এক-ঘেয়েমিপনা জীবনে হাঁটতে হাঁটতে আমরা ক্লান্ত। আর ইচ্ছা করেনা একটু উঠে দাঁড়িয়ে আবার হাঁটা শুরু করি, হাঁটার এই রাস্তায় আমাদের সম্মুখীন হতে হয়েছে, বিভিন্ন বাঁধা, ব্যর্থতার। তাই ভাবছি আজ আপনাদের কিছু বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি শোনাই, তাহলে চলুন আজ কিছু বাংলা মোটিভেশনাল গল্প পড়ি।

বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি

প্রকৃতির কাজে হস্তক্ষেপ নয়ঃ-(শিক্ষামূলক গল্প)

এক ব্যক্তি তার বাগানে জল দিচ্ছিল, এমন সময় সে দেখে যে, তার বাগানের একটি গাছের ডালে প্রজাপতির গুটি থেকে, একটি বাচ্চা প্রজাপতি বেড় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। গুঁটিটির মুখ মাত্র অল্প পরিমাণে খোলা থাকায়, সেই লার্ভাটি কিছুতেই বাইরে বেড়িয়ে আসতে পারছিল না। এটি দেখার পড় লোকটি সেই গাছটির কাছে বসে, এবং প্রায় একঘণ্টা সময় সে প্রজাপতির লার্ভার গুঁটিটি থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা দেখতে থাকে। কিন্তু সেই লার্ভাটি অবশেষে থেমে যায়। এবং সেই লোকটির মনে হল যে, লার্ভাটি হয়ত ক্লান্ত হয়ে গেছে।

এরপর সেই লোকটি প্রজাপতির লার্ভাটিকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়, সে তার রুম থেকে একটি ব্লেড নিয়ে আসে এবং মনযোগ দিয়ে লার্ভাটির গুঁটিটি কাটতে থাকে, যাতে করে সেই ছোট্ট প্রজাপতিটি খুব সহজেই বাইরে বেড়িয়ে আসতে পারে। এরপর লোকটি দেখে যে, সেই প্রজাপতিটি বাইরে বেড়িয়ে আসে, এবং তার শরীরটি মোটা এবং ডানাগুলি সঙ্কুচিত।

লোকটি অপেক্ষা করতে থাকে, কখন প্রজাপতিটি ডানা মেলবে এবং উড়ে বেড়াবে। কিন্তু মানুষটি যতই অপেক্ষা করুক না কেন, সেই প্রজাপতিটি আর কোনো দিনই উড়ে বেড়াতে পাড়বে না, প্রজাপতিটির সারাটা জীবন এভাবেই কাঁটাতে হবে, তার বাকিটা জীবন এভাবেই অপূর্ণ শরীর নিয়েই কাঁটাতে হবে।

বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি butterfly cocon
বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি butterfly cocon

এদিকে মানুষটি ভাবছে সে একটি ভালো কাজ করেছে, কিন্তু সে হয়ত জানেনা যে, প্রজাপতিটির সেই বাইরে বেড়িয়ে আসার সংগ্রাম আসলে জীবন যুদ্ধের ময়দানে নামার পূর্ব-প্রস্তুতি ছিল। এভাবে সংগ্রামের ফলে তার শরীর থেকে ফ্লুয়িড কমে যেত, এবং তার ডানা গুলিও বড় হত, যার ফলে সে নির্দ্বিধায় উড়ে বেড়াতে পাড়ত। কিন্তু কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই তাকে ময়দানে নামানোর ফলে তার পুড়ো জীবনটাই ব্যর্থ হয়ে গেল। তাই কখনো কারো কাজে হাত দিতে বা নাক গলাতে যাবেন না, যা কিছু হচ্ছে, তাকে প্রকৃতির নিয়ম মেনে সম্পূর্ণ করতে দিন, তবে এখানে একটি কথা বিপদ বিবেচনা করে তবেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন।

আলস্যতার জন্যই আমরা অনেক স্পেশাল কিছু হারিয়ে ফেলি

অনেকদিন আগের কথা, তখন রাজা মহারাজারা দেশ চালাতেন। এক দেশের রাজা একটি ব্যস্ত রাস্তায় একটি মাঝারি আকারের পাথর রেখে দেন। এরপর তিনি পাশের একটি ঝোপের মধ্যে গা ঢাকা দেন। আসলে তিনি দেখতে চাইছিলেন যে, তার দেশের কোন লোকেরা জনগণের সেবা করতে সিদ্ধহস্ত!

কিছুক্ষণ পরে একদল বণিক সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তারা রাস্তার মধ্যে এতবড় পাথর দেখেও সেটিকে সরানোর কোনো চেষ্টা করল না, বরং পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরেই আবার একদল লোক আসলেন, রাস্তার মধ্যে এত বড় পাথর দেখে, তারা রাজাকে নানা ভাবে গালমন্দ করতে করতে চলে গেলেন। এগুলি শুনে রাজা খুবই খারাপ পেলেন।

এরপর রাজা দেখলেন, আবার তিনজন লোক আসছে। সেই লোকগুলি পাথরটির কাছে আসতেই, তারা রাস্তা পরিষ্কার না থাকায় রাজাকে নানাভাবে দোষারোপ করতে থাকে। তারা আরও বলেন, রাজা জনগণের সেবা করতে ব্যর্থ।

এতগুলি লোক সেই পাথরটিকে পাশ কাটিয়ে গেলেও, কেউই সেই পাথরটিকে সরানোর কোনো চেষ্টাই করল না, এতে রাজা খুবই হতাশ হলেন। তিনি তারা দেশের মানুষদের জন্য কত কিছুই না করেছেন, অথচ তারা সামান্য একটা পাথর দেখে রাজার উদ্দেশ্যে নানান কথা বলছে।

এবার রাজার দৃষ্টি গেল, একজন বয়স্ক কৃষকের প্রতি, যিনি কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে আসছেন, একটি সবজি ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে। পাথরটির কাছে আসতেই, সেই কৃষক দাঁড়ালেন এবং তার ঝুড়িটিকে নামিয়ে রাখলেন। এরপর তিনি যা করলেন তা রাজা নিজেও ধারণা করতে পারেননি। সেই কৃষকটি পাথরটিকে ঠেলতে লাগলেন, এবং বারংবার হাঁপিয়ে যাবার পরও তিনি সেই পাথরটিকে ঠেলেই যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি পাথরটিকে রাস্তা থেকে সড়াতে সফল হলেন।

মোটিভেশনাল ছোট গল্প
মোটিভেশনাল ছোট গল্প bangla motivational story

সেই কৃষকটি ফিরে এসে দেখেন, যেখানে পাথরটি ছিল সেখানে একটি ছোট ব্যাগ এবং একটি চিঠি পড়ে আছে। কৃষকটি দেখলেন সেই ব্যাগটি স্বর্ণমুদ্রায় ভর্তি রয়েছে, এবং চিঠিটিতে লিখা আছে- “ এই উপহারটি রাজার তরফ থেকে, যে মানুষটি এই পাথরটিকে সরাবেন তার জন্য।“

সুতরাং এখান থেকে বোঝা যায় যে, আপনি মানুষের জন্য যত ভাল কাজই করুননা কেন, মানুষ আপনার সমালোচনা করবেই। আরেকটি নীতিকথা এই গল্পটি থেকে আমরা শিখতে পাড়ি যে, আলস্যতার জন্যই আমরা অনেক স্পেশাল কিছু হারিয়ে ফেলি, তাহলে আর বসে কেন? যে কাজটি পড়ে করব বলে ভেবে রেখেছেন, সেটি এখনই শুরু করুন।

EXPLORE MORE:-

মায়ের ভালোবাসা শিক্ষণীয় গল্প

নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি

স্বামী বীবেকানন্দের কিছু শিক্ষণীয় গল্প

hatters দের গুরুত্ব দেবেন না(বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি)

একদিন কয়েকটি ব্যাঙ মিলে জঙ্গলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছিল। ব্যাঙের এই দলটির মধ্যে থেকে দুটি ব্যাঙ হঠাৎই একটি গভীর গর্তে পড়ে যায়। এটি দেখে বাকি ব্যাঙগুলি বলতে থাকে, এত বড় গর্ত থেকে উঠে আসা সম্ভব নয়। তাই সেই ব্যাঙ দুটিকে সেখানেই মারা যেতে হবে।

সে যাই হোক, গর্তে পড়া ব্যাঙ দুটি, বাকি ব্যাঙগুলির কথা উপেক্ষা করেই লাফাতে থাকে, যাতে তারা বাইরে বেড়িয়ে আসতে পাড়ে। তাদের এমন কার্যকলাপ দেখে গর্তের উপড়ে থাকা ব্যাঙগুলি তাদের বলে, এরকম ভাবে লাফিয়ে কোনো লাভ নেই, তারা কোনোদিনও আর এই গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে পাড়বে না। তাই তাদের উচিত এভাবে না লাফিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বরণ করা।

bangla motivational story
bangla motivational story Frog Vectors by Vecteezy মোটিভেশনাল ছোট গল্প
<

গর্তের উপড়ে থাকা সঙ্গীদের কথা শুনে গর্তের মধ্যে থাকা ব্যাঙ দুটির একটি লাফানো বন্ধ করে দেয়, এবং সে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। কিন্তু আরেকটি ব্যাঙ অনবরত শুধু লাফিয়েই যাচ্ছে। সে তার শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে প্রাণ-পণে লাফাতে থাকে। এটি দেখে বাকি ব্যাঙগুলি বলে, বেকার বেকার এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কোনো লাভ নেই, সে আর গর্ত থেকে বেড় হতে পাড়বে না। তাই তার উচিত স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া।

কিন্তু সেই ব্যাঙটি লাফাতেই থাকে, অবশেষে সে তার শরীরের শেষ শক্তি টুকু কাজে লাগিয়ে সেই গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে সফল হয়ে যায়। তাকে গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখে গর্তের উপড়ে থাকা ব্যাঙগুলি তাকে বলে- আমরা যে এত করে বলছি, কথা কি কানে যায় না? এটি শোনার পড় সেই ব্যাঙটি বলে, আসলে তোমরা কি বলছিললে আমি কিছুই শুনতে পাইনি, আমি দূরে থেকে শুনতে পাইনা, আমি বধির। তোমাদের মুখ নাড়ানো এবং মুখের বিভিন্ন ভঙ্গি দেখে আমি ভেবেছিলাম তোমরা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছ। তাই আমি আমার সর্বশেষ চেষ্টা করতেই থাকি।

অপরদিকে গর্তে থাকা হার মেনে নেওয়া ব্যাঙটি, এবার লাফাতে শুরু করে। কিন্তু সে আর আগের মত লাফ দিতে পাড়ছে না, কারণ এতক্ষণ ধরে লাফিয়ে তার শরীর পুরো ক্লান্ত এবং শরীরে আর কোনো শক্তি নেই।

বাংলা মোটিভেশনাল ছোট গল্প
বাংলা মোটিভেশনাল ছোট গল্প

তাই আপনার বিরোধীরা বা Hatters রা আপনাকে যা কিছু বলছে, সেগুলির ক্ষেত্রে আপনাকেও বধির হতে হবে, সব জেনে বুঝেও আপনাকে না বোঝার, না শোনার ভান করতে হবে। তাদের কথাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে নিন, একটা সময় আপনার Hatters রাই আপনার কর্মে অবাক হবে, এবং আপনার সাথে মিশবে। Hatters দের কথা শুনে, সেই ব্যাঙটির মত থেমে গিয়ে, পরবর্তীতে আবার চেষ্টা করার মত ভুল করবেন না, কারণ ততক্ষণে আপনার শক্তি এবং মনোবল দুটোই পূর্বের মত আর থাকবে না।

এই শিক্ষামূলক গল্প তিনটি আপনার কেমন লাগল তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আর চাইলে আপনিও আমাদের লেখা পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করুন- charpatrablog@gmail.com –এই ঠিকানা তে।  (বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি)

Spread the love

Leave a Reply