ভূত চতুর্দশীর দিন শ্মশানে কয়েকজন বন্ধু যায়, এরপরের ঘটনা জানতে হলে পড়তে হবে এই বাংলা ভুতের গল্প টি।
বাংলা ভুতের গল্প:-
এই তো সেদিনের কথা সবে মাত্র ভুত চতুর্দশী পেরোলো। আড্ডা দেওয়ার সময় ইয়ার্কি করে বললাম “কি রে এবার একটা ভুতুড়ে ট্রিপ করলে কেমন হয়”? সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো মানে?
আমি বললাম চল না এবার সবাই মিলে না নয় চতুর্দশীর দিন রানীগঞ্জ এর ওই বিখ্যাত নিষিদ্ধ শ্মশানে কাটিয়ে আসি। প্রথমে সবাই ইয়ার্কি ভাবলেও পরে যখন যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়ার লোকটাকে ডাকলাম তখন বিশ্বাস হলো সবার । বেশ কয়েকজন ভয়ের চোটে অজুহাত দেখিয়ে মানা করলেও কিছুজন যেতে রাজি হলো । সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই শুরু করছি আজের গল্প।
এই কিছুদিন আগে বাড়িতে নিজের আত্মীয় মারা গেছে তার ওপর আবার পাড়ার পুজোর চাপ, সব মিলে বাড়ির লোক কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না যেতে দিতে। তবে নাছোড়বান্দা হয়ে মা বাবার কথা অমান্য করে বন্ধুদের সঙ্গ পাঙ্গর দল নিয়ে রওনা দিলাম। সাথে ছিল একটা ক্যামেরা আর কিছু স্ন্যক্স তবে জানা ছিল না জলের নাম করে বেশ কয়েকটা হুইস্কি বোতল ডিগীর ভেতর রাখা হয়েছে । ড্রাইভার সমেত ৮ জন যাত্রী, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সন্ধানে উৎসুক সবাই রাত ৯ টা নাগাদ পৌছালাম ওখানে । সব প্ল্যান করেই পৌঁছেছি তবে প্ল্যান মাফিক হবে কিনা সন্দেহ!

আসার সময় ড্রাইভার এর মুখে শুনলাম রাত ১২ টার পর নাকি এখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ । আমরা ঠিক করলাম ৩ ঘণ্টা চারদিকটা ঘুরে তারপর ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবো ভোর ৬ টা আগে কেউ বেরোব না ।
৪ জন করে ২ টা টিমে ভাগ হয়ে গেলাম সাথে হাতে একটা করে টর্চ। তনু সৈকত বুবুন এর পেছন পেছন হাঁটছিলাম কিন্তু হটাৎ করে জুতো টা ফিতে টা কেটে গেলো । হাতে তুলে দেখতে যাবো এমন সময় দেখি সামনে কেউ নেই আমি একা অন্ধকারে চারিদিকে গাছের মধ্যে আটকে পড়েছি। তন..উউ স..ই..ই ই কত বলে ডাক দিলাম কেউ সাড়া দিল না। অনেক্ষন ডাকার পরেও কারুর পাত্তা নেই দেখে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে এমন সময় কে কাঁধে হাত রাখলো । আমি ছিটকে দূরে সরে কাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলাম কে কে কে তুমি ? আরে পাগলী আমি বুবুন । দেখ নিজেই আমাদের নিয়ে এলি আর নিজেই কিনা ভয় পাচ্ছিস।
তুই তো আগে যাচ্ছিলি আমার পেছনে এলি কি করে?
জানতাম তুই কতোটা সাহসী তাই ওরা এগিয়ে গেলে তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।
বুবুন তোর গলাটা এরম লাগছে কেন?? আর তুই তো আমায় তুমি দিয়ে বলিস?
ঠান্ডা লেগেছে তাই এরম শোনাচ্ছে । উফফ বাবা এত প্রশ্ন করিস কেন ? চল এখন হাতটা ধর আমার।
বুবুনের হাত এর আগেও খেলার সময় অনেকবার ধরেছি কিন্তু আজকের টা যেন খুব অদ্ভুত ঠান্ডা হ্যাঁ হ্যাঁ বরফের মত ঠান্ডা ওর হাত আর পাশে এত অন্ধকার চাইলেও দেখতে পাচ্ছি না পাশে আদৌ কেউ আছে কিনা ?
অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছি টর্চটা জুতোর ফিতে কাটার সময় কোথায় পড়ে গেলো আর খুঁজেই পেলাম না। এদিকে বুবুন ও নাকি টর্চ আনেনি তাই কতোটা রাস্তা এসেছি আর কতটা ঘুরতে বাকি কিছুই বুঝতে পারছি না।
হটাৎ করে বুবুন জিজ্ঞাসা- করলো ভয় পাচ্ছিস না তো আমাকে
-ধুর তোকে আবার কে ভয় পাবে ?
-জানিস অনেকেই ভয় পায় আমায়,কেউ ভালোবাসেনা তাই……।
-এসব কি বলছিস তুই বুবুন?
কিছু বলিনি। কিছু না দাড়া এখানে চুপটি করে বোস, আমি আসে পাশে খুঁজে দেখি যদি ওরা আছে কি না
-বুবুন তুই অন্তত ছেড়ে যাস না । আমিও তোর সাথেই যাবো
-বাঁচার সখ নেই কি তোর যে আমার সাথে যাবি?
-কথাটা শুনে থমকে গেলাম ।
“আসছি” এখুনি বলে চলে গেলো।
অনেকক্ষণ বসার পরেও যখন বুবুন ফিরলো না। মনে সাহস যুগিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই তনুকে দেখতে পেলাম। কিন্তু এত আমার বন্ধু তনু না! কেমন বিভৎস চেহারা ওর মুখ থেকে যেন কি ঝরে পড়ছে আর আর ওটা ওটা কোনো লালা নয় ওটা তো লাল রক্ত। তনুর সাদা জামাটা লাল হয়ে গেছে । হিংস্রের মত নখ বের করে আমার দিকে দৌড়ে আসছে কেন ?
বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলাম । কে যেন হাতটা ধরে গাছের আড়ালে টেনে নিল।




“এ কি সৈকত ? তুই ই ই ই এখানে কি করছিস ? আ আ আ র তনু এরম করে ছুটে আসছে কেন ? ওর কি হয়েছে?”
“পরে তোকে সব বলব এখন চুপ করে থাক । আড়াল থেকে মুখ বের করতে গিয়ে কে যেন মুখটা টেনে বাইরে নিয়ে এলো, সৈকত কোনরকমে টেনে বের করে আমায় নিয়ে দৌড় দিলো।
তুই না থাক….ক….লে আজ বাঁচতাম না আর।
তাই বুঝি । তাহলে বাঁচানোর জন্য কি উপহার দিবি ।
আগে জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরি তারপর না হয় দেবো ।
“না না … আমার এখুনি চাই তোকে …..”
দেখ সৈকত তুই আমার বো…অন…ধূ তুই ই এসব কি বলছিস?
তনুর হাত থেকে তোকে বাঁচালাম কেন জানিস ? আমিও অনেকদিনের অভুক্ত তাই আমার শিকারটা অন্যের কেন হতে দেব বল?
কে তুমি কে ? তুমি তুমি আআআ…মার কাছে কি চাও……?
সৈকত কাছে এসে গন্ধ সুঙতে শুরু করলো । কেমন যেন নিসপিস লাগছে কি করবো এখন ? আর তো বাঁচবো না হাঁড় কাঁপানো একটা হিমেল বাতাস এসে চারদিক যেন লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। তিন দিক থেকে বুবুন তনু আর সৈকত আমায় ঘিরে ফেলেছে । ওরা বারবার বলছে ” খুব সাহস আসার তাই না আজ আর বেঁচে ফিরতে পারবি না ” । মাথাটা ঝিম ঝিম করছে আমার কেউ যেন নিজের কাছে ‘আয় আয়’ বলে ডাকছে। কিসের একটা নিংড়ে নিংড়ে বেরিয়ে আসা কান্নার বিকট আওয়াজ কান গুলো ঝালাপালা করে দিচ্ছে । রক্তের ওপর বসে যেন আমিও ওদের সাথে মিশে যাচ্ছি । আর ফিরতে পারবো না আর না !




পরের দিন হাসপাতালে যখন জ্ঞান ফিরলো । সামনে মা বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরলাম । একটু পর কে এসে দরজার বাইরে থেকে বললো l “খুব বিদুষী মেয়ে তো তুমি।কাল তার প্রমাণ পেলাম।” পরের পর বুবুন সৈকত তনু কেবিনের ভেতর এলো। ওদের দেখে গতকালের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো সব যেন জলের মত স্বচ্ছ চোখের সামনে ভেসে পড়লো। ভয়ে চিৎকার করে চোখে জল চলে এলে বুবুন মাথায় হাত রেখে বলল ” এতো ভয় …..বাপরে! আর ভয় পেতে হবে না । কাল যেগুলো সব তোমার সাথে ঘটেছে কোনোটাই সত্যি নয় সবটাই আমাদের তৈরি করা পরিকল্পনা মাফিক ছিলো। তবে আমরা কেউ ভাবিনি শেষ মেশ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। “
এতো বাজে ইয়ার্কি কেউ করে বলুন তো ? একটু রাগ হলেও পরে নিজেই নিজের ভুত চতুর্দশী অভিজ্ঞতা মনে করে হেঁসে ফেললাম।
গল্পের ভাবনায়-
আলরানির কিছু উল্লেখযোগ্য লেখা-
বন্ধুত্বের গল্প- রুনিমা
ভুতের গল্প- সেই রহস্যময় রাত
Deep love story- ১ লা আষাঢ়
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
বাংলা ভুতের গল্প। bangla bhuter golpo. 1 new bengali horror story




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।