বিটকয়েন কি? এটি কিভাবে কাজ করে? আর কি ভাবেই বা এটিকে পাওয়া যেতে পারে? এটি কোথায় থাকে? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন হয়ত আপনার মনে উদয় হয়। বর্তমান দিনে ইন্টারনেট ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। আর এর ফলে এখন বাড়িতে বসেই অর্থ উপার্জন করা যাচ্ছে। আর ইন্টারনেট থেকে অর্থ উপার্জনের অনেক রাস্তা আছে। আর এই রাস্তা গুলির মধ্যে একটি অন্যতম হল- বিটকয়েন। এর মাধ্যমে আমরা অনেক ইনকাম করতে পারি। দিন দিন বিট কয়েনের দাম কিন্তু বেড়েই যাচ্ছে। বর্তমানে ( এই ব্লগটি লেখা পর্যন্ত) ১ বিটকয়েনের মুল্য প্রায় ৪৪,৪৪,০৮০ বাংলাদেশী টাকার সমান এবং ৩৭,৯৭,৬২৬.৪৬ ভারতীয় টাকার সমান। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো! না হওয়ারই কথা বটে!
আজকের এই ব্লগটিতে বিটকয়েন সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর আমরা খোঁজার চেষ্টা করব। সঙ্গে থাকুন।
বিটকয়েন কি?
বিটকয়েন আসলে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা। যেমন বাকি মুদ্রা গুলি- রুপি, ডলার ইত্যাদি হয়ে থাকে ঠিক সেরকমই বিটকয়েন আসলে ডিজিটাল মুদ্রা। তবে বাকি মুদ্রা গুলির সাথে এর পার্থক্য হল- বিটকয়েনকে আমরা দেখতে এবং টাচ করতে পারব না। অর্থাৎ এটি কোনো পদার্থ বা বস্তু নয়। বিটকয়েনকে আমরা কেবল মাত্র অনলাইন ওয়ালেট তৈরি করে, সেখানে জমা রাখতে পারি। বিটকয়েনের আবিষ্কর্তা হলেন- SATOSHI NAKAMOTO, তিনি ২০০৯ সালে বিটকয়েন আবিষ্কার করেন। বিটকয়েন আসলে বিকেন্দ্রীভূত মুদ্রা। অর্থাৎ এটীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা বা কোনো ব্যাঙ্ক নেই। অর্থাৎ কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা এর মালিক নয়।
বিটকয়েন যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। যেমন ইন্টারনেট আমাদের সবার জন্য উন্মুক্ত এর কোনো নির্দিষ্ট মালিকানা নেই, ঠিক সেইরকমই বিটকয়েনেও উন্মুক্ত। যে কেউ এটী ব্যবহার করতে পারবে।
বিটকয়েন কি? কিভাবে বিটকয়েন আয় করা যায় বিটকয়েনের ব্যবহার কেন করা হয়
বিটকয়েনের ব্যবহার কেন করা হয়?
সাধারণত বিটকয়েনের ব্যবহার অনলাইন কেনাবেচার ক্ষেত্রে বা কোনো প্রকার লেনদেনের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। বিটকয়েন PEER TO PEER NETWORK অর্থাৎ কোনো ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাঙ্ক বা কোনো কোম্পানির সাহায্য ছাড়াই আমরা একে অপরের সাথে লেনদেন করতে পারি।
লেনদেনের ক্ষেত্রে বিটকয়েনকে অনেক স্মার্ট মানা হয়ে থাকে। বর্তমান দিনে- DEVELOPERS, ENTREPRENEURS ইত্যাদি লোকেরা বিটকয়েন প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করছেন, এবং এর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী।
বাদবাকি পেমেন্ট করার সময় যেমন আমাদের ব্যাঙ্ক থেকে যেসমস্ত প্রসেস দেওয়া হয় সেগুলি অনুসরণ করতে হয়, এবং আমাদের যাবতীয় পেমেন্টের তথ্য ব্যাঙ্কের কাছে থেকে যায়। কিন্তু বিটকয়েনের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে সেই তথ্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি দেখতে পায় না। কারণ বিটকয়েনের তো কোনো মালিকই নেই। বিটকয়েনের মাধ্যমে হওয়া যাবতীয় তথ্য একটি Public Ledger এ জমা হয় এবং একে Block-chain বলা হয়। আর এই Block-chain টিই transaction টি সফল হয়েছে কিনা তা দেখায়।
আপনি আরও পড়তে পারেনঃ-
মেয়েদের অজানা তথ্য মেয়েদের অজানা কথা নারীদের সঙ্গে যুক্ত অজানা ফ্যাক্ট
বিটকয়েনের বর্তমান বাজার মুল্য
যদিও দিন দিন বিটকয়েনের মুল্য উঠা-নামা হয়ে থাকে, এর মুল্য নির্দিষ্ট থাকে না। কারণ এটিকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থাকে না। চাহিদার উপর ভিত্তি করে, এর মুল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। বর্তমানে (এই ব্লগটি লেখা পর্যন্ত) ১ টি বিট কয়েনের মুল্য প্রায়- ৪৪,৪৪,০৮০ বাংলাদেশী টাকার সমান এবং ৩৭,৯৭,৬২৬.৪৬ ভারতীয় টাকার সমান।
বিটকয়েন ওয়ালেট কি?
বিটকয়েনকে আমরা কেবলমাত্র ইলেকট্রনিক্যালি জমা করতে পারি, আর এই জমা করার জন্যই বিটকয়েন ওয়ালেটের প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিটকয়েন ওয়ালেট বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে, যেমন- Desktop wallet, Mobile wallet, Web based wallet, Hardware wallet ইত্যাদি। আর এর মধ্যে আপনার সুবিধা মত আপনি যেকোনো ওয়ালেট বানাতে পারেন। আর এটি একটি ইউনিক পরিচয় পত্রের মত কাজ করে থাকে। যেমন ধরুন- আপনি কোথা থেকেও বিটকয়েন ইনকাম করলেন, এবার সেগুলি স্টোর করার জন্য আপনার কাছে একটি নির্দিষ্ট পরিচয় পত্র চাওয়া হবে, যেখানে আপনার বিটকয়েন গুলি জমা হবে।
তাছাড়াও আপনি যদি বিটকয়েন কিনতে চান বা বিক্রয় করতে চান তারজন্যও আপনার বিটকয়েন ওয়ালেটের প্রয়োজন হবে। আর এরপর আপনি যতগুলি বিটকয়েন বিক্রি করবেন সেগুলি transfer bit coin wallet এর মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টে নিয়ে নিতে পারবেন।
বিটকয়েন কিভাবে উপার্জন করা যায়?
বিটকয়েন উপার্জন করার তিনটি রাস্তা নিয়ে আজ আমরা কথা বলব।
প্রথম পদ্ধতি
যদি আপনার কাছে অঢেল টাকা আছে, তাহলে আপনি সরাসরি ৯৯৯ ডলার দিয়ে একটি বিটকয়েন কিনতে পারেন। তবে এর মানে এটা নয় যে, আপনাকে পুরোপুরি ৯৯৯ ডলারই লাগবে। আপনি বিটকয়েনের ছোট ইউনিট ‘সতোশি’(satoshi) ও কিনতে পারেন।
যেমন আমাদের ভারতে ১ টাকা ১০০ পয়সার সমান তেমনই ১ টি বিটকয়েন ১০কৌটি সতোশির সমান। তেমনভাবে আপনি চাইলে ধীরে ধীরে সতোশি কিনতে কিনতে ১ বিটকয়েন জমাতে পারেন।
আপনার মনে এবার প্রশ্ন জাগতে পারে- বিটকয়েন কিনে লাভ কি?
শুনুন ভাই যতই দিন গড়িয়ে যাচ্ছে ততই এর দাম বেড়েই চলছে। যখন এটি প্রথম চালু হয়েছিল তখন এটির দাম ছিল খুবই কম। কিন্তু বর্তমানে এটির দাম অনেক বেশি। আর দিন দিন এর দাম বেড়েই চলছে। তাই আপনার টাকা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
ধরুন আপনি অনলাইনে কোনো জিনিস বিক্রি করেন। আপনি যাকে আপনার দ্রব্য বিক্রি করলেন তার থেকে আপনি টাকার বদলে বিটকয়েন নিতে পারেন (যদি তার থাকে)। আর এই বিটকয়েন গুলি সরাসরি আপনার বিটকয়েন ওয়ালেটে জমা হবে।
আর আপনি চাইলে পড়ে অন্য কোনো ব্যাক্তিকে বেশি দামে বিটকয়েন বিক্রি করতে পারেন।
বিটকয়েন কি? কিভাবে বিটকয়েন আয় করা যায়
তৃতীয় পদ্ধতি
আর তিন নম্বর পদ্ধতিটি হল- Bit-coin mining. আর এর জন্য আপনার একটি হাই প্রসেসর যুক্ত কম্পিউটারের দরকার হবে। শুধু প্রসেসর হাই হলেই হবে না, হার্ডওয়্যার-ও ভালো মানের থাকতে হবে।
বিটকয়েন দিয়ে পেমেন্ট করার আগে ভেরিফাই করা হয়, যে বিটকয়েন আসল কি না! আর যারা এই ভেরিফাইের কাজটি করে থাকে তাদের miners বলা হয়। আর এই miners দের কাছে অনেক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার থাকে, আর এরা পেমেন্ট ভেরিফাইয়ের কাজটি করে থাকে। তাদের কাজ হল যে পেমেন্টটি হচ্ছে সেটি আসল নাকি এর মধ্যে কোনো জড়তা লুকিয়ে আছে! আর এই ভেরিফিকেশনের কাজটি করার সুবাদে তাদেরকে কিছু বিটকয়েন বা সতোশি দেওয়া হয়। আর এইভাবেই বাজারে নতুন নতুন বিটকয়েন চলে আসে।
আর এই ভেরিফিকেশনের কাজটি যে কেউ করতে পারবে, কেবলমাত্র সাথে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং হাই gpu যুক্ত কম্পিউটার থাকলেই হল। আর এই সব কম্পিউটার ক্রয় করা কিন্তু সবার বাজেটের মধ্যে থাকে না।
যেমন আমাদের দেশে বার্ষিক টাকা ছাপানোর একটি লিমিট আছে, যে এর থেকে বেশি টাকা ছাপানো যাবে না, ঠিক সেইরকমই ২১ মিলিয়নের থেকে বেশি বিটকয়েন একসাথে বাজারে পাওয়া যায় না।
যেমন বর্তমানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাজারে প্রায় ১৩ মিলিয়নের কিছু বেশি বিটকয়েন রয়েছে। আর এরপর বাজারে যতগুলি নতুন বিটকয়েন আসবে সবগুলিই mining এর মাধ্যমেই আসবে।
বিটকয়েনের সুবিধা
১. এখানে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের তুলনায় ট্যাক্স অনেক কম কাটা হয়ে থাকে।
২. বিটকয়েন পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় এবং যেকোনো সময়ে পাঠানো যেতে পারে।
৩. আমাদের ব্যাঙ্কে যেমন নিয়মিত লেনদেন না করলে আমাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়, এখানে কিন্তু সেই অসুবিধাটি নেই। আপনার এই অ্যাকাউন্ট কোনোদিনও বন্ধ হবে না, যদি আপনি জালিয়াতি না করেন।
৪. যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য বিটকয়েন ইনভেস্ট করতে চান তাহলে, কিন্তু ভবিষ্যতে আপনার অনেক লাভ হতে পারে। কারণ যতই দিন যাচ্ছে, ততই বিটকয়েনের দাম বেড়েই চলছে।
৫. বিটকয়েন লেনদেনের উপর কোনো সরকার বা প্রতিষ্ঠান নজর রাখে না, তাই কিছু কিছু লোক আছেন যারা খারাপ কাজের জন্য লেনদেন করেন, এগুলি তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়ে থাকে।
বিটকয়েন ব্যবহারের অসুবিধা
১. বিটকয়েনকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাঙ্ক নেই বলে, এর দাম হঠাৎ করেই কমে যায়, বা বেড়ে যায়। তাই ঠিক মত খেয়াল না রাখলে আপনার লোকসান হতে পারে।
২. যদি কোনোদিনও আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে আপনার কিছুই করার থাকবে না। এমনকি কেউই আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।
৩. পেমেন্ট করার সময় পেমেন্ট Unsuccessful হলেও অনেক সময় টাকা কেটে নেয়, সেগুলি আর ফিরে পাওয়া যায় না।
বিটকয়েন কিভাবে কিনব?
সোনা বা অন্য কোনো গয়নার মতই আপনি আপনার দেশীয় মুদ্রাতেই বিটকয়েন কিনতে পারবেন। এবার আমরা বিটকয়েন ক্রয় করার দুটি বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট এবং তাদের বিশেষত্ব নিয়ে আলোচনা করব।
নীচের ওয়েবসাইট গুলি থেকে আপনি খুব সহজেই বিটকয়েন ক্রয় করতে পারবেন।
UNOCOIN
এটী বিটকয়েন ক্রয় করার একটি অন্যতম বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটের বিশিষ্ট গুলী হল-
১. কোনো ট্যাক্স লাগবে না।
২. এই ওয়েবসাইটটি থেকে বিটকয়েন ক্রয় করা এবং এর সার্ভিস অনেক ভালোমানের।
৩. আপনি যদি Unocoin ব্যবহার করেন, তাহলে এটি ব্যবহার করার কোনো চার্জ আপনাকে দিতে হবে না।
৪. এছাড়াও আপনি এখানে auto sell bit-coin নামে একটি অপশনও পেয়ে যাবেন।
৫. সবথেকে বড় কথা হল- নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এখানে আপনি 2 step verification পাবেন।
ZEBPAY
এই ওয়েবসাইটটি বিশ্ব ব্যাপী তাদের কার্যকলাপ পরিচালনা করে। যারফলে আপনি অনেক VENDOR পেয়ে যাবেন। এই সাইটটির বিশিষ্ট গুলী হল-
১. এর মাধ্যমে আপনি বিটকয়েনের সাহায্যে মোবাইল বা DTH রিচার্জ করতে পারবেন।
২. এর সাহায্যে আপনি FLIPKART, AMAZON ইত্যাদি বড়বড় কোম্পানি গুলীর ভাউচার কিনতে পারবেন। যারফলে আপনি অতিরিক্ত ১০% ছাড় পেয়ে যাবেন।
৩. এটী সবথেকে দ্রুত কাজ করে। অর্থাৎ সার্ভিসিং স্পিড বেশি।
৪. এটী অনেক বেশি নিরাপদ।
৫. এখানে বিটকয়েনের দাম বাজারের তুলনায় কম থাকে।
৬. এর একটি অ্যাপ আছে, ফলে আপনি মোবাইল থেকেও আপনার অ্যাকাউণ্ট কন্ট্রোল করতে পারবেন।
এত কিছু জানার পরেও আপনার মনে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে আপনি নির্দ্বিধায় আমাকে কমেন্টে বা ফেসবুক পেজে জানাতে পারেন।
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।