আজকের এই রাজার গল্প টিতে কিভাবে রাজা মশাই মানুষ চিনেছেন তার গল্প রয়েছে। রাজার অসুখ -এঁর মাঝে কিভাবে সবাই আসল চেহারা দেখাল তাইই রয়েছে এই ছোট গল্পটিতে।

রাজার গল্প। রাজার অসুখ। ছোট গল্পঃ-

রুদ্র গড় রাজ্যের রাজা রুদ্রপ্রতাপ। সেদিন রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে রাজা মশাই সবে মাত্র নিজের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করেছেন। হঠাৎ করেই তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন- “আর পাড়া যাচ্ছে না, কে কোথায় আছো?” রাজার চিৎকার শুনে, রাজার লোকেরা যে-যেখানে ছিল সবাই ছুটে চলে এল। তারা এসে দেখল,রাজা মশাই মেঝেতে গড়াগড়ি যাচ্ছেন।

সবাই মিলে ধরাধরি করে, রাজাকে বিছানায় তুলে খবর দেওয়া হল রাজবৈদ্য কে। রাজবৈদ্য এলেন কিন্তু রাজার অসুখ –এঁর কোনো কিনারা করতে পাড়লেন না। একে একে কবিরাজ, ওঝা- সবাই এলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না, রাজার অসুখ কিছুতেই কমছে না। অনেক তাবিজ-কবজ ঝাড়-ফুক করেই লাভ হল না।

রাজ্যের মধ্যে প্রচার হয়ে গেল, রাজার ভীষণ অসুখ, একে একে পাত্র-মিত্র সবাই রাজার সাথে দেখা করতে আসছেন, আর শান্তনা দিচ্ছেন। একদিন নগরের কোতোয়াল এসে রাজাকে বললেন- “মহারাজ, আপনার বয়স হয়েছে, হয়ত আর বেশিদিন আমাদের মধ্যে থাকতে পাড়বেন না। আপনি যদি আমাদের মধ্যে না থাকেন, কিভাবে আমরা চলব তা ভেবেই আমার খুব দুঃখ হচ্ছে। আপনি এই কয়টা দিন ভগবানের নাম জপ করুন।

এদিকে রাজা মশাইয়ের আবার কোনো পুত্র সন্তান নেই, মেয়ে সন্তান থাকলেও সে এখন অপরের ঘড়ে। রানীও বছর কয়েক আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।

কোতোয়াল চলে গেলে, কিছুক্ষণ পড় মন্ত্রী এলেন। তিনি রাজাকে সেলাম করে মুখটা একদিকে বাকিয়ে বললেন- “রাজা মশাই আপনার অসুস্থতায় আমরাও কেমন জানি দিনকে দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। প্রজাদেরও মন ভালো নেই। সবার মুখেই প্রশ্ন রাজা কি আর ভালো হবেন না? আপনার অনুপস্থিতিতে রাজ-দরবার খাঁ-খাঁ করছে। রাজ্যে অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে, এঁর একটা বিহিত করুন রাজা-মশাই।“

রাজার গল্প রাজার অসুখ
রাজার গল্প রাজার অসুখ নতুন গল্প

রাজা কিছু না বলে, শুধু হাতটা কিছুটা উপড়ে উঠালেন। এদিকে মন্ত্রী যেতে না যেতেই সেনাপতি হন্ত-দন্ত হয়ে এসে হাজির। তিনি এসে রাজাকে সেলাম পর্যন্ত করলেন না। এসে সরাসরি বললেন- “রাজা মশাই রাজ্যের সব বৈদ্য-কবিরাজ ওঝাকে ডাকা হল, কিন্তু কেউই আপনার অসুখ ঠিক করতে পাড়ল না। রাজা মশাই জীবনের তো কোনো গ্যারান্টি নেই, কখন কি হয়ে যায়, বলা মুশকিল। তাই আমি বলি কি, সময় থাকতেই একজন রাজাকে নির্বাচিত করে রেখে দেওয়া ভালো। কথায় আছে না, ‘নিঃশ্বাসের কোনো বিশ্বাস নেই!’ আপনি না থাকাই গোটা রাজ্যেই অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে, প্রজা অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। এঁর একটা উপায় বেড় করুন, আর আমি যা বললাম সেটা একটু ভেবে দেখবেন, মানে নতুন রাজা নির্বাচনের ব্যাপারটা।“

সেদিনও রাতে রাজা মন্ত্রী এবং সেনাপতিকে ডেকে বললেন- “ঠিক আছে নতুন রাজা তোমরা আয়োজন শুরু কর, আমি পরশু নতুন রাজার নাম ঘোষণা করব।“ মন্ত্রী ও সেনাপতির মুখে যেন আনন্দের হাঁসি ফুটে এল।

রাজ দরবারে নতুন রাজার নাম ঘোষণা করা হবে, তারই ঘোর প্রস্তুতি চলছে। থরে থরে ফুল দিয়ে রাজ দরবার সাজানো হয়েছে। সর্বত্র সুগন্ধির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এদিকে অসুস্থ রাজা জানালার ফাঁক দিয়ে এই সব বিলাস বহুল আয়োজন দেখছেন, আর চিন্তিত মনে ঘড়ের এপাশ-ওপাশ ঘুরছেন। পাত্র মিত্র কেউই তার সাথে নেই, সবাই আয়োজনে ব্যস্ত। রাজার অসুস্থতার কথা না ভেবেই তারা সবাই তাঁকে ছেড়ে নতুন রাজা নির্বাচনের আনন্দে ব্যস্ত।

অবশেষে সেই দিনটি চলে এল, রাজ সকাল থেকেই বাজনার শব্দ পাচ্ছেন। কিন্তু সেই বাজনার শব্দ ভেদ করেই রাজার কানে একটা চিৎকার ভেসে এল। তিনি জানালা খুলে দেখলেন তার প্রজারা এসে রাজদরবারে দাঁড়িয়েছেন আর- “আমরা নতুন রাজা চাই না, আমাদের বর্তমান রাজা মশাই-ই ভালো।“ বলে চিৎকার করছেন। ওদিকে সেনাপতি কয়েকজন সৈন্য নিয়ে প্রজাদের ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পড়ুনঃ- ভয়ংকর ভূতের গল্প। ভূতের বাড়ি

অদ্ভুত প্রেমের গল্প। অদ্ভুত প্রেম কাহিনী

প্রজাদের কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না দেখে, বিশাল সৈন্য-বাহিনী নামানো হল। প্রজাদের বন্দি করে তুমুল মার-ধর দিতে লাগল তারা। রাজা এই দৃশ্য দেখে আর থাকতে পাড়লেন না। তিনি তার ঘড় থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে ধমক দিয়ে সৈন্যদের বললেন- “এই তোমরা কি করছ খেয়াল আছে তোমাদের?” রজা মশাইয়ের ধমক শুনে সৈন্যরা থেমে গেলেন।

রাজাকে দেখেই প্রজারা তাদের ব্যাথা ভুলে গিয়ে, রাজার পায়ে লুটিয়ে পড়ে বললেন- “রাজা মশাই আমারা নতুন রাজা চাইনা। আপনিই আমাদের কাছে ভগবান। নতুন রাজা পেলে আমরা এই রাজ্যে টিকতে পাড়ব না রাজা মশাই!”

রাজা তাদের শান্ত করে বললেন- “তোমরা উঠ, আমি কোনো নতুন রাজার নাম ঘোষণা করব না।“ এই কথাটির সাথে সাথেই বাজনা বন্ধ হয়ে গেল সর্বত্র নিরবতা ছেয়ে গেল, সেই নীরবতা কাঁটিয়ে মন্ত্রীর হাত থেকে ফুলের থালাটা ঝনঝন করে মেঝেতে পড়ে গেল।

সেনাপতি বললেন- “রাজা মশাই আপনি কি সুস্থ হয়ে গেলেন?”

রাজা- “আমি আবার কবে অসুস্থ হয়েছিলাম যে, সুস্থ হব। আমি তো সুস্থই আছি। আমি কেবল অসুস্থ হওয়ার ভান করেছিলাম। আমার কোনো পুত্র সন্তান নেই, এদিকে আমারও বয়স হয়ে যাচ্ছে। এই সুবিশাল রাজ্যের পরবর্তী সু-শাসক নিয়োগ করাটা অনেক কঠিন ব্যাপার, কারণ মানুষের তিনটা মুখ থাকে।

প্রথম মুখটা সে, সবাইকে দেখায় আর দ্বিতীয়টা দেখায় তার আত্মীয়দের। তৃতীয় মুখটা সে সহজে দেখায়। আর এই তৃতীয় মুখটাতেই লুকিয়ে থাকে একজন ব্যক্তির চরিত্র। তাই আমি আমার রাজদরবারের সদস্যদের সেই তৃতীয় মুখটি দেখার জন্য অসুস্থতার ভান করি। কারণ আমাকে যোগ্য রাজা নির্বাচন করতে হবে। যেটা খুবই কঠিন কাজ।

আপসোস এই যে, এতদিন আমি যাদের নিয়ে শাসন- কাজ পরিচালনা করেছি তারা কেউই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী নয়। নতুন রাজা ঘোষণার কথা বলতেই, মন্ত্রী আর সেনাপতির মুখে হাঁসি ফুটেছিল, এরপর কেউই আমার সাথে আর দেখা করতে যায় নি। আমার মৃত্যুর পড় যে নতুন রাজা হবে তার নাম আমি ঘোষণা করব ঠিকই, কিন্তু তার আগে এই মন্ত্রী-সেনাপতি-কোতোয়াল আর সভাসদদের বন্দী করো। ওই রাজ বৈদ্যটাকেও বন্দী কর।

ও আমাকে মরার ওষুধ দিয়েছিল, কিন্তু আমি সেটি খাই নি।“ এরপর সেনারা তাদের বন্দী করল। পরবর্তীতে রাজা মশাই উপস্থিত প্রজাদের মধ্যে থেকেই নতুন রাজা, সেনাপতি, মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করলেন।

ছোট গল্প rajar golpo
ছোট গল্প rajar golpo

কিছু কাজের কথাঃ-

আমাদের বন্ধু-আত্মীয়দের মাঝেই আমাদের শত্রুরা লুকিয়ে থাকে। এদের সহজে চেনা মুশকিল। তবে সঠিক সময় আসলেই এরা এদের আসল রূপ-রং দেখাতে শুরু করে। এরকম মানুষদের চিহ্নিত করে, আগে-ভাগেই এদের থেকে দূরে সরে যাওয়াটাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক। এরা আপনার কাছে এসে সুমধুর কথা বলবে ঠিকই, কিন্তু সেই কথার আড়ালেই তাদের আসল উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকে। আর আপনার উচিত তাদের সেই উদ্দেশ্য সময় থাকতেই বুঝে নেওয়া। কথায় আছে- ঘড়ের শত্রু বিভীষণ” আমাদের জীবনে যত শত্রু থাকে সবাই আমাদের চেনা-পরিচিত সবাই আমাদের আপন কেউ।

আসল কথা হল, নিজের স্বার্থ-সিদ্ধির উদ্দেশ্যে তারা আপনার সঙ্গে সু-আচরণ করবে ঠিকই, কিন্তু সেই সু-আচরণের পিছনেই লুকিয়ে থাকে তাদের গোপন উদ্দেশ্য। মনে রাখবেন ভালো মিত্রের হাত ধরে যেমন উপড়ে উঠা যায়, তেমনই খারাপ মিত্র আপনাকে নীচে টেনে নামানোরও ক্ষমতা রাখে। ইতিহাস সাক্ষী আছে অতীতের যত হত্যা বা রাজা-মহারাজার ধ্বংস লীলা সবই হয়েছে কোনো বিশ্বাস ঘাতক মিত্র বা আত্মীয়ের হাত ধরেই। তাই মিত্র নির্বাচনের আগে সাবধান। কারণ আপনার বন্ধুদের মধ্যে এরকম হাঁতে গোণা কয়েকজনকেই খুঁজে পাবেন যারা আপনার ভালো চায়। আমাদের বন্ধু মহলে চাহনেওয়ালার থেকে না-চাহনেওয়ালার সংখ্যাই বেশি থাকে। তবে এদের চেনা খুবই মুশকিল।

নিয়মিত আপডেটের জন্যঃ- টেলিগ্রাম-গ্রুপ charpatraOFFICIAL 

facebook- গল্প আর গল্প 

রাজার গল্প। রাজার অসুখ। ছোট গল্প

কিভাবে গল্প পাঠাবেন
কিভাবে গল্প পাঠাবেন
<
Spread the love

Leave a Reply