একটি ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প আজ নিয়ে আসা হয়েছে। শেষ রাতের ট্রেন -এ চেপে ফেরার সময় আমাদের সাথে এই ভূতুড়ে ঘটনা টি ঘটেছিল।
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্পঃ- ট্রেনের ভুতের গল্প
শেষ রাতের ট্রেন ছিল ১.৩০ এ। আমরা হাওড়া ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু এক ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ট্রেনের দেখা নেই। সৃজার মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। দিনের বেলায় এই স্টেশন যতটা ভিড় থাকে রাতের বেলা ঠিক ততটাই শান্ত। ঝি ঝি আর কুকুরের সেই উদ্ভট ডাক ছাড়া আর কোনো কোলাহল কানে আসছে না। স্টেশন মাষ্টারকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ট্রেনের খবর কি!
তিনি অত্যন্ত বিজ্ঞের সাথে উত্তর দিলেন ট্রেন কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে। রাত প্রায় ৩.০০ টে নাগাদ ট্রেন ষ্টেশনে হাজির হল। রাতের ট্রেনের এটাই মজা, কোনো ছুটোছুটি নেই, ভিড় নেই একদম ফাঁকা।
আমাদের সীট ছিল সেকেন্ড ক্লাসে, উঠে দেখি একটি জনমানবের পাত্তা নেই। ষ্টেশনে যে মানুষগুলি ছিল তারা সবাই জেনারেল ক্যাবিনে উঠে পড়েছে। রাতে অনেকবার ট্রেন ভ্রমণ করেছি কিন্তু এত শুনশান ক্যাবিন জীবনে প্রথম দেখছি।
ট্রেন তার নিজের ছন্দ ধরতেই সৃজা ব্যাগ থেকে খাবারটা বের করতে যাবে, এমন সময় পিছন থেকে একটি কর্কশ গলা ভেসে এল- “আমাকে একটু জল দেওয়া যাবে!” পিছনে তাকিয়ে দেখি, আপাদ মস্তক চাঁদর দিয়ে ঢাকা এক বুড়ো দাঁড়িয়ে আছে। এই গরমের দিনেও এমনভাবে চাঁদর মুড়ি দিয়ে আছে যে, চোখ গুলিও দেখা যাচ্ছে না।
আমি জলের বতল টা এগিয়ে দিতেই লোকটি বলল- “পরে খাব!” এ কেমন লোক রে বাবা, এক্ষণই বলল জল খাবে, আবার সেকেন্ডেই মত পাল্টে ফেলল! আশ্চর্য আমি ট্রেনে উঠার সময় এই লোকটাকে তো লক্ষ্যই করি নি! পিছনে ঘুরে দেখি লোকটা মুহূর্তের মধ্যে কর্নারের সীটে বসে পরেছে।
সৃজা কিছুটা ভয়ের স্বরে আমাকে বলল- “আমার কেমন যেন ভ ভ ভয় ভয় করছে! লোকটা চোর টোর নয় তো!” আমি তাকে সান্তনা দিই, কিন্তু মেয়েদের সান্তনা দেওয়া আর বাঘকে গান শোনানো একই ব্যাপার!
খাওয়া শেষে ঘুমাতে যাই, কিন্তু বাড়বার সেই লোকটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে! এরপর কখন যে ঘুমিয়ে গেছি কিছুই মনে নেই। ঘুম যখন ভাঙল তখন পুরো ক্যাবিনে প্রচুর ঠাণ্ডা যেন মনে হচ্ছে বাইরে বরফ পড়ছে। সৃজার দিকে তাকিয়ে দেখি, বেচারি ঠাণ্ডায় জুবুথুবু হয়ে ঘুমাচ্ছে!
জানালা দিয়ে হাত বের করে আমার বোধদয় হল, না বাইরে কোনো বরফ পড়ছে না! হঠাৎ আমার নজর কর্নারে বসে থাকা সেই লোকটার দিকে গেল, আশ্চর্য! লোকটা এখানেই বসে ছিল গেল কোথায়! মাঝপথে তো কোনো স্টেশনও আসে নি!
আমি সৃজাকে ডেকে তুলে বললাম- “সেই লোকটা কোথায়!” চোখ ঘষতে ঘষতে সৃজা আমার দিকে দেখতেই চিৎকার করে উঠল- “তোমার পিছনে ওটা কে?” আমি পিছন ঘুরতেই দেখি, একজন কুচকুচে কালো রঙের লোক দাঁড়িয়ে আছে, মুখে রয়েছে অনেক কাঁটা দাগ, চোখ দুটি ভয়ানক লাল লঙ্কার মত, যেন মনে হচ্ছে এই বুঝি ঠিকরে বাইরে বেড়িয়ে আসবে। দেখতেই আমার সমস্ত শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল।
এটা হয়ত সেই চাঁদর মোড়া লোকটা। লোকটা কি চায় আমাদের কাছে! এ নিশ্চয়ই ডাকাত হবে। সৃজার মুখ ভয়ে ধূসর হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আমার নজর লোকটার হাতের দিকে গেল। দেখলাম লোকটা কাটারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে আর বাকি রইল না যে, লোকটার মতলব ভালো নয়।
আমি কিছু বলতে যাব, এমন সময় সেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ কারী লোকটি কর্কশ ভয়াল গলায় বলে উঠল- “আমাকে রক্ত দে, আমি তৃষ্ণার্ত।“ আমি যেহেতু আর্মিতে কাজ করি, লোকটার এই রূপ দেখে কিছুটা আতঙ্কিত হলেও তেমন ভয় আমি পেলাম না। ওদিকে সৃজার অবস্থা ভয়ে কাহিল।
পড়ুনঃ- বীচের সেই ভূত বাংলোতে একরাত
আমি শান্ত গলায় বললাম- “রক্ত পান কেন করবেন, জল খান?” লোকটা আবারও ভয়াল গলায় বলে উঠল- “তার জবাব তোকে দিতে যাব কেন রে!” কথাটা শেষ হতে না হতেই লোকটা কাটারি টি উপড়ে উঠিয়ে আমার দিকে তেড়ে এল, আমি কোনো মতে পা দিয়ে তার মুখে লাথি মেরে সৃজাকে নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে যাওয়ার পরিকল্পনা করি।
ইচ্ছে ছিল চেইন টানব, কিন্তু আমি চাইছিলাম আমরা তাড়াতাড়ি যেন পরের ষ্টেশনে পৌঁছে যাই। আবার এই শুনশান ট্রেনে চেইন টেনে ট্রেন দাড় করালেও কেউ যে আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এমন ভয়ানক পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সৃজা। সে মুচ্ছা যায় যায় অবস্থা। ওই অবস্থাতেই তাকে নিয়ে আমি ট্রেনের বাথরুমে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিই। কিন্তু তাতেও রেহাই হল না। লোকটা বাথরুমের দরজা ঠেলতে লাগল। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু নিস্তব্দ, মুহূর্তের মধ্যে মনে হয়েছিল লোকটা হয়ত চলে গেছে, কিন্তু চলন্ত ট্রেন থেকে সে কিভাবে যাবে!
আমি বাথরুমের দরজা খুলে কিছুটা আড়াল হয়ে দেখতেই লোকটাকে তেড়ে আসতে দেখলাম। আমি তাড়াতাড়ি দরজাটি আবার বন্ধ করে পিছিয়ে যেতেই, বাইরে থেকে একটা দড়াম করে শব্দ এল। অর্থাৎ লোকটা দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে!
এই সাধারণ দরজাটা লোকটার সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না। তাই আমি ঠিক করি, লোকটাকে দমাতে আমাকে বাথরুমের বাইরে যেতে হবে। সৃজা আমাকে বাইরে যেতে দিতে নারাজ, সে কাঁদতে শুরু করল। কিন্তু একজন আর্মি হয়ে এইভাবে আমি বাথরুমে দরজা এঁটে থাকতে পারি না।
সৃজার কথায় কর্ণপাত না করে, বাথরুমে দরজা খুলে বাইরে আসতেই লোকটার বীভৎস মুখ দেখে আমার জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা হল। কিন্তু নিজেকে সামনে নিলাম। লোকটা কাটারি নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতেই হ্যান্ডেল বার ধরে ঝুলে গিয়ে দিলাম তার মুখে একটা লাথি। লোকটা দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ল।
এবার লোকটা আরও বেশি রেগে গেল, সে যত বেশি রাগছে তার চোখ দিয়ে রক্তের ফোটা ততই পড়ছে। বীভৎস লোকটার সাথে এবার কুস্তি শুরু হল, বুঝতে পাড়লাম এর শরীরে অসুরের মত শক্তি, এর সঙ্গে আমি কোনো মতেই পেরে উঠব না। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এল।
আমি শক্তি কম লাগিয়ে কিছুটা দরজার দিকে পিছোতে লাগলাম। পাটাতনের উপড়ে আমার পা পড়তেই আমি পিছলে যাবার উপক্রম হলাম, হঠাৎ ভাঁড়ি কিছু একটা এসে আমার মাথায় লাগল, আমি সেখানেই পরে গেলাম। তবে আমি জানি যে সৃজা নিরাপদে আছে। কারণ জ্ঞান হারানোর আগে আমি ভালোভাবেই লক্ষ্য করেছি যে, আমি পিছলে যেতেই সেই লোকটা খোলা দরজা দিয়ে বাইরে পরে যায়।
এরপর যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন দেখি আমাকে ঘিরে রীতিমত মেলা জমে গেছে, আর একটা চেনা কান্নার শব্দ বারংবার কানে আসছে। উঠে বসতেই দেখি আমি ষ্টেশনের বেঞ্চে, আর সৃজা অবিরাম কান্না করেই যাচ্ছে।
ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বয়স্ক বলে উঠলেন- “বাবু আপনারা যে কি কুলক্ষণেই রাতের বেলা সেই সেকেন্ড ক্লাসে উঠেছেন কি জানি! কোনো মানুষই রাতের বেলা সেই ক্যাবিনে যাত্রা করে নে।
আমি বললাম- “কেন চোর ডাকাতের ভয়ে বুঝি?”
-“চোর ডাকাত নয়কো বাবু, আত্মা আত্মা এক ভয়ঙ্কর আত্মা রাতে ওই ক্যাবিনে ঘুরে বেড়ায়, সে শুধুই মানুষের রক্ত খায়। আপনারা গতকাল যে লোকটাকে দেখেছিলেন সেটা কোনো লোক নয়কো বাবু, সেটা হল একটা আত্মা! আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ওই ক্যাবিনে একজন লোক উঠেছিল, তার নাকি জলের পিপাসা পেয়েছিল, কিন্তু তার দিকে জল এগিয়ে দিতেই সে জল নয়, তৃষ্ণা মেটাবার জন্য মানুষের রক্ত চাইল। এরপরই নাকি সে একজন মানুষের দিকে তেড়ে যায়।
ক্যাবিনের বাকি লোকেরা এঁতে রেগে যায়, আর সেই মানুষটিকে সেখানেই পিটিয়ে মেরে গেলে। সেই মানুষটির অতৃপ্ত আত্মা আজও ওই ক্যাবিনের একা যাত্রীদের রক্ত পান করতে তাদের উপর চড়াও হয়।“
সেই বয়স্ক লোকটার কথা শুনে বুঝলাম গতকাল রাতে যে লোকটার সাথে আমার লড়াই হয়েছিল, সে আসলে কোনো জীবিত মানুষ নয়, আর জীবিত অবস্থায় সেই লোকটি “রেনফিল্ডস সিনড্রোম” নামে এক ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল। এই “রেনফিল্ডস সিনড্রোমে আক্রান্ত মানুষ রক্ত পান করতে বেশি ভালোবাসে।
যদিও আমি ভূত প্রেতে তেমন একটা বিশ্বাস করি না, কিন্তু সেই রাতের ঘটনার পরে মনে কিছুটা হলেও ভূত প্রেতের ভয় ঢুঁকে গিয়েছিল।
©all copyright reserved by the Admin of ছাড়পত্র any re-use of this content is illegal, charpatra.com will take action against that person or YouTube channel/blog-site.
পড়ুনঃ- পোড়ো বাড়ির রক্ত খেঁকো আয়না
ভয়ানক ভূতের গল্প- বদলা
ভূতুড়ে গুদামঘরে আমি ও সুলেখা
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ-
WhatsApp Group:- ছাড়পত্র (২)
ফেসবুক গ্রুপ- গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOFFICIAL
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প। শেষ রাতের ট্রেন ভুতের গল্প। bengali horror story.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।