আজ একটি বাবাকে নিয়ে গল্প হয়ে যাক। এই বাবা নিয়ে ছোট গল্পটির মাধ্যমে নতুন কিছু শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প সম্পর্কিত আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন।

বাবাকে নিয়ে গল্প। অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্পঃ-

রাজুর বাবা দিন শেষে মোটামুটি প্রায় ২৫০-৩০০ টাকা ইনকাম করে। কিন্তু বাবার এই ইনকামে সন্তুষ্ট নয় ২৫ বছর বয়স্ক রাজু। প্রায় প্রতিদিনই বাবার সাথে তার ঝগড়া হয়। কারণ বাবার এই ক্ষুদ্র ইনকামে ৫ সদস্যের পরিবার কোনোমতে তো চলে যায়, কিন্তু রাজু তার শখ পূর্ণ করতে পাড়ে না। সে একটি কম্পিউটার কিনতে চায়, একটি KTM বাইক কিনতে চায়। কিন্তু বাবা তাকে কোনো টাকাই দেয় না।’ কিন্তু সে এটা বোঝে না যে তার বাবা আর টাকা পাবে কোথা থেকে! সব টাকা তো সংসারেই খরচ হয়ে যায়।

কিন্তু ২৫ বছর বয়স্ক রাজু, পরিবারের ইনকাম বৃদ্ধিতে কোনো সাহায্যই করে না বাবাকে। সে সারাদিন শুধু মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাবা-মা অনেক বার বলা সত্ত্বেও সে কোনো কথাই মানে না। বাবা যখনই রাজুকে বলেন- “এবারে কিছু একটা কর বাবা, বয়স তো অনেক হল। আমি আর আগের মত কাজ পাই না, কারণ বয়স অনেক বেড়ে গেছে। সংসারের হালটা যে তোকেই এবার ধরতে হবে।“

বাবার এই কথা, রাজুকে যেন তীরের মত আঘাত করে। সে বলে- “ খাওয়াতে না পাড়লে জন্ম দিয়েছ কেন? বর্তমান যুগে টাকা ইনকাম করা কোনো ব্যাপারই না। ঘড় থেকে বাইরে বেড় হলেই শুধু টাকা আর টাকা। বর্তমান যুগে টাকা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ায়।“ রাজুর এই কথা শুনে বাবা মনে মনে অনেক দুঃখ পেলেন। তিনি রেগে গিয়ে বললেন- “ তোর যদি মনে হয় টাকা ইনকাম করা খুব সহজ তাহলে তুই বেশি না মাত্র ৫০ টাকা ইনকাম করে দেখা আমাকে।“

বাবার এই কথা শুনে রাজু হাঁসতে হাঁসতে বলে- “৫০ টাকা, মাত্র ৫০ টাকা! এটা কোনো টাকা নাকি! এটা তো হাতের ময়লা। ৫০ টাকা কেন আমি তোমাকে কালই ৫০০০ টাকা ইনকাম করে দেখাব।“

বাবাকে নিয়ে ছোট গল্প
বাবাকে নিয়ে গল্প

পরেরদিন সকাল হতেই রাজু তার প্রতিজ্ঞা পালন করতে বেড়িয়ে পরে। যাবার আগে তার বাবাকে আরেক বার সে বলে যায়- “দেখবে, আজ আমি কেমন করে, কয়েক ঘণ্টায় ৫০ টাকা নয় ৫০০০ টাকা ইনকাম করে নিয়ে আসব।“ রাজুর বাবা কিছুই বললেন না।

এদিকে রাজু রাগের মাথায় বাবাকে তো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সে কোথায় গিয়ে কাজ করবে! সে তো কোনো কাজেই পারদর্শী নয়। সে দেখল একজন রাজমিস্ত্রি ঘড় ঠিক করছে। সে তার কাছে গিয়ে বলল-  “আপনাকে কি কাজের লোক লাগবে?” রাজমিস্ত্রি বলল- “হ্যাঁ একজন দরকার। কিন্তু পাচ্ছি নে!”

রাজু বলল- “আমি কাজ করতে চাই, আমাকে কত টাকা মজুরি দিবেন?” মিস্ত্রি বললেন- “২৫০ টাকা” ২৫০ টাকার কথা শুনে রাজু হাঁসতে লাগল ২৫০ টাকা! এটা আবার কোনো টাকা হল নাকি! আপনার কাজ আপনি মাথায় করে রাখুন। আমি চললুম। এই বলে রাজু গজগজ করে পা বাড়ায়।

পড়ুনঃ- বাজ পাখির 'বাজ' হয়ে উঠার লড়াইটা সহজ নয় 

কিন্তু অনেক খুঁজেও সে ৫০০০ টাকার কোনো কাজ খুঁজে পেল না। এদিকে প্রচুর খিদে পেয়ে গেছে তার। সে একটি হোটেলে গেল, কিন্তু তার কাছে যে একটিও টাকা নেই। সে কোনো কথা না বলেই, হোটেলে বিভিন্ন খাবার খেয়ে নিল। কিন্তু যখন তাকে বিল মিটিয়ে দিতে বলা হল, তার মুখটা ভয়ে ফ্যাঁকাসে হয়ে গেল। খিদের জ্বালা বড় জ্বালা! সে কাঁদতে লাগল- “আমার কাছে কোনো টাকা নেই, আমি খাবারের বদলে কাজ করে দিতে চাই।“

হোটেলের মালিক কিছুটা দয়া দেখিয়ে রাজুকে বাসন পরিষ্কার করতে বললেন- ছি ছি অপরের খাওয়া বাসন সে পরিষ্কার করবে! ভাবতেই তার যেন বমি পাচ্ছে। কিন্তু তাকে যে পরিষ্কার করতেই হবে। যে ছেলে কোনোদিন বাড়িতে নিজের খাবার থালার জল পর্যন্ত ফেলেনি, সে আর বাসন পরিষ্কার করতে পাড়বে কেন! তার কাজ দেখে মালিক বেজায় রেগে গেলেন। মালিক তাকে নানান গালমন্দ করে, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিলেন।

এদিকে কাজ খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যা নেমে আসছে, কিন্তু সে এখনও ৫০০০ টাকার কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। ৫০০০ টাকা তো অনেক দূরের কথা সে এখনও ১ টাকাও ইনকাম করতে পারেনি। সে ঠিক করল, টাকা ইনকাম না করে সে বাড়ি ফিরবে না।

হতাশ হয়ে সে একটি গাছের নীচে বসে পরে। সে দেখল একটি লোক ভ্যান নিয়ে পুল পাড় হচ্ছে, কিন্তু সে কিছুতেই বস্তা ভর্তি ভ্যানটিকে উঁচু পুলে তুলতে পাড়ছে না। সে মানুষের সহায়তার জন্য এদিক ওদিক দেখছে কিন্তু কাউকেই খুঁজে পাচ্ছে না। রাজুকে গাছের নীচে বসে থাকতে দেখে, সে রাজুকে ডাক দিল। রাজুকে সে, ভ্যানটি একটু ঠেলা দিতে বলল।

রাজু বলল- “ভ্যান ঠেলে দিতে পারি, তবে একটি শর্তে।“ লোকটি বলল- “কি শর্ত?”

রাজু- “আমাকে ৫০০০ টাকা দিতে হবে।“ রাজুর কথা শুনে লোকটি হাঁসতে লাগল- “সামান্য ভ্যান ঠেলার জন্য ৫০০০ টাকা! এত্ত টাকা তো আমি এক সপ্তাহেও ইনকাম করতে পারি না।“

অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প বাবার ভালোবাসা
অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প বাবার ভালোবাসা বাবাকে নিয়ে গল্প

রাজু আর কোনো উপায় না দেখে বলল- “আচ্ছা, আমাকে ৫০ টাকা দিতে হবে।“

লোকটি বলল- “তোমার মধ্যে কি মানবতা বলতে কিছু নেই, একটু সহায়তা করার জন্য টাকা চাইছ!”

রাজু বলল- “আমি ওইসব মানবতা- টানবতার ধার-ধারি না। টাকা দিলে ভ্যান ঠেলব, না দিলে বলুন আমি চলে যাচ্ছি।“

লোকটি আশেপাশে দেখল কোনো জনমানবের দেখা নেই। সে নিরুপায়। তাই রাজুর কথায় সে রাজী হয়ে গেল। অবশেষে সে দিনান্তে ৫০ টাকা ইনকাম করতে পেড়েছে।

সে বাড়ি গেল, তাকে দেখে তার বাবা বলল- “রাগ থামল তোর! সারাদিন না খেয়ে কোথায় পালিয়েছিস?”

রাজু বলল- “টাকা ইনকাম করতে। আর আমি তো বলেই ছিলাম টাকা ইনকাম করা কোনো কঠিন কাজ না। আমি ৫০০০ টাকারও বেশি ইনকাম করেছি একদিনে। টাকাটা দিয়ে হোটেলে দামী দামী খাবার খেয়েছি, তাই দেড়ি হয়ে গেল। আর এই নাও তুমি তো বলেছিলে শুধু ৫০ টাকা ইনকাম করে দেখাতে। তাই তোমার জন্য ৫০ টাকা নিয়ে এসেছি।“ এই বলে সে বাবার দিকে টাকাটা বাড়িয়ে দেয়।

তার বাবা বলল- “বেশ তো, তা এই পঞ্চাশ টাকাটা আমাকে না দিয়ে যা কুয়োতে ফেলে দিয়ে আয়।“

কথাটা শুনেই রাজু আবার দুম করে রেগে গেল- “তোমার মাথা খারাপ হয়েছে! এই ৫০ টাকা ইনকাম করার জন্য আমি সারাদিন ঘুরেছি, টাকা না থাকায় হোটেল থেকে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছে। কষ্ট করে ৫০ টাকা ইনকাম করেছি, আর তুমি টাকাটা কুয়োতে ফেলে দিতে বলছ।“

কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই, রাজুর খেয়াল হল- ঈশ, তার মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বেড় হয়ে গেল কিভাবে! সে আর চুপ থাকতে পাড়ল না। বাবাকে সর্বদা মেজাজ দেখানো রাজু কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল, সে বলতে লাগল- “আমাকে তুমি ক্ষমা কর বাবা। আমি তোমার অযোগ্য পুত্র। আমি তোমার কোনো কাজেই আসতে পারি নি। তোমার কথার সবসময় অবজ্ঞা করেছি। তোমাকে অপমান করেছি। তোমার ইনকাম নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছি। আমি ভাবতাম টাকা ইনকাম করা অনেক সহজ। কিন্তু আজ বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে, আমি উচিত শিক্ষা পেলাম। আমি কাল থেকেই তোমার সঙ্গে কাজে যাব বাবা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।“

মেজাজি রাজুর মুখে এই কথা শুনে রাজুর বাবা-মা, বোনের চোখে জল চলে এসেছে। রাজুকে মাটি থেকে উঠিয়ে তার বাবা বললেন- “সে না হয় যাবি, এবার তুই যা তো পরিষ্কার হয়ে আয়! যা খাবার খা আগে।“

বাবাকে নিয়ে গল্প
বাবাকে নিয়ে গল্প বাবার ভালোবাসা
<

বুঝলেন তো, যে সন্তান বাবার রাগ, সহ্য করার ক্ষমতা রাখে তার উন্নতি নিশ্চিত। বাবা নামক গাছের ছায়াটা যেদিন মাথার উপর থেকে সরে যাবে, সেদিন বুঝতে পাড়বেন বাস্তবতা কতটা কঠিন। বাবার পায়ের চটী ছিঁড়ে গেলেও সন্তানকে নতুন জুতো কিনে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি। নিজের চাওয়া-পাওয়াকে মনের মধ্যেই রেখে দিয়ে সন্তানের চাওয়া-পাওয়াকে প্রথমে স্থান দেন তিনি।

কখনো কখনো হয়ত তিনি রেগে গিয়ে আমাদের দুই-এক কথা শুনিয়েও দেন। কিন্তু একটু গভীর ভাবে বাবার রাগের মাথায় বলা কথা গুলি চিন্তা করে দেখবেন, তিনি যা বলছেন, সবই বলছেন আমাদের ভালোর জন্যই, আমাদের উন্নয়নের জন্য।

তাই বাবার ইনকাম দেখে তাচ্ছিল্য না করে, বাবাকে সাহায্য করাই একজন যোগ্য সন্তানের প্রথম কাজ।

©all copyright is reserved by ছাড়পত্র any misuse of this content is illegal. We don't give you the right to make videos or repost this content. Either necessary steps will be taken by team.

আপনার ভালো লাগতে পারে- 

মায়ের ভালোবাসা- একটি শিক্ষণীয় গল্প     

শিক্ষণীয় নীতি কথার গল্প 

আপনার লেখা অসাধারণ গল্পের অপেক্ষায় আমরা সকলেই। গল্প পাঠান- charpatrablog@gmail.com -এ

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- 
ফেসবুক গ্রুপ- গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র 

টেলিগ্রাম- CharpatraOfficial 

WhatsApp group- ছাড়পত্র (২) 

“বাবাকে নিয়ে গল্প। বাবা নিয়ে ছোট গল্প। অসাধারণ শিক্ষণীয় গল্প”

Spread the love

Leave a Reply