একটি ভুতুড়ে পুতুল এর পাল্লায় ক্লাস সেভেন এর এক ছোট্ট মেয়ের বেহাল অবস্থা। এক অতৃপ্ত আত্মার পাল্লায় সর্বস্বান্ত তার জীবন। তাকে নিয়েই আজকের গল্পটি।।

অতৃপ্ত আত্মাঃ- “ভুতুড়ে পুতুল গল্প”

-আমার ওই পুতুলটা চাই মানে চাই।

-না বাবু জেদ করে না, অন্য কিছু নাও তুমি।

-না মানে না, আমার সেই পুতুলটি চাই মানে চাই নাহলে আমি বাড়ি যাব না। এই বলে মৌ পুতুলের দোকানের সামনেই বসে পড়ল।

মৌ এর পছন্দ হয়েছে একটা টেডি বিয়ার টাইপের অদ্ভুত পুতুল। পুতুলটার চোখ গুলো লাল আর মনির জায়গায় গোলাপী। নাক আছে ঠিকই কিন্তু অনেক ছোট। আর পুতুলটার মুখ অনেক বেদনাময়।

এরকম অদ্ভুত পুতুল মৌ এর বাবা কিনে দিতে নারাজ, কিন্তু নাছোড়বান্দা মৌ এর জেদের কাছে তার বাবা পেরে ওঠে না, অবশেষে কিনে দেয় তাকে সেই পুতুলটি।

মৌ ক্লাস সেভেন এ পড়ে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান মৌ থাকে দত্ত পাড়ার চার নম্বর গলিতে। পুতুল হাতে পেয়ে মৌ বেজায় খুশি। অদ্ভুত ভাবে বদলে গেল মৌ এর প্রতিদিনের রুটিন। সেই পুতুলকে ঘিরেই পরিচালিত হতে থাকল তার সারাটা দিন। স্কুল না যাওয়ার নিত্য নতুন বাহানা করছে সে, আজ মাথা ব্যথা, কাল চোখ ব্যাথা এই ভাবেই চলতে থাকে তার। একমাত্র আদরের মেয়েকে বাবা কে কিছুতেই স্কুলে পাঠানোর জন্য জবরদস্তি করে না। আর স্কুলে যাওয়ার সময় পেরিয়ে গেলেই মৌ পুরোটা সময় সেই পুতুলের সাথেই কাটায়।

ভুতুড়ে পুতুল গল্প
ভুতুড়ে পুতুল গল্প

অনেকবার তার মা জবরদস্তি তাকে স্কুলে পাঠানোর ব্যাবস্থা করলেও তাকে স্কুল পাঠাতে পারেননি।

এদিকে মৌ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এমনকি ঘুমানোর সময় এও সেই পুতুল সঙ্গে নিয়ে থাকে। সে পুতুলটির নাম দেয় অলি। অলি কে ঘিরেই তার অনেক স্বপ্ন। সে নাকি বিশ্বাস করে যে অলির ও প্রাণ আছে। সে শুধু কথা বলতে পারছে না এটুকুই।
একদিন মৌ তার মা কে ডেকে বলে – “মা দেখো দেখো অলি দুধ খাচ্ছে।”

মেয়ের এরকম পাগলামি দেখে মৌ এর মা হাসতে হাসতে বলেন, “আরে পাগল মেয়ে পুতুলটা তুলো দিয়ে তৈরি তুমি ওর মুখে দুধ দিলে তো শুষে নেবেই।”

মৌ কি বুঝল কে জানে, সে হাসতে হাসতে বলল, “তাহলে গঙ্গা কাকিমা কে একটু বেশি দুধ দিয়ে যেতে বল, আজ থেকে অলি ও আমার সঙ্গে দুধ খাবে।”

মৌ এর মা হাসতে হাসতে চলে যায়। মৌ পুতুলের প্রতি এতটা আকৃষ্ট দেখে তার মা এর খুবই অদ্ভুত লাগে, আবার আনন্দও হয়। কতদিন তাদের মেয়েকে এইভাবে হাসতে দেখেননি তিনি!

একদিন মৌ এর মা দেখে মৌ পুতুল টির হাত দুটো ধরে বলছে, “হাটি হাটি পা পা”
মৌ এর মা হেসে বলেন, “কিরে টেপি ক্ষেপে গেলি নাকি, পুতুলকে হাঁটতে শেখাচ্ছিস যে!”

-“না মা তুমি দেখো একদিন অলি ঠিক হাঁটতে শিখবে। আর আমার সাথে দৌড় দৌড় খেলবে।”

পড়ুনঃ- সত্যি ভুতের গল্প- অদ্ভুতুড়ে স্কুল 

এই ঘটনার পর কেটে গেছে দুই দিন, একদিন দরজার আড়াল দিয়ে মৌ এর মা দেখে এক ভয়ানক দৃশ্য, সে দেখে যে পুতুল টি ধীরে ধীরে পা ফেলে মৌ এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর মৌ হেসে হেসে বলছে “এসো এসো আরেকটু আরেকটু, এই তো গুড গার্ল।”
ক্ষনিকের জন্য মৌ এর মা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তিনি দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখেন যে, পুতুলটি এক জায়গায় পরে আছে আর মৌ বলছে “এসো এসো আরেকটু আরেকটু…”

নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলেন না মৌ এর মা, এটা কিভাবে সম্ভব! তিনি খুব ভালো ভাবেই দেখেছেন যে পুতুলটা এগিয়ে যাচ্ছে মৌ এর দিকে, কিন্তু সেই পুতুলটা হঠাৎ করে একজায়গায় পরে আছে এখন কিভাবে! তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না!

রাতে তিনি পুরো ব্যাপার টা মৌ এর বাবাকে জানালেন আর সাথে এও বললেন যে- “দেখেছ মেয়েটার স্বাস্থ্য দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, সে এত্ত শুঁকিয়ে যাচ্ছে কেন বলো তো। ওর মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে সেই পুতুল পাবার পর থেকে। বাবা হেসে উড়িয়ে দিলেন ব্যাপারটা আর বললেন – “কত বলেছি তোমাকে অত খাটুনি করতে হবে না, অতিরিক্ত খাটুনি করতে গিয়ে আজ উল্টো পাল্টা দেখে যাচ্ছে। মৌ বড় হচ্ছে স্বাস্থ্য তো একটু ঘাঁটবেই। উফফ সত্যি ! কি যে বলো তুমি।

মৌ এর মা কিছু বলে না। কিন্তু সেই পুতুল হাঁটার দৃশ্য টি তার চোখে এখনো ভাসছে।

রক্ত খাওয়া ভূত
রক্ত খাওয়া ভূত

পরের দিন মৌ খাবার খাওয়ার সময় বলে উঠে – “জানো মা, অলির চোখ গুলো থেকে না জল পড়ে, ও কেঁদে কেঁদে লাল করে দেয় চোখ গুলো। আমি জিজ্ঞাসা করি কেন কাদো কিন্তু সে উত্তর দেয় না তুমি ওকে জিজ্ঞাসা কর না মা প্লিজ।”

মৌ এর মা আরও আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তিনি ঠিক করলেন এবার থেকে সেই পুতুলটির কার্য কলাপের উপর তিনি পুরো নজর রাখবেন।

এইভাবেই কেটে গেল প্রায় দুই মাস। এর মধ্যে মৌ স্কুলে গেছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন। আর বর্তমানে মৌ শয্যাশায়ী। শহরের সবচেয়ে বড় বড় ডাক্তারও মৌ এর অসুখ নির্ধারণ করতে ব্যর্থ। তার ছোট্ট শরীর এখন বিছানার সাথে মিশে গেছে। অবস্থাটা এমন হয়ে গেছে যে, তার সেই ছোট্ট শরীরের সবকটি হাড় গোনা যাচ্ছে। কিন্তু তবুও সে পুতুল ছাড়তে নারাজ।

সেদিন রাতের ঘটনা, মৌ পুতুলটি কে সাথে নিয়ে ঘুমিয়েছে। মৌ এর মা চুপিসারে সব কিছু দেখে যাচ্ছে দরজার ফাঁক দিয়ে। এরপর তিনি যে দৃশ্য দেখলেন, তাতে তিনি আরেকটু হলেই জ্ঞান হারাতেন।

তিনি দেখলেন যে, পুতুল টা ধীরে ধীরে মৌ এর হাত সরিয়ে উঠে যাচ্ছে তারপর ধীরে ধীরে পুতুলটা মৌ এর শরীরের উপর উঠে গেল পুতুলটা, মৌ এর কাঁধে মুখ দিয়ে বসে থাকল। তার পায়ের নীচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সামলে নিয়ে দড়াম করে দরজা খুলে ভিতরে যেতেই তিনি দেখলেন পুতুলটি মৌ এর হাতের নিচেই। এটা কিভাবে সম্ভব!

তিনি ভালো ভাবে পুতুলটি কে দেখতে লাগলেন। নিজের অজান্তেই তার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে উঠল, হার্ট টা জোরে জোরে পাম্প করতে লাগল, তিনি দেখলেন কে পুতুলটির মুখে রক্ত লেগে আছে। অর্থাৎ পুতুলটি মৌ এর কাঁধে মুখ লাগিয়ে রক্ত খাচ্ছিল। না না এই পুতুল সম্পর্কে তার আর কোনো কিছুই জানা বাকি নেই, এটা একটা অভিশপ্ত পুতুল।

পড়ুনঃ- ভুতের গল্প- শেষ রাতের ট্রেন 

সেই দিন রাতেই মৌ এর মা বাবাকে সব ঘটনা বলে, কিন্তু বাবা কিছুতেই বিশ্বাস করছেন না। সমস্ত কিছুই হেসে উড়িয়ে দিলেন।
এরপর মাঝখানে একদিনের বিরতি।

দিন দিন পুতুলের প্রতি মেয়ের এরকম কার্য লীলা দেখে মৌ এর বাবা একদিন মৌ এর অগোচরে পুতুল টিকে গোডাউনে রেখে চলে আসেন।

কিন্তু মৌ এর বাবাকে অবাক করে দিয়ে সেই পুতুল মৌ এর বাবার আগেই যেখানে ছিল সেখানে এসে হাজির হয়ে যায়। মৌ এর বাবা এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।

তার কথা আটকে যায়, হুম ঠিক মনে আছে তিনি পুতুলটি কেই নিয়ে গিয়েছিলেন অথচ তার আসার আগেই এটি হাজির। না না বিষয় টা মোটেও ভালো ঠেকছে না।

সেইদিনই মৌ এর বাবা মৌ এর মায়ের সঙ্গে সিধান্ত নিয়ে ছুটে গেলেন এক তান্ত্রিকের কাছে। নিয়ে এলেন সেই তান্ত্রিককে বাড়িতে। তান্ত্রিক সব শুনে পুতুল টিকে দেখতে চাইলেন। পুতুলটি হাতে নিতেই পুতুলটি কেপে উঠল। যেন পুতুলটির মধ্যে প্রাণ আছে। যেন নিশ্বাস নিচ্ছে পুতুলটি। সব কিছু দেখে আতঙ্ক মিশ্রিত ভয়ে বিস্মিত মৌ এর বাবা আর মা।

তান্ত্রিক বললেন, এটা কোনো সাধারন পুতুল নয়। এই পুতুলের মধ্যে বিদ্ধ করা আছে শহরের বড় মহিলা গ্যাংস্টার রাহি ডাকাতিনির আত্মা।

অতৃপ্ত আত্মা
অতৃপ্ত আত্মা
<

রাহি ডাকাতিনি! কে বা কারা যেন তাকে হত্যা করেছিল কুপিয়ে আর তারপর তার শরীর পিস্ পিস্ করে কুকুরকে খাইয়েছিল। কিন্তু এই রাহি ডাকাতিনির আত্মা পুতুলে কিভাবে!

তান্ত্রিক আবার বলতে শুরু করলেন, রাহিকে মেরে ফেললেও তার আত্মা কিছুতেই শান্ত হচ্ছিল না, এদিকে ওদিক ঘুরে সবাইকে বিরক্ত করছিল এমনকি ওর আত্মার হাতে কয়েকজনের প্রাণ ও গেছে। এরপর একজন বিখ্যাত তান্ত্রিক কে ডেকে নিয়ে আসা হয়, সে এই অদ্ভুত পুতুলটি তৈরি করে তাতে রাহি ডাকাতিনির আত্মা বিদ্ধ করে, আর সবাই তার আত্মার থেকে মুক্তি পায়।

আপনাদের ভাগ্য ভালো দেড়িতে হলেও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন, নাহলে হয়ত আপনাদের মেয়েকে জীবন্ত পেতেন না, মেয়ের জেদের প্রতি একটু খেয়াল রাখুন। জেদ কে বশে আনতে শিখান ওকে।

এরপর সেই তান্ত্রিক, পুতুল কে নিয়ে চলে যায় আর মৌ, অলি অলি বলে চিৎকার করতে থাকে, কিন্তু মৌ এর বাবার ক্ষমতা নেই যে মেয়েকে বোঝাবে যে সেই অলি, অলি নয় সেটা আসলে এক অভিশপ্ত আত্মার কুঁড়েঘর।

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 

সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 

রহস্যময় গল্প- অদ্ভুতুড়ে ফোন নাম্বার 

মাথা কাটা লাশ 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

ভুতুড়ে পুতুল গল্প। রক্ত খাওয়া ভূত। অতৃপ্ত আত্মা।

Spread the love

Leave a Reply