় তখন দেখা যায়, বয়াম পড়ে রয়েছে কিন্তু তাতে গুটি কয়েক বিস্কুটের টুকরো ছাড়া আর কিছুই পড়ে নেই। আর এই বিষয়টাই ভীষণভাবে চিন্তায় ফেলছে আমার দিদি এবং আমাকে।

মজার গোয়েন্দা গল্প নতুন গোয়েন্দা গল্প
মজার গোয়েন্দা গল্প নতুন গোয়েন্দা গল্প থ্রিলার ছোট গল্প

মাস দুয়েক হল, আমি এবং আমার দিদি রাত জেগে গোয়েন্দা গল্প পড়ি। এই দুই মাসেই আমরা যেন গোয়েন্দা গল্পের পোকা হয়ে গেছি। কেন জানিনা সব কিছুতেই গোয়েন্দা গোয়েন্দা ভাব চলে আসে। এভাবে বেশ কয়েকদিন বিস্কুট চুরি হয়ে যাওয়ার পর, সেদিন রাতে আমি আর দিদি আলোচনায় বসি-

“বুঝলি অসীম, ব্যাপারটা কেমন যেন খটকা লাগছে!”

“হ্যাঁ রে দিদি, চোর অন্য কিছু চুরি করছে না, শুধু বিস্কুট চুরি করছে, এ তো বড়ই তাজ্জব ব্যাপার।“

“বাড়িতে আমাদের মত দুইজন গোয়েন্দা থাকতে চুরি হবে, এটা কি মানা যায় বলতো?”

“হ্যাঁ দিদি ঠিক বলেছিস, আমাদের কিছু একটা করা দরকার। নাহলে যে পরিবারের কাছে আমাদের মান সম্মান কিছুই থাকবে না।“

এরপর আমরা ঠিক করি, আমাদের বাড়ির বিস্কুট চুরির কেসটি আমাদেরই নিতে হবে। নিজের বাড়িতেই এত বড় চুরি হচ্ছে, আর আমরা চোখ বুঝে সব দেখে যাব! না না এটা কিছুতেই হতে পাড়ে না। পরের দিন সকালে আমরা গিয়ে দেখি, আবারও বিস্কুট উধাও হয়ে গেছে।

না ব্যাপারটা কিছুতেই ভালো ঠেকছে না। এবার আমরা শুরু করলাম আমাদের গোয়েন্দা স্টাইলের অনুসন্ধান। দিদি ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসটা দিয়ে ভালো মত, বয়াম টা পরীক্ষা করছে, আর আমি চোর কোন দিক দিয়ে আসতে পাড়ে, তা জানার চেষ্টা করছি। দিদি আমার কানে বলল- “ভাই একটা ক্লু পেয়েছি, দেখ এখানে কেমন একটা আঁচরের মত দেখাচ্ছে।“

কিন্তু এই ক্লুটা দিয়ে কিছুই হবার নয়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও কিছুই করতে পাড়লাম না। এরপর আমরা আবার রাতের অপেক্ষায় রইলাম। আমরা ঠিক করলাম আজকে রাতে আমরা পাহারা দিব। দেখব যে, বিস্কুট কে চুরি করছে।

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে, সবাই যে যার রুমে চলে গেল। আমি আর দিদি নিজের নিজের রুমে গিয়ে ঘুমানোর ভান করতে লাগলাম। রাত তখন প্রায় ১২ টা। আমি চুপি চুপি দিদির রুমের কাছে গিয়ে দিদিকে ডাকতে লাগলাম। দিদিও জেগে ছিল, আমার ডাক পেয়েই সে চুপটি করে বাইরে বেড়িয়ে এল।

দুই ভাই বোন মিলে ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে লাগলাম। দিদির হাঁতে মিনি টর্চ আর আমার হাঁতে রয়েছে আমার খেলনা বন্দুক। বলা তো যায়না, চোর যদি আমাদের উপর তেড়ে আক্রমণ করতে আসে, তাহলে অন্তত এই খেলনার বন্দুকটা দিয়ে তাকে ভয় দেখানো যাবে।

এত রাতে নিজেদের চেনা বাড়িটাও কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছে। কেমন যেন অন্ধকার, আর ভূতুড়ে বাড়ি মনে হচ্ছে। এবার আমার আবার ভূতের ভয় পেয়ে বসল। আমার মনে হল কেউ যেন আমাদের ফলো করছে।

আমি আস্তে আস্তে দিদিকে বললাম- “দিদি আমার বড্ড ভয় করছে রে।“

“এমন ভয় পেলে তুই কোনোদিনও গোয়েন্দা হতে পারবি না।“

আমার মনে হল আমার পিছনে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে, আমি দিদির হাত ধরে বললাম “দিদিরে আমার পিছনে দেখনা কে যেন দাঁড়িয়ে আছে।“

দিদি বলল “উফ অসীম, তুই নিজের বাড়িটাকেই এত্ত ভয় করছিস কেন, আমি মেয়ে হয়ে ভয় করছি না, আর তুই ছেলে হয়ে ভয় করছিস?” এরপর দিদি আমার পিছনে টর্চ জ্বালাল। আমি দেখলাম আমার পিছনে বারান্দার খুঁটিটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটা তো সেই চেনা পরিচিত খুঁটিটা এটাকে দেখেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এ আমি কেমন গোয়েন্দা!

এদিকে আবার ভয়ে আমার নিম্নচাপ বেড়েই চলেছে। লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে দিদিকে বললাম- “দিদি আমি টয়লেটে যাব”

“যা, চুপ করে যাবি, কোনো শব্দ করবি না কিন্তু।“

থ্রিলার ছোট গল্প নতুন ফানি গল্প
থ্রিলার ছোট গল্প নতুন ফানি গল্প মজার গল্প মজার গোয়েন্দা গল্প

“ দিদি প্লিজ তুমিও চলো না।“

“এই তুই কেমন ছেলেরে! একা টয়লেট যেতে পাড়িস না। তোর কি একটুও লজ্জা হল না, তুই দিদিকে সঙ্গে করে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলছিস। তোর বন্ধুরা জানতে পাড়লে তোকে খ্যাপাবে।“

“উফ দিদি, তাতে কি হয়েছে, তুমিতো আমার থেকে বয়সে বড়। আমার কোনো লজ্জা লাগে না। তুমি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে, আমি ভিতরে টয়লেট করব।“

“উফ আজব ছেলেরে তুই ভাই, তুই কলেজে পড়িস, আর তুই ভয়ে দিদিকে সঙ্গে করে টয়লেটে যাবি! না, তোর দ্বারা চোর ধরাও হবে না, তোর দ্বারা গোয়েন্দা গিরিও হবে না।“

এরপর আমার কাজ সেরে এসে, নীচের তালায় গেলাম, টর্চ মেরে দেখলাম বয়ামে বিস্কুট ঠিকই আছে। এরপর আমরা ঠিক করি টেবিলের নীচে ঘাপটি মেরে বসে পাহারা দিব।

এরপর কতক্ষণ কেটে গেছে জানি না, হঠাৎ কিছু একটার শব্দে আমার ঘুমের ঘোর কেটে গেল, আমি শুনলাম কে যেন বিস্কুটের বয়াম খোলার চেষ্টা করছে। দিদি তো ঘুমিয়েই গেছে। আমি দিদিকে আস্তে আস্তে ডাকলাম। দিদি বলল- “টেবিলের সাইড দিয়ে দেখার চেষ্টা কর, কে?”

“না রে দি, আমার বড্ড ভয় করছে, তুই দেখ।“

“না তোকে দেখতেই হবে, গোয়েন্দা হতে গেলে ভূতের ভয় করলে চলবে না। ভূত-টুথ কিছুই হয়না। তুই যদি না দেখিস, আমি তোর ভয়ে টয়লেট একাই না যাওয়ার কথা সবাইকে বলে দিব।“

পড়ুনঃ- হাড় হিম করা ভূতের গল্প। ভূতুড়ে বাড়ি

এ যে দেখছি ঘড়ের শত্রু বিভীষণ। আমি চুপ করে, কোনো আওয়াজ না করেই, টেবিলের বাইরে এসে সাইড দিয়ে মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমি কাউকে দেখতে পেলাম না। টেবিলের ভিতরে এসে দিদিকে বলার পর দিদিও অবাক হয়ে গেল। কিন্তু কেউ তো বয়ামের ঢাকনা খোলার চেষ্টা এখনও করছে তা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে।

দিদিও সাইড দিয়ে দেখার চেষ্টা করল। এরপর দিদির মুখ দিয়ে আর একটা কথাও বেড় হল না। আমি চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করলাম –“কি দেখলি?”

দিদি বলল- “এত দিন বিশ্বাস করতাম ভূত হয়না, কিন্তু আমাদের উপড়ে এখন যে বয়াম থেকে ঢাকনা খোলার চেষ্টা করছে, সেটা একটা ভূত, কারণ তার কোনো চেহারা দেখা যাচ্ছে না, শুধু ঢাকনা খোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে।

এদিকে ভয়ের চোটে আবার আমার টয়লেট চাপতে শুরু হয়ে গেছে। দিদিও ভয় পেয়ে গেছে, ভয়ে দিদির শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

এরপর আমরা ঠিক করি, ভূত হোক আর যাই হোক নিজের চোখেই দেখব। এরপর আমরা দুইজনে চুপ করে টেবিলের তলা থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে হঠাৎ করেই সরাসরি বয়ামে টর্চ জ্বালিয়ে দিই। দেখি, দুইটা চোখ জ্বলজ্বল করছে। এটা দেখে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে ভয়ে আমরা দুইজনে চিৎকার করে উঠলাম। আমি বললাম- “দিদিরে বাঁচা,” দিদি চিৎকার করে উঠল-“ভাইরে তুই আমাকে বাঁচা।“ এই বলে ভয়ে দুইজনে দুইজনকে জাপটে ধরেছি। বুক এত জোরে ধড়ফড় করছে, যেন প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

নতুন ফানি গল্প। BANGLA NEW DETECTIVE STORY. বাংলা ফানি গল্প
নতুন ফানি গল্প। BANGLA NEW DETECTIVE STORY. বাংলা ফানি গল্প image মজার গল্প
<

আমাদের এই চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই জেগে উঠল, সবাই আলো জ্বালিয়ে নীচে চলে আসতে থাকল। আমি আর দিদি দেখলাম বয়াম থেকে একটা ইয়া বড় ধরে ইঁদুর দৌড়ে পালাচ্ছে। বাড়ির সবাই নীচে নেমে এল আমরা তখনও একে অপরকে ভয়ে জাপটে ধরে কাঁপছি।  

আমরা মুখ খোলার আগেই মা বলে উঠলেন-“হ্যাঁ রে তোদের কি একটুও আক্কেল-জ্ঞান নেই, তোদের কি আমি কম খেতে দিই বলতো?এই রাত দুপুরে দুই ভাই-বোন মিলে তোরা বিস্কুট চুরি করিস! আজ থেকে তোদের বিস্কুট দেওয়া বন্ধ। এতদিন তোরা রাতারাতি বিস্কুট উধাও করে দিতিস, কাল থেকে আর বিস্কুটের বয়াম এখানে থাকবে না। প্রথম থেকেই অসীমের প্রতি আমার সন্দেহ ছিল, কিন্তু অনন্যা তুইও যে তোর ভাইয়ের সাথে বিস্কুট চুরি করবি, সেটা আমার ধারনার বাইরে ছিল। আর কয়েকদিন পরেই তো তোকে শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে, আর তুই কিনা ভাইয়ের সাথে বিস্কুট চুরি করতে এসেছিস এত্ত রাতে!“

কিছুটা লজ্জা আর কিছুটা ভয়ে আমাদের মুখ থেকে একটা কথাও বেরোচ্ছিল না। বিস্কুট চোর ধরতে এসে, নিজেরাই বিস্কুট চোরের তকমা পেয়ে যাব, স্বপ্নেও ভাবি নি!

SUGGESTED BY ছাড়পত্রঃ- হবু বউ ভূতের বশে

ALL RIGHTS RESERVED BY THE ADMIN

“মজার গোয়েন্দা গল্প মজার গল্প নতুন ফানি গল্প নতুন গোয়েন্দা গল্প থ্রিলার ছোট গল্প”

Spread the love

Leave a Reply