বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প আমাদের এই জীবন মোটেও সাধারণ নয়, সময়ের সাথে সাথে আসতে থাকে নানান ঝঞ্ঝাট, হারিয়ে ফেলি আমরা আমাদের মোটিভেশন। আজ থাকছে দুটি বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প, এই মোটিভেশনাল গল্প দুটির একটিতে রয়েছে জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলার পেছনের লড়াইের কাহিনী, আর দ্বিতীয়টিতে রয়েছে মানবতার প্রতিচ্ছবি।

bengali best motivational story

বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্পঃ- 01

বাজ পাখী থেকে অনেক কিছু শেখার আছেঃ-

বাজ পাখি অবশ্যই দেখেছেন। কিন্তু জানেন কি, এই বাজ পাখির জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই কতটা কঠিন? বাজ পাখির জীবনটাই শুরু হয় একটি কঠিন ট্রেনিং-এর মধ্য দিয়ে, এমন ট্রেনিং যে ট্রেনিং তাকে অন্যান্য পাখিদের উপর রাজ করতে শক্তি জোগায়, এমন ট্রেনিং যে ট্রেনিং তাকে মেঘ ভেদ করে, মেঘের উপড়ে গিয়ে উড়ার প্রেরনা জোগায়। আর তার জীবনের শুরুতেই এই কঠিন ট্রেনিং, তাকে জীবনের পরবর্তী চড়াই-উতরাই গুলি পাড় হতে সাহায্য করে।

সাধারণত পাখিরা তাদের বাচ্চাদের ততদিন পর্যন্ত পরিচর্যা করতে থাকে যতদিন পর্যন্ত সেই বাচ্চা পাখিটি ঠিকমত উড়তে না শিখে, কিন্তু বাজ পাখির বেলায় ব্যাপারটা একেবারেই উল্টো। যখন ডিম থেকে বাজ পাখির জন্ম হয়, তার কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয়ে যায়, তার প্রশিক্ষণ।

অন্য পাখীরা যেমন, বাইরে থেকে খাবার সংগ্রহ করে সরাসরি, বাচ্চার মুখে ঢেলে দেয়। কিন্তু বাজ পাখির বেলায় ব্যাপারটা অনেকটা আলাদা, বাজ পাখির বাবা-মা খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু খাবার গুলি সরাসরি বাচ্চাদের মুখে ঢেলে দেয় না, প্রথমে বাচ্চাকে মুখে খাবার দিয়ে জানিয়ে দেয় যে, এগুলি খাবার। এরপর খাবারগুলি সেগুলি বাচ্চাটির থেকে কিছুটা দূরে রেখে দেয়। বাচ্চাটি যখন খিদের জ্বালায় অস্থির হয়ে পড়ে, তখন সে খাবারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়, কারণ তার পা এখনও ঠিক হয়নি, কিন্তু খিদের জ্বালা বড় জ্বালা, যেভাবেই হোক তাকে খাবার খেতেই হবে।

তাই অনেক কষ্টে, বারংবার চেষ্টা করে, বাচ্চাটিকে খাবারটির কাছে যেতে হয়। কিন্তু ভোগান্তি এখানেই শেষ নয়, খাবারের কাছে গেলেও, খাবার কিভাবে উঠিয়ে খেতে হয় সেটাও যে তার জানা নেই, ঠোঁট খাবারে ঠোকর দিতে দিতে একসময় সে সফল হয়। এভাবেই সে হাঁটতে শেখে।

এরপর শুরু হয় তার জীবনের আরেকটি কঠিন পর্যায়। কারণ এবার তার প্রশিক্ষণ হবে উড়তে শেখার প্রশিক্ষণ। মা-বাজ পাখি বাচ্চাটিকে ঠোঁটের মধ্যে বা পায়ে ধরে আকাশের অনেকটা উপড়ে নিয়ে যায়, এরপর হঠাৎ করেই অত উপর থেকে ছেড়ে দেয়। বাঁচার তাগিদে ছোট্ট বাজ পাখীটি ডানা ঝাঁপটাতে থাকে, কিন্তু সে উড়তে সফল হয়না। মা-বাজ মাটিতে পড়ার আগেই তার বাচ্চাটিকে আবার ধরে ফেলে।

এতে সেই ছোট্ট বাচ্চাটির, উঁচু দেখে ভয় এবং উড়ার শিক্ষা একসাথে চলতে থাকে। অনেক সময় বাসার বাইরে মা-বাজ খাবার ধরে উড়তে থাকে, অভুক্ত বাজের বাচ্চাটি খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে যখনই বাইরে পা বাড়ায় সে নীচের দিকে পড়তে থাকে আর নিজেকে বাঁচানোর জন্য সে ডানা ঝাঁপটাতে থাকে, এই প্রশিক্ষণের সময় সে অনেক চোট পায়। কিন্তু মা-বাজ যে তাকে কিছুতেই ছাড়বে না!

এভাবেই একদিন সে উড়তে শিখে যায়, উঁচু দেখে ভয় পায় না সে। নিজের লক্ষ্য বস্তুতে অটুট থাকে। আর ছোট থেকেই এই কঠিন প্রশিক্ষণের জন্যই বাজ পাখী তার থেকেও বড় বড় প্রাণীদের আক্রমণ করার সাহস অর্জন করে।

বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প
বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প

জীবনের চাকা যত ঘুরতে থাকে, শরীরের পাখা যখন আর ঠিকমত বাতাসের প্রবাহকে বাগে আনতে পাড়ে না, ঠোঁট যখন আর আগের মত ধারালো থাকে না, পায়ের নখ যখন বড় হয়ে যায়, খাবার যখন আর সহজে সেগুলির দ্বারা ধরা যায় না, তখন বার শুরু হয় এক নতুন সংগ্রাম। কিন্তু তখন বাজ পাখির বয়স মাত্র ৪০ বছর, অপরদিকে তার আয়ু ৭০ বছর। এই সময় তাকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, সে কিছুদিন কষ্ট করবে নাকি এভাবে থেকেই অকালে মারা যাবে! এই সময় তার কাছে তিনটি পথ খুলে যায়-

সে আত্মহত্যা করবে, নাকি শকুনের মত মরা- পচা জন্তু খাবে, নাকি নিজেকে আবার এক নতুন জীবন দান করবে! সে বিজ্ঞের মত বেঁছে নেয় শেষের পথটি।

এবার সে একটি উঁচু পাহাড়ে গিয়ে বা উঁহু জায়গায় গিয়ে আস্তানা জমায়। ঠোঁট দিয়ে ধীরে ধীরে উপড়ে ফেলে দেয় শরীরের সব পালক, কি ভাবছেন বেদনা? যার জীবনটাই শুরু হয়েছে সংঘর্ষ দিয়ে তার কাছে এগুলি কিছুই নয়। এরপর সে তার ভোঁতা ঠোঁটকে পাথরে আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলে, রক্তাক্ত হয়ে যায় সে, কিন্তু সে জানে টিকে থাকতে গেলে এই কষ্ট গুলি তাকে পেতেই হবে।

বাস্তব জীবনে শিক্ষণীয় গল্প hawk বাজ পাখি
বাস্তব জীবনে শিক্ষণীয় গল্প hawk বাজ পাখি

এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পড় ধীরে ধীরে তার শরীরে নতুন পালক আসে, নতুন ধারালো ঠোটের উদয় হয়, শুরু হয় আরেক নতুন জীবন। প্রায় ১৫০ দিনের প্রতীক্ষার অবসানের পর শুরু হয় তার নতুন জীবন। বাকি ৩০ টি বছর আবার নিজের মত করে বেঁচে থাকার জন্য সে প্রস্তুত হয়ে যায়।

তাই আপনার জীবনে যদি অনেক সংঘর্ষ আসে, এটা ভেবে বসে থাকবেন না যে, আপনার ভাগ্য খারাপ। বরং পরিস্থিতি এবং সংঘর্ষ আপনাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে আপনি আরও সহনশীল হতে পাড়েন, যাতে একটুতেই ভেঙ্গে না পড়েন, যাতে নিজের সংকল্প মজবুত রাখতে পাড়েন, যাতে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পাড়েন। বাজ পাখী কক্ষনোই দলবেঁধে থাকে না। তাই জীবনে কিছু করতে হলে দল-বলের মায়া ছেড়ে, নিজের আস্তানা নিজেকেই গড়তে হবে। কারণ আপনি যেদিন সফল হবেন সেদিন আপনাকে দেখে হাসাহাসি করা আপনার বন্ধুটিও আপনার সাথে সেলফি তোলার জন্য প্রতীক্ষায় থাকবে।

পড়ুনঃ- সফল ব্যক্তিদের প্রেরণা মূলক কাহিনী 

বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্পঃ- 2

সেবা করতে গেলে অর্থ নয় মন চাইঃ-

কলকাতার বিবাদী চকের মাথায় যে দোকানটা রয়েছে, সেই দোকানটাতে আমি এবং আমার কিছু বন্ধু গেলাম। কিছু একটা অর্ডার দিয়ে সবাই মিলে গল্পে বেশ মজে উঠলাম। এক বৃদ্ধ দোকানটিতে প্রবেশ করলেন, বয়স আনুমানিক ৮০-৮৫ তো হবেই।

বয়সের ভাঁড়ে স্বাভাবিক ভাবেই তার কোমর বেকে গেছে, এবং শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে। চোখ দুটি যেন, ভিতরে চলে গেছে, মানে এক কথায় কঙ্কালসার চেহারা বলতে পাড়েন। আমরা সবাই তাকে দেখে ভিখারি ভাবলাম। নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেড়িয়ে গেল- “দাদু আপনি কি ক্যাপাচিনো খাবেন?” 

আমার এই কথা শোনা মাত্রই, সেই বৃদ্ধটির সাথে সাথে আমার বন্ধুরাও অনেক আশ্চর্য হয়ে গেল। কারণ এক কাপ ক্যাপাচিনোর দাম প্রায় ৯০ টাকা। আর আমর ইনকাম কিছুই নেই, আমি একজন বেকার যুবক, আমার কাছে যে দশ টাকার মূল্যও অনেক বেশি, সেটা আমার বন্ধুরা ভালভাবেই জানে। এমনকি আমি নিজেও কোনোদিন ক্যাপাচিনো খাই নি।

বৃদ্ধটি আমার কথা শুনে, তার থলে থেকে কয়েকটি মুদ্রা বেড় করলেন, আমার সামনে এসে সেগুলি কাঁপা হাঁতে আমার সামনে ধরলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম-

“এই সব কি দাদু?”

বৃদ্ধটি বলল- “এই মুদ্রাগুলি মিলিয়ে ক্যাপাচিনোর দামটা মিলিয়ে দিও বাবা।“

শিক্ষা মূলক ছোট গল্প
শিক্ষা মূলক ছোট গল্প
<

যখন থেকে বৃদ্ধটি এই দোকানে এসেছে তখন থেকেই সবার দৃষ্টি তার দিকে, এরপর তার এই কথাটিতে সবাই আরও অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে চেয়ে রইল। আমার নিজের অজান্তেই চোখের কোণে একবিন্দু অশ্রু চলে এল। আমি আর কাল-বিলম্ব না করে, দোকানিকে এক-কাপ ক্যাপাচিনো তৈরি করতে বললাম। বৃদ্ধটি মেঝেতেই বসে পড়ল।

কিন্তু ইতিমধ্যে একটি বিড়ম্বনা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে শুরু করেছে, দোকানে কোনো চেয়ারই ফাঁকা নেই, ইচ্ছে ছিল বৃদ্ধটিকে আমার চেয়ারে বসতে দিব, কিন্তু অনেক ভদ্র মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছেন, এমনকি আমার দুই বন্ধুও জায়গা পায়নি, তাদের ছেড়ে যদি এই বৃদ্ধটিকে আমার চেয়ারে বসতে দিই, অন্য লোকেদের কথা তো জানিনা, কিন্তু আমার বন্ধুরা আমাকে “বাবা আমার মানব দরদী” বলে ক্ষ্যাপাতে ছাড়বে না। আবার ভয় ছিল কেউ যদি আমাকেই উল্টে গালাগালি করে!

মনের সাথে এই দ্বিধা-দন্দের মাঝেই আমি দোকানির কাছে থেকে কাপটা নিয়ে এসে বৃদ্ধটির সাথে মেঝেতেই বসে গেলাম, কারণ আমার সিটে বৃদ্ধকে বসতে দিলে মানুষের প্রশ্ন উঠতে পাড়ে, কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছায় সেই আসন ত্যাগ করে মেঝেতে বসলে সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।  

বৃদ্ধটি কাঁপা হাঁতে আমার কাছে থেকে কাপটি নিলেন। আমি এভাবে বৃদ্ধটির সাথে মাটিতেই বসে পড়াতে, আমার বন্ধুরা কিছুক্ষণের জন্য বিরক্তির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, তারা কিছু বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় দোকানী নিজের চেয়ারটি এগিয়ে দিয়ে বললেন- “তুমি তোমার জায়গায় বসো, আর বৃদ্ধ বাবাকে আমার চেয়ারে বসাও, কারণ আমার এখানে অনেক গ্রাহক আসে, কিন্তু মানুষ খুবই কম আসে। আমার দোকানে অনেক ভিড় হয়, কিন্তু সেই ভিড়ে আজ ভাগ্য ক্রমে মানুষের দেখা পেলাম।

উপস্থিত মানুষগুলির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সবাই আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, আর দোকানির সেই কথাটি যেন ব্রহ্মাস্ত্রের মত কাজ করল, সবাই তাদের চেয়ার ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল, এমনকি আমার দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে দেখা আমার বন্ধুরাও!

এদিকে বৃদ্ধটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি কফি শেষ করেছেন, মুখে রয়েছে একটা তৃপ্তির হাঁসি, আর তার ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা ক্যাপাচিনোর অংশ বিশেষ যেন ঝলক দিয়ে কিছু একটা বলতে চাইছে, কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।

অনুপ্রেরণা মূলক ছোট গল্প bengali best motivational story
অনুপ্রেরণা মূলক ছোট গল্প bengali best motivational story

নিজের অজান্তেই আমার মনে কেমন যেন একটা শিহরণ খেলে গেল। যেন মনে হতে লাগল এটাই হয়ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। হয়ত আমি তেমন কিছুই করি নিই, কিন্তু সেই বৃদ্ধ মানুষটির চোখ জানান দিচ্ছে, তুমি এমন কিছু করেছো, যেটা এখানে উপস্থিত তথাকথিত বড়লোকেরাও পাড়ে না। মোট কথা কাউকে সাহায্য করতে গেলে অজস্ত্র টাকার দরকার হয়না, সাহায্যের জন্য বিশাল একটা মন হলেই যথেষ্ট।

আমার সেদিন এরকমই সৌভাগ্য হয়েছিল। আপনার কি কখনো এরকম সৌভাগ্য হয়েছিল, অবশ্যই জানাবেন কিন্ত!

পড়ুনঃ- বিল-গেটস ও পেপার বয় এর কাহিনী

ঈশপের গল্প থেকে জ্ঞান অর্জন করুন

প্রতিটি লেখার কপিরাইট ছাড়পত্রের অ্যাডমিন দ্বারা সংরক্ষিত। অনুমতি ব্যাতিত কোনোরূপ পরিবর্তন করে ইউটিউব বা অন্যত্র প্রকাশ করলে ছাড়পত্র উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- 
ফেসবুক-ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম-ছাড়পত্র

WhatsApp-ছাড়পত্র

“বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প। শিক্ষা মূলক ছোট গল্প। অনুপ্রেরণা মূলক ছোট গল্প।bengali best motivational story”

Spread the love

Leave a Reply