আমার কোনো একটি লেখাতে হয়ত বলেছিলাম, জলের সামনে থাকলে মন শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু একবার ভাবুন আপনার সামনে রয়েছে পৃথিবীর সুন্দর জলপ্রপাত আর আপনি সরাসরি সেই দৃশ্য উপভোগ করছেন। নগর সভ্যতার যন্ত্রদানবের শব্দে কান যেন ঝালাপালা। তাহলে চলুন না ঘুরে আসি পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু জলপ্রপাত তথা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত গুলিতে।
পৃথিবীর সুন্দর জলপ্রপাত। world’s most beautiful waterfalls in bengali
Seljalandsfoss:-
আইসল্যান্ডের দক্ষিণে সেলজাল্যান্ড নদীর উপর সুন্দর এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। প্রায় ১৯৭ ফুট উঁচু থেকে জল নীচে পড়ছে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল আপনি চাইলেই কিন্তু এই জলপ্রপাতের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পাড়বেন, জলপ্রপাতের নীচে গিয়েই। আসলে এই জলপ্রপাত যে স্থানের উপর দিয়ে নীচে পতিত হয়েছে সেখানে একটি গুহা রয়েছে। জলপ্রপাতের পাশ দিয়ে হেঁটে আপনি গুহায় প্রবেশ করতে পাড়বেন।
তবে আপনাকে একটু সাবধানে থাকতে হবে। কারণ, জানেনই তো আমরা উষ্ণ প্রধান অঞ্চলের মানুষ, একটুতেই ঠাণ্ডা লেগে যায়। এই স্থানটির জনসংখ্যা মোটামুটি ৪০০০ এর মতো। তাই নিজেদের খাবার সঙ্গে করেই নিয়ে যেতে হবে। সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন গুহার ভেতর দিয়ে জলপ্রপাতের সুমধুর দৃশ্য দেখে মনেও এক অজানা শান্তি ভেসে উঠবে।
Victoria Waterfall:-
জলপ্রপাতের নাম বললে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের নাম থাকবে না এমনটি কি কক্ষনো হয়? দক্ষিণ আফ্রিকার জিম্বাবোয়ে এবং জাম্বিয়ায় জাম্বেজি নদীতে প্রায় ৩৫৫ ফুট উঁচু এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। ১৯৮৯ সালে এই জলপ্রপাতটি জাতিসংঘের ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের’ মর্যাদা পায়। বিখ্যাত জলপ্রপাত নায়াগ্রার থেকেও এটি অনেক বৃহৎ এবং গভীর।
এখানে গেলে আপনি একটি বিশাল পার্ক দেখতে পাবেন। জল যখন অত উপর থেকে পড়ে তখন খুব গর্জন এবং ধোয়া উৎপন্ন হয়। যদিও ধোয়া বলাটা ঠিক হবে না। কারণ এটি জলের উদ্বায়ী অংশ। কিন্তু দেখতে ধোয়ার মতনই মনে হবে। এক কথায় অনবদ্য এক সুন্দর দৃশ্য আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতে। আপনার জানার সুবাদে বলে রাখি যে, প্রতি সেকেন্ডে এই জলপ্রপাত দিয়ে প্রায় ৩৩,০০০ ঘনফুট জল পতিত হয়। তবে শুষ্ক মরশুমে জাম্বেজি নদীতে জল বিশেষ থাকে না, তাই জলপ্রপাতের জলও অনেকটা কমে যায়। তখন জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অনেকটাই মলিন হয়ে যায়।
Ban Gioc Detian Falls:-
ভিয়েতনাম এবং চীনের সীমান্তে এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। কাস্ট ভুপিরুপের উপর এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত হওয়ায় এটি সিঁড়ির মত দেখতে। তাই এখানে অনেক জলপ্রপাত আছে এমনটা মনে হলেও, এখানে আসলে জলপ্রপাতের সংখ্যা একটি কিন্তু এটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নিম্নে পতিত হচ্ছে। যদিও শুষ্ক মরশুমে এটি একটি জলপ্রপাতেই পরিণত হয়।
যেহেতু চুনাপাথরের কাস্ট ভূমিরূপের উপর এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত সেহেতু এখানে জলপ্রপাতকে অনেক চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে সম্মুখে অগ্রসর হতে হয়েছে। আর আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে ঠিক এখানেই।
Iguazu Falls
এই জলপ্রপাতটি আকারে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের চেয়েও বড়। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সীমান্তে ইগুয়াস নদীতে এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত হলেও জলপ্রপাতটির বেশিরভাগ অংশ রয়েছে আর্জেন্টিনার দখলে। মালভূমির ঢাল বেয়ে প্রায় ৭৩ মিটার উপর থেকে জল নীচে পতিত হয়।
এখানেই রয়েছে দুটি ন্যাশনাল পার্ক। তাই একেবারেই এখানেও ঘুরে আসতে পাড়বেন। আর এই দুটি পার্কই জাতিসংঘের ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের’ তালিকায় রয়েছে। যদি রৌদ্রজ্জ্বল মরশুমে ঘুরতে যান, তাহলে অনেক রামধনুর দেখায় পেয়ে যাবেন এখানে।
Angel Falls:-
ভেনিজুয়েলার এই জলপ্রপাতটি পৃথিবীর স্থলভাগের মধ্যে অবস্থিত সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাত নামেই পরিচিত। প্রায় ৩২১২ ফুট উপর থেকে বিশাল পরিমাণ জলধারা নিম্নে পতিত হচ্ছে। যদিও এই জলপ্রপাতটি দেখতে গেলে আপনাকে পুরোপুরি ফিট থাকা চাইই। কারণ অনেক চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে আপনাকে যেতে হবে এই অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত দেখতে। শেষে আপনাকে নদীর সওয়ারিও করতে হতে পাড়ে। তবে আর যাই হোক অ্যাঞ্জেলের দেখা দেখতে এই টুকু কষ্ট ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে কিছুই নয়।
আরেকটি কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি- এই জলপ্রপাতের নাম অ্যাঞ্জেল হয়েছে কিভাবে! আগে এই জলপ্রপাতটির নাম অ্যাঞ্জেল ছিল না। বিংশ শতাব্দীতে জিমি অ্যাঞ্জেল নামে এক বিমানচালক প্রথম এই জলপ্রপাতটিকে খুঁজে পান। এর উপর দিয়েই তিনি তার বিমানকে উড়িয়ে নিয়ে যান। বিভিন্ন নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করাই ছিল এই পাইলটের মূল নেশা। তার নামানুসারেই এর নাম দেওয়া হয় অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত। শোনা যায় যে, তার মৃত্যুর পড় এই জলপ্রপাতেই তার অস্থি বিসর্জন করা হয়েছিল। আপনি কি অ্যাঞ্জেল নাম শুনে, মেয়ে ভাবলেন? উঁহু ইনি মেয়ে নন, ছেলে।
Niagara Waterfalls:-
জলপ্রপাতের নাম বলব আর নায়াগ্রার কথা বলব না, এমনটা কি কখনো হয়? নায়াগ্রা আসলে তিনটি জলপ্রপাতের সমষ্টি। এই তিনটির মধ্যে Horseshoe Falls ই সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর। আসলে ঘোড়ার নালের মত দেখতে হওয়ার জন্যই হয়ত এমন নামকরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি জলপ্রপাতও কিন্তু কম সুন্দর নয়! বিশেষত রাতের বেলায় এই জলপ্রপাত এক আলাদাই রূপ ধারণ করে। আর এর পিছনে কাজ করছে এখানকার রকমারি লাইটিং এর ব্যবস্থা।
এই জলপ্রপাতের জোগান আসে নায়াগ্রা নদী থেকে। আবার নায়াগ্রা নদীর জলের জোগান আসে ইরি এবং অন্টারিও নামে দুটি হ্রদ থেকে। এখন পর্যন্ত Horseshoe Falls এর উপর দিয়ে সর্বাধিক ২৩০,০০০ cu. Ft/ second জল প্রাবাহিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এখানে দুর্ভাগ্য বশত কেউ পড়ে গেলে বেঁচে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। যদিও সেখানে নিরাপত্তার যথেষ্ট সুবন্দোবস্ত রয়েছে। ১৯৬৯, নায়াগ্রা হ্রদের অভ্যন্তরীণ গঠন পরীক্ষা করার জন্য জল প্রবাহ অন্যদিকে ঘুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
Dudhsagar Falls :-
ভারতের এক অনন্য সুন্দর জলপ্রপাত হল দুধসাগর জলপ্রপাত। ক্যাসকেড বা সিঁড়ির মত ভূমিরূপের উপর দিয়ে এই জলপ্রপাতটি এমনভাবে ছড়িয়ে পতিত হয়েছে দেখে, মনে হয় যেন সত্যি কেউ জলে দুধ মিশিয়ে দিয়েছে। ভারতের ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য গোয়ার রাজধানী পানাজি থেকে মাত্র ৬০ কিমি দূরে মান্ধবি নদীর উপর এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। দুধসাগর জলপ্রপাতের জল প্রায় ১০১৭ ফুট উপর থেকে নীচে পতিত হচ্ছে। এর প্রস্থ প্রায় ১০০ ফুট।
এই জলপ্রপাতের পাশেই রয়েছে বিশাল পর্ণমোচী উদ্ভিদের অরণ্য। আর কয়েকটি জলপ্রপাতের মত এই জলপ্রপাতটিও শুষ্ক মরশুমে অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু ভরা বর্ষায় যেন যৌবন লাভ করে। আর ঠিক তখনকার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দির সাথে সাথে মনে গেঁথেও যায়। যেন মন আর ফিরতে চায়না বাড়ির দিকে।
আরও পড়ুনঃ- ভুতের সঙ্গে প্রেম
Denmark Strait Cataract Falls:-
এতক্ষণ যতগুলি জলপ্রপাতের কথা বললাম তার সবগুলিই অবস্থিত ভূমির উপর। কিন্তু এবার একটু অন্যদিকে ঘুরছি, এবার যে জলপ্রপাতটির কথা বলব সেটি অবস্থিত সমুদ্রের মধ্যে। আটলান্টিক মহাসাগরে, ডেনমার্কের দিকে এই জলপ্রপাতটির দেখা মিলবে। এখান থেকেই গ্রিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ড বিভক্ত হয়েছে। আসলে Nordic সমুদ্র থেকে যখন ভাঁড়ি এবং ঠাণ্ডা জল Irminger সমুদ্র থেকে আসা অপেক্ষাকৃত উষ্ম জলের সঙ্গে মিশে যায় তখনই এই জলপ্রপাতের দৃশ্যটি গঠিত হয়। ঠাণ্ডা জল ভাঁড়ি হওয়ায় সেটি সমুদ্রের বক্ষ বরাবর নীচে নেমে যায়, অন্যদিকে অপর দিকের জল উষ্ম হওয়ায় এটি হালকা হয় এবং এটি ঠাণ্ডা জলের উপড়ে থাকে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার ঠাণ্ডা জল এই জলপ্রপাত দিয়ে নীচে নামে।
বলে রাখি যে এই জলপ্রপাতটিই হল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাত। এর গভীরতা প্রায় ৩৫০৫ মিটার।
For any query or Advertisement Fell free to contact:- +91 62960 96634 (WhatsApp message Only)
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।