ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে গল্প প্রতিটি সম্পর্কে থাকা দুইজন মানুষই চায় পরিবার তাদের সম্পর্ককে পূর্ণতা দিক। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা হয়না। কাজেই তখন দুটো রাস্তা খোলা থাকে হয় পরিবার নয়ত ভালোবাসার মানুষ। আবার কিছুকিছু ভালোবাসায় থাকে পাগলামো। তারা ভাবে অন্যভাবে। তাদের মতে পরিবার না মেনে আর কতদিন থাকবে! একটা সময় পর পরিবার ঠিকই মেনে নেবে। কিন্তু একবার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেললে এই মহামূল্যবান জীবনটা নরক এর মত কাটাতে হবে। সে যাই হোক এই বিষয়টা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারবেন আজকের সুন্দর এই গল্পটিতে।
ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে গল্প:- “জীবনসঙ্গী”
হ্যালো বাবাই,তুমি কি এখনো ঘুমাচ্ছ? শোনো না, একটা গুড নিউজ আছে…।
ফোনের ওপার থেকে কণার উত্তেজনা মিশ্রিত গলাটা শুনে বাবাই তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে বসলো , কৌতূহলী স্বরে বলে উঠলো , “না না আমি ঘুমাচ্ছি না , বলো বলো কি নিউজ”
কণা ফোনের স্পিকারের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে জোর করে বললো, “আমি তোমাদের জেলায় কাজ পেয়ে গেছি মশাই , খুব জলদি আসছি তোমার কাছে।”
বাবাই প্রথমে বিশ্বাস করতে একটু সময় লাগলেও , পরে যখন বুঝল , কণার বলা কথা মোটেও মিথ্যা নয় তখন সে রীতিমত ইমোশনাল হয়ে কেঁদেই ফেললো।
উত্তরবঙ্গ এর পাহাড় ঘেঁষা মনোরম পরিবেশ, সকালে সুমধুর পাখির কূজন আর উত্তরের জানালা খুললেই কাঞ্চনজঙ্ঘা সুপ্রভাত জানায়। এরকমই জায়গায় বাবাইয়ের বাড়ি আর দক্ষিণবঙ্গের নদীর জলতান, বিকেলে নদীর জলে পড়ন্ত সূর্যের ঝিলিক যেখানে চলমান পথচারীকে শুভেচ্ছা জানায় এমন একজায়গায় অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের এক্কেবারে শেষ প্রান্তে বাড়ি বাবাই এর ভালোবাসা অর্থাৎ কণার।
দুইবঙ্গের মেলবন্ধনকারী এই জুটির পরিচয় হয়েছিল শান্তিনিকেতনে, দোল উৎসবের সময়। আবিরের রঙ সেদিন সরাসরি ওদের মন দুটিকেই রাঙিয়ে দিয়েছিল ভালোবাসার রঙে। এরপর ফোনের মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তারপর বাবাই প্রতিমাসে নানান অজুহাতে দক্ষিণবঙ্গ পাড়ি দিতে শুরু করে ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘণ্টা চারেক কাটানোর জন্য।
এইভাবেই ওদের সম্পর্ক দুই বছর অতিক্রম করলেও নানান বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় । বাবাই এর কথায় কথায় ঝগড়া করার অভ্যাস টা নিয়ে যখন ওদের সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে দাড়ায় তখন পুনরায় একে অপরকে মানিয়ে নিয়ে আবার পথচলা শুরু করে । কণার জন্য বন্ধু মহল থেকে দুরে সরে আসা বাবাই , সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে ওর হাতে সপে দেয়। নিজেদের মাঝে বোঝাপড়া, মান অভিমান এর মাঝে সমস্যা হয়ে দাড়ায় ওদের পরিবার। কোনো পক্ষের পরিবারই ওদের সম্পর্ককে মেনে নিতে রাজি হয় না ।
পড়ুনঃ- ভালোবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি
কণার বাবা মা তো যথারীতি তার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে প্রস্তুতি শুরু করে। বাবাই ও নাছোড় বান্দা সে যে কণাকে মণ্ডপ থেকে তুলে নিয়ে আসবে , সে কথা স্পষ্ট দুই পরিবারকে জানিয়ে দেয়। কণা দিশেহারা হয়ে পড়ে , একদিকে পরিবার অন্যদিকে বাবাই , সে তো দুটোকেই সাথে নিয়ে চলতে চেয়েছিল, তাহলে আজ কেন এমন পরিস্থিতির শিকার সে! কণা সবদিক সামাল দিতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়।
তিন দিন পর তার সেন্স ফিরে আসে আর সামনেই তার বাবা মা আর বাবাই এর মুখ ভেসে ওঠে। একসাথে তিন জন কে দেখে অবাক এর সাথে সাথে একটা আনন্দের অনুভূতি মনকে নাড়া দিয়ে ওঠে।
কণা সুস্থ হয়ে ওঠার পর কনার মা বাবা কথা দেন, যদি ছয় মাসের মধ্যে তারা ভালো কাজ জোগাড় করতে পারে তাহলে তারা এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু বাবাই এর পরিবার কোনো শর্তেই এই সম্পর্ককে মেনে নিতে রাজি হয় না ।
অদম্য জেদ নিয়ে দুইজনেই তখন কাজ খুঁজে বেড়ায় হন্যে হয়ে , শত বাধা বিপত্তির মাঝে শেষ পর্যন্ত কণা চাকরি পায় বাবাইয়ের উত্তরবঙ্গের এক জেলায় । এই চাকরি আর সম্পর্ককে পুনরায় অস্বীকার করে কণার মা বাবা , তারা কিছুতেই মেনে নিতে চায়না।
তবে এবার কণা আর দমে না গিয়ে , সরাসরি বাড়ির সবার কথা অমান্য করে পাড়ি জমায় উত্তরবঙ্গে । কারণ সে জানে তার কাছের মানুষ তার জন্য অপেক্ষারত।
স্টেশন পৌঁছেই বাবাই এর ছল ছল করা দুটো চোখ কে শান্তনা দিতে কনা তাকে জাপটে ধরে। সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে, পেছনে ফেলে আসা স্মৃতি গুলোকে সাক্ষী করে তারা মন্দিরে বিয়ে করে ।
পড়ুনঃ- কয়েক লাইনের ছোট ছোট প্রেমের গল্প
তারাও জানে এই সম্পর্ক বড়দের আশীর্বাদ ছাড়া অসম্পূর্ণ , হয়তো আজ পরিবার না মেনে নিলেও , কয়েক বছর পর সবাই মেনে নেবে ,সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের জেদের কাছে নিজেরা হেরে গেলে , সারাজীবন তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতে হবে দুটি প্রাণকে। তাই জেদের কাছে ভালোবাসার হার কখনই মানানসই নয় , এই কথাকে প্রমাণ করে দেয় বাবাই আর কণা।
কণা দুর্বল হয়ে পড়লে বাবাই কনার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে, ” আমি আছি তো পাগলী , চিন্তা কিসের !”
পরিবারের কাছে অনেক সম্পর্ক হার মেনে নেয়। পরিবারের কথা রাখতে গিয়ে একে অপরকে ছেড়ে দুইদিকে রওনা হয়, কিন্তু কিছু কিছু সম্পর্ক সব কিছুকে হার মানিয়ে ভালোবাসার জয় ঘটায়। তারাই প্রমাণ করে ” ভালোবাসা মানেই শারীরিক সম্পর্ক বা কিছুদিনের সময় কাটানোর সাথী না , ভালবাসা মানে যে বর্তমান , সেই শত বাধা বিপত্তির পরও ভবিষ্যত , যাকে নিয়ে পথ চলার শুরু তাকে দিয়েই পথ চলার শেষ, সেই প্রকৃত জীবনসঙ্গী ।
গল্পের মেলবন্ধনে
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার গল্প ভালোবাসার বড়- আবার দেখা
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে গল্প। গভীর ভালোবাসার গল্প। 1 new bengali awesome love story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।