একটি পরিপূর্ণ প্রেমের গল্প নিয়ে আজ আবারও চলে আসা। এই প্রেমের গল্পটির লেখক- মানব মণ্ডল ।
পরিপূর্ণ প্রেমের গল্প -গোলাপের কাঁটা।
আজ ভীষণ ভাবে মনে পরছে আমাদের সেই প্রথম ভ্যালেন্টাইন দিনের কথা। তার ঠিক একটা বছর আগে আমি ভ্যালেন্টাইন ডে-তে দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও দেখা করে নি । বিনম্রতার সাথেই জানিয়েছিলো ও আমার সাথে কোনো সম্পর্কে আসতে চায় না। সেইদিনই বুঝতে পেরেছিলাম গোলাপের কাঁটা কেমন যন্ত্রনার। একবছর ঘুরতেই ও ওই ভ্যালেটাইন ডে তেই আমার সাথে একটু দেখা করতে চাইলো। বন্ধু মহলে খুশির হাওয়া, সবাই বলল তোর জীবনে বসন্ত এলো এবার মনে হয়। মানে না, উপহার হিসেবে গোলাপ দিতেই হবে। আবার এই সুযোগে কালো বাজারিও চলছে রমরমিয়ে। আমি একটু হিসেবি। তাই বাড়ির উঠোনের নতুন টবে আমার প্রিয় গোলাপ গাছটা নিয়ে চললাম।
ভালবাসার ভাষা বুঝতে ও বোঝাতে পারে গোলাপ। তাই উপহার হিসেবে গোলাপের চাহিদা সবার উপরে। লাল গোলাপ: প্রেমের কবিতা, গল্পে বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে রক্ত গোলাপের কথা। সৌন্দর্য, ভালবাসার প্রতীক লাল গোলাপ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেমের ধরন বদলে গেলেও প্রেম নিবেদনের ভাষা হিসেবে লাল গোলাপের আবেদন চিরন্তন। তাছাড়া রোমের ইতিহাসেও খোঁজ মেলে লাল গোলাপের। রোমান যুগে থেকেই লাল গোলাপ বেশ জনপ্রিয় ছিল, তবে তখন শুধু ওষুধ ও পারফিউম হিসাবে ব্যবহার করা হত গোলাপকে। তবে এগুলো নববিবাহিত দম্পতিরা গোলাপের মুকুট পরতে এবং তাদের বিছানাগুলি গোলাপের পাপড়িতে আচ্ছাদিত করতেও ব্যবহৃত হতো। মনে করা হত, গোলাপ প্রেম এবং যৌন আকাঙ্ক্ষাকে সংযুক্ত করবে। এর পিছনে একটা গল্প আছে।
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী গ্রীকদের ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতির প্রেমিক অ্যাডোনিসের মৃত্যুর হলে, দেবি আফ্রোদিতির অশ্রু ও রক্ত যেখানে পড়েছিল, তাতেই সেখানকার মাটিতে গজানো সাদা গোলাপগুলো লাল রঙের হয়ে যায়। আর তখন থেকেই চিরন্তন প্রেমের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় লাল গোলাপ। তবে কার মুখে যেন শুনেছিলাম, দেবী লক্ষ্মীকে এক হাজার আটটি ছোট গোলাপের পাপড়ি ও একশো আটটি বড় গোলাপ দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিলো।
আরবের উপকথায় বলা হয় একটি সাদা গোলাপ দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিয়ে গান গাইতে গাইতে একটা কোকিল গোলাপের এতো কাছে চলে যায় যে গোলাপের কাঁটা বিদ্ধ হয়ে তার বুকে । লাল রঙে রাঙা হয়ে যায় সাদা গোলাপ তার রক্তে। আর তখন থেকেই গোলাপের রঙ হয়ে যায় লাল।
পড়ুনঃ- বাংলা ফানি গল্প ভূতের সাথে ঘণ্টাখানেক
আসলে গোলাপ লাল রঙের হওয়াটা জরুরি, কারণ গোলাপের রঙ বদলানো সাথে সাথেই অর্থ বদলে যায় অনুভূতির।
পৃথিবীতে বোধহয় ২৪টি বর্ণের গোলাপ পাওয়া যায়। এর সব আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। গোলাপি গোলাপ ব্যবহার করা হয় স্নেহ প্রকাশে, যা নতুন বন্ধুত্বের প্রতীক। সাদা গোলাপ পবিত্রতার এবং হলুদ গোলাপ বন্ধুত্বের প্রতীক। আর কালো বা গাঢ় কালচে খয়েরি রঙয়ের, গোলাপকে ধরা হয় মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে। পিচ রঙের গোলাপ আরোগ্যের প্রতীক। কমলা রং আবেগ, উৎসাহ, উদ্দীপনার প্রতীক তাই সহকর্মী বা বন্ধুকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবহার করা হয় কমলা গোলাপ।
তবে গোলাপের সংখ্যা টাও কিন্তু আলাদা আলাদা। একটা গুরুত্বপূর্ণ ভালোবাসা বোঝাতে একটি মাত্র লাল গোলাপ দিতে হয়, আর ক্ষমা চাওয়ার ভাষা খুঁজে না পেলে দেয়া হয় ১৫টি গোলাপের তোড়া। দেখা হল, অনেক কথা হল, অনেক কষ্টে গোলাপ গাছটাই দিলাম ওকে, বন্ধুরা বলেছিলো, কিপটামি করবি না কিছু একটা দিবিই । তাছাড়া কফি, স্ন্যাক্স আইসক্রিমটা ও খাইয়েছে। ছয়মাস পর WhatApp এ ফুলের ছবি পাঠিয়ে সে বলল, সে নাকি গাছটা পেয়ে খুব খুশি। বললো ওটাই নাকি ওর সেরা উপহার। যাইহোক গোলাপ গাছটা আমার একটা হিল্লে করলো।
আজ কাক ভোরে উঠে ওর বাড়ি গিয়ে ঐ গাছের গোলাপের কাঁটা খেয়ে দুইটা টকটকে লাল গোলাপ তুললাম। পাড়ার কুকুর গুলো একটু চ্যাচামেচি করছিলো কিন্তু যাইহোক শাশুড়ির হস্তক্ষেপে এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
একটা চকলেটের বাক্স, লাল গোলাপ আর একটা গিফ্ট প্যাকেট রাখলাম ওর কম্পিউটার টেবিলে। যাতে বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না যে ওগুলি ওর জন্যই আনা হয়েছে। বিছানা থেকে উঠে পরলাম। ভাবলাম ঠিক যখন কাজে বসবে তখনই ওকে জড়িয়ে ধরে একটি চুম্বন করে বলল ‘তোমাকে প্রথম বিবাহবার্ষিকীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা।’
কিন্তু বেশ বেলা হয়ে গেলো এখনো এলো নাও। কিছুক্ষন পড় দেখলাম কালিঘাটের টিপ কপালে নিয়ে ঘরে ঢুকে কপালে জবা ফুল ঠেকালো। বেশ থমকের সুরে বললো “স্নান করেছো তাহলে জবা ফুলটা রাখো। বিশেষ পূজা করা হয়েছে আজ। বিকালে তাড়াতাড়ি ফিরবে গুরুজনদের আশীর্বাদ নিতে হব। আজ আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী, মা সব আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করেছে ডিনারের জন্য। আমি সত্যি সারপ্রাইজড্ হলাম,এই ভেবে যে মা নিজের ছেলের বৌয়ের আড়ালে তার পাঁচ বছরের প্রেমিকাটিকে পাল্টে দিল।
আমি বললাম” তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে ভেবে ছিলাম, আমি কিছু ই ভুলিনি। ও হেসে বলল “বিয়ের পর মেয়েরা শুধু স্ত্রী হয়েই থেকে যায় তাদের আর প্রেমিকা হওয়া হয় না।” গোলাপের কাঁটা আজও ব্যাথা দিয়েছে। কিন্তু মিষ্টি ব্যাথা…
গল্পের লেখক- মানব মণ্ডল facebook
“পরিপূর্ণ প্রেমের গল্প। গোলাপের কাঁটা। প্রেমের গল্প। bangla premer golpo”
Facebook- গল্প আর গল্প Telegram:- ছাড়পত্র charpatra.com
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।