দুঃখের লাভ স্টোরি // কোনো মানুষ যখন প্রিয় হয়ে উঠে তখন তার বলে যাওয়া কথার ছাপ গেথে যায় মনে। হয়ত সেই মানুষটা বুঝে উঠতে পারে না, তার কথার তীক্ষ্ণতা একজনের হৃদয় ভেদ করেছে! অন্তিম পর্যায়ে যখন সে সব কিছু বুঝে, তখন হয়ত দিনান্ত ঘোষিত হয়েছে।

দুঃখের লাভ স্টোরিঃ- ‘মৃত !’

ফেব্রুয়ারি মাস মানেই অনেকের কাছে আবেগের বশবর্তী হয়ে ভাবাবেগ নিয়ে খেলা করার সময় আবার অনেকের কাছে অনুভূতির সঞ্চারের ফলে ভালোবাসার উৎপত্তির সময় । সে যাই হোক , একজন স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের কাছে, প্রেমের সংজ্ঞা হয়তো তেমন মনোপ্রত হয়ে উঠবে না আপনাদের কাছে । তাই মূল গল্পে আসি …

মিহির আর নেহার গল্প, না! খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে দিয়ে মিহির বেরিয়ে গেলো । ওর ডেস্কের ওপর রাখা ফাইল গুলো সব পড়ে রইলো । কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে , নেহার সন্দেহ হলো ওর ওপর । তাই মিহির এর বেরোনোর পরেই ও নিজেও বেরিয়ে পড়লো। গাড়িটা যখন মিহিরের বাইক টা কে ফলো করছে তখন পাশের সিটে বসে থাকা ওর বান্ধবীকে আরো দ্রুত গাড়িটা চালাতে বললো ।

নেহা বেশ কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করেছে ওদের কোচিং এর জন্য যে নতুন স্যারকে আনা হয়েছে , সে ব্যক্তিটি দেখতে বেশ স্মার্ট সুন্দর আর কথা বলার ভাবভঙ্গি নিপুনতায় পরিপূর্ণ হলেও , কোথাও যেন একটা রহস্য আছে । মেলামেশা তো দূরের কথা পড়াশোনার বাইরে কোনো কথা বলতেও তিনি পছন্দ করেন না । এমনকি বাকি কলিকদের সাথে তার কোনোরূপ সম্পর্ক গড়ে উঠেনি । ব্যক্তিটি যেন নিজেই নিজের মধ্যে ডুব মেরে দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিনের সমাপ্তি ঘটায় । সবাই তাকে এম স্যার বলেই ডাকে যদিও তার পুরো নাম মিহির কুমার, পদবিটা কারুর হয়ত জানা নেই।

দুঃখের লাভ স্টোরি
দুঃখের লাভ স্টোরি

স্যারের এরূপ চরিত্রের বিষয় গুলি বাকিরা লক্ষ্য না করলেও বা গুরুত্ব না দিলেও , নেহা বেশ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে , তার পরেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে , এই স্যারের অতীত, বর্তমান, চরিত্র , পরিচয় সবটাই আবিষ্কার করে তবে শান্তির নিশ্বাস ফেলবে সে। আর সবটা জানার পর , তার মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথা গুলো , একবার হলেও সে উজাড় করে মিহির কে বলবে …

জানুয়ারী মাস থেকে মিহির নেহার ব্রাঞ্চ এ ক্লাস নেওয়া শুরু করেছিল । সেই থেকেই নেহার মনে মিহির কে নিয়ে অনুভূতির পাহাড় জমতে শুরু করে। তাই ও ভেবেও রেখেছিল সামনের মাসে ফেব্রুয়ারিতে ভ্যালেন্টাইনস ডে এর দিন , সবটা স্বীকার করে , মিহিরকে তার একান্ত হওয়ার প্রস্তাব দেবে । কিন্তু দিন যত এগোতে থাকে নেহার উৎসাহ কমতে থাকে, আর সন্দেহের প্রবণতা বাড়তে থাকে।

মিহির জানুয়ারি মাসে ঠিকঠাক ক্লাস করালেও ফেব্রুয়ারী মাসের শুরু থেকেই তার ক্লাস অফ করা শুরু হয়েছে । সময় মাফিক চলা মানুষটা সময় জ্ঞান যেন হারিয়ে ফেলেছে । দেড়িতে সেন্টারে আসছে নইলে আসছেই না । কল করে জানানোর ও প্রয়োজন বোধ করে না , শুধুমাত্র ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় ,” তার আজ আসা হবে না “।

এদিকে নেহার একটা দিন ও মিহির কে না দেখলে চলে না , তারপর আবার মিহিরের এরূপ ব্যবহারে বিরক্তিবোধ এর সাথে সাথে ভীষণ ভয়ও জন্মেছিল নেহার, ওর মনে একটাই ভয় ” মিহির অন্যকারোর নয় তো !”

তাই ঘটা করে প্রেম পালনের সপ্তাহে , যখন সবাই ব্যস্ত তখন থেকেই নেহা মিহিরের ওপর নজর রাখা শুরু করে । প্রথম দিন এর দৃশ্য দেখে নেহার জ্ঞান হারাবার উপক্রম হয় , ও দেখে ” মিহির সুন্দর একটা শাড়ি আর চকলেট কিনে শপিং মলে প্যাক করিয়ে তাতে নাম লেখাচ্ছে ” প্রিয়তম ” …. নেহার এতদিন ধরে বেড়ে ওঠা অনুভূতি গুলো যেন নিমেষে ছারখার হয়ে যায়। দূর থেকে সবটা দেখে , আর মিহিরকে ফলো না করে , ছুট্টে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে , কোনরকমে বাড়ি পৌঁছে , শাওয়ার এর জলের সাথে চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় ।পরের দিন অফিস পৌঁছে দেখে মিহির আসেনি । মনে মনে একটা ক্লান্তির হাসি নিয়ে বলে ” তুমি অন্য কারোর ” ।

পড়ুনঃ- অলীক প্রেমের গল্প 

দু দিন পর মিহির আবার অফিসে ফেরে , তবে এই মিহির যেন সম্পূর্ণ আলাদা। আগের সেই সাধারণ পোশাক , চেহারার জায়গায় অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে , এই দুই দিনে । বাহ্যিক চাকচিক্য পূর্ণ পোশাক আশাক, আর ভাব ভঙ্গি দেখে, নেহা বেশ অবাক হলো । কথাবার্তায় ও অনেকটা পরিবর্তন এসেছে , এসেই নেহাকে ” হাই ম্যাডাম , সব খবর ভালো তো ” বলে হাসতে হাসতে ক্লাসের দিকে চলে গেলো ।

এই প্রথম বার নেহার সাথে সরাসরি কথা বললো মিহির। তাই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো মনে হলো নেহার। কোনো প্রতি-উত্তর দিলো না। তবে লক্ষ্য করলো মিহিরের হাতের ব্যাগটা টা কে , যেটাতে তাজা লাল গোলাপ ফুলগুলো, যেন নেহার দিকেই উঁকি দিচ্ছিল । নেহা চুপচাপ ডেস্ক বাগিয়ে অফিস থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করলেও বারবার একটা কথা ওর মাথায় আসছিল ” আমি মিহিরের পরিবর্তনের কারণ টা কে একবার হলেও দেখতে চাই ” ।

valobasar boro golpo
bengali sad short love story

এরপর মিহিরকে ফলো করলেও সে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ মিহির কর্পূরের মতো ট্রাফিকের মাঝে কোথায় যেন উবে যায় । নেহা খুঁজবার চেষ্টা করলেও তাকে খুঁজে পায় না । এভাবেই তিন দিন হাত ছাড়া হবার পর নেহা ঠিক করে, সে জীবনপণ করে হলেও ভ্যালেন্টাইনস ডে এর দিন মিহির এর পরিবর্তনের কারণটাকে দেখবেই । কিছুতেই সেদিন মিহিরকে হাতছাড়া হতে দেবে না ।
সেই পরিকল্পনা নিয়েই আজ বান্ধবীর সাহায্যে চুপি চুপি মিহিরের পিছু নিয়েছে।

তবে আজ নেহা অবাক হচ্ছে , মিহির দ্রুত গতিতে চোখের নিমেষে হারিয়ে গেলেও পুনরায় আবার থেমে যাচ্ছে , নেহাদের গাড়ি যেই সামনে আসছে সেই আবার বাইক চালানো শুরু করছে । যেন ইচ্ছে করে আজ মিহির নেহাকে ধরা দিতে চাইছে আর সেই কারণেই এরূপ আচরণ ।

মিহির বাইক নিয়ে শেষমেশ একটা নির্জন এলাকায় পৌঁছালে নেহাও সেখানে উপস্থিত হয় । জনহীন এলাকার মাঝে , চারিদিক শস্যে পরিপূর্ণ আর ফুলের বাগানটা যেন জায়গাটাকে ঢেলে সাজিয়েছে , তার মাঝেই একটা টালির ছাউনী দেওয়া মাটির একটা ছোট্ট কুটির । মিহির বাইক থেকে সব ব্যাগ গুলো নামিয়ে নিয়ে সেই কুটিরের মধ্যে ঢুকে পড়ে।

নেহা নিজের চোয়াল শক্ত করে , পা টিপে টিপে মিহিরের পেছন পেছন গিয়ে, সেই বাড়ির দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে । ভেতরে যে দৃশ্য নেহা দেখতে পায়, সেটা ওর কাছে ছিল অবিশ্বাস্য ।

পড়ুনঃ- দুঃখের প্রেম কাহিনী- দুটি গোলাপ 

মিহির নেহার ক্লাস ইলেভেন এর একটা ছবির ওপর রজনীগন্ধার মালা দিয়ে , মোমবাতি জ্বালিয়ে , সামনে গোলাপ গুচ্ছ টা নামিয়ে , যত্ন করে ফটোটাতে শাড়ি টা দিয়ে মুড়ে দিয়ে, আধো আধো গলায় কান্নার স্বরে বলে ওঠে-
” যখন ক্লাস ইলেভেনে তোমায় ক্লাস শুদ্ধ স্যারদের সামনে চিৎকার করে বলেছিলাম ‘ , আমার জীবনে কেউ নেই নেহা , তুমি তোমার জীবনে আমায় ঠাই দেবে ?”

সেদিন সবার সামনে আমায় প্রত্যাখ্যান করে চলে গিয়েছিলে , একবারও ফিরে তাকাও নি শুধু বলেছিলে ” আজ থেকে জানবি আমি মৃত , নেহা নামের কেউ কোনোদিন এই স্কুলে পড়েই নি ” । অবশ্য তাও আমি হাল ছাড়িনি । কিন্তু তার কিছুদিন পরেই এক সিনিয়র এর হাত ধরে তোমায় হাঁটতে দেখেছিলাম । বিশ্বাস করো সেদিন মুহূর্তের মধ্যে জন্মেছিল তোমার প্রতি পাহাড় সমান ঘৃনা , সেই মুহূর্ত থেকেই আমি মেনে নিয়েছিলাম তুমি মৃত ।

তুমি আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসা নেহা। তাই এই মৃত নেহাকেই ভালোবেসে , আমি জীবনে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছি , আর বাকি জীবন টাও কাটিয়ে দেবো।

ব্যর্থ লাভ স্টোরি
ব্যর্থ লাভ স্টোরি
<

সবটা শুনে নেহা চিৎকার করে দৌড়ে গিয়ে, মিহিরের সামনে রাখা সেই ফটো ছুড়ে ফেলে দেয়। আবারো একবার মিহিরের গালে কষিয়ে থাপ্পড় মারে।

তবে এবার মিহিরের চোখে জল নেই, সে হাসতে হাসতে রিসাইন লেটার টা নেহার হাতে দিয়ে, বলে ” আজ থেকে জানবেন আমি মৃত , মিহির নামের কেউ কোনোদিন এই কোচিং সেন্টারে পড়ায়ই নি” – এই কথা বলে মিহির সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে নেহা ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে ওই কুটিরেই পায়, তবে সামনে মিহির নয় , দাড়িয়ে আছে তার বান্ধবী । কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে ” মিহির তুউউমইই মৃত নও… আমি মৃত , নিজের অজান্তেই মৃত ছিলাম আমি ।”

অনেকগুলো ভ্রান্তি নিয়ে তুমি আমায় মৃত মেনেছ, কিন্তু সেগুলো যে ভুল , তা প্রমাণের সুযোগ টুকুও দিলে না আর সুযোগ বোধহয় পাবেও না, কারণ আমি যে মৃত…!

আলোরানি মিশ্র

গল্পের ক্যানভাসে-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
পড়ুনঃ-
 অসম্পূর্ণ প্রেম 

অভিমানী ভালবাসার গল্প- সমাপ্তি 

কষ্টের ভালোবাসার গল্প-
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

দুঃখের লাভ স্টোরি। ব্যর্থ লাভ স্টোরি। 1 new bengali sad short love story.

Spread the love

Leave a Reply