আজ ছাড়পত্রে দুইটি নতুন বাংলা গল্প নিয়ে আসা হয়েছে। এই বাংলা ছোট গল্প দুটিতে ভিন্ন ভিন্ন রসদ পরিবেশনের চেষ্টা চালিয়েছেন লেখিকা।।
নতুন বাংলা গল্পঃ-
-“মা, চলো না মামাবাড়িতেই থাকি। ভালো লাগে না আমার এখানে থাকতে। মনে হয় অনেক দিন বা কয়েকটা মাস মামাবাড়িতে থাকি। চলো না মা।”
ছোটবেলা থেকে এই বায়না বুবলু মামাবাড়ি থেকে ফিরে আসার সময় বারবার বায়না করত। ছোটবেলায় খালি ভাবত যে মামাবাড়িতে সে যদি অনেক দিন থাকে তাহলে অনেক অনেক মজা হবে।
অনেক খেলনা, অনেক খাবার, অনেক ঘুরতে যাওয়া, অনেক পোষাক-আশাক, অনেক আনন্দ আরো কত কি! শুধু খেলা আর আনন্দ।
কিন্তু বুবলু আজ সাতবছর হয়ে গেল মামাবাড়িতে আছে। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। সে রয়ে গেছে মামাবাড়িতে, অনেক দিন নয়, কয়েক মাস নয় , সাতটা বছর ধরে।
কেন এতবছর ধরে কেন? আর মামাবাড়িতেই বা কেন?
বুবলু ছোটবেলায় বুঝত না কখনো যে তার দিম্মা, দাদু, মামারা তার বাবাকে পছন্দ করে না। আর পছন্দ করে না বলেই তারা সবসময়ই চেয়ে এসেছিল বুবলুর বাবাকে ছেড়ে যেন বুবলুর মা বা তাদের মেয়ে তাদের কাছে যেন ফিরে আসে। তারা মেয়ের অন্যত্র বিয়ে দেবে।
কিন্তু বুবলুর মা তা করেনি এবং বুবলুর বাবাও বুবলুর মাকে কোনোকিছুর জন্য ছাড়েনি। তাদের মধ্যে এরপর বুবলু আসে। মেয়ের বিয়ে আর অন্যত্র দেওয়া হয় না আর! আস্তে আস্তে রাগ বাড়ে, মেয়ে জামাইয়ের প্রতি কিন্তু বুবলু আসায় সবটা ম্লান হতে শুরু করে। আর বুবলুর বাবার অবস্থা অনেক ভালো, তাই সবকিছু মোটামুটি ঠিক ঠিক চলেছিল।
কিন্তু হঠাৎ করেই বুবলুর বাবার ব্যবসায় ক্ষতি হতে শুরু করে। আর আবার পুরোনো ক্ষোভটা চারা দিয়ে ওঠে বুবলুর মামাবাড়ির মনে। কারণ তখন অবস্থা খারাপ হওয়ার ফলে সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে যে। তখন বুবলু সিক্সে পড়ে। চূড়ান্ত অশান্তি আর মনোমালিন্য শুরু হলো বুবলুদের ঘরে। চিন্তা ভাবনায় কুঁকড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা যখন, তখন এই সুযোগটাই নেয় বুবলুর মামাবাড়ি। আর তারা ভেঙে দেয় বুবলুর বাবা মায়ের সংসার। না ডিভোর্স দিয়ে নয়, বুবলুর মাকে বলে বুবলুকে নিয়ে সে যেন বাপের বাড়ীতে চলে আসে। বুবলুর মা তখন অনেক বার তার ভাইদের বলে, ‘তোরা আমার সংসারটা এভাবে ভাঙিস না, কিছু টাকা পাঠা তাতেই মোটামুটি, ওর ব্যবসা দাঁড়ালে সব শোধ করে দেবো।’ কিন্তু শোনা হয়না তার কাতর আবেদন।
বুবলুর বাবাও ঐ মুহুর্তে ভেবেছিল তার যখন এখন বৌ ছেলে কে দেখার মতো ক্ষমতা সত্যিই নেই তখন আপাতত ওরা বাপের বাড়ীতেই থাকুক, পরে যা হবার হবে। সে এমনি টাকা পাঠাবে। তারা ভাড়াবাড়িতে থাকত তাই বুবলুর বাবা এই ব্যাপারে মনে মনে ব্যথিত হলেও সম্মতি জানিয়েছিল। আর তারপরই সমস্ত কিছু গুছিয়ে, সবকিছু নিয়ে চলে আসা বুবলুর মামাবাড়িতে।
পড়ুনঃ- গল্পের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা
আর আজ সাতটা বছর হয়ে গেল। বাবা আর নেই বুবলুর। একসাথে আর থাকা হয়নি বুবলুদের। ডিভোর্স না হলেও এও যে একপ্রকার বিচ্ছেদের সমান তা আজ বুবলু বুঝতে পারে। আর মামাবাড়ির মজা! সে তো অতীত। মামাবাড়িতে দুদিনের জন্য ঘুরতে আসার সময় বোঝা যায় না যে দু সপ্তাহ কি আদৌ কাটানো সম্ভব? আদৌ কি কাটানো যায় অনেক দিন কোনো আত্মীয়ের বাড়ি? যায় না, দুদিনের জায়গা দুদিনেরই থাকে, দু’মাস বা দু’বছর হয় না।
মামাবাড়িতে থাকতে আসার পর থেকে মামাবাড়িকে নতুন করে চেনে বুবলু । মাকে দিয়ে সব কাজ করানো থেকে শুরু করে, আরো কত কি যে খারাপ ব্যবহার! হ্যাঁ ভালো ব্যবহার তখন করত যখন দেখত মা তাদের সবকিছু করে দিচ্ছে।
বুবলুর বাবার সাথে দেখা করত বুবলু আর ওর মা। আর জানতে চাইত কবে তারা এখান থেকে যাবে?
উত্তরে বুবলুর বাবা বুকে একরাশ চিন্তা চেপে নিশ্চিন্তভাব দেখিয়ে বলত, “যাবে গো আমার ভাঙা ব্যবসাটা খুব শিগগিরই আবার দাঁড়িয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে আবার আগের মতো।”
বুবলু উদাস হয়ে চেয়ে থাকে ভাতের থালার উপর। ভাতের উপর দুফোটা চোখের জল পড়ল মনে হয়। আত্মীয় মানেই যে আপন হবে তা তো নয়। যখন বুবলু ছোট ছিল আর দু’দিনের জন্য ঘুরতে আসত তখন মামাবাড়িতে আদরই ছিল আলাদা আর এখন!
পড়ুনঃ- মানব দেহের সঙ্গে যুক্ত চমকপ্রদ তথ্য
এখন মামাবাড়িকে সত্যি সত্যি চিনতে পারে না বুবলু। যেই মামাবাড়িতে সে ছোটবেলায় আসার জন্য বায়না করত, সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। দুই একদিনের জন্য মামাবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ সম্ভাবনা এলে মনটা নেচে ওঠে আনন্দে।
আর! আর তাদের সংসার টাও তো ভেঙে দিল সেই আত্মীয় মামারাই! বাবার সাথে আর থাকা হলো না বুবলুর। সেদিন আর ভাত খাওয়া হলো না তার।
আপনার লেখা গল্প ছাড়পত্রে পাঠান- charpatrablog@gmail.com -এই E-mail ঠিকানায়।।
বাংলা ছোট গল্পঃ-
নন্দিনী সবসময় সবকিছুর ক্ষেত্রেই খুব অল্পেতেই বলে দিত, “পারব না, আমার দ্বারা হবে না।” সবাই খুব রেগে যেত এতে। কিন্তু অনেক বকে বকেও ব্যর্থ সবাই।
মা অনেক বার কাছে টেনে নিয়ে ভালো ভাবে বুঝিয়েছে যে, চেষ্টা না করে বা কাজ করার আগে কখনোই বোঝা সম্ভব নয় যে হারব নাকি জিতব। পরীক্ষা না দিয়ে যেমন পাশ ফেল বোঝা যায় না তেমনভাবেই কাজটা না করেই বা করার আগেই “পারব না” বলে হাল ছেড়ে দিতে নেই।
নন্দিনী বলে ওঠে, না মা এইসব কাজ সত্যি সত্যি আমার দ্বারা সম্ভব নয়, কি করে হবে বলোতো, আমি কি কখনো এগুলো শিখেছি না করেছি ?
নন্দিনী মা, জন্ম থেকে কেউই কখনো সব কাজ শিখে জন্মায় না বা জন্ম থেকেই সে সব কাজ করার মতো ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। জন্মের পর থেকে আস্তে আস্তে প্রতিটি জীবের বৃদ্ধির সাথে সাথে তার আচরণ, স্বভাব, চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, কাজকর্ম ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়। একটু বোঝার চেষ্টা কর মা, ‘সবসময় পারব না, পারব না করলে হয়?’ কাজ করার শেষে তুই যদি দেখিস, কাজটা তুই পারিসনি ঠিক করে করতে তো ছেড়ে দিবি। কিন্তু চেষ্টা করে হেরে যাওয়ার থেকে চেষ্টা না করে হাল ছেড়ে দিয়ে হেরে যাওয়া অনেক বেশী খারাপ।
মা রান্না করতে চলে যায় আর নন্দিনী মায়ের কথাগুলো বসে বসে ভাবে। কিন্তু প্রত্যেক বারের মতো এবারেও সে ঐ ‘পারবো না’ ভূতের চক্করে পড়ে মায়ের কথাগুলোকেও ‘বুঝতে পারলাম না’ র ঝুড়িতে রেখে দিয়ে চলে এলো।
পরিবারের বাকি সদস্যদের কথা একদমই শোনে না নন্দিনী, শোনে শুধু মায়ের কথাটাই। মেয়েটা এমনি ভালো কিন্তু এই একটা মস্ত খারাপ গুণের জন্য সবাই তাকে মোটেও পছন্দ করত না। মা তাকে যেভাবে বোঝাতো ঐভাবে তো দূরের কথা, ঐরকম বোঝানোর কাছাকাছির মতোও কেউ বোঝাতো না। তাই নন্দিনী একমাত্র মায়ের কথাই শুনত আর বুঝতে না পারলেও বা ওর অপছন্দকর কথা হলেও অবজ্ঞা করত না, যেটা সে বাকি সদস্যদের ক্ষেত্রে করে।
নন্দিনী মায়ের সাথে রান্নাঘরে যায়, মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে চুপচাপ রান্না দেখে এমনভাবে যেন মনে মনে সে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু বুঝতে পারছে না কিছুতেই।
পড়ুনঃ- হুমায়ুন আহমেদের সেরা কিছু উক্তি
অল্পেতেই হাল ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক? মাঝে মাঝে এই প্রশ্নের উত্তর তাড়া করে বেড়াত নন্দিনীর মনের মধ্যে, কিন্তু পেত না উত্তর।
যাই হোক এভাবে সবার দিন যায়। নন্দিনী এখন একুশ বছরের যুবতী। কিন্তু এখনো সেই “পারব না” কথাটা যায়নি মুখ থেকে। সবাই রীতিমত ব্যর্থ মনোরথ হয়ে চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু মা ছাড়েনি চেষ্টা।
একদিন মা ইচ্ছে করে অসুস্থতার ভান করে সমস্ত কাজ ভুল করতে থাকে কিন্তু নন্দিনী তা বুঝতে পারে না যে মা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। সে অনেকক্ষণ ধরে এসব দেখার পর বলে ওঠে, “এসব তুমি কি করছ মা, দাও দাও আমাকে দাও।”
-“তুই তো পারবি না মা, আমিই করছি থাক।”
-“না না তুমি দাও তো আমায়, আমি পারব। তুমি বিশ্রাম নাও।”
-“না না মা তুই যা। তুই পারবি না মা, তুই তো এসব পারিস না করতে।”
-“তুমি দাও তো, তুমি তো ভুলভাল কাজ করে যাচ্ছ, আমাকে দাও আমি করি।” বলে নন্দিনী নেয় কাজগুলো।
কিন্তু সেও ঠিক করে করতে পারে না কিন্তু তবুও চেষ্টা করে কারণ মা যে অসুস্থ।
সারাটাদিন কীভাবে কেটে গেল নন্দিনীর তা সে বুঝতেই পারে না।
সে এতদিন ধরে পারত না বা করত না সেই সমস্ত কাজের মধ্যে বেশিরভাগ কাজই সে করেছে। কিভাবে করল সে দিন শেষে বুঝতেই পারে না। শেষে মা হেসে বলে, “যুক্তি যেখানে ব্যর্থ, আবেগই সেখানে শক্তিশালী হবে। কিন্তু যাই হোক না কেন, পারতে হবে অবশ্যই। তার মানে আমার মা সবকিছু পারে”
-“সত্যি মা, আমি ভাবতেই পারিনি আমি এই কাজগুলো পারব কখনো! আর পারি না আমি বলব না বলো মা!” মা আর মেয়ে হেসে ওঠে।
গল্পের রসদ পরিবেশনে-
সুস্মিতার অন্যান্য কয়েকটি লেখা- হাসির গল্প- ভূত সমাজের প্রেম রহস্যময় গল্প- যূথিকা Tailors মেয়েদের জীবন নিয়ে বাস্তব গল্প- স্পর্শ
এক ক্লিকেই আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
” নতুন বাংলা গল্প। বাংলা ছোট গল্প। new bengali story. bengali short story”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।