নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি

যেমন কর্ম তেমন ফল

একবার এক ঈগল পাখির সঙ্গে এক শেয়ালীর দেখা হল। প্রথম দর্শনেই তাদের উভয়ের উভয়কে ভালো লেগে গেল। তাই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। বন্ধুত্বটা যাতে বরাবর বজায় থাকে এবং আরো শক্ত-পোক্ত হয় তার জন্য তারা দুইজনে একসঙ্গে বসবাস করবে ঠিক করল। প্রকান্ড একটা গাছের মাথায় ঈগল বাসা বানিয়ে সেখানেই ডিম পাড়ল আর শেয়ালী ওই গাছের নিচেই তার আস্তানা করলো এবং এক সময় সেখানেই তার বাচ্চা হল।

এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেছে। শেয়ালী একদিন খাবারের খোঁজে বাইরে গেছিল, আর ঈগলের সেই সময় বড্ড খিদে পেয়ে গেল। কোথায় আর যাবে সে খাবারের খোঁজে? শেয়ালী যখন তার আস্তানায় নেই ঈগল তখন তার বাচ্চা গুলিকে নিয়ে এল তার বাসায়, এরপর নিজের বাচ্চাদের নিয়ে সে শেয়ালীর বাচ্চা গুলিকে বেশ মজা করে খেল।

যথাসময়ে শেয়ালী তার আস্তানায় ফিরে এল। এসে সে দেখে যে তার বাচ্চা গুলি নেই! তার বুঝতে আর কিছু বাকি রইল না যে তার বাচ্চা গুলিকে ঈগলই মেরে খেয়েছে। বাচ্চা হারানোর শোকের চেয়ে প্রবল হয়ে উঠল তার প্রতিশোধ স্পৃহা, সে ভাবতে লাগল ঈগলের এই দুষ্কর্মের এবং বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি কীভাবে দেওয়া যায়।

নীতিকথার গল্প
EAGLE NEST

নীতিকথার গল্প. শিক্ষণীয় গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি BENGALI STORIES***

শেয়ালী মাটির উপরের প্রাণী। মাটির উপরেই তার চলাফেরা। মাটি ছেড়ে সে গাছে উঠতে পারবে না। সে কীভাবে একটা পাখিকে শায়েস্তা করবে? সবলের অত্যাচারের দুর্বল যখন আর কিছুই করতে পারে না তখন তাকে শুধু অভিশাপ দিয়েই মনের জ্বালা মেটাতে হয়। শেয়ালীও তাই করতে লাগল।

কিন্তু শেয়ালীকে বেশি দিন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে অপেক্ষা করতে হল না। তাকে কোনো কিছুই করতে হল না। দুর্বৃত্তের পাপের শাস্তি বিধাতা বুঝি নিজের হাতেই দিলেন।

নীতিকথার গল্প
BABY FOX

নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি BENGALI STORIES ***

কয়েকদিন পর সামনের ক্ষেতে কয়েকটা লোক পাঁঠা বলি দিয়ে যজ্ঞ করতে এসেছিল। পাঁঠার মাংস রান্না করতে তারা কাঠ খড় দিয়ে আগুন জ্বেলেছিল। আগুনের ফুলকি এদিক- ওদিক ছিটকে পড়ছিল। ঈগল ভালো করে না দেখেই ওরই একটা টকটকে জ্বলন্ত টুকরো ছোঁ মেরে তার বাসায় নিয়ে এল। ঈশ্বরের কাজ ঈশ্বরই করেন। তখনই দমকা হাওয়া বয়ে গেল। ফলে টুকরোর এক পাশের আগুনে ঈগলের বাসার খড়-কুটো সব দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। তাতে ঈগলের বাচ্চা গুলি পুড়ে মারা গেল এবং আধ পোড়া বাচ্চা গুলি সমেত জ্বলন্ত বাসাটি মাটিতে খসে পড়ল।শেয়ালী তা দেখে ছুটে গিয়ে শত্রু ঈগলের আধপোড়া বাচ্চাগুলি চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল।

উপদেশ- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।

আরও পড়ূণঃ- বিখ্যাতদের মজার ঘটনা আইনস্টাইনের মজার গল্প নিউটনের মজার ঘটনা এডিসনের মজার ঘটনা TOP 18 STORIES OF FAMOUS PERSONS

নামে কি আসে যায়!

নীল আকাশের দিকে চেয়ে বসে আছে হাবলু। আচ্ছা মাধ্যাকর্ষণের টানে তো মাটির দিকেই নামবে সব? পাখীদের যেমন পাখা আছে, প্রাণ আছে, তাই উড়ে চলে, কিন্তু ঘুড়ি! ঘুড়ি কেন উড়িয়ে দিলে নিচের দিকে যায় না?

থমকে উঠে হাবলু। – যা যা আর বুঝতে হবে না তোকে। তোর যা বুদ্ধি! নামেই তার পরিচয়।

হেসে উঠে দাদা- দিদিরা।

বড় দুঃখে কাঁদো কাঁদো মুখে ঠাকুমার গলা জড়িয়ে হাবলু বলল- নামটা আমার পাল্টে দাও ঠাম্মা। এমন নাম রাখলে কেন আমার?

ঠাকুরমা আদর করে কোলে টেনে নিলেন হাবলুকে। বললেন- নামে কি আসে যায় রে বোকা ছেলে! একটা গল্প বলি শোন-

গল্পের নাম শুনতেই সবাই গুটি শুটী মেরে ঠাকুরমার কাছে এসে বসল।

KITE FLYING BY A SMALL BOY
FLYING KITE
<

নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি BENGALI STORIES***

ঠাকুরমা গল্প বলতে শুরু করলেন-

অনেকদিন আগে পশ্চিমদেশে ভাগলপুরের কাছে একটা গ্রামে একটা ছেলে বাস করত। তার বাপ- মা অনেকদিন আগেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। বড়ই দুঃখী সে, কোনো দিন সে খেতে পায় কোনো দিন খেতে পায় না। কত জায়গায় সে ঘুরে দেখেছে- কেউ যদি রাখে তাকে কোনো কাজের জন্য। কিন্তু না। কেউই তো তাকে রাখে না।

খায় কি করে? ভারী বিব্রত হয়ে পড়ল সে।

নাম ছিল তার- রামভবন দাস। অনেক ভেবে- চিন্তে তার মনে হল- আমার নামই তো রামভবন দাস! কাজেই এই রকমই তো জুটবে আমার ভাগ্যে। কি নামই যে রেখেছিল বাবা-মা। এই নামই যত নষ্টের মূল।

যাই আজই গাঁয়ের মাতব্বর পান্ডেজীর কাছে- নামটা পাল্টে ভালো যুতসই নাম একটা দিতে বলব তাকে।

আরও পড়ূণঃ- TOP 5 FACTS IN BENGALI।। AMAZING FACTS IN BENGALI

এই ভেবে সে চলতে লাগল পথে ধীরে ধীরে হেঁটে হেঁটে। অনেকটা রাস্তা যাবার পর সে দেখলো কয়েকজন মিলে একটি মৃত মানুষকে বয়ে নিয়ে চলছে। এই দৃশ্য দেখে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে হা করে তাকিয়ে থাকল সেই শোভাযাত্রার দিকে।

তারপর হঠাৎ তার মনে হল- আচ্ছা, শুনে আসি তো যে মারা গেছে তার নামতি কি ছিল?

যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছুটে গিয়ে সে জিজ্ঞাসা করে জানল যে মৃত ব্যক্তিটির নাম ছিল- অমর সেন।

তাজ্জব হয়ে গেল রামভবন! অ্যাঁ অমর, নাম থা উসকা ফির ভি ও মর গিয়া!

চিন্তা করতে করতে সে আবার চলতে লাগল- এ আবার কেমন হল? ‘অমর’ নাম থাকা সত্ত্বেও সে মারা গেল!

ভাবনার কথাই বটে। বেলাও বেড়ে চলল। এদিকে খিদেও পেয়ে গেছে বেশ।

পথের ধারে একটা লোক বসে ঘাস কাটছিল। তার কাছে গিয়ে রামভবন জিজ্ঞাসা করল- ভাই খুব খিদে পেয়েছে। আসে পাশে কোনো গৃহস্থের বাড়িতে কি খাবার মিলবে?

grass
GRASS CUTTING

নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি BENGALI STORIES***

ঘাস কাটা ব্যক্তি জবাব দিলেন- আরে ভাই, এমনি এমনি কি আর খাবার মেলে? তবে আর এই দুপুরে রোদে বসে বসে ঘাস কাটছি কেন আমি? এই ঘাস যদি দু’চার পয়সায় কেনে কেউ, তবেই খেতে পাব আমি।

দমে গেল রামভবন। আবার চলতে শুরু করল সে।

হঠাৎ তার মনে হল- ঐ যা! লোকটার নামই তো জিজ্ঞাসা করা হোলো না। ছুটে গিয়ে সে জিজ্ঞাসা করে জানল- লোকটির নাম ‘ধনপত‘, অর্থাৎ কিনা ধনপতি।

এ আবার কেমন কথা? ধনপতি নাম যার, ঘাস কেটে বিক্রি করে খাবার জোটে তার! ভাবতে ভাবতে মুখে বিড়বিড় করে আবার চলতে লাগল রামভবন। সত্যি তাজ্জব তো- ‘অমর’ নাম ছিল তার তবুও সে মারা গেছে। ‘ধনপত’ নাম এর তাও একে ঘাস কাটতে হচ্ছে।

না বড্ড খিদে পেয়েছে। চলতে চলতে সে দেখতে পেল- ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে একজন লোক চলছে ভিক্ষে করতে। ভাবলো- আমাকেও দেখছি এই করতে হবে এখন।

ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে কারো দরজায় দাঁড়ালে যদি খেতে পাই!

রামভবন ভাবল আচ্ছা এর নামটা জিজ্ঞাসা করে দেখিতো। সে কাছে গিয়ে সেই ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করল- আচ্ছা ভাই! নামটি যেন কি তোমার?

begger
BEGGER

নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি BENGALI STORIES***

ভিক্ষুক বলল- ‘লক্ষ্মীমন্ত’

বাঃ বাঃ! হেসে উঠল রামভবন আপনার মনেই, সে চেঁচিয়ে উঠল-

নাম ছিল ‘অমর’ সেও মারা গেছে।

নাম ছিল ‘ধনপত’ সেও ধনের অভাবে ভুগছে।

আর নাম ‘লক্ষ্মীমন্ত’ এও ভিক্ষা করে।

এর থেকে বরং আমার নামই ভালো- রামভবন দাস।

হা হা আমার রামভবন নামই ভালো- কোনো ক্ষুদ নেই আর। খুশি মনেই সে তখন তার বাড়ির দিকে পা বাড়াল।

আরও পড়ূণঃ– TOP 5 NEW LIFE CHANGING STORY RELATED TO SWAMI VIVEKANANDA IN BENGALI স্বামী বীবেকানন্দের কিছু শিক্ষণীয় গল্প। আমার ভারত অমর ভারত

নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি BENGALI STORIES***

নীতিকথার গল্প ঠাকুমার ঝুড়ি BENGALI STORIES***

Spread the love

Leave a Reply