প্রেম! তাও আবার বন্ধুত্ব থেকে! অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ যত সব সম্পর্ক তার বেশিরভাগই বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এর দিকেই ধাবিত হয়। কিন্তু কি হবে যদি একে অপরকে চেয়েও কাছে না পান!
বন্ধুত্ব থেকে প্রেমঃ- ‘অবহেলিত গোলাপ’
স্কুল জীবন শেষে আমার কলেজ জীবনের সূত্রপাত। উচ্চমাধ্যমিকে রেজাল্ট বেশ ভালই হয়েছিল, তাই একটি ভাল কলেজে সুযোগও পেয়ে যাই। প্রতিদিন কলেজ আসা যাওয়া আর যত্ন সহকারে অধ্যাপক দের দেওয়া প্রতিটি টাস্ক ঠিক মত করা, এই ছিল আমার প্রতিদিনের সংক্ষিপ্ত রুটিন।
মা বারংবার বলত, বন্ধু বানানো ভাল নয়, যা করবি একাই করবি। মায়ের এই আদর্শে ছোট বেলা থেকে পরিচালিত হওয়া আমার জীবনে তাই বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাটাও অনেক কম।
কৌশানির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় টা হয় এক বৃষ্টি ভেজা দিনে। আমাদের ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম একা, উদ্দেশ্য কলেজের ক্যান্টিনে যাব। সমানে বৃষ্টি পরেই যাচ্ছে, আবার বৃষ্টির তালে তালে পেটে খিদের ইঁদুরও বেশ দৌড় দিচ্ছিল। সেখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করছি, পিছন থেকে একজন মেয়ের আওয়াজ ভেসে এল- এখানে একা একা কি করছিস?
পিছন ঘুরে দেখি আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবথেকে সুন্দরী মেয়ে কৌশানি। আগেই বলেছি আমি কারও সঙ্গে মিশি না, কিন্তু সেদিন কৌশানির গলার শব্দ আমাকে তার কথার উত্তর দিতে বাধ্য করল। আমি জানালাম ক্যান্টিনে যেতে চাই। সে জবাব দিল, সেও সেখানেই যাচ্ছে।
এরপর দুইজনে একই ছাতার নীচে চলে গেলাম ক্যান্টিনে। আমি ছোট্ট করে একটা ধন্যবাদ জানালে, সে সুন্দর একটা হাসি দিল। এরপর আমি একটি ফাঁকা টেবিলে খাবার নিয়ে বসি। কিছুক্ষণ পর দেখি কৌশানিও খাবার নিয়ে আমার পাশে বসেছে।
এই পরিস্থিতিটি আমার হার্টবিট বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। জীবনে কোনদিন কোন মেয়ের পাশে বসে খাবার খাই নি। খাবার খাওয়া তো দূরের কথা মেয়ে দেখলেই কেমন যেন মনে একটা বিতৃষ্ণা জেগে উঠত।
ঠিক এইভাবেই গড়ে উঠল আমাদের বন্ধুত্ব। পুরো ডিপার্টমেন্টে ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে আমার বন্ধু কেবল মাত্র একজন আর সে হল কৌশানি। পুরো ডিপার্টমেন্ট বলাটা ভুল হবে, বলতে পারেন পুরো কলেজে আমার সেইই একমাত্র বন্ধু।
ধীরে ধীরে যতই দিন এগিয়ে যাচ্ছিল, আমাদের বন্ধুত্বটাও বেশ মজবুত হতে যাচ্ছিল। প্রথমে সামান্য কথা হলেও ধীরে ধীরে সেই কথা বলাটা আরও অনেক বিস্তৃতি লাভ করে। ক্লাসের ফাঁকেই আমাদের নানান কথা শুরু।
সত্যি তো, বন্ধু থাকলে মনে একটা দারুণ ফুর্তি লাগে। আমি খেয়াল করেছি, আগে আমার মাথা বেশ ভারী ভারী মনে হত, কিন্তু কৌশানির সাথে কথা শুরু হওয়ার পর অদ্ভুত ভাবেই মনে হতে লাগল, যেন মাথার ভার টা অনেক নেমে গেছে।
পড়ুনঃ- কয়েক লাইনের প্রেমের গল্প
জীবনে সবথেকে কঠিন কাজ হল, নিজের মনের মত অর্থাৎ নিজের মত একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া, হতে পারে সে তোমার প্রিয় বন্ধু বা প্রিয় বান্ধবী। এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পেয়েছিলাম আমি ওর আর আমার মধ্যে। কাকতালীয় ভাবে সবকিছুই মিলে যাচ্ছিল, ওর পড়ার ধরন, ওর আগ্রহ, ওর ভাললাগা সব কিছুই যেন আমার সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল।
ছুটির দিন গুলোতে সে প্রতিদিন আমার খোঁজ নিত, কি করছি, খেয়েছি কি না! শরীর কেমন আছে! পড়াশোনার কি হাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
এককথায় বলতে গেলে কৌশানির সাথে পরিচয় না হলে জানতেও পারতাম না যে কেউ এত কেয়ারিং হতে পারে। সে যেভাবে আমার খোঁজ রাখত, সেই ভাবে মনে হয় কোন নিকট আত্মীয়ও রাখে না। অবশ্য আমিও তার বেশ খেয়াল রাখতাম। কারণ যে কেয়ার করে তাকেও কেয়ার করতে হয়। যে মূল্য দেয় তাকেও মূল্য দিতে হয়।
আর এরপর অদ্ভুত ভাবেই তার প্রতি আমি দুর্বল হতে থাকি। এক অদ্ভুত ভাললাগা শুরু হয় ওর প্রতি। কিভাবে জানিনা, কিন্তু দিন দিন ওর জন্য আমার মনে এক বিশেষ জায়গা তৈরি হতে থাকে। বাড়িতে কেউ জানত না যে, আমার একজন মেয়ে বন্ধু আছে, জানতে পারলে বেশ কথা শোনাত আমাকে।
একসাথে লাইব্রেরি চষে বেড়ানো, এমনকি যেদিন কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি হত, সেদিন সবার অগোচরে আমরা বেশ কয়েকবার ফুচকার দোকানে একসাথে ফুচকাও খেয়েছি। বেশ কাটছিল দিন গুলো।
দেখতে দেখতে চলে এল ফাইনাল সেমিস্টার অর্থাৎ এই সেমিস্টার শেষে আমাদের প্রতিদিনের দেখা হওয়াটা বদলে পরিণত হবে এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে মিস করা।
বেশ মনে আছে, সেদিন কলেজের শেষ দিন ছিল। আমরা সবাই হোলি খেলছিলাম। কৌশানিও সবাইকে রং মাখাতে ব্যস্ত। এই ফাঁকেই আমি টুক করে ডিপার্টমেন্টে গিয়ে আমার ব্যাগ থেকে ওর জন্য নিয়ে আসা একটা সুন্দর লাল টকটকে গোলাপ হাতে নিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য আজ কৌশানিকে আমার মনে ওর জন্য কতটা জায়গা সেটা উজার করে দেব।
পড়ুনঃ- ইমোশনাল লাভ স্টোরি- শেষ কথা
নীচে এসে দেখি এক অদ্ভুত দৃশ্য। গাছের শেকড় যেমন শক্ত না হলে উপড়ে পরতে থাকে, সেই অবস্থাই হল আমার, পায়ের নীচের মাটিটা যেন সরে যেতে লাগল। আমি দেখলাম, কৌশানির গালে আবীর মাখাচ্ছে অন্য একটি ডিপার্টমেন্টের ছেলে। কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি স্থির আর গোটা পৃথিবী আমাকে ঘিরে বন বন করে ঘুরছে।
কৌশানি আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল- “এই মহারাজ হল, সুনন্দ আমার খুব কাছের একজন।“
ইচ্ছে না থাকলেও, ওদের সাথে হেসে কথা বলতে হল। আমি যাকে কাছের করে পেতে চেয়েছিলাম সে আজ অন্য কারোর কাছের মানুষ।
অবশ্য ভুলটা আমারই। কৌশানি নানান ভাবে আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছে যে সে আমাকে কত্ত ভালবাসে। তার কেয়ারিং গুলিই তা প্রমাণিত করে। কিন্তু আমার তরফ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় সে ক্ষান্ত নাবিকের মত জাহাজের মাস্তুল ঘুড়িয়ে নিয়েছে। আর আজ আমি যখন তার দিকে ফিরে তাকিয়েছি ততক্ষণে তার জাহাজের ঘুরে ফিরে আসার ক্ষমতা নেই, আমি চাইও না আর তাকে ফিরাতে।
আমি তাকে সর্বদা আমার পাশে পেতে চেয়েছিলাম। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, আমার আয়ু যদি ৯৯ বছর হয়, তাহলে ওর আয়ু যেন ১০০ বছর হয়। কেননা আমার চোখের সামনে আমার প্রিয়, কাছের মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, সেই বেদনা সেই যন্ত্রণা বহন করার মত ক্ষমতা আমার নেই।
হয়ত আমাদের ইগো এর জন্যই আমরা একে অপরকে পাশে পাই নি। ও চাইত আমি যেন ওকে আমার ভালবাসার কথা বলি, আবার আমি চেয়েছিলাম সে যেন আমাকে এসে বলে যে সে আমাকে ভালবাসে। একে অপরের এই ইগো এর জন্যই আমি তাকে হারিয়েছি। সে নিজেকে যতই হাসি খুশি প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেন, আমার মন বলছে সেও ভাল নেই। সেও ঠিক আমার মত ঝরের মধ্যে দিক হারা ভগ্নপ্রায় নাবিক।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ-
হৃদয় ছুয়ে যাওয়া গল্প- এক পশলা বৃষ্টি
ভালবাসার গল্প- প্রেম স্মৃতি
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার গল্প friendship to relationship love story
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।