আজ যে দুটি গল্প নিয়ে আসা হয়েছে সেই দুটি হল দুঃখের ছোট গল্প। প্রেমের যন্ত্রণা, ভেঙ্গে গিয়েও কঠিন থাকার প্রয়াস রয়েছে আজকের এই ছোট্ট প্রেমের গল্প দুটিতে।

দুঃখের ছোট গল্পঃ- ০১

অনেকক্ষন হাঁটছিলাম রাস্তার বাঁদিক ঘেঁষে, তবে বুঝতে পারিনি রাতের গভীরতা, বৃষ্টি তো পড়েই যাচ্ছে সন্ধ্যে থেকে। এসব ভাবতে ভাবতেই দরাম করে ফুটপাতে পড়ে গেলাম। চোখ খুলে দেখি, শরীরে কোনো সাড়া পাচ্ছিনা, আসলে আছি বিছানায়, আমার ঘরে। “তুই কি মরবি ওর জন্য, পাগল হলি নাকি” পুলক বলে উঠল। আমি বুঝলাম, শরীরে এত তাপ অর্থাৎ এত তাপমাত্রা যে ডাক্তার দেখেও ভয় পাচ্ছে।

আমি বললাম, “কেন আনলি বল, আমি তৃষার বৌভাতে যাবো না তো”। সঞ্জয় একটু নীচু স্বরে আমাকে বললো “তৃষা আর এ শহরে নেই, ওকে ফোন করে জানতে পারলাম, ও এখন থেকে রাজস্থানে থাকবে, আর তুই যেন ওকে ফোন করে বিরক্ত না করিস”, । চোখটা আবছা হচ্ছে ক্রমশ। আমি ভালোবেসেছিলাম ওকে, তৃষাকে। ক্লাস নাইনে পড়া বিনুনীতে লাল ফিতে বাঁধা মেয়েটা টিফিন বক্সে আলুভাজা আর লুচি নিয়ে অপেক্ষা করতো, তবে আমি দেরি করে টিফিন শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে যেতাম, তবুও ও আলুভাজা আর দুটো লুচি আগলে রাখতো, আমি বলতাম, আজকে খেয়ে নিতে পারতে তো তৃষা, এতক্ষণ বসে আমার জন্য অপেক্ষা করে কি লাভ?

তৃষা বলতো, ধুর কি যে বলো, আমি তো অপেক্ষা করবোই, জানি তুমি আসবে। বলে কত হাসত ও। একদিন অঙ্কের স্যার আশীষবাবু তৃষাকে মিডল ট্রাম ব্রেক করতে দিলে ও পারে না, তাই খান দশেক বেত মারে ওরই হাতে, সে বারে আশীষ স্যারের বাড়ির সবকটা কাঁচের জানালা গুঁড়ো করে দিয়েছিলাম একেবারে। আজ মনটা টুকরো হয়েছে। সঞ্জয় ওষুধ খেতে বললেও আমি খাই না। কিছুক্ষন পরে দেখলাম, বারান্দায় খুব বাদানুবাদ চলছে।

দুঃখের ছোট গল্প
দুঃখের ছোট গল্প

যতটা শোনা গেল, পুলক যেন খুব রেগে একজনের সাথে কথা বলছে। আমি কষ্ট করে বিছানা থেকে উঠলাম, তারপর বুঝলাম সবটা। পুলক তৃষাকে ফোন করে আমার ব্যাপারটা জানায় কিন্তু তৃষা এতে খুব রেগে যায় বলে, “সৌগতর যা খুশি হোক, আমি আর কিছু শুনবো না, আমি এখন বিবাহিত, আর এর পরে বিরক্ত করলে আমি আইনি ব্যবস্থা নেবো, এই আমি সতর্ক করে দিলুম” বলে ফোনটা কেটে দেয়।

খুব খারাপ লাগে পুলকের। আমি বললাম, “ভালোবাসা তো এমনি হয় সেটা তোরা কেন জোর করে ভিক্ষা চাইছিস আমার জন্য”। বলে আমার শরীরে আবার যন্ত্রনা শুরু হয়। সেদিন রাতে ঘুমের মধ্যে কিনা জানিনা অনেক কিছু মনে এলো, দ্বাদশ শ্রেণীর সেই স্কুলের রুমটা কেমন যেন ভেসে ওঠে। একই বেঞ্চে দুটি হাত একটা তৃষা আর একটা আমার, ওই বেঞ্চে যে কতবার হার্ট সাইন দিয়ে দুজনের নাম লিখেছি, তা অগণিতই ভাবে মনে আছে।

একদিন, তৃষার ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটত, ওকে বাম কাঁধটা দিয়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে পাশে ফেলে দিই, আর গাড়িটা আমার পায়ের বুড়ো আঙুলের ওপর দিয়ে চলে যায়। প্লাস্টার করেও তা জোড়া লাগেনি। কতক্ষন জানিনা এসব মনে আসছিল, তবে শরীর নাড়াতে একদমই পারছিলাম না। চোখ খুলতেও যেন নারকীয় কষ্ট অনুভব হচ্ছিল। হঠাৎ একটা চিৎকার করে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। চোখ খুলি, নার্সিং হোমের বেডে। সেই নারকীয় কষ্ট কিছুটা কম মনে হচ্ছে।

পুলক বলল, “তৃষা আসছে, চিন্তা করিস না।” আমি কথাটা শুনে প্রচন্ড রেগে গেলাম। গোটা শরীর জ্বলে গেছিল। মনে হচ্ছিল, এক ভীষণ লোভী মানুষ ক্ষুদার্ত ভাবে খাদ্যের জন্য অপেক্ষায়, যা আমার ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি আলতো ভাবে চোখ খুলে দেখলাম, আমার রুমের দরজা খুলে, তৃষা একটু রাগান্বিত চেহারায় বেডে শুয়ে থাকা আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বললো, “তুমি এসব অভিনয় করে আমাকে সিমপ্যাথি দেখিয়ে ফেরাতে পারো না, তোমার প্রেম বলে আমার কাছে কিছুই অবশিষ্ট নেই, আর যেটা আছে, সেটা হলো ঘৃনা।”

প্রেমের যন্ত্রণার গল্প
প্রেমের যন্ত্রণার গল্প

“আমি তোমায় ত্যাগ করেছিলাম, তোমার ফুটো পকেটের জন্য, যা এখনও তুমি খুব একটা বদলাতে পারনি। আমাকে আর বিরক্ত করবে না। আর এভাবেই বিছানায় পড়ে থাকো। বেকারের কাজই এটাই”। আমার কিছু মনে হয় না, তবে দূর থেকে মনে হচ্ছে পুলক সজোরে কেঁদে ফেলছে, যার শব্দটা কানে এসে লাগছে। পুলক এসে আমার শুভ্র বেডের ধারে এসে বসল আর বলল,

“সৌগত ওতো জানেই না, যে তোর মতো এমন ভালোবাসতে ওকে কেউ পারবে না। তুই ওর জন্য সব কিছু করলি, ওর স্বামীর চাকরীটা তুই করে দিলি নিজে ত্যাগ করে, যাতে তৃষার জীবনটা যাতে সুন্দর হয়, আর সেই জন্য বাড়ি থেকে বিতাড়িত হলি, আর আজকে ও। আমি ওকে থামালাম, কারন হাঁপানিটা কেমন যেন বেড়ে গেছে। এক লহমায় মনে হল, আজকার সময়ে প্রকৃত ভালোবাসা বলে কিছু হয় না, মানুষ মুহুর্তে তার স্বার্থের লোভে অনুভূতিকে গলা টিপে মেরে ফেলে। আর মৃত প্রেমের লাশটা অন্ধকারের তমসায় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে একটু একটু করে শেষ হয়। তৃষা ভালো থাক, খুব ভালো থাক। হৃদপিন্ডটা খুব জোরে স্পন্দন জানায়, কাশতে গিয়ে পড়ে যাই বেড থেকে আবছাভাবে শুনতে পাই, কেউ বললো, “সময় নেই রোগীকে এক্ষুনি ও.টি তে নিয়ে যেতে হবে”।

সৌগত প্রামাণিক

উপরের গল্পটির প্লট রচনায়-
পড়ুনঃ- 
আবেগি প্রেমের কবিতা 

দুঃখের প্রেমের গল্প- দুটি গোলাপ 

দুঃখের ছোট গল্পঃ- ০২

রিয়ার সঙ্গে রাজীবের দেখা হয় একটি হোমে। এই হোমটি হল অন্ধ বাচ্চাদের হোম। রাজীবের কলেজ থেকে হোমের সেই বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর এই হোমেরই একজন সদস্যা ছিল ২৫ বছর বয়স্কা রিয়া। রিয়া খুবই সাধারণ একজন মেয়ে। তার রূপ সূর্যের প্রভার মত সুন্দর ছিল।

তার রূপ গড়তে গিয়ে ঈশ্বর তাকে দৃষ্টি দিতেই ভুলে গিয়েছেন। তাই রিয়া জন্মান্ধ। চোখ আছে ঠিকই কিন্তু তা কোন কাজের নয়।

এরপর রাজীব প্রায়ই সেই হোমে যেত। ধীরে ধীরে সে রিয়ার বিশ্বস্ততা অর্জন করে। রিয়াকে সে এই সুন্দর জগতের বিবরণ দিত আর রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেওয়া রাজীবের বিশ্লেষণ আগ্রহ ভরে শুনত আর অবাক হত এটি ভেবে যে, কত সুন্দর ভাবে রাজীব তাকে সব কিছু বোঝাচ্ছে যে সে নিজেও তার মনের চোখে যেন সব কিছু দেখছে।

তবে তার আপসোস হল, সে পৃথিবীটাকে নিজ চক্ষে দেখতে পারছে না। সে একদিন রাজীব কে জানায়- “ইসস আমিও যদি এই পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতাম, কতই না ভাল লাগত আমার।“

একটি দুঃখের ছোট গল্প
একটি দুঃখের ছোট গল্প
<

এরপর ধীরে ধীরে তারা আরও কাছাকাছি আসে, রিয়া রাজীব কে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, সে যদি ভবিষ্যতে বিয়ে করে রাজীব কেই বিয়ে করবে। কিন্তু সে যে অন্ধ! রিয়া আবার বলে, কিন্তু তাতে কি! রাজীব তো আছেই। 

এভাবে কেটে গেল কয়েকটা বছর। কেউ একজন রিয়াকে চক্ষু দান করেছে। প্রথম পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখে রিয়া আত্মহারা। সে রাজীবের খোঁজ করে, রাজীব তার সামনে এলে সে বলে- “ও তুমিই তাহলে রাজীব!”

-হ্যাঁ, আমিই রাজীব।

-একটা কথা বলি, প্লিজ কিছু মনে কর না।

-হ্যাঁ বল।

-দেখো তোমাকে দেওয়া আমার প্রতিশ্রুতি আমাকে ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে। কারণ একজন অন্ধ ছেলেকে বিয়ে করে সারাজীবন বোঝা হিসেবে তাকে বয়ে নিয়ে বেড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

রাজীব রিয়ার কথা শুনে মিটিমিটি হেসে উত্তর দেয়- “তা অবশ্য ঠিক, একজন অন্ধ কে নিয়ে তুমি কিভাবে জীবন করবে। আমি তাহলে চলি এখন, তবে যাওয়ার আগে একটা কথা, আমার ওই চোখ দুটির যত্ন নিও।“

সত্যিই তো একজন অক্ষম মেয়ের দায়িত্ব একজন ছেলে নিতে রাজী হলেও একজন অক্ষম ছেলের দায়িত্ব নিতে একজন মেয়ে কখনোই রাজী হবে না।   

গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও  বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
সত্যি প্রেমের গল্প- ভালবাসার সূক্ষ্ম অনুভূতি 

ভালবাসার ছোট গল্প- এক পশলা বৃষ্টি 
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

দুঃখের ছোট গল্প। প্রেমের যন্ত্রণার গল্প।sad love story

Spread the love

Leave a Reply