ভয়ানক ভূতের গল্প বাংলা।। দিন কয়েক আগে আমি মুর্শিদাবাদে যাই, এই ভয়ানক ভৌতিক গল্পটি, সেখানে আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ভৌতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা।

ভয়ানক ভূতের গল্প বাংলাঃ- হোস্টেলের শেষ রাত

ঘটনাটা কয়েক মাস আগের। পরীক্ষার জন্য, মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলাম। কলেজের হোস্টেলেই আস্তানা গড়েছিলাম। উঁহু আমি অবশ্য একা ছিলাম না। আসলে আমার উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষা যেদিন শেষ হবে, সেদিনই বাসে রওনা দিব বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরে খবর পাই যে বাসের টিকিট আমি বুকিং করেছিলাম, সেই বাসটি বাতিল করা হয়েছে। স্বভাবতই সেদিন আর আমার বাড়ি ফেরা হল না।

বন্ধুরা একে একে সবাই বেড়িয়ে গেল, আর আমি একাই অত বড় হোস্টেলে থেকে গেলাম। বন্ধুরা যদিও বলেছিল একা হোস্টেলে না থাকতে। তারা বলেছিল মুর্শিদাবাদ শহরে কোনও এক গেস্ট হাউসে থাকতে। কিন্তু সেখানে আবার বাড়তি ভাঁড়া দিতে হবে, সেই ভয়ে কলেজের হোস্টেলেই থেকে গেলাম।

এদিকে সূর্য দেব ধীরে ধীরে দিনান্ত ঘোষণা করছেন। রাতের খাওয়ার শেষে, বিছানায় গেলাম। ভাবলাম কোনো মতে দুইটা রাত এখানে কাঁটিয়ে দিয়ে পরের দিন সকাল হলেই চলে যাব।

ভয়ানক ভূতের গল্প বাংলা
ভয়ানক ভূতের গল্প বাংলা

রাত তখন দুটা কি তিনটা হবে। আচমকাই বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কান খাঁড়া করে শুনলাম নীচের তলার মাঠে কোনও এক আজব প্রাণীর ভয়ঙ্কর গোঙানির শব্দ। শব্দটা বড়ই অদ্ভুত। শুনলেই যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।

আমি ভেবেছিলাম কোনো বন্য পশু হবে হয়ত। কিন্তু সেই বন্য পশুটি এই কলেজের প্রাচীরের ভেতর কিভাবে প্রবেশ করবে। এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছি কিছু মনে নেই, ঘুম ভাঙ্গল আবার সেই অদ্ভুত কান্নার শব্দে।

আমার মনে হচ্ছে শব্দটা আমার রুমের দিকেই এগিয়ে আসছে। ভূত প্রেত আমি বিশ্বাস না করলেও, সেদিন কেন জানিনা, নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। সত্যি বন্ধুদের কথা মত শহরের কোনো একটা গেস্ট হাউসে থাকলেই হয়ত ভাল হত।

রাত তখন প্রায় চারটে হবে। ভয়ানক কান্নার শব্দটা, আমার রুমের দরজার কাছে এসে থেমে গেল। কিছুক্ষণ নিস্তব্দধতা। এরপর, চুড়ির শব্দ পেলাম, যেন মনে হচ্ছে আমার রুমের দরজা কেউ জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে। আমার ভয়ে রীতিমত ভিরমি যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।

পড়ুনঃ- ভূতের গল্প- বদলা 

রুমের দরজার ওপারে কোনো এক ভয়ানক প্রাণী, আর রুমের ভিতর অসহায় আমি। কলেজটি এমন জায়গায় অবস্থিত আমি চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পারবে না। সেই ভয়ানক চুড়ির সাথে মাঝে মধ্যে শিয়ালের গোঙানি পরিবেশটাকে আরও বেশি ভয়ংকর আর ভূতুড়ে করে  তুলছে।

কিছুক্ষণ পর আমার মনে হল, দরজার ওপারের প্রাণীটা আর দরজা ঠেলছে না। কিছুটা স্বস্তি অনুভব হল। কিন্তু আমার সেই শান্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। এদিকে এরকম ভূতুড়ে পরিবেশে আমার শরীর দিয়ে যেন অবিরাম বারি ধারা প্রবাহিত হয়েই চলছে। কি কুলক্ষণেই যে এই হোস্টেলেই রাত্রি যাপন করছি তা আমি নিজেও জানি না।

বাংলা ভৌতিক গল্প
বাংলা ভৌতিক গল্প

দরজার ওপার থেকে নাকি সুরে আওয়াজ এল, – “আমি কি ভিতরে আসতে পারি?” আমি শুনেও না শোনার ভান করলাম। কোনো চোরটোর নয়ত! আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। 

এরপর আবার শব্দ এল- “আমি আসচি ভিতরে”

রুমের জলতে থাকা ড্রিম লাইটটা হঠাৎ করেই ব্লিঙ্ক করতে শুরু করল। গোটা রুম কেমন যেন একটা ভ্যাঁপসা গন্ধে ছেয়ে যেতে লাগল, রুমটির আবহাওয়া পরিবর্তন হতে শুরু হল, কেমন যেন একটা মিষ্টি ঠাণ্ডা হাওয়ায় রুমটা ভড়ে যেতে লাগল।

আমি সব কিছু অনুভব করেও, প্রচণ্ড ঘুমে থাকার ভান করতে লাগলাম। ইতিমধ্যে আমার গাঁয়ের লোম একটা ভয়ঙ্কর শব্দে নাড়া দিয়ে উঠল। কেউ যেন নাকি সুরে বলল- “আমি জানি তুমি জেগে আছ!”

ওরে বাপরে আজ আমি গেছি! এটা কোনো প্রাণী নয়, এটা নির্ঘাত একটা পেত্নী। রুমের দরজা বন্ধ তবুও রুমে প্রবেশ করেছে।

আবার নাকি সুরে কথা ভেসে এল- “আমি তোমার সাথে কথা কইতে চাই। ওঠো।“

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর, যখন আমি চোখ খুললাম। আমি দেখলাম, একটি ছায়া মূর্তি আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

পড়ুনঃ- ভয়ানক সেই রাত! 

মূর্তিটা এক পলকেই আমার একদম কাছে চলে এল। আমার মনে হয় এবার সোজা কার্ডিয়াল অ্যাটাক হবে! জ্ঞান হারানোর আগে আমার যতটুকু মনে আছে- সেই ছায়া মূর্তিটার মাথা পুরো থেঁতলে গেছে। এমন ভাবে তার মাথাটা দেহর সাথে ঝুলে আছে যে, কোনো কোমল হৃদয়ের মানুষ দেখলেই হয়ত তৎক্ষণাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবে!

যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন দেখি সকাল হয়েছে। দরজার ওপাশে হোস্টেলের রাঁধুনি আমাকে চা নেওয়ার জন্য ডাকছে।

তার হাত থেকে চা টা নেওয়ার পর, রাতে আমার সাথে ঘটে যাওয়া বিভীষিকা ময় ঘটনা গুলি নিয়ে ভাবতে লাগলাম। সত্যি কি আমার সাথে রাতে কেউ এসেছিল! হুম সেই ভয়ানক চেহারাটা বেশ মনে পড়ছে আমার! উফ এখনও মনে পরলে  লোম খাঁড়া হয়ে যায়!

আবার কখনো মনে হতে লাগল, এই সবই এক দুঃস্বপ্ন মাত্র। কিন্তু দুঃস্বপ্ন হোক আর যাই হোক, আমাকে যে ভাবেই হোক এই হোস্টেল আজকেই ছাড়তে হবে। আমি আর এখানে বিন্দুমাত্র সময় থাকতে চাই না।

ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাঁধুনিকে আমার হোস্টেল ছাড়ার কথা বলতে যাব! এমন সময় কিছু একটা এসে আমার পিছনে লাগল। ঘুরে দেখলাম একটি কাগজ। আমার পিছনে কোনো ব্যক্তিকে দেখলাম না, তাহলে এই কাগজটা এল কোথা থেকে!

কাঁপা হাঁতে কাগজটা তুলে নিয়ে খুলে দেখি, ভিতরে কাঁপা হাঁতে লিখা আছে- “আমার কথা শোনো!”

না গতকাল রাতে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলি মোটেও কাল্পনিক নয়। আমাকে যেভাবেই হোক এখানে থেকে তাড়াতাড়ি বের হতেই হবে।

আবার কিছুক্ষণ পর মনে হল- কেউ কি আমাকে কিছু বলতে চায়! আচ্ছা শোনাই যাক না। সে কি বলতে চায়!

অপেক্ষা করতে লাগলাম রাতের। রাত তখন দুটো, আমি প্রতীক্ষা করছি সেই আজব মায়াবী প্রাণীটির। আজ আমি দরজা বন্ধ করিনি। আমি জানতে চাই সেই মায়াবী প্রাণীটি আমাকে কি বলতে চায়! আমি ঘুমের ভান করে পরে রইলাম।

আনুমানিক রাত তিনটা হবে, আবার সেই আগের রাতের মত ভয়ঙ্কর কান্নার শব্দ আমার কানে ভেসে এল। আমার মনে হতে লাগল, ধীরে ধীরে সেই কান্নার শব্দটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে, আমার রুমের দিকেই আসছে।

আমার দরজার সামনে যখন সেই কান্নার শব্দটা এসে উপস্থিত হল, ঠিক আগের রাতের মত চুড়ির শব্দ পেলাম, দরজা কিছুটা নড়ে উঠল। ঠিক আগের রাতের মত পরিবেশ গোটা ঘড় ছেয়ে গেল। বুঝলাম, সেই মায়াবী ঘড়ে প্রবেশ করেছে।

আমার বিছানার পাশে এসে সে আবার আগের রাতের মত বলে উঠল- “আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই!”

আমি আগের রাতেই দেখেছি, তার ভয়ঙ্কর রূপ। আমি ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম- “তা তা তা রররর আগে আমাকে কথা দাঁওও, আমাকে ছেড়ে দেবে।“

সেই ভয়ঙ্কর মায়াবীটা যেন কিছুটা বিরক্ত হয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠল- “আমি তোমার ক্ষতি করতে আসিনি, আমি সাহায্য চাইতে এসেছি।“

পড়ুনঃ- মজার গোয়েন্দা গল্প- বিস্কুট রহস্য 

আমি কিছুটা শান্ত হলাম, কিন্তু একজন ভয়ঙ্কর মায়াবী আমার রুমে আছে, আর আমি একা ভয় তো লাগারই কথা। তারপর আবার তার সেই ভয়ঙ্কর রূপ! উফফফ মনে পড়লেই গা শিউড়ে উঠে!

আমি একটি কাপড় উঠিয়ে ধরে বললাম- “এই কাপড়টি আগে তোমার মাথার উপর চাপাও, তারপর আমি তোমার দিকে ঘুরব।“

আমার মনে হল, কেউ আমার হাত থেকে কাপড় টা নিয়ে নিল, এরপর আমি কম্বলের ভিতর থেকে বাইরে এসে দেখলাম, ছায়া মূর্তিটা আমার একদম পাশেই দাঁড়িয়ে আছে! আমি ভয় পেয়ে বললাম- “তু তু মি কে?”

ভয়ঙ্কর মায়াবীটা বলে উঠল- “আমাকে সাহায্য কর, আমি পারুল।“

-কিন্তু তোমার এই অ অ বস্থা কেন!

-অনেক দুঃখের কথা! আমিও তোমার বয়সী এক মেয়ে, ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে নিজের স্বপ্নের চাকরি করব। কিন্তু তারা তাতা তা রা আমাকে শেষ করল!

bengali ghost story
bengali ghost story
<

-তুমি ঠিক মত বল, তোমার কি হয়েছে। আর আমিই বা তোমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

ভয়ানক সুরে আবার তার কথা বলা শুরু হল-

– “আমাদের অভাবের সংসার। বাবা স্কুল পাশ করেই বাবা আমাকে বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমার বিয়ের আগের রাতে আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসি। কিন্তু সঙ্গে যা টাকা ছিল তা গাড়ি ভাঁড়া দিতেই শেষ হয়ে যায়। এরপর এই জায়গায় আসি, আর আমি দেখি এই কলেজটি তৈরি হচ্ছে।

এরপর এখানে কাজের খোঁজ করি। আমি গ্রামের মেয়ে মোটামুটি সব কাজই আমি পারি। কাজ একটা পেয়েও গেলাম, ওই যে মিস্ত্রীকে সাহায্য করে যে, সেই কাজ গুলি! এরপর এক সপ্তাহ হয়ে যায় কাজ করার, আমি একদিন কাজের টাকা চাইতে মিস্ত্রীর কাছে যাই।

কিন্তু তারা আমাকে টাকা দেওয়ার বদলে অকথ্য অত্যাচার শুরু করল। শেষে আমার নিথর দেহটাকে সন্ধ্যার সময় টেনে নিয়ে গেল, কলেজের পিছনের সেই জঙ্গলটায়। আমার বোধ থাকেলও, উঠে দাঁড়ানোর শক্তি টুকুও হারিয়েছি।

পড়ুনঃ- হাড় হিম করা ভূতের গল্প-ভূতুড়ে গুদাম ঘড় 

এরপর কেউ যেন আমাকে চিনতে না পারে, তারা আমার মাথা বড় পাথর দিয়ে থেঁতলে দেয়। তারা ভেবেছিল আমি মারা গেছি, তাই ওই জঙ্গলটাতেই তারা আমাকে মাটি চাঁপা দিয়ে দেয়।

আমার বাবা বিশেষত আমার অভাগিনী মা আমার চিন্তায় হয়ত পাগল হয়ে গেছে। তুমি একটু তাদের জানিয়ে দিও, যে তাদের মেয়ে বেঁচে নেই।”

এরপর আমি পারুলকে কথা দিই যে, আমি তার বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মাকে সব বলব। সেই মিস্ত্রিদের খুঁজে বের করে তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করব।

bengali horror story
bengali horror story

পরের দিন সকাল হতেই আমি বেড়িয়ে পরি। এরপর আবার আমার ব্যস্ত জীবনের সূত্রপাত। আবার সেই কর্মক্ষেত্রে ছোটাছুটি। এহেন ব্যস্ততার মাঝে যাব যাব করেও কোনো দিন পারুলের দেওয়া ঠিকানাটাতে গিয়ে তার বাবা-মাকে তাদের মেয়ের খবর টা দিতে পারলাম না।

পারুলকে যে আশ্বাস দিয়েছিলাম, তার অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করব, উপযুক্ত প্রমানের অভাবে সেটিও করা হল না। সত্যি আজ নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। কর্মজীবনের ব্যস্ততায় পারুলকে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না। কিন্তু ইচ্ছে করলেই আমি পারতাম, তবুও আলস্যতা আর আইনি জটিলতার ভয়ে পারুলের সাথে ঘটে যাওয়া সেই বিভীষিকাময় হাড় কাঁপানো ঘটনার সত্যতা সবার কাছে তুলে ধরতে পারলাম না।

না জানি এই ভাবে কত পারুল আজ ন্যায্য বিচারের আশায় দিন গুনছে, কবরের কালো অন্ধকারে!

© reserved by admin of charpatra.com Re-publishing of this post in any platform (YouTube, Facebook etc.) is prohibited. Legal action will be taken by charpatra.com

আপনার লেখা গল্প সরাসরি WhatsApp -এ আমাদের পাঠানোর জন্য ক্লিক করুন নীচের নীল লেখাটিতে- click here to send your story. 
পড়ুনঃ- 

রহস্যময় গল্প- যূথিকা Tailors

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প- শেষ রাতের ট্রেন

পোড়ো বাড়ির ভূতুড়ে আয়না
এক ক্লিকেই আমাদের সমস্ত আপডেটের জন্য- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
(লিংক কাজ না করলে টেলিগ্রামে সার্চ করুন- charpatraofficial)

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
(গ্রুপটি শুধুমাত্র লেখক এবং পাঠকদের জন্য কোনো ইউটিউবারের ভিডিও কনটেন্টের জন্য নয়)

ভয়ানক ভূতের গল্প বাংলা। বাংলা ভৌতিক গল্প। 1 new bengali horror story. amazing bengali ghost story

Spread the love

Leave a Reply