আজকের টুকরো প্রেমের গল্প গুলিতে রয়েছে কিছুটা বিষাদ, কিছুটা অপূর্ণতা কিছুটা কাছে চাওয়ার অপ্রকাশিত অনুভূতি।

টুকরো প্রেমের গল্পঃ-

১. বয়স প্রায় ৫০ ছুঁই ছুঁই হয়ে গেলেও, মেয়েটার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেটা ওই বারান্দার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে, তাকে একনজর দেখার জন্য। মেয়েটা হয়ত ভুলে গেছে যে, সে কাউকে সারাজীবন সুখ দুঃখে পাশে থাকার কথা দিয়েছিল কিন্তু ছেলেটা আজও সেটা ভুলেনি। তাই সে অন্তত একবার দেখে যায় তার প্রিয় মানুষ শান্তিতে আছে কি না!

২. কালো টিপ আর কাজলে দারুণ মানায় তোকে। আমি শুধু একবার একটা ভাল কাজ পেয়ে যাই, দেখবি তোর টিপ আর কাজলের কোন অভাব হতে দেব না। কেটে গেছে প্রায় ১০ বছর। মেয়েটা আজ আর টিপ পরে না, সে আর কাজলও দেয় না। কারণ নয়ন ভরে তাকে যে দেখে থাকত, সেই মানুষটা বিদেশে গিয়ে আর মন নিয়ে ফেরে নি, পরিবর্তে ফিরে এসেছিল এক কফিন বন্দী নিথর দেহ।

৩. বিয়ের সাজে মেয়েটাকে দেখে , ছেলেটা অপরূপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে গিফ্ট বক্স টা দিয়ে চটজলদি নামতে গেলে , মেয়েটা পিছু ডাক দিয়ে বললো ” কি রে দশ বছরের বন্ধুকে এত জলদি ভুলে গেলি নাকি ?”ছবি তুলবি না আমার সাথে ?
হাসতে হাসতে ছেলেটা পিছু ফিরে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বললো – “মরলেও কি তোকে ভুলতে পারব পাগলী ! ” সবাই ছেলেটার ব্যবহারে অবাক হয়ে গেলেও , শেষ মুহূর্তে হয়তো মেয়েটা বুঝতে পারলো ” বন্ধুত্বটা অনেক আগেই এক তরফা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিল ।”

টুকরো প্রেমের গল্প
টুকরো প্রেমের গল্প

৪. কানের রিং এর রং উঠে গেলেও মেয়েটা আজ এত বছর পরেও সেই রিং ব্যবহার করছে। অনেক নতুন নতুন রিং পরে আছে তার আলমারিতে কিন্তু তার সেই রং উঠে যাওয়া রিং টাই তার পছন্দের। তা আর হবে নাই বা কেন! একজনের স্মৃতির সাক্ষী আর হাজারো অনুভুতির সাক্ষী যে তার এই রিং।

৫. আর কোনদিন নেশা করবে না বলে প্রেমিকা কে কথা দিয়েছিল যে ছেলেটা সেই ছেলেটাই আজ নেশা করে সারাদিন পরে থাকে। সে নেশা আর করবে নাই বা কেন! একজনের প্রতি তার যে নেশা ছিল সেই নেশা যে কেটে গেছে। কারণ মেয়েটা আজ অন্যজনের সাথে ঘড় বেঁধেছে।

৬. প্রথম প্রেমে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে রিনি ঠিক করেই নিয়েছে আর কারোর প্রেমে পরবে না, কাউকে তার প্রেমেও পরতে দেবে না। 

কিন্তু তার জীবনে আসে দিব্য, ফিরিয়ে দিলো রিনি তাকে তার অটল প্রতিজ্ঞার প্রভাবে। 

দিব্য উত্তর দেয়, আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমার সাথে প্রেম নয় আমার। তুমি প্রেমে আঘাত পেয়েছ, ভালোবাসায় নয়। আমি তোমার প্রথম প্রেম বা শেষ প্রেম নই, আমি তোমার শেষ ভালবাসা হতে চাই। ভাল থাকার জন্য নয়, ভালো রাখার জন্য তোমাকে আমার বুকে রেখে দিলাম। তুমি আসলে এসো না আসলে তবুও জানবে তোমার স্থান আমার হৃদয়তেই।

ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলাটাও একসময় বন্ধ হয়ে যায়। রাত জেগে কথা বলার স্মৃতিও একসময় ফিকে হয়ে আসে। কিন্তু সেই বদ্ধ ঘড়, সেই মোবাইলের ম্যাসেজে পরে পরে ঘুনে খাচ্ছে হাজারো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি।   

৭. খুব বাজে ব্যবহার করে, মুখের উপর সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয় সুভা। 

অয়নের চোখে জল। সে ছুটে চলে যায় সুভার কাছে। আর সুভার হস্টেলে পৌঁছে সুভার রুমে গিয়ে দেখে দরজা ভেজানো আর সুভা ফাঁস তৈরি করছে। 

বিস্ফারিত চোখে অয়ন ছুটে গিয়ে বুকে টেনে নেয় আর কাঁদতে কাঁদতে বলে, এ তুমি কি করছিলে সুভা! 

আমি ধর্ষিত মেয়ে, আমাকে ছুঁয়ো না। আমি মরতে চাই। আমায় ছাড়ো। 

অয়ন আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি তোকে ভালোবাসি, তোকে হারানোর জন্য, তোর জীবনের প্রতিটা সময় তোর পাশে থাকার জন্য। তোর এই ক্ষতির জবাব দেবো আমি, তবুও জানবি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি তোকে ভালোবাসি সুভা! তোর ভালো সময় বা রুপ দেখে নয়, আমি তোকে ভালোবাসি বুঝেছিস! 

পড়ুনঃ- ইমোশনাল লাভ স্টোরি- শেষ কথা 

কয়েক লাইনের ভালবাসার গল্পঃ-

৮. – আমি খাবার খাবো না। 

-তুই খাবি না, তোর এত বড় সাহস!

-হুম। 

পুলক চোখ বড় বড় করে বলে, খাবি নাকি খাবি না!

-খাবো না বললাম তো…

চোখের সামনে সবটা ঝাপসা হয়ে যায় পুলকের। কারণ হোটেলে যে সাথীকে ওই একই ভাবে জোর করে খাবার খাইয়ে দেওয়ার জন্য ওর স্বামী আছে। 

কিন্তু পুলকের কাছে কেউ নেই যাকে ও জোর করে খাবার খাওয়াবে! 

৯. ছেলেটা মেয়েটাকে খুব পছন্দ করত। অন্যদিকে মেয়েটাও ছেলেটাকে ভাল লাগত, কিন্তু কেউই কখনো মুখ ফুটে নিজের ভাল লাগার কথা একে অপরকে জানাতে পারেনি। ছেলেটা ভেবেছিল ভাল লাগার কথা বললে হয়ত তাদের বন্ধুত্বটা ভেঙ্গে যাবে, অন্যদিকে মেয়েটা ভাবত ছেলেটাই তাকে প্রপোজ করবে। এভাবে অপেক্ষায় কেটে যায় দিন। কিন্তু, কেউই তাদের মনের কথা একে অপরকে জানাতে পারে নি। আর আজ দুইজনে দুইজনের থেকে অনেক দূরে। সংসার করছে অন্য জনের সাথে। কিন্তু মন পরে রয়েছে সেই পুরনো স্মৃতিতেই।

১০. বারবার তিস্তার করা ম্যাসেজে অঙ্কন বিরক্তবোধ করতো। প্রয়োজনের অধিক কথা না বলা ছেলেটা , একদম এই পাত্তা দিত না তিস্তাকে। কিন্তু তিস্তা নাছোড়বান্দার মতো ওকে বিরক্ত করেই যেত।
হঠাৎ দুদিন আর তিস্তার কোনো ম্যাসেজ অঙ্কনের কাছে আসেনি। বিরক্তিবোধ টা যেন চিন্তায় পরিণত হয়েছে। অনেক খোঁজ খবর নেওয়ার পর অঙ্কন জানতে পারলো তিস্তা নামের বিরক্তির বন্যাটা, জীবন নদীতে তলিয়ে গেছে । খুব অল্প সময়েই বিরক্তবোধ টা চিন্তা থেকে বিরহের রূপ নিয়েছে ।

bengali heart touching short love stories
bengali heart touching short love stories

১১. এতো ভয় ভয় কেন করছিস রাজীব, কি হয়েছে তোর? রৌনক জানতে চায় পার্টি তে রাজীবের শুকনো মুখ দেখে। 

রাজীব শুকনো হেসে বলে, আসলে আমার বৌ আমাকে বলে, ও সশরীরে আমার সাথে থাকুক বা না থাকুক, ওর মন আর ছায়া সবসময় আমার সাথে ঘুরছে, আমার আশেপাশে আছে। 

আর আমি এই পার্টি তে তোদের সাথে ড্রিঙ্ক  করছি দেখলেই হয়। ওর হাতের একটা মারও বাইরে গিয়ে আর পরবে না, সব আমার পিঠেই পরবে!

আজ এতবছর বয়সে এসেও রাজীবের মনে হয় ওর বৌ আজ সশরীরে জীবিত না থাকলেও, ওর আত্মা সবসময় ওর খেয়াল রাখছে! তাই ওর কাজ কমাতে রাজীব আজ একাই থাকে স্ত্রীয়ের স্মৃতি আঁকড়ে। কোনো বিশৃঙ্খলতা করে না যাতে স্ত্রীয়ের কাজ বাড়ে। 

১২. সকাল সকাল মেয়েটা সুন্দর করে সেজে , রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করছিল তার প্রিয় মানুষটার জন্য। দেরি হচ্ছে দেখে নিজেই একটা টোটো তে চেপে গেলো । নিজের মনে মনেই হাসতে হাসতে বললো ” দেখো না , আজ তোমায় অফিসে গিয়ে এক্কেবারে চমকে দেবো । আর বাকিদের বুঝিয়ে দেবো ” তুমি শুধু আমার ” ।

ট্র্যাফিক জ্যামে কিছুক্ষন আটকে ছিল মেয়েটা , হঠাৎ করে তার বাইরে দিকে চোখ গেলে , দেখেতে পেলো প্রিয় মানুষটার গাড়ির প্রথম সীটে একটা অন্য মেয়ে ,যে সিটটা শুধু মাত্র ওর জন্য ছিল , সেটাতে আজ অন্য কেউ । চোখে জল আর ঠোঁটে আলতো একটা হাসি নিয়ে টোটো থেকে নেমে হাঁটা পথে অজানা শহরে একাই পাড়ি দিলো মেয়েটা।
তাই হয়তো কথায় আছে ” পছন্দ করা সহজ কিন্তু জীবনভর সেটা বজায় রাখা কঠিন ” ।

আঘাত টা এক তরফাই ছিল , তাই একজন দুঃখের বন্যায় ভেসে গেলেও, অপরজন বেশ সুখেই আছে ।

পড়ুনঃ- একটি অপ্রকাশিত প্রেমের গল্প 

১৩. ছেলেটা বিয়েবাড়ির ভীড়ের দাঁড়িয়ে দেখে তার ভালবাসার মানুষ টার বিয়ে হচ্ছে ধুমধাম করে। সে বিয়ের সব আচার অনুষ্ঠানে ছিল। সব নিজের হাতে করেছে। মেয়েটার চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে যাচ্ছে কিন্তু ছেলেটার হৃদয় পাথর তাই চোখে জল আসছে না মুখে হাসি আসছে। 

সিঁদুর দানের সময়ে মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে সকলের সামনে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে যায় ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে বলে, ওকে আমি ভালোবাসি। আমি কেবলমাত্র ওর স্ত্রী। ছেলেটার বা বাকি কারোর বারণ মানেনি মেয়েটা। সে হারিয়ে যেতে দেয়নি পরিবারের জন্য নিজের ভালবাসার মানুষ কে।

১৪. ব্যস্ততা টা অন্য কাউকে দেখাস, আমায় না ! এই বলেই মেয়েটা ফোন টা রেখে দিল । ছেলেটা নিজের ভুল বুঝতে পারার পর বারেবারে কল করে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যস্ততার অজুহাত টা এবার অপরদিক থেকে প্রবল ভাবে তৈরি হয়েছিল। তাই দশ বছরের সম্পর্কটা মাত্র দশ মাসের মধ্যে ব্যস্ত পৃথিবীতে হারিয়ে গিয়েছিল…….
ব্যস্ত শহরে প্রায়ই দুজন মুখোমুখি হয়, কিন্তু সম্পর্কটা ? সেটা ব্যস্ততার আড়ালেই একে অপরকে উঁকি দিয়ে , অচেনার ভানে এড়িয়ে যায়।

কয়েক লাইনের ভালবাসার গল্প
কয়েক লাইনের ভালবাসার গল্প
<

১৫. তুমি আমাকে শুধু বন্ধুই ভাবো,  আমার প্রতি তোমার কোনোদিন কোনো…. 

-স্টপ চিত্রা। আমি তো তোমাকে বারবার বলছি, আমি তোমাকে ভালবাসি না। কেন বারবার এক কথা বলো। তুমি শুধু আমার বন্ধু। 

চোখে জল নিয়ে সেদিন বিদায় নিয়েছিল চিত্রা পীযুষ এর কাছ থেকে। 

কিন্তু চিত্রা জানত না যে পীযুষও তাকে কতটা ভালোবাসে। 

জানল যেদিন সেদিন টা ছিল পীযুষ এর ব্রেন টিউমার এর অপারেশন এর দিন। আর এও জেনেছিল , পীযুষের বাঁচার সম্ভাবনা নেই বলেই সে তার জীবনে আসতে দেয়নি চিত্রাকে। মুখে অবহেলা আর বুকে ভালোবাসা রেখেই চলে যেতে চেয়েছিল সে চিত্রার থেকে। কিন্তু চিত্রা পীযুষের থেকে সিঁদুর নিয়েছিল সে বিধবা হবে জেনেও। সে যে শুধু পীযুষের, আর কারোর নয়, হতেও চায়নি কোনোদিন, কখনোই।।

১৬. গাড়ির স্পীড প্রায় ১০০ ছুঁই ছুঁই। ছেলেটা বলল- আমার মাথা থেকে হেলমেট টা খুলে তুমি পরে নাও, আমার ভীষণ গরম লাগছে।… কিছুক্ষণ পর হাই ওয়ে এর ধারে দুটি দেহ উদ্ধার হয়। আর এদের মধ্যে একজন মৃত। ছেলেটা বুঝে গিয়েছিল যে, গাড়ির ব্রেক ফেল হয়েছে। আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তাই ছেলেটা এই শেষ মুহূর্তেও তার প্রিয়জনকে বাঁচানোর সব রকম প্রয়াস করেছে, আর এই কাজে সে সফলও হয়েছে।  

গল্প গুলির সুচারু ভাবনায় রয়েছে- আলোরানি, মীনাক্ষী, সুস্মিতা ও ছাড়পত্র 
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।

পড়ুনঃ- 
টাকার কাছে ভালবাসা হেরে যায়

বিরহের গল্প- গুড বাই  
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক Group - গল্প Junction 

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

টুকরো প্রেমের গল্প। কয়েক লাইনের ভালবাসার গল্প। bengali heart touching short love stories

Spread the love

Leave a Reply