Bangla Goyenda Golpo আজকের গোয়েন্দা গল্প টিতে পাঠক খুঁজে পাবেন, ধর্মীয় আবেগের বশবর্তী হয়ে মানুষ কিভাবে প্রিয়জনকেও হারাতে রাজী হয়ে উঠে, সেই সম্পর্কিত একটি রহস্যের সমাধান।
Bangla Goyenda Golpo:- ‘তান্ত্রিকের প্যাঁচ’
সবে সকাল হয়েছে। সাউন্ড সিস্টেমে বাজতে থাকা শ্যামা সংগীতের সুরকে সমানে পাল্লা দিয়ে বেজে চলেছে মোবাইল ফোনটাও।
-হ্যালো,
ফোনের ওপার একটি ভীষণ ব্যস্ত এবং আতঙ্ক ভরা কণ্ঠস্বর শোনা গেল- “ নমস্কার আমার নাম হরিলাল ত্রিবেদী , শুভ সকাল। সকাল সকাল ফোন করার জন্য দুঃখিত। আচ্ছা Mr. Ash কে পাওয়া যাবে!”
ফোনের ওপারে থাকা ভদ্র লোক এমন ভাবে একটানে কথা গুলি বললেন যে, কথা শেষ হওয়ার পর তার হাঁফানোর শব্দ রীতিমত তার ফোনের মাইক্রোফোন ভেদ করে Mr. Ash এর ফোনের স্পিকারে স্পষ্ট শ্রাব্যমান।
-হুম বলুন আমিই Mr. Ash
-আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। এক মহা বিপদের মধ্য দিয়ে আমাদের দিন যাচ্ছে।
– ‘আমাদের’ অর্থাৎ বহুবচন ঠিক আছে আজ বিকেলের দিকে আমার বাড়িতে চলে আসুন। অ্যাড্রেস ৭/৮ সন্ন্যাসীকাটা, শিলিগুড়ি।
-অনেক অনেক ধন্যবাদ।
খট করে লাইনটা কেটে গেল। Mr. Ash ভাল মতই বুঝে গেলেন যে, অনেক দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ভদ্র লোকের। চায়ের কাঁপটা হাতে নিয়ে Mr. Ash ফোন করলেন তার সহকর্মী, বিশ্বস্ত বান্ধবী সৃজা কে। তাকে জানিয়ে দিলেন কখন আসতে হবে।
এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। এদিকে সৃজা ততক্ষণে চলে এসেছে। Mr. Ash আর সৃজা দুইজনে দাবা খেলতে ব্যস্ত।
ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন বিকেল চারটা হবে। কলিং বেল টা বেজে উঠতেই Mr. Ash এক লাফে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন।
দরজার ওপারে যে ব্যক্তি দাড়িয়ে ছিল, তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। গলায় সেকেলে আমলের একটি সোনার চেইন। শরীরে থাকা পোশাক বেশ ঢিলে ঢালা। বয়স আনুমানিক ৩৫ হবে।
-আচ্ছা, ভাই Mr. Ash বাড়িতে আছেন?
-হুম, আসুন আসুন ভিতরে আসুন। আমিই Mr. Ash
এই ‘হুম’ শব্দটা Mr. Ash এর খুবই প্রিয়। প্রায় প্রতিটা কথাতেই তিনি ‘হুম’ বলবেনই।
-নমস্কার, আমিই সকাল সকাল ফোন করে আপনাকে বিরক্ত করেছিলাম। আমিই হরিলাল ত্রিবেদী।
-বসুন, বসুন।
-একটু জল হবে!
পড়ুনঃ- ফানি গোয়েন্দা গল্প- বিস্কুট রহস্য
সৃজা জলের বোতলটা লোকটির দিকে এগিয়ে দিল। লোকটা ধন্যবাদ জানিয়ে জলের বোতলটা পুরো সপাট করে বলতে শুরু করলেন- “আসলে আমি ভাবতেই পারিনি যে, আপনিই Mr. Ash আমি ভেবেছিলাম কোন বয়স্ক ব্যক্তি হবে হয়ত। কিন্তু আপনি তো একদম যুবক। ২৫ বছরেরও নিচে হয়ত আপনার বয়স। তাই না! প্লিজ কিছু মনে করবেন না, আমি আপনাকে চিনতে পারি নি।
Mr. Ash মৃদু হেসে বললেন- গলার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারেন নি বোধ হয়!
লোকটা বলল- কিছু মনে করবেন না, আসলে আমি বড্ড বেশিই কথা বলি।
-আসুন পরিচিত হওয়া যাক। আমাকে তো ইতিমধ্যে চিনেই ফেলেছেন। আর ইনি হলেন সৃজা, আমার সহায়ক বা বলতে পারেন আমার প্রতিটি অভিযানে সেইই হল আমার সঙ্গী।
সৃজা ও লোকটার নমস্কার বিনিময় শেষ হওয়ার পর, Mr. Ash বললেন- আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি বেশ দুশ্চিন্তার শিকার। অনেক তাড়াহুড়ো করছেন আজকাল। আপনি হয়ত একটু আগে গাড়ি থেকে নামার সময় পরেও গিয়েছিলেন।
লোকটা বেশ অবাক হওয়ার সুরে বলল- আপনি কিভাবে জানলেন আমি গাড়ি থেকে পরে গেছি!
-আপনার হাতের তালুর ছড়ে যাওয়া অংশ টিই তা প্রমাণ করে। এরকম দাগ কোন চলন্ত কিছু থেকে হঠাৎ করে পরে গেলেই হয়।
-আসলে আমি ভেবেছিলাম গাড়ি থেমে গেছে হয়ত তাই নেমে পরেছিলাম, এরপর ধপ করে রাস্তায় পরে গেলাম।
-আচ্ছা আপনার এখানে আসার কারণটি এবার খোলসা করুন। আমি ও আমার সহযোগী অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছি। এক মিনিট, শ্রী উপর থেকে আমার পার্কের বয়াম টা নিয়ে আসবি প্লিজ।
সৃজা কিছু না বলে, দ্রুত পা বাড়াল পার্কের বয়াম আনতে। পার্ক চকোলেট খাওয়া Mr. Ash এর স্বভাব। তার পকেটে টাকা থাকুক চাই না থাকুক, অন্তত পার্ক থাকবেই থাকবে। সৃজা চকোলেটের বয়াম টা এনে Mr. Ash এর হাতে দিল, Mr. Ash একটা পার্ক নিয়ে বললেন- হুম, শুরু করুন।
লোকটা বলতে শুরু করল-
আমি থাকি ৭/৫ কালিপদ লেন, সুভাষ পল্লীতে। আমার বাড়িতে আছে, আমার মা, দাদা বৌদি, আমার সহধর্মিণী আর আমাদের সবার প্রিয় ১৫ বছর বয়সী আমার niece মধুমিতা। সমস্যাটা হল আমার এই ভাতিজী মধুমিতা কে নিয়েই।
আমার মা ধর্মের উপর একটু বেশিই অন্ধ-বিশ্বাসী। কয়েকদিন আগে একজন তান্ত্রিককে মা বাড়িতে নিয়ে আসেন, আর ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই। সেই তান্ত্রিক নানান কিছু কথা মা কে বলতে থাকে। ‘আপনার বাড়িতে অমুখ ভুতের বাস, প্রেতাত্মা নাকি ভর করেছে আমার স্ত্রীর উপর, তাই নাকি আমাদের কোন সন্তান নেই। ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছু।
আমার ভাতিজী মধুমিতা এই সব শুনে ভীষণ চটে যায়। সে সেই তান্ত্রিক কে ভণ্ড বলে সম্বোধন করে আর সন্তান না হওয়ার বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কারণ গুলি ব্যাখা করতে থাকে।
এই শুনে সেই তান্ত্রিক রেগে যায়, আর আমার ভাতিজী কে so called অভিশাপ দেয় যে, কয়েকদিনের মধ্যে এই মেয়েকে যদি এই বাড়ি থেকে না সরানো যায়, তাহলে বাড়িতে ঘোর অমঙ্গল আসবে। একে একে শেষ হয়ে যাবে সবাই।‘ এই বলে তান্ত্রিক গজগজ করে চলে যায়।
আর আজব ব্যাপার হল, পরশু দিন রাত থেকে আমার ভাতিজী মধু কে পাওয়া যাচ্ছে না। রাত ২ টা নাগাদ সে বাথরুমে যায়, এরপর আর ফেরেনি সে। আমার বৌদি কেঁদে কেঁদে পাগলের মত হয়ে গেছে, দাদার অবস্থাও ভালো নেই। আমার সহধর্মিণী বারংবার মূর্ছা যাচ্ছেন। এই অবস্থায় একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউই নিজেকে দৃঢ রাখতে পারেনি। প্লিজ আপনি কিছু করুন। যেভাবেই হোক আমার ভাতিজী কে খুঁজে দিন প্লিজ।“
-পুলিশে খবর দিয়েছেন!
-আজ্ঞে না, আপানার নাম আমি অনেক জায়গায় শুনেছি। অনেক জটিল সমস্যার সমাধান নাকি হয়েছে আপনার হাতে, তাই আমিও ছুটে এসেছি এখানে।
-ঠিক আছে, আমরা কাল সকালে আপানার বাড়িতে যাব, যেখান থেকে মধুমিতা উধাও হয়েছিল সেই জায়গাটা একবার দেখতে চাই।
-ঠিক আছে, আমি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করব। জানেন তো, কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছে আমার মা- ই মধুকে গুম করে রেখেছে কোথাও। পরিবারকে বাঁচাতেই হয়ত সে তান্ত্রিকের কথা মত আমাদের মধুকে…
হরিলাল ত্রিবেদীর কথা আটকে গেল। তিনি বললেন- “আসি তাহলে, আপনি সহযোগিতা করবেন জেনে আনন্দিত হলাম, আমার এখানে আসা সার্থক হল।“
পড়ুনঃ- গোয়েন্দা গল্প- অদ্ভুতুড়ে বিজনেস
লোকটি চলে যাওয়ার পর Mr. Ash গভীর চিন্তায় ডুব মারলেন। তার চিন্তা জাল ছিন্ন হল সৃজার কথাতে-
-কেস টা খুবই সাংঘাতিক বুঝলি তো! কেমন যেন ধর্মীয় ব্যাপার চলে এসেছে এটাতে। কেস টা সাধারণ মনে হলেও, সাধারণ নয়।
Mr. Ash সৃজার কথার কোন উত্তর দিলেন না, আপন মনে পার্ক খেয়েই চলেছেন।
-শ্রী, তুই কাল সকাল সকাল চলে আসবি বুঝলি! বাড়িতে কোন একটা বাহানা দেখিয়ে দিবি।
পরের দিন সৃজা যখন Mr. Ash এর বাড়িতে এল, সে দেখল Mr. Ash ইতিমধ্যে তৈরি। দুইজনে বেড়িয়ে পরল, লোকটার দেওয়া ঠিকানাতে।
পৌছাতে ১৫ মিনিটও লাগে নি। ত্রিবেদী বাবু বাইরেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তারা যেতেই তিনি বললেন- “আসুন আসুন, ভিতরে। এদিকে এদিকে। বসুন, চা খাবেন নাকি কফি।“
সৃজা বলল- ওসব পরে হবে, আগে ঘটনাস্থল টি দেখা যাক।
-আচ্ছা আপনি কিভাবে এতটা নিশ্চিত যে মধুমিতা বাথরুম থেকেই উধাও হয়েছে।
– cctv ফুটেজ দেখে।
এই বলে লোকটি তার মোবাইলটি Mr. Ash এর দিকে বাড়িয়ে দিল। যেন সে এরকম প্রশ্নের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, একটি মেয়ে বারান্দা হয়ে বাথরুমের দিকে যাচ্ছে। সে বাথরুমে গেল, কিন্তু অনেক ক্ষণ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও সে বেড়িয়ে আসছে না।
Mr. Ash এর চোখ বাথরুমের প্রতিটি কোনায় কি যেন খুঁজে চলেছে। এদিকে সৃজা ত্রিবেদী বাবুর সঙ্গে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করছে। কাউকে না জানিয়ে, তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এটাই হল ওদের টেকনিক। বলাও তো যায় না, আসল অপরাধী কে!
Mr. Ash এর নজর দেওয়ালে কিছু একটা বস্তুর উপর আটকে গেল। পকেট থেকে রুমাল বের করে তিনি দেওয়ালে ঘষতে লাগলেন। এরপর তিনি বললেন- “এখানে সব দেখা শেষ। চলুন এবার বসার ঘরে যাওয়া যাক। আচ্ছা আপনার মায়ের সঙ্গে একবার দেখা করা যাবে!”
-তিনি বাড়িতে নেই। সেই তান্ত্রিকের কাছে গেছেন।
-স্ট্রেঞ্জ! হুম, আচ্ছা আজ তাহলে আসি। আপনি সেই তান্ত্রিকের ঠিকানাটা আমাকে পিং করে দিবেন এখুনি।
-চা, কফি কিছু খাবেন না!
-আজ থাক অন্যদিন খাব ক্ষণ হুম।
সৃজা Mr. Ash এর দিকে তাকিয়ে দেখল, তার চোখ জ্বলজ্বল করছে অর্থাৎ সে রহস্যের কিছু কিনারা পেয়েছে। সে কিছু বলতে যাবে অমনি Mr. Ash এর মোবাইলে message ঢোকার শব্দ এল।
-কিছু মাথায় ঢুকল শ্রী?
-আমি তো কিছুই দেখলাম না, টয়লেটে। শুধু ওই চেইন দিয়ে বাঁধা মগটা ছাড়া।
Mr. Ash হাসতে লাগলেন- “বাঃ খুব ভালো জিনিস চোখে পরেছে তোর।“
-খুব অবাক লাগছিল জানিস। এতদিন তো রেলের সেই কুচুটে টয়লেটে এরকম চেইন বাঁধা মগ দেখতাম। কিন্তু তা বলে বাড়ির টয়লেটে…।
আগে বাড়ি চল, বাড়ি গিয়ে বাবার জন্য রুদ্রাক্ষ নিতে হবে।…
পড়ুনঃ- ভুতের গল্প- মাথা কাটা লাশ
-গাড়ি ঘোরাও, ধুনিয়া শ্মশান চলো। কুন্ডি বাবার ঠেকে আজ হানা দেব।
ধুনিয়া শ্মশানে এসে যখন ওরা পৌঁছাল তখন সূর্য দেব মাথার উপড়ে ৭৫ ডিগ্রি কোণে হেলে পরেছে।
এরপর তারা সোজা চলে গেল সেই কুন্ডি বাবার আস্থানায়। সেখানে তারা একজন বয়স্ক মহিলাকে একজন তান্ত্রিকের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখল। তারমানে ইনিই হলেন ত্রিবেদী বাবুর মা। কিন্তু এই জনমানব শূন্য শ্মশানে তিনি একাই কুন্ডি বাবার কাছে কি করেছেন!
সৃজা বলল- বাড়িতে এত কিছু হয়ে চলছে অথচ, এই মহিলার তাতে কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমার মনে হচ্ছে মধুমিতার গায়েব হওয়ার পিছনে এই মহিলাই রয়েছেন।
Mr. Ash এর সংক্ষিপ্ত উত্তর- হুম হতে পারে।
– শোন শ্রী, এই নে, রুদ্রাক্ষ। এটা বাবার পায়ে দিয়ে প্রণাম করবি। সাবধানে এই সাইড দিয়ে দিবি। দেখবি যেখানে বাবার পায়ে মালা গুলো পরিধান করে আছেন, সেখানে এই রুদ্রাক্ষ ছুঁয়ে প্রণাম করবি, তোর মনের ইচ্ছে পূরণ হবে।
-আচ্ছা আচ্ছা,
এরপর সৃজা কুন্ডি বাবার কাছে গিয়ে কুন্ডি বাবার পা ছুয়ে প্রণাম করে বলল- “বাবা আশীর্বাদ করুন, আমি যেন দীর্ঘ জীবী হই।“
প্রায় পাঁচ মিনিট পর সৃজা ফিরে এল। আর একে একে বাবার কাছে থাকা বিভিন্ন জিনিসের বর্ণনা দিতে লাগল।
-গুড, এই জায়গার কাজ শেষ এবার শুধুই অপেক্ষা করার পালা।
এরপর দুইজনে সেখান থেকে শিলিগুড়িতে একটি হোটেলে বসে দুপুরের খাবার সেরে ফেলে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কি যেন একমনে দেখতে থাকে।
-বলছি কেস টা বিষয়ে কি ভাবলি!
-ওইসব পরে আলোচনা হবে। চল বাঘা যতীন পার্কে গিয়ে সময় কাটাই।
সারাটা রাস্তা জুরে Mr. Ash মোবাইলে ভিডিও দেখেই যাচ্ছে, আর মৃদু মৃদু হাসছে। সৃজার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আজ হঠাৎ করে পার্কে যাবার কথা বলছে কেন!
পার্কের একটি বেঞ্চে গিয়ে তারা বসল। Mr. Ash বললেন- শ্রী আমি এখানেই আছি, তুই যদি বাচ্চাদের সাথে খেলতে চাস, খেলতে পারিস আমি সময় মত তোকে ডেকে নিব।
সৃজা বলল- তুই তো মোবাইলে বেশি সময় কাঁটাস না, কি জানি আজ কি ভূতে ধরল তোকে শ্মশান থেকে আসার পর। তুই থাক তোর মোবাইল নিয়ে।
-হুম।
এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে। Mr. Ash এখনও মোবাইলে ভিডিও দেখতেই ব্যস্ত। হঠাৎ করে তার কি হল কে জানে। চেঁচিয়ে সৃজাকে ডেকে বলল- “শ্রী কাম হেয়ার। মিস্ট্রি সলভ।“
সৃজা কাছে আসতে আসতে ততক্ষণে Mr. Ash কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছে-
-আপনি বাইরেই থাকবেন, শুধু আমার সংকেতের অপেক্ষা করবেন।
এরপর ফোনটা কেটে দিয়ে আবার কাকে যেন ফোন করতে লাগল-
-হ্যালো ত্রিবেদী বাবু, আপনাকে আমি একটি ঠিকানা পাঁঠিয়ে দিব ম্যাসেজে। আপনি দুই ঘণ্টা পর চলে আসবেন।
-চল শ্রী আবার সেই কুন্ডি বাবার আস্তানায়।
-এ এ রাতে, শ্মশানে। মাথা খারাপ হয়েছে তোর!
-নো মাই ডিয়ার। মাই মাথা ইস ওকে।
এরপর তারা যখন কুন্ডি বাবার আস্তানায় পৌঁছাল তখন সময় আনুমানিক রাত ৭ টা। আস্তানার চারিদিকে মশাল জ্বলছে।
-আমার কিন্তু ভয় করছে রে, শ্মশানে আসলাম। আর আমি আবার মেয়ে মানুষ। বাড়িতে জানলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।
পড়ুনঃ- দুই বোনের উধাও রহস্য
-হা হা হা, নো চাপ আমার সাথে থাকবি।
এইরকম মজা Mr. Ash তখনই করে যখন সে অনেক আনন্দে থাকে। সৃজাও বুঝে গিয়েছিল যে, কেস টার সমাধান Ash করে ফেলেছে।
সে সৃজা কে সাথে নিয়ে সোজা কুন্ডি বাবার রুমে হাজির। কুন্ডি বাবা কিছু বলতে যাবে, তার আগেই Mr. Ash বলল- “নমস্কার বাবা।“
-তোমরা কারা বৎস, এত রাতে আমার আস্তানায়!
-আমরা এলুম আপনার কুন্ডি খুলতে। মধুমিতা কে নিয়ে আসুন।
মধুমিতার নাম শুনতেই কুন্ডি বাবা তেলে বেগুনে জ্বেলে উঠলেন- তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন- “কে মধুমিতা বৎস।“
-ধুর ফালতু ফালতু বকবেন না তো! ওই মধুমিতা যাকে আপনি বন্ধী করে রেখেছেন।
এবার সেই তান্ত্রিক প্রচণ্ড রেগে গেলেন- “ওরে মূর্খ বালক, তুই জানিস তুই কাকে কি বলছিস।“ এই বলে সেই তান্ত্রিক হাত উপড়ে তুলে কি যেন গুনগুন করতে লাগলেন।
বাইরে কিসের যেন একটা শব্দ শোনা গেল। ঘরের ছাউনি টা কেমন জানি নড়ে উঠল। সৃজা ভয়ে Mr. Ash এর পিছনে চোখ বুঝে রয়েছে।
Mr. Ash বললেন- আরে Mr. Bose এলেন নাকি, আপনার ব্যাটেলিয়ান কে বাইরে রেখে আপনি ভিতরে আসুন।
একটা মোটা চেহারার লোক ঘরের ভিতরে ঢুকল।
-এরেস্ট করুন এই ভন্ড তান্ত্রিক কে।
-কি কারণ দেখিয়ে অ্যারেস্ট করব!
-ওমা, আপনি দেখছি বাচ্চাদের মত কথা বলছেন বোস বাবু। মধুমিতাকে উধাও করার অপরাধে।
-কিন্তু প্রমাণ!
Mr. Ash মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে বাবার পায়ের মালা টা থেকে একটা রুদ্রাক্ষ নিয়ে নিলেন।
-বলুন তো এটা কি!
-এটা তো রুদ্রাক্ষ!
-হাতে নিন, ভাল ভাবে দেখে বলুন এটা কি!
-ও মাই গড এটা তো একটা হিডেন ক্যামেরা।
-হুম ঠিক ধরেছেন। আর এটাতে লাগানো রয়েছে ডবল গ্লু। এটাকে যেখানেই রাখুন না কেন, আটকে যাবে। আর এই ক্যামেরাতেই রেকর্ড হয়েছে, এই ভণ্ড সাধুর কাজ কর্ম। এমনকি কথা বার্তাও।
ইতিমধ্যে ত্রিবেদী বাবু ও মধুমিতার বাবা মা ও এসে হাজির। এতক্ষণে সৃজার ভয় কেটেছে।
Mr. Ash আবার বলতে শুরু করলেন- “ত্রিবেদী বাবু, আপনাদের টয়লেট থেকেই প্রথম সুত্র টা পেয়েছিলাম। আপনার টয়লেটের দেওয়ালে আমি একটি পাউডার জাতীয় কিছু দেখি। রুমালে সেটি নিয়ে নিই। আমার সন্দেহ আরও প্রবল হল আপনাদের টয়লেটের টিস্যু পেপার হাতে নেওয়ার পর। টিস্যু পেপার থেকে এরকম আলতো গন্ধ পাই, আর এই গন্ধের সাথে দেওয়ালের সেই পাউডার জাতীয় বস্তুটির গন্ধের মিল রয়েছে।
শ্রী তুই যখন বাচ্চা দের সাথে খেলতি গেলি। সেই ফাকে আমি আনন্দলোকের ল্যাবে যাই। টিস্যু পেপার আর রুমালের পাউডারটির পরীক্ষা করাতে। অবশেষে আমার সন্দেহ ঠিক হল। এটিতে যে পাউডার রয়েছে, সেটি সাধারণ মাপের কোন বস্তু নয়, এটি হল একপ্রকার ড্রাগ। টিস্যু পেপারেও ড্রাগ মেশানো হয়েছিল। অত্যন্ত সক্রিয় এই ড্রাগটি কয়েক সেকেন্ডে মানুষকে অজ্ঞান করে দিতে সক্ষম। এই ড্রাগটির অতিরিক্ত প্রয়োগে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে।“
পড়ুনঃ- শেষ রাতের ট্রেন
কথা শেষ হতে না হতেই মধুমিতার মা কান্না জুরে দিলেন- “আ আ আমার মধু, সে ঠিক আ আ আ আছে তো বাবা।“
-চিন্তা করবেন না কাকিমা, আপনার মধু সুরক্ষিত আছে। বোস বাবু, আমার সেই রুদ্রাক্ষের ক্যামেরাতে রেকর্ড হওয়া এই পার্ট টা দেখুন। এই জায়গায় রয়েছে মধু। তাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব আপনার।
ভিডিও ফুটেজ এ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, মাটির নীচে একটি গুপ্ত কক্ষে মধুকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। এই কুন্ডি বাবার কুন্ডি কিছুতেই খুলত না, যদি না সে মধুকে দেখতে যেত। ফুটেজে শোনা যাচ্ছে- “বলেছিলাম আমার সঙ্গে পাঙ্গা নিবি না, এবার হল তো! হা হা হা”
এরপর মধুকে উদ্ধার করা হল, তাকে হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল।
-এই যে, কুন্ডি বাবা, আপনি চললেন কোথায়! পালাবার চেষ্টা করবেন না, সোজা পায়ে শুট করব।
সৃজা Mr. Ash এর কানে কানে বলল- “তোর হাতে বন্দুক কই! বন্দুকের বদলে পার্ক ধরে আছিস যে”
Mr. Ash হেসে সৃজার কানে কানে বলল- এই আলো আধারিতে থোরেই না দেখা যাচ্ছে, আমার হাতে বন্দুকের বদলে পার্ক রয়েছে। হি হি হি।
এরপর ত্রিবেদী বাবু Mr. Ash এর কাছে এসে বললেন- তাহলে বাথরুম থেকে মধু কে নিয়ে আসা হল, আর ক্যামেরা তে তা রেকর্ড হল না কেন!
-হুম ভালো প্রশ্ন। আপনার টয়লেটের পিছনের দেওয়ালে গ্রিল হীন উপরের ছোট জানালা টা লক্ষ্য করেছেন! সেটি দিয়ে আরামে একজন মানুষ ইন আউট হতে পারবে। ও হ্যাঁ আরেকটি কথা, আপনার সন্দেহ ঠিক, আপনার মা এই কাজে যুক্ত। তিনিই টিস্যু পেপারে ড্রাগ মিশিয়ে ছিলেন। তার নিজের অজান্তেই কিছুটা ড্রাগ দেওয়ালের লেগে যায়।
– কিন্তু মা, তান্ত্রিকের সাথে রাতে যোগাযোগ করল কি ভাবে!
-আপনার মা কে আপনি যতটা সাধারণ ভাবছেন তিনি ততটাও সাধারণ নন। এই সব টুকিটাকি বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আপনি বরং আগামীকাল আমার বাড়িতে আসুন। হাতে আর সময় নেই, রাত দশ টা বাজতে চলল। সেই কোন সকালে বেড়িয়েছি আমরা। এই দিনেই কেস সমাধান হবে ভাবি নি। দেড়ি হলে আবার আমার সহযোগীকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না।
হা হা হা চলি তাহলে, আগামীকাল দেখা হচ্ছে। চলুন মিস সৃজা দেবী।
-উফফ কতবার বলব আমাকে আমাকে দেবী বলবি না।
-হা হা হা।
-আচ্ছা ঐ ত্রিবেদী বাবুর মা কোথায়!
-তার জীবনের পনেরো আণা সময় শেষ, এই বয়সে তাকে আর আইনের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে চাই না। তাকে বৃন্দাবন পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি কৌশিক কে বলে। বৃন্দাবনে সে অন্তত তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুক। এতক্ষণে সে হয়ত ট্রেনে উঠেও গেছে।।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ-
রহস্যের গল্প- রহস্যময়ী নারী
সত্যি ভুতের গল্প- অদ্ভুতুড়ে স্কুল
ছাড়পত্রের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
Bangla Goyenda Golpo. bengali detective story. mystery story bangla. নতুন গোয়েন্দা গল্প
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।