আজকের এই, বাংলা নতুন গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছে বিক্রম এবং বেতাল। বেতাল রাজা বিক্রমকে একটি গল্প শোনায়, এরপর সেই গল্প সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। রাজা বিক্রমকে সেই প্রশ্নের উত্তর যুক্তির সাথে দিতে হয়।
VIKRAM BETAL STORY IN BENGALI. বিক্রম বেতাল গল্পঃ-
যমুনা নদীর তীরে একটি সুবিশাল নগরী ছিল। গণাধীপ নামে এক রাজা সেই নগরী শাসন করত। সেই নগরীতেই বসবাস করত কেশব নামে এক ব্রাহ্মণ। প্রতিদিন সকালে ব্রাহ্মণ যমুনা নদীর তীরে তার বিভিন্ন পূজা-অর্চনা করতেন। সেই ব্রাহ্মণের মালতী নামে এক অতীব সুন্দরী কন্যা ছিল। এদিকে সময়ের সাথে সাথে মালতীর বিবাহের বয়স হতে চলল। কিন্তু মনের মত পাত্র কিছুতেই মিলছে না। ব্রাহ্মণ বাড়িতে প্রায় থাকতেনই না বলা চলে। কারণ পূজার জন্য তাকে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। সেই ব্রাহ্মণের এক পুত্র ছিল। সেও বাবার মতনই ব্যস্ত।
একদিন ব্রাহ্মণ পাশের নগরীতে পূজার কাজে গেছেন। আর তার ভাই অন্য কাজে নগরের বাইরে ছিলেন। ঠিক সেই দিনই ব্রাহ্মণের বাড়িতে, এক সুন্দর ছেলে আসে। সেও জাতিতে ব্রাহ্মণ। প্রথম দর্শনেই মালতীর মা ছেলেটিকে বেশ সাদাসিধে এবং ভদ্র মনে হয়। মেয়ের মা সেই ছেলেটিকে বলে- “আমি আমার একমাত্র মেয়েকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই। অনেক দিন থেকেই আমরা একজন ভালো ছেলে খুজছি, কিন্তু পাচ্ছি নে।“
আবার অন্যদিকে ব্রাহ্মণও নগরের বাইরে একজন ছেলেকে তার মেয়ের জন্য পছন্দ করে। বিবাহের কথা একদম পাকাপাকি করে ছেলেটিকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওদিকে ব্রাহ্মণের পুত্র, যেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি আবার আরেক ছেলেকে তার বোনের জন্য পাত্র হিসেবে ঠিক করে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।
কিন্তু তারা বাড়ি ফিরে দেখেন যে, সেখানে ইতিমধ্যেই আরেকজন ছেলে পাত্র হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন। অবশেষে ঠিক করা হয়, মেয়ে যাকে পছন্দ করবে তাকেই পাত্র হিসেবে মেয়ের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হবে। কিন্তু মেয়েকে অনেক বার ডাকাডাকি করা সত্ত্যেও ঘর থেকে মেয়ের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে মেয়ের মা মেয়ের ঘরে গেলেন। মেয়ের ঘরে যাওয়া মাত্রই তিনি দেখলেন, জানালা দিয়ে একটি বিষধর সাপ পালিয়ে যাচ্ছে, আর মেয়ে ঘরের মেঝেতে পরে রয়েছে। এমন দৃশ্য দেখে মেয়ের মা, চিল্লাতে শুরু করলেন। এরপর সবাই মিলে মেয়েকে নিয়ে ওঝার কাছে গেলেন।
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। অবশেষে, যে মেয়েকে বিবাহ করতে তিনজন পাত্র এসেছিল, তাদের হবু পাত্রীর মুখাগ্নির ব্যবস্থা করতে হল।
![VIKRAM BETAL STORY IN BENGALI](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
তিনজন ছেলে বলল- “বিবাহের উদ্দেশ্যে এটাই আমাদের প্রথম পাত্রী দেখা। কিন্তু প্রথম পাত্রী দেখাতেই আমাদের বাঁধা পরে গেল। তাই আমরা আর আমাদের জীবনে বিবাহ করব না। যেহেতু বিবাহ করব না, সেহেতু সংসার ধর্ম পালন করা থেকে আমরা বিরত। তাই এই সংসারের বন্ধনে থেকে আমাদের কোনো লাভ নেই।“
এই কথা বলার পড়, একজন ছেলে মেয়েটির চিতার নীচে পরে থাকা হাড় নিয়ে জঙ্গলে সাধনার উদ্দেশ্যে চলে গেল। দ্বিতীয়জন মেয়েটির চিতা-ভস্ম একত্রিত করে একটি কাপড়ে বেঁধে নিয়ে শ্মশানেই বাস করবেন ঠিক করলেন। তৃতীয় জন সন্ন্যাসীর বেশে পৃথিবী ঘুরবেন ঠিক করলেন।
এরপর কেটে গেছে কয়েক বছর। একদিন সেই সন্ন্যাসী বেশাধারী তৃতীয় ছেলেটি একটি নগরে গিয়ে পৌঁছালেন। একটি ব্রাহ্মণের বাড়িতে খাবারের আমন্ত্রণও পেলেন তিনি। যখন তিনি খেতে বসলেন তখন ব্রাহ্মণী তাকে খাবার দিতে আসলে, ব্রাহ্মণীর এক ছোট পুত্র বারংবার তাকে বাঁধা দিতে লাগল। এতে ব্রাহ্মণী রেগে গেলেন। রেগে গিয়ে পুত্রের দিকে একটি পাথর ছুঁড়ে মাড়লেন। পাঁথরটি গিয়ে লাগল ছেলেটির চোখে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটি কাঁতরে কাঁতরে মারা গেল।
এই দৃশ্য দেখে সন্ন্যাসী বেশাধারী সেই তৃতীয় পাত্রটি খুব রেগে গেলেন। তিনি আর সেই বাড়িতে ভক্ষণ করবেন না ঠিক করলেন। কিন্তু সেই বাড়ির ব্রাহ্মণ বললেন- “আমি ইচ্ছে করলেই আমার পুত্রকে আবার জীবিত করতে পাড়ি। আমার স্ত্রী একটু বেশী রাগী, তাই এর আগেও আমার পুত্র অনেকবার আমার স্ত্রীর হাঁতে মারা গেলেও, আমি ওকে অনেকবার জীবিত করেছি। আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর তপস্যা করে সঞ্জীবনী মন্ত্র বিদ্যা শিখেছি। এরপর ব্রাহ্মণটি ঘরের ভিতর গিয়ে একটি বই নিয়ে আসলেন এবং মন্ত্র পড়তে লাগলেন।
মন্ত্র পড়া শেষ হতে না হতেই মৃত ছেলেটি ভালো হয়ে গেল। এদিকে সন্ন্যাসী বেশী পাত্রটি ভাবছে, কোনোভাবে যদি এই মন্ত্রযুক্ত বইটি হাতিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে তার মৃত পাত্রীকে আবার পুনরায় ফিরে পাবে সে। এরপর সে ঠিক করে, সেই বইটি চুরি করবে সে। রাতের বেলায় খাওয়া-দাওয়ার পর ব্রাহ্মণ দম্পতী ঘুমিয়ে পড়ার পর, সন্ন্যাসী বইটি নিয়ে পালিয়ে সেই শ্মশানে চলে এল।
পড়ুনঃ- গল্প থেকে জ্ঞান। গল্প থেকে শিক্ষা
সে এসে দেখল আগের দুইজন পাত্র একই সঙ্গে বসে গল্প করছে। এরপর সেই সন্ন্যাসী পাত্রটি এসে তাদের বলল- “আমার কাছে একটি বই আছে, এই বইয়ে রয়েছে সঞ্জীবনী মন্ত্র। এই মন্ত্রের মাধ্যমে কোনো মৃত মানুষকে আবার পুনরায় জীবিত করা যেতে পাড়ে।“
এরপর বাকি দুইজন তাদের কাছে থাকা মেয়েটির হাড় এবং ভস্ম বেড় করল। এরপর সেগুলি একত্রিত করে রেখে, সেই সন্ন্যাসি পাত্রটি মন্ত্র পড়তে লাগলেন। মন্ত্র পড়া শেষ হতেই, সেই মেয়েটি আবার আগের মত জীবিত হয়ে গেল। মেয়েটি জীবিত হতেই, তিন পাত্রের মধ্যে কে মেয়েটিকে বিবাহ করবে তা নিয়ে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।
মেয়েটি এই ঘটনাটি দেখে তাদের তিনজনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- “আমি যাকে আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিব, সেইই হবে আমার স্বামী। যদি তোমরা আমার মতামতে রাজী থাকো, তাহলে বল। নাহলে আমি আবার আমার বাবা-মায়ের কাছ ফিরে যাব।“
এরপর তিনজনই মেয়েটির কথায় সম্মতি জানাল।
গল্পটি এই পর্যন্ত বলার পড়, বেতাল রাজাকে প্রশ্ন করলেন- “তাহলে মহারাজ, এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল, সেই মেয়েটির কাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করা যুক্তি সম্মত হবে?
![বিক্রম বেতালের কাহিনী। রাজাদের গল্প। বুদ্ধির গল্প। বাংলা নতুন গল্প](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
রাজা বললেন- “বেতাল মেয়েটির দ্বিতীয় জন, অর্থাৎ যিনি ভস্ম দিয়েছিলেন, তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করা যুক্তি সম্মত হবে।“
বেতাল- “কেন মহারাজ?”
মহারাজ বিক্রম- “দেখো বেতাল, প্রথম জন, অর্থাৎ যে পাত্রটি মেয়েটির হাড় দান করেছিল, সে মেয়েটি পুত্র তুল্য কাজ করেছে। কারণ, আমাদের ধর্ম মতে, মৃত্যুর পড় হাড় ছেলেকে দেওয়া হয়, যাতে সে পিণ্ড দান করতে পাড়ে। আর তৃতীয় জন, অর্থাৎ যিনি মন্ত্র পড়ে, মেয়েটির জীবন দান করেছিলেন, তিনি পিতৃ তুল্য কাজ করেছেন। তাই তিনি পিতার সমান। তাই জীবন দানকারী কখনও স্বামী হতে পাড়ে না। আবার দ্বিতীয় জন, অর্থাৎ যিনি ভস্ম দিয়েছিলেন তিনিই স্বামী হবার যোগ্য কারণ, স্ত্রীর মৃত্যুর পড় স্বামী স্মৃতি নিয়ে বাঁচে। আর এখানে ভস্মও স্মৃতি হিসেবে কাজ করছে। তাই দ্বিতীয়জনকেই স্বামী হিসেবে বেঁছে নেওয়া মেয়েটির পক্ষে যুক্তিযুক্ত হবে।“
পড়ুনঃ- বিক্রম বেতালের গল্প। রাজকুমার ও রাজকুমারীর প্রেম।
“VIKRAM BETAL STORY IN BENGALI. 1 NEW AMAZING VIKRAM BETAL STORY. বিক্রম বেতালের কাহিনী। রাজাদের গল্প। বুদ্ধির গল্প। বাংলা নতুন গল্প।”
![charpatra.com ছাড়পত্র](http://charpatra.com/wp-content/plugins/a3-lazy-load/assets/images/lazy_placeholder.gif)
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।