একটি নতুন ভয়ংকর ভূতের গল্প আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করছি। আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে এক বীচে ঘুরতে যাই, আমাদের সাথে দুইজন মেয়েও ছিল, তাই বীচে রাত কাটানোর সাহস হয়নি। অবশেষে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এক প্রত্যন্ত বাড়ির সন্ধান পাই আমরা। মানুষজন জানান সেটি নাকি ভূতুড়ে বাড়ি, তবে আমরা বিশ্বাস করিনি যে সেটি সত্যি ভূতের বাড়ি ছিল কি না! আমরা সেখানে রাত কাটানোর চেষ্টা করি। সেই ভূতের বাড়ি -টীতে আমাদের সাথে যা ঘটেছিল তা নিয়েই এই ভয়ানক ভূতের গল্পটি।

ভয়ংকর ভূতের গল্প। ভূতের বাড়ি। ভূতুড়ে বাড়িঃ-

আমার বয়স তখন ২০ কি ২১ হবে। আমি ও জলপাইগুড়ি শহরের পাঁচ জন বন্ধু মিলে গরমের ছুটি কাঁটাতে গোয়ায় যাব ঠিক করলাম। ভোর পাঁচটায় ট্রেন। রওনাও দিয়ে দিলাম। শহরের ছেলে-পুলে হলেও সমুদ্রটা কিন্তু কখনো স্ব-চক্ষে দেখা হয়ে উঠে নি। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম গোয়া। চারিদিকে নারিকেলের বাগান। সবাই সমুদ্রের দিকে ঝুঁকে আছে। দেখে যেন মনে হচ্ছে, তারা আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

হোটেলে ব্যাগ রেখে সোজা গোয়ার বীচে। বাঃ অপূর্ব দৃশ্য। “ওয়াও, ইচ্ছে করে এখানেই বাড়ি করে বসবাস করি” পিছন ঘুরে দেখি আমাদেরই বয়সী দুইজন মেয়ে দাঁড়িয়ে। হুম যেটা ভেবেছিলাম সেটাই, ওরাও বাঙালি, এসেছে মালদা থেকে। অনেকের মুখে শুনেছি, রাতের জ্যোৎস্না আলো যখন সমুদ্রের বালিতে পড়ে, তখন নাকি অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। অনেক বছরের স্বাদ আজ পূরণ হবে।

আমরা পাঁচ বন্ধু এখানে রাত কাটাব, শুনে মেয়ে দুটিও আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করল। আমি- “তোমরা মেয়ে, তোমাদের রাতের বেলায় ছেলেদের সাথে থাকা শোভায় না, লোকে কি ভাববে!”

মেয়ে দুইজনের মধ্যে একজন বলে উঠল- “আচ্ছা, মেয়ে বলে কি আমাদের ইচ্ছে হয় না বুঝি, এই সুন্দর সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যটা নিজের চোখে দেখি! আমাদের বুঝি শক-টক বলতে কিছুই নেই? তোমরা ছেলেরা এরকমই হও।“

আমি- “না মানে ইয়ে মানে, তোমাদের নিরাপত্তা বলেও তো একটা কিছু আছে  নাকি?”

“ধুর বাপু, তোমরা পাঁচজন ছেলে থাকতে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে কেন বলতো? আমরা বাবাকে বলে এসেছি, সঙ্গী পেলে এখানেই রাত কাটাব।”

ভয়ংকর ভূতের গল্প ভূতের বাড়ি
সমুদ্র সৈকতে আমরা সবাই ভয়ংকর ভূতের গল্প ভূতের বাড়ি

মেয়ে দুটি নাছোড় বান্দা। অগত্যা রাজী হতেই হল। তবে সমস্যাটা দাঁড়াল, আমাদের থাকা নিয়ে। খোলা বীচে তো আর সরাসরি থাকা যায় না! যদি গাড়ির ব্যবস্থা থাকত, আমরা নাহয় মাঝ রাতে ফিরে যেতাম হোটেলে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেই এখানে। মেয়ে দুটির একজনের নাম সুকৃতি, যে একটু বেশি বেশি বক বক করে, অপরজন সাগরিকা। শান্ত স্বভাবের, কম কথা বলে।

শুনেছি, এখানে অনেক উপজাতির বসবাস, তাদের কাছে থাকার ব্যবস্থা হতে পাড়ে, তারা সৈকতের ধারেই থাকে। অনেক খুঁজে এমন একটা গ্রাম পেলাম, কিন্তু এখান থেকে সমুদ্রের আসল সৌন্দর্যটা উপভোগ্য নয়। অগত্যা সেই গ্রামে থাকার সিদ্ধান্তও ছাড়তে হল। এদিকে সূর্য মাঝ আকাশ থেকে নামছে।

সবাই হোটেলে ফিরে রাতের খাবার নিয়ে আবার বীচে একত্রিত হলাম। সব ঠিক আছে, কিন্তু বীচের পাশে, থাকার ভালো ব্যবস্থা পেলাম না। পড়ন্ত রোদ্দুরে, সমুদ্রের পাশে ঝুঁকে থাকা নারিকেল গাছের পাশ দিয়ে সূর্যটা জানান দিচ্ছে, আজকের মত তার ডিউটি শেষ। ছোট ছোট স্টিমার গুলিও ঘড়ে ফিরছে। দেখতে দেখতে গোটা বীচ ফাঁকা হয়ে যেতে লাগল।

একজন স্টিমার চালক, চেঁচিয়ে বলল, আমরা কখন ফিরব? আমার বন্ধু রাজ জবাব দিল- “আমরা আজ ফিরব না।“ সেই স্টিমার চালক বললেন- “এই জায়গাটি দিনের বেলায় যতটাই ভালো, রাতের বেলা ততটাই খারাপ, এখানে রাত কাটানোর চেষ্টা করবেন না।“

তাহলে কি চুরি-ডাকাতি হয় এখানে। হুম হতেও পাড়ে। তবে আমাদের কাছে আর নেবার মত আছে টা কি? খাবার ছাড়া ব্যাগে আর কিছুই নেই। কারও কাছে কোনো জবাব না পেয়ে চালক তার স্টিমার নিয়ে পাড়ি জমালেন।

এদিকে সমুদ্রে তখন জোয়ারের জল নেমে গেছে। রাশি রাশি নানান আকারের ঝিনুক সৈকতে দেখা যাচ্ছে। আমার বন্ধুরা সবাই মিলে ঝিনুক কুরাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। ঝিনুক কুড়োতে কুড়োতে বীচ ধরে কিছুদূর এগিয়ে গেছি। গৌরব চেঁচিয়ে উঠল- “অসীম ওই দেখ, একটা বিশাল বাড়ি, মনে হয় কেউ থাকে না, আজকের রাতটা ওখানেই কাঁটাই।“

তার কথা শুনে হঠাৎ কোথা থেকে একজন বৃদ্ধ মানুষ দৌড়ে এসে বলল- “খবরদার ওই বাড়িতে রাত কাটাবার চেষ্টা করবেন না।“

ভয়ানক ভূতের গল্প ভূতের গল্প ভূতুড়ে বাড়ি
ভয়ানক ভূতের গল্প ভূতের গল্প ভূতুড়ে বাড়ি

সাগরিকা-“কেন ওই বাড়িতে বুঝি চোর-ডাকাত থাকে।“

বৃদ্ধ- “তোমরা বুঝবে না মা, ওখানে অন্য কিছু থাকে, তাদের প্রভাবে গোটা এলাকা থম থম করে রাতে। মাঝে মাঝেই ওই বাড়ি থেকে কুকুরের আওয়াজ ভেসে আসে। কখনো গান-বাজনার আওয়াজ ভেসে আসে। কখনো হাসির আওয়াজ ভেসে আসে।“

আমি- “অন্য কিছু, মানে আপনি ভূত- প্রেত এই সবের কথা বলতে চাইছেন?”

বৃদ্ধ- “হ্যাঁ বাবা। তোমাদের পক্ষে মঙ্গল হবে, এখনও এক দুইটা স্টিমার দেখা যাচ্ছে হোটেলে ফিরে যাও, নইলে চলো আমার বাড়ি।“

লোকটির কথা শেষ হতে না হতেই, সুকৃতি বলল- ” হাঁ হাঁ হাঁ, আমরা ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করি না, আমরা বিজ্ঞানে বিশ্বাসী। বিজ্ঞান বলে ভূত-প্রেত কিছু হয় না।“

বৃদ্ধ- “তোমরা জেদ করছো কেন মা? তোমরা মেয়ে মানুষ তোমাদের তো ভয়-ডর কিছুই দেখছি না। তোমাদের যা মর্জি করো গে, আমি কিছু বলবো না। তবে শেষ বাড়ের মত বলছি, ওই বাড়ির ভিতরে যাবে না। এতে তোমাদেরই মঙ্গল।“

এরপর বৃদ্ধটি চলে গেলেন। সাগরিকা- “তাহলে আমরা থাকব কোথায়?”

হঠাৎ সুকৃতি চেঁচিয়ে উঠল- “ওই তো কে যেন, মাথায় বস্তা নিয়ে এদিকেই আসছে, তাকেই জিজ্ঞাসা করা যাক, এখানে কিভাবে থাকার ব্যবস্থা করা যায়?”

লোকটিকে জিজ্ঞাসা করতেই সে মাথার বস্তাটি বালিতে ফেলে দিয়ে বললেন- “ওই বাড়ির নাম মুখেও নিবেন না। ওই বাড়ি ভালো নয়। ওই বাড়ি অভিশপ্ত। ওটা ভূতের বাড়ি।“

সুকৃতি- “আপনি কখনো ওই বাড়িতে ভূত দেখেছেন।“

বৃদ্ধ- “আমি সেই বাড়ির একজন কর্মীর ছেলে। অনেক বছর আগে, এখানে রাজারা থাকতেন। কিন্তু একদিন হঠাৎ তারা সবাই মারা যান। কি ভাবে কি হল, এটাই রহস্য।“

সুকৃতি- “রহস্য! আপনার বাবা যে ওই বাড়ির কর্মী ছিলেন, তার প্রমানটা কি?”

এই মেয়েটা মনে হয়, একটু বেশি বেশি কথা বলছে। আমরা ছেলেরা চুপচাপ, অথচ তার এত জেরা। তাই বলে এটা ভাববেন না যে আমরা ভয় পেয়েছি। আমাদের কথা বলার সুযোগই দেয় না মেয়েটি।

বৃদ্ধটি তার কোমরের থলি থেকে এক গোছা চাবি বেড় করে বললেন- “এই যে, ওই বাড়ির চাবি। বাবা আমাকে দিয়েছিলেন এবং ওই বাড়ি দেখতে বলেছেন। ওই বাড়ির ভিতরে একটি সুন্দর বাগান আছে। আমি প্রতিদিন সেখানে গাছে জল দিতে যাই।“

আমি- “আপনি প্রিতিদিন ভিতরে যান, আর আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন?”

বৃদ্ধ- “না, বাপু দিনের বেলায় সব ঠিক থাকে, কিন্তু রাতেই সেখানে আত্মা ঘুরে বেড়ায়। রহস্যময় আওয়াজ ভেসে আসে।“

কৌশিক- “আজ আমরা ওখানে থাকব। আমাদের নিয়ে চলুন।“

বৃদ্ধ- “আমি জেনেশুনে তোমাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চাই না। তোমরা শহুরে মানুষ, তাই একটু রক্তের গরম বেশি।“

কৌশিক- “আমরা থাকব মানে থাকবই। আমরাও দেখতে চাই, ভূত কি জিনিস?” আমরাও কৌশিকের সাথে সুর মিলালাম। অবশেষে লোকটি রাজী হয়ে গেল। তিনি বললেন- “আমি তোমাদের সদর দরজা খুলে দিব, তোমরা ভিতরে থেকো। তবে সাবধান, কোনো জিনিসে হাত দিবে না। আরেকটু সন্ধ্যে হলেই, এখানে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে।“

পড়ুনঃ- ভূতুড়ে গুদামঘড়

সুকৃতি- “আপনি আসবেন তো? নাহলে কিন্তু আপনাকে আমরা খারাপ ভাবব।“

বৃদ্ধ-“আমি কথা যখন দিয়েছি তখন আমার কথার খেলাপ হবে না।“ বৃদ্ধটি সেখান থেকে চলে যেতেই, আমাদের নজর একজন সুন্দর মহিলার দিকে গেল। তিনি সমুদ্রের সৈকতে ঝিনুক কুড়চ্ছেন। আমাদের দেখে বললেন- “আপনারা কি, সেই শহুরে ছেলে মেয়ে নাকি, যারা ঠিক করেছেন ওই ভূতুড়ে বাড়িতে রাত কাটাবেন?”

সাগরিকা- “আজ্ঞে হ্যাঁ।“

মহিলা- “আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব। আমারও অনেক দিনের ইচ্ছে সেই বাড়িতে যাব।“

কৌশিক- “সে কি, দিদি আপনার ভয় করবে না?”

মহিলা- “আপনাদের মত শহুরে বাবুরা থাকতে ভয় কিসের? তাছাড়া আরও দুইজন মেয়ে তো আপনাদের সঙ্গে আছেনই, ভয়ের কিচ্ছু নেই। ওরা মেয়ে হয়ে ভয় পাচ্ছে না আর আমি ভয় পাব! আমি ভূত বিশ্বাস করি না।“

মহিলাটি আমাদের সাথে কথা বলতে বলতে, পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল- “উফ চন্দ্রিকা, তুমি এখানে আর আমি তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।“

মহিলাটি- “ও বরুণ, তুমি এলে তো বেশ ভালোই হল। এই শহুরে ভাই-বোন গুলি ওই বাড়িতে রাত কাঁটাতে চায়, আমরাও ওদের সঙ্গে যাব।“ এরপর অনেক বলে কয়ে, বরুণ দাদাকে রাজী করালাম। বাঃ দেখতে দেখতে আমাদের সদস্য সংখ্যা নয় জন হয়ে গেল। আর সেই বুড়োটি মিলে দশ জন।

ভূতের বাড়ি ভয়ানক ভূতের গল্প
ভূতের বাড়ি ভয়ানক ভূতের গল্প
<

সময় মত বুড়োটি এসে দরজা খুলে দিয়ে চলে গেলেন। আমরা সেই তথাকথিত ভূতুড়ে বাড়িতে পা রাখলাম। গা কিছুটা ছমছম করছে বটে, তবে ভয় আমি করছি না। অনেক বিশাল বাড়িটা, ব্যাগ থেকে টর্চটা, বেড় করে আমি প্রথমে এগোতে লাগলাম, বাকি সবাই আমার পিছনে। বাইরে থেকে বিদঘুটে দেখালেও ভিতরটা বেশ চকচকে, যেন মনে হচ্ছে কেউ সবেমাত্র পরিষ্কার করে গেছেন।

উপড়ে ব্যালকনি থেকে সমুদ্রটা বেশ দেখা যায়। বাঃ এমনই জায়গা তো মনে মনে চেয়েছিলাম। চাঁদের আলোয় সমুদ্রটা কালচে নীল, মাঝে মধ্যে চাঁদের আলো সমুদ্রের জলে ঝিলিক দিয়ে উঠছে। সমুদ্রের বালি গুলি চকচক করছে। চন্দ্রিকা দিদি চেঁচিয়ে উঠলেন- “অসাধারণ মনে হচ্ছে যেন স্বর্গে চলে এসেছি।“

সাগরিকা চেঁচিয়ে উঠল- “আমার পাশ দিয়ে এক্ষনি কিছু একটা দৌড়ে গেল, আমার কেমন জানি ভ ভ ভয় করছে।“ সুকৃতি হো হো করে হেঁসে বলল- “হায় রে সাইন্স এঁর ছাত্রী।“ কৌশিক তার ব্যাগ থেকে টর্চটা জ্বালিয়ে দেখল, দূরে একটা কুকুর দাঁড়িয়ে আছে।

ও আচ্ছা, এবার বুঝলাম, এটাই তাহলে এই বাড়ির ভূত। এ ডাকে, আর লোকে ভাবে ভূতে ডাকছে। হাঁ হাঁ হাঁ।

এরপর সবাই মিলে ছাঁদে বসে খাবার খেলাম। এবার আমরা ঠিক করলাম, রুম গুলি ঘুরে ঘুরে দেখব। সদর দরজায় চাবি দেওয়া থাকেলও, কক্ষ গুলিতে চাবি নেই। অনায়াসেই ঠেলে ভিতরে ঢোকা যায়। সেই কুকুরটা যেন আমাদের পথ দেখাচ্ছে। একটি কক্ষে ঢুকলাম। বা অনেক বড় কক্ষ এটা নিশ্চয় রাজ আমলের বৈঠক খানা ছিল। রুমটির ছাঁদে নানান কারুকার্য। এককথায় অসাধারণ।

পড়ের রুমে ঢুকে দেখি। কোনায় একটা হারমোনিয়াম পড়ে আছে। দেওয়ালে একটা সেঁতার। আমরা ঠিক করি, এখানে একটু গান-বাজনা করি। আরেক কোনে একটা ঝাড়বাতি। ঝাড়বাতিটা জ্বালিয়ে দিতেই গোটা ঘড় আলোকময় হয়ে উঠল। এত পুরনো হলেও তেজ কমেনি বাতিটার।

আমরা চেচাতে শুরু করে দিলাম-  ভূত বাবাজী কোথায় তোমরা। এসো আমরা তোমাদের সাথে দেখা করতে এসেছি। দেখা দাও, কোথায় তোমরা।

চন্দ্রিমাদি ন্যাকা মুখ করে বললেন- “আমি এখানে।“

কৌশিক- “কোথায়, আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন? দেখা দাও।“

চন্দ্রিমা দি- “দেখা দেব না, হাঁ হাঁ হাঁ।“

আমরা সবাই হেঁসে লুটিয়ে পড়লাম। ভূত-প্রেত কিছুই নেই এই বাড়িতে, শুধু শুধু মানুষ অন্ধ বিশ্বাসের ফাঁদে পা দিয়ে এত সুন্দর একটা বাড়ি ফেলে রেখেছে।

এবার গানবাজনা করার পালা- কৌশিক হারমোনিয়ামটা বাজানোর চেষ্টা করল। বা এত পুড়ানো হওয়া সত্বেও আওয়াজ হচ্ছে। তাহলে আর দেড়ি কিসের? আমি গান ধরলাম- “জনম জনম সাথ চলনা ইউহি …”

রাজ- “আরে ভূতের গলা বেরোচ্ছে তো, ভুত তো তোর গলা শুনে তোকেই ভুত ভাববে।” সবাই মিলে আবার হেঁসে লুটিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ঝারবাতিটা নিভে গেল। আবার জ্বলে উঠল। একি চন্দ্রিমা দি আর বরুণ দাদা কোথায় গেল। সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটা ঘেউ উউ করে উঠল। গোটা ঘর শীতল হয়ে উঠল। আবার বাতিটা নিভে গেল। এবার দেখলাম এক অনন্য দৃশ্য। চন্দ্রিমা দি রাজনর্তকীর বেশে রয়েছেন। বরুণ দাদা রাজপুত্রের পোশাক পড়ে আছেন।

বরুণ দাদা- “একি চন্দ্রিমা, তুমি রাজকন্যা হয়ে এমন বেশ পরিধান করেছ কেন? তবে কি তবে কি তুমি….” 

ভয়ানক ভূতের গল্প ভূতুড়ে বাড়ি best horror story in bengali
ভয়ানক ভূতের গল্প ভূতুড়ে বাড়ি best horror story in bengali

চন্দ্রিমা দি- “আমি আজ নাচবই নাচব। আমাকে আজ কেউ আটকাতে পাড়বে না। আজ আমি নৃত্য করবই।“

হঠাৎ গোটা ঘড়ে বেজে উঠল বাজনার শব্দ। বরুণ দাদা- “বন্ধ কর চন্দ্রি বন্ধ কর। আমি তোমার এমন রূপ দেখতে চাই না। এবার কিন্তু আমি প্রচণ্ড রেগে যাচ্ছি।“

এরপর আবার ঝাড়বাতিটা নিভে গেল, আবার জলে উঠল, এবার বরুণ দাদার হাঁতে একটা বন্দুক- “তুমি নৃত্য বন্ধ না করলে আমি গুলি চালাব, আমি আর সহ্য করতে পাড়ছি না, চন্দ্রি। তুমি ভুলে যাচ্ছ তুমি একজন রাজকন্যা। তুমি জান, আমার কথা না মানলে তোমার কি হতে পাড়ে।“

-“হ্যাঁ জানি, গুলি করবে তো কর গুলি আমি আজ মন খুলে নৃত্য করব।“

হঠাৎ চন্দ্রিমা দিদির দিকে বন্দুক উচিয়ে ধরলেন বরুণ দাদা। আমি-“আরে আরে আপনি কি করছেন দাদা। আপনাদের কোথা থেকে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝছি না।“

-“তুমি সরে যাও, চন্দ্রি, শেষ বাড়ের মত বলছি থেমে যাও।“ আমাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে বরুণ দাদার বন্দুক চলার শব্দ এল। “আঃ আঃ, তুমি আমাকে মেরে ফেললে, রাজপুত্র! আঃ” আমরা দেখলাম চন্দ্রিমা দিদির বুক দিয়ে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কাঁপতে কাঁপতে তার দেহ টা থেমে গেল, গোটা ঘড়ের বাজনা বন্ধ হয়ে গেল। ঝাড়বাতিটা জলছে আর নিভছে।

কিছুক্ষণের জন্য আমাদের মনে হতে লাগল, যেন কোনো সিনেমা হলে সিনেমা দেখছি।

সাগরিকা এমন দৃশ্য দেখে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল, আমার বন্ধুরা সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। মুখে জল ছিটিয়ে দেওয়া, হাত পা ঘষা কিছু বাদ গেল না।

এদিকে বরুণ দাদা চন্দ্রিমা দির মৃত দেহটির দিকে ঝুঁকে বললেন- “একি একি করলাম আমি, সত্যি কি আমি তোমাকে মেরে ফেললাম চন্দ্রি! কথা বল চন্দ্রি।“

সেই বৃদ্ধ লোকটি হয়ত বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল, চেঁচামেচি আর গুলির শব্দ শুনে তিনি ছুটে এসে বললেন- “একি একি করলেন আপনি দাদাবাবু? আপনি বউদিদিকে মেরে ফেললেন?”

বরুণ দাদা চোখ বড় বড় করে বললেন-“এই তুই এখানে কি করছিস, তোকে এখানে আসার অনুমতি কে দিল?”

একি এটা তো সেই কুকুরটা, এটা এত ভয়ানক দেখতে হল কিভাবে? এদিকে সেই কুকুরটা এসে চন্দ্রিমা দির নিথর দেহটাকে শুঁকতে শুরু করে দিয়েছে। “আজ আমি কাউকেও ছারব না।“ আবার তার বন্দুক চলল, কুকুরটা- কুউঃ কুউঃ করে লুটিয়ে পড়ল, দিদির পাশে।

রাত তখন প্রায় তিনটে, একি দৃশ্য দেখছি আমরা! গোটা ঘড়ে থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আর ঝাড়বাতিটা হঠাৎ নিভছে আর জ্বলছে। এবার কেমন যেন আমার ভয় পেতে শুরু করল- আমরা এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পাড়ব তো? আমার গলা শুঁকিয়ে গেছে। নিজের অজান্তেই মাথা দিয়ে ঘাম পড়ছে।

best horror story in bengali ভূতুড়ে কুকুর ভূতুড়ে বাড়ি
best horror story in bengali ভূতুড়ে কুকুর ভূতুড়ে বাড়ি image

বৃদ্ধ- “আপনি কাজটা ঠিক করলেন না দাদাবাবু।“

আবার গুলি চলল, বৃদ্ধের মাথা এপার-ওপার করে গুলিটা বেড়িয়ে গেল, লুটিয়ে পড়ল তার দেহ, চোখের সামনে এরকম হত্যা লীলা দেখে, নিজেদের সামলাতে পাড়ল না রাজ ও সুকৃতি। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় তারা। ওদিকে সাগরিকা এখনও চোখ খুলছে না।

বরুণ দাদা চন্দ্রিমা দিদির দেহটার কাছে গিয়ে পা দিয়ে দিদির মাথাটাকে ঠেলে দিয়ে কিছুটা শান্ত স্বরে বললেন- “ আপনারা আমাদের অতিথি, আপনারা ছেলে মানুষ, নিতান্ত আগ্রহের বশে এখানে চলে এসেছেন। তবে ভবিষ্যতে আর কখনো এরকম করার চেষ্টা করবেন না। আমার বন্দুকে আর মাত্র একটাই গুলি আছে এটা আমি আমার জন্য রাখলাম। যদি নিজের জীবন প্রিয় থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি পাড়েন এখান থেকে চলে যান।অনেক কষ্টে রাজ আর সুকৃতির জ্ঞান ফিরানো গেল কিন্তু সাগরিকার এখনও জ্ঞান ফিরেনি। হে ভগবান হার্ট অ্যাটাক হল না তো আবার! বাধ্য হয়ে সাগরিকাকে তুলে নিতে হল।

সদর দরজা পেড়োতেই আবার বন্দুকের শব্দ শোনা গেল, দরজাটি দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল। আবার সেই রহস্যময় কুকুরের ডাক শোনা গেল। একি কুকুরটা তো মারা গেছে, তাহলে আবার ডাকল কি ভাবে! সাগরিকার জ্ঞান ফিরতে পরেরদিন বিকেল গড়িয়ে গেল। পড়ে আমরা জানতে পাড়ি যে, গতকাল আমরা যে সমস্ত চরিত্রকে দেখেছিলাম তারা আসলে কেউই জীবিত নয়। কোনো এক ভয়ানক রাতে তারা নাকি ওইভাবেই মারা গিয়েছিল। তাদের আত্মা নাকি ওইভাবেই ওখানে ঘুরে বেড়ায়, আর সেদিন তাদের এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম আমরা।

পড়ে আরেকদিন বিকেলে, বীচে যাই, কিন্তু আশ্চর্য, আবার সেই একি নামধারী এবং একই চরিত্র গুলি ঠিক আগের মতই তাদের কাজ করছে। অর্থাৎ, চন্দ্রিমা দি ঝিনুক কুড়চ্ছেন, সেই বুড়োটি বস্তা নিয়ে আসছেন। সব ঘটনা আগের মতই মিলে যাচ্ছে। আমরা আর তাদের সাথে দেখা করার সাহস পাই নি। সেখান থেকে চলে এসেছি।

COPYRIGHT RESERVED BY- ADMIN

Recommended by ছাড়পত্রঃ- অভিশপ্ত আয়না

ভূতের বাড়ি। ভূতুড়ে বাড়ি। ভয়ংকর ভূতের গল্প”

FOR REGULAR UPDATES- TELEGRAM-CharpatraOfficial 

FACEBOOK:- গল্প আর গল্প

“ভয়ংকর ভূতের গল্প। ভূতের বাড়ি। ভয়ানক ভূতের গল্প। ভূতের গল্প। BEST HORROR STORY IN BENGALI”

Spread the love

Leave a Reply