প্রেম আসল হলেও সেই ‘আসল’ এর আড়ালে মুড়ে থাকে কিছু নিছক সত্যতা। সেই সত্যতার বহিঃপ্রকাশ আজকের এই ব্যর্থ প্রেমের ছোট গল্প দুটি।

ব্যর্থ প্রেমের ছোট গল্পঃ-

ব্যর্থ প্রেমের ছোট গল্পঃ- মুক্তি

“ভালোবাসি বলেই তো বারবার ফিরে আসি” এই কথাটা বলতে বলতে মহুল তিথির হাতটা শক্ত করে ধরে ওর সাথেই বিদায় নিল…।

শহরের ছেলে মহুল গ্রামে পিসির বাড়ি এসেছে পূজা উপলক্ষে আর আসার পরেই ওর দেখা ওর স্বপ্নের রাজকুমারী তিথির সাথে । প্রায় একবছর ওদের সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পর্ক। অনেকদিন ভিডিও কল আর চ্যাট হলো তাতে তিথি মোটেই খুশি নয়। তাই তিথির ডাকে এবার মহুল গ্রামেই চলে এলো । সবার আড়ালে হাত ধরে হাঁটা আর মাঝে মধ্যে একটু আধটু কথা, সব মিলিয়ে ওদের পুজোর দিন গুলো বেশ ভালোই কাটলো। মহুল যেহেতু সরকারি কর্মচারী তাই ওর বাড়ি থেকে বিয়ে নিয়ে অসুবিধা হবে না। তবে তিথির রক্ষনশীল পরিবার হয়তো এই ভালোবাসার দাম দেবে না ভেবে ওরা সিদ্ধান্ত নিলো পালিয়ে বিয়ে করবে।

দেখতে দেখতে একটা বছর পেরিয়ে গেলো বারবার মহুল তিথি কে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বলেছে তবে তিথি ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মহুল কল করে একদিন তিথি কে জানালো, তার মা জোর কদমে তার বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে , আর তার মায়ের শেষ ইচ্ছে তিনি তার পছন্দের মেয়ের হাতে তার ছেলের দায়িত্ব তুলে দিতে চান। সে নিজেও আর বিয়েতে দেরি করতে চায়না তাই তিথি যদি সত্যি তাকে ভালোবাসে তাহলে যেন তার কাছে চলে আসে এই বলে ফোন টা রেখে দিল। অপারক তিথি কিছুই বুঝতে পারলো না কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক। তিথি ঠিক করলো ও পালিয়ে যাবে তারপর যা হয় হবে। রাত্রের অন্ধকারে মেয়েটা বেরিয়ে পড়লো একা একা সাথে একটা ব্যাগ আর বোতল।

ব্যর্থ প্রেমের ছোট গল্প
ব্যর্থ প্রেমের ছোট গল্প

বছর দুয়েক পর মহুল আবার গ্রামে পিসির বাড়ি এলো । কয়েকটা দিন থাকার পর মনে অনেক সাহস যুগিয়ে তিথির বাড়ি গেল। গিয়ে ঢুকতেই তিথির মা বলে উঠলো তাহলে মহুল এতবছর পর তোমার আসার সময় হলো। মহুল আশা করেনি তার নাম তিথির মা জানবে । মহুল জিজ্ঞাসা করলো “তিথি কোথায় আছে জানেন ?” তিনি বললেন জানো বাবা মেয়েটা খুব ভীতু ছিল তাই সাহস করে কোনোদিন নিজের মনের কথা কাউকে বলতে পারেনি । কিন্তু সেদিন রাত্রে যখন ও তোমার কাছে পালিয়ে যেতে চাইলো সেদিন সবটা বলেছিল আমায়। আমিও রাজী হয়ে গেছিলাম তবে ও যাওয়ার আগে একটা বোতল সাথে নিয়ে গিয়েছিল।

ও জানতো না ওটাতে জল নয় অ্যাসিড ছিল। তিথীর কাকুর অ্যাসিড এর চোরা কারবার ছিল যার ঘোর বিরোধী ছিল তিথির বাবা। তাই ওর কাকুই সেদিন জলের বোতলের মধ্যে অ্যাসিড রেখে ক্ষতি করতে চেয়েছিল তিথির বাবার। কিন্তু তার শিকার হলো নিরীহ মেয়েটা । সেদিন গ্রাম পেরিয়ে শহরের রাস্তায় ওঠার আগেই তিথি জলটা মুখে নিলে ওর মুখ জিভ পুড়ে গিয়েছিল । একটা আধমরা মানুষ হয়ে শেষ নিশ্বাস গুনছে বিগত দুই বছর ধরে।

পড়ুনঃ- একটি অন্যরকম প্রেমের গল্প- সন্দেহ! 

দেখো না বাবা তুমি নিজেই দেখো আজ অব্দি মেয়েটা ওই ঘরের এককোনায় শুয়ে শুয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তোমার আশাতেই বোধয় ও শেষ নিশ্বাস টা ফেলেনি । মহুল ছুটে গেলো তিথির কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে বললো তিথি চলো একসাথেই তাহলে যাই। পোড়া জিভ নিয়ে কথা বলতে পারলোনা তিথী তবে শক্ত করে মহুলের হাতটা ধরে চিরকালের মতো একসাথেই দুজন বিদায় নিল।

bengali sad love story
bengali sad love story

পরে জানতে পারা গেলো তিথীর খোঁজ না পেয়ে মহুল একটি আস্ত মাতালে পরিণত হয়েছিল আর এই নেশার চোট এতটাই জোরালো ছিল যে ডাক্তার বাবু বলেছিলেন তার লিভার ক্যান্সার এর লাস্ট স্টেজ । তার হাতে বেশি সময় নেই । এটা জানার পর মহুল শেষ সময়টা এই গ্রামে আর শেষ মুহূর্তটা তিথির হাতে হাত রেখেই পার করতে চেয়েছিল । তাই সেদিন যখন ওর মুখ থেকে রক্ত উঠতে শুরু করে সেদিনই ও তিথির বাড়ি যায়। আর ভাগ্যের পরিহাসে একসাথেই বিদায় নেয়।

কি অদ্ভুত পরিণতি তাই না! সব ভালবাসা যেমন পূর্ণতা পায়না তেমন সব প্রেমেও মুক্তি পাওয়া যায়না।

পড়ুনঃ- গভীর ভালোবাসার গল্প- ১লা আষাঢ় 

ব্যর্থ প্রেমের ছোট গল্পঃ- আবিরের ছোঁয়া

যখন মনে করি সন্ধ্যেবেলা, পলক না পড়া চোখের বাক্যহীন অজস্র কথা বলা , তখন আসে মনে তাকে যে আছে ভাবনার বাসনায়।

গল্পের প্রধান চরিত্র দিয়া , সে আজ নিজের জীবন দিয়ে বড্ড শঙ্কিত , কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয় সেই নিয়েই । তাই তার কিছু মনের কথা তুলে ধরলো আমার কাছে। এভাবেই শুরু তার গল্পটা –

বয়ঃসন্ধি কাল টা নাকি খুবই ভয়ানক, যে এই সময় যতটা নিজেকে সামলে রাখতে পারে ,সেই তার জীবনে, ততটাই ঠিক তার পরিবারের কাছেও জয়ী । দিয়া সবে মাত্র ক্লাস নাইন এর ফাইনাল এক্সাম দিয়ে ভালো নম্বর নিয়ে পাস করেছে, তার বাড়ির লোকের, তার ওপর ভীষন ভরসা। সবাই চায় সে মাধ্যমিক এ সেরার সেরা রেজাল্ট করুক। দেখতে দেখতে সময় কেটে গেলো নাচ , গান , পড়াশোনা নিয়ে ভালোই চলছিল দিয়ার জীবন ।

আচমকাই প্রলয় ঝড়ের মতো,তার জীবনের প্রধান চরিত্র রূপে অবতীর্ণ হলো সৌমিক। এক গ্রামেই বাড়ি কিন্তু তাও তাদের কোনোদিন পরিচয় হয়নি সামনে থেকে । টেস্ট এক্সাম পেরোনোর পর রঙের ছড়াছড়ি সেই সকাল বেলায় দেখা হলো দিয়া আর সৌমিকের। দিয়াদের দোকানেই সৌমিক এসেছিল আবির কিনতে। কিনতে তো এসেছিল আবির কিন্তু নিজের অজান্তেই কারুর জীবন রাঙিয়ে দেবে সেটা সে ভাবেনি ।

কোনোদিন আবির খেলেনি দিয়া কিন্তু সেদিন সবার জোরাজোরিতে সেও সবার সাথে মিলেমিশে রঙের আমেজে মেতে উঠেছিল । তার কিছু দিন পর এক বান্ধবী এসে জানালো সৌমিক তাকে জিজ্ঞাসা করতে বলেছে , সে কি সৌমিক কে তার জীবনে জায়গা দিতে পারবে ? দিয়া সৌমিকের নিয়ে আগে অনেক নাম শুনেছে , ছেলেটা নাকি খুব বুদ্ধিমান , ভদ্র , শান্ত , আর কোনো ঝামেলা ঝঞ্ঝাটে সে থাকে না । তাই না চাইতেও দিয়া বলে ওঠে, “” না তুই সৌমিক দা এর নিয়ে এরম একদম বলবি না , ও খুব ভালো ছেলে , ও কখনোই এরম বলতে পারে না”। কিছুতেই মেয়েটি দিয়াকে বোঝাতে পারলো না যে সত্যি সৌমিক তাকে এসব বলে পাঠিয়েছে। পরের দিন আস্ত একটা চিঠি নিয়ে হাজির দিয়ার আরেক বন্ধু, দিয়া তো হতভম্ব এসব দেখে ।

এরপর দিয়া বিশ্বাস করলো তার কথায় । নিজের অজান্তেই হয়তো সেও ছেলেটিকে পছন্দ করত তাই তাকে উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে পাঠালো। দিনের পর দিন ,মাসের পর মাস কেটে গেল, তারা একে অপরের সাথে ভীষণ খুশি । এভাবেই তাদের সম্পর্কের চার বছর পূর্ণ হলো। সৌমিক দিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো। কিন্তু দিয়ার বাবা মোটেও সৌমিকের পরিবারকে পছন্দ করে না। কারণটা দিয়া বা সৌমিক কেউ এই জানে না। তবে ওরা এটা শুনেছে সৌমিক এর পরিবারের জন্যই দিয়ার বাবার এককালীন চাকরি চলে গিয়েছিল।

bertho premer choto golpo
bertho premer choto golpo
<

দিয়া অনেক চেষ্টা চালিয়েও কোনো হদিস পেলো না ওর বাবার অমত এর । সৌমিক ও দিয়ার পরিস্থিতিটা বুঝে ওর কথা মত দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করলো । সৌমিক নিজের কাজ নিয়ে আর দিয়া নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো । দেখতে দেখতে তিন টা বছর কেটে গেলো । আবার সেই দিয়ার আবির এর দোকানে সৌমিক এর সাথে দিয়ার দেখা তবে আজ সৌমিক একা আসেনি সাথে আছে ওর এক বছরের একটা কোলের শিশু আর দিয়াও দার্জিলিং এ একটা কলেজের প্রফেসর ,সেও ছুটিতে বাড়ি এসেছে ।

তাই আজ আবার ওদের পুনরায় দেখা তবে মাঝে রয়ে গেছে কিছু স্মৃতি আর মুহূর্ত। যার জন্য আজও দিয়া অবিবাহিত ।
সব সম্পর্ক পূর্ণতা পায় না। আবার সব সম্পর্ক শেষ ও হয়না । কিছু হয় অতীত আবার কিছু ভবিষ্যত। দিয়ার নিখুঁত ভালোবাসা প্রমাণ করে ওর পরিপূর্ণ অথচ অপরিপূর্ণ গল্পের বাস্তব সত্যিটাকে।

আলোরানি মিশ্র

গল্পের ভাবনায়-
আলোরানির আরও কিছু লেখা- 

একটি সফল প্রেমের গল্প 

একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প 

ভুতের গল্প- ভূত চতুর্দশীর সেই রাত! 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial [লিংক কাজ না করলে টেলিগ্রামে সার্চ করুন- charpatraofficial]

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২) [এই গ্রুপটি শুধুমাত্র পাঠক এবং লেখকদের জন্য, কোনো ইউটিউবাড়ের জন্য নয়] 

“ব্যর্থ প্রেমের ছোট গল্প। bertho premer choto golpo. bengali sad love story.”

Spread the love

Leave a Reply