আজ তিনটি নতুন জ্ঞান মূলক গল্প তথা শিক্ষণীয় গল্প থাকছে আপনাদের জন্য। এই শিক্ষণীয় গল্প গুলির মধ্যে থাকা নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন আর জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন।
জ্ঞান মূলক গল্পঃ-
অনুপ্রেরণা মূলক গল্প ০১ঃ-
অনেক দিন আগে কোথাও এক জেলে বাস করত। নিকটবর্তী সমুদ্র থেকে নোনা জলের মাছ ধরে নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করে দিয়ে যা অর্থ পেত, তা দিয়েই সে কোনোমতে সে তার পরিবারকে নিয়ে দিন কাটাত।
একদিন মাছ ধরার পড়, সে শহরের বাজারে বসে মাছ বিক্রি করছিল। এক বণিক তার কাছে এসে বসল, এবং তাদের মধ্যে নানান কথা-বার্তা চলতে লাগল। কথায় কথায় একসময় বণিক জিজ্ঞাসা করলেন- “আচ্ছা, তোমার সম্পর্কে তো অনেক কিছুই বললে, কিন্তু এটি বললে না যে, তোমার পিতা আছেন কি নেই?”
জেলে জবাব দিলেন- “আজ্ঞে না, আমার পিতা আর জীবিত নেই। প্রায় চার বছর হতে চলল, পিতা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। একদিন কিছুতেই সমুদ্রের ধারের কাছে মাছ পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই আমার পিতা মাছের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে চলে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত তিনি এক বড় হাঙ্গরের কবলে পড়ে যান। হাঙ্গরের মুখ থেকে তিনি আর ফিরে আসতে পাড়েননি।“ এই বলে জেলের চোখে জল চলে এল।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পড় বণিক আবার জেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন- “তোমার কোনো ভাই বা দাদা নেই?” জেলে বললেন-“ছিল। বছর দুয়েক আগে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে, নৌকা ডুবি হয়ে জলের তলায় ভেসে গেছেন, দাদার আর কোনো খোঁজ আমরা পাইনি।“
আরও কিছুক্ষণ পড় বণিক কৌতূহল বশত জিজ্ঞাসা করলেন-“আচ্ছা তোমার ঠাকুরদাদা কে কি তুমি দেখেছ?” জেলে বলল- “হ্যাঁ দেখেছি, আমি তখন অনেক ছোট, সবে কথা বলতে আর বুঝতে শিখেছি। তখনই ঠাকুরদাদা অকালে আমাদের ছেড়ে পরলোকে গমন করেছেন।“
বণিক-“তারও মৃত্যু কি সমুদ্রেই হয়েছিল?”
জেলে- “আজ্ঞে হ্যাঁ। আগে তো আর এখনকার মত উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাসের ব্যবস্থা ছিল না, আমার দাদু গভীর সমুদ্রে ঝড়ের প্রকোপে পড়ে যান, তিনি আর ফেরেননি। পাঁচ দিন পড় সমুদ্রের তীরে তার দেহ উদ্ধার হয়।“
জেলের কথা শুনে বণিক বললেন-“তোমার পরিবারের সব সদস্যরই মৃত্যুর মূল কারণ হল সমুদ্র। তোমার প্রিয়জনকে সমুদ্র কেড়ে নিয়েছে। খারাপ পেও না, কিন্তু আমার মন বড্ড জানতে চাইছে যে, এত কিছুর পরেও তোমার সমুদ্রে যেতে ভয় লাগে না?”
জেলে বললেন-“না, আমার কোনো ভয় লাগে না, মৃত্যু কখনো বলে কয়ে আসে না। আমি যদি ভেবে বসে থাকি যে সমুদ্রে গেলে আমি হয়ত মারা যাব আর এই ভেবে বাড়িতে চুপচাপ থাকি, তাহলে আমরা এমনিতেই শুঁকিয়ে মারা যাব। আমাদের কর্মই হল সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরা, তা না করে মৃত্যুর ভয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার মত কাপুরুষ আমি নই।“
নীতিকথাঃ- কথায় আছে, “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?” তাই বলে কি মৃত্যুকে দেখে ভয় পাব আমরা? উঁহু মোটেই নয়। আমাদের এই সংক্ষিপ্ত জীবন কালের মধ্যেই আমাদের এমন সৎকর্ম করে যেতে হবে যাতে আমরা, আর কিছু হোক না হোক অন্তত শান্তিতে মরতে পাড়ি।
আমরা মৃত্যুকে খুবই ভয় পাই। কিন্তু কখনো এটি ভাবিনা যে, জন্মেছি যখন তখন মৃত্যু হবেই। কিন্তু তাই বলে কর্ম না করে মৃত্যুর ভয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে কি চলবে? উঁহু মোটেই চলবে না। যেদিন আপনি মৃত্যু ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন, সেদিন আপনি বুঝবেন আপনি নিজেরই অজান্তে অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুনঃ-
অনুপ্রেরণা মূলক গল্প ০২ঃ-
অমরাবতী রাজ্যের রাজা গোবর্ধন। তিনি তার রাজ্যে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিয়ে বলেছেন যে, রাজসভায় একজন রাজার পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হবে, আগ্রহী ব্যক্তিরা যেন পরেরদিন রাজ সভায় উপস্থিত হয়। খুব মোটা অঙ্কের বেতনের কথাও জানানো হয়।
মোটা অঙ্কের মাইনের কথা শুনে পরেরদিন রাজ্যের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি রাজসভায় উপস্থিত হলেন। এত বিপুল পরিমাণ লোক রাজসভায় জমা হয়েছে যে, রাজ সভাতেও আর জায়গা হয়না। রাজা বাধ্য হয়ে তার রাজগৃহের বাইরের ফাঁকা মাঠে সবাইকে একত্রিত হতে বললেন।
সবাই সেখানে একত্রিত হলে, রাজা ঘোষণা করেন রাজ-পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হবে, কিন্তু তার আগে একটি পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। সবাই মাথা নাড়ল। এরপর রাজা সবাইকে একটি ছোট পুকুরের কাছে নিয়ে গেলেন এবং একটি বালতি দেখিয়ে দিয়ে বললেন-“এই বালতি দিয়ে পুকুরটির জল যে শেষ করতে পাড়বে তাকেই চাকরি তে নিযুক্ত করা হবে। তবে বলে রাখি বালতিতে কিন্তু ফুটো আছে।“
রাজার এই ঘোষণা শোনার সাথে সাথে, প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ কোনো চেষ্টা না করেই, বিরক্তিকর ভাব নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। কিছু মানুষ দুই-এক বালতি জল তুলে বললেন- “এরকম কাজ আমাদের চাইনে” এই বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।
অবশেষে, মাত্র একজন এগিয়ে এলেন এবং বালতির ফুটোতে হাতের তালু রেখে জল তুলতে লেগে পড়লেন। দীর্ঘ একদিনের নিরলস প্রচেষ্টার পড় তিনি অবশেষে সম্পূর্ণ পুকুরটির জল শেষ করে ফেললেন। এরপর তিনি দেখলেন, পুকুরটির কাঁদায় একটি লাঠির উপর একটি হীরের আংটি ঝোলানো আছে। সেই আংটি নিয়ে তিনি রাজদরবারে গিয়ে রাজাকে বললেন- “রাজামশাই এই আংটিটি আমি পুকুরের জল শেষ করার পড় পেয়েছি, এটি হয়ত আপনাদের রাজ পরিবারের কারও হবে।“
এই বলে আংটিটি তিনি রাজার হাঁতে দিয়ে দিলেন। রাজা মুচকি হেঁসে বললেন, তুমি পরীক্ষায় পাশ করেছ। বালতির ফুটোতে হাত রেখে বেশি বেশি পরিমাণ জল তুলে তুমি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছ। পুকুরের জল শেষ করে তুমি ধৈর্যের প্রমান দিয়েছ। আর অবশেষে এই হীরের আংটির প্রতি লোভ না করে আমাকে দিয়ে দিয়ে তুমি তোমার নির্লোভ ও সততার পরিচয় দিয়েছ। এই আংটিটি তুমিই রাখ এবং এটি তোমার জন্যই। আর তোমাকে আজ থেকে রাজ-পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত করা হল।“
নীতি কথাঃ– কাজ দেখে ভয় না পেয়ে বা সেই কাজকে দেখে অতিরিক্ত ভাবনা-চিন্তা না করে আমরা যদি সেই কাজে হাত লাগাই তাহলে তার পরিণাম অবশ্যই ভালো হবে। সহজ রাস্তায় পাওয়া সাফল্য বেশি দিন টেকে না, কিন্তু ধৈর্য এবং বুদ্ধির সহযোগে প্রাপ্ত সাফল্য স্থায়ী। আপনি নিজে যদি সৎ হন, পৃথিবী আপনার কাছে ভালো ব্যবহার করতে বাধ্য। সর্বদা মনে রাখবেন ভিড়কে কখনো অনুসরণ করবেন না। যদি আপনার মনে হয় ভিড় খারাপ রাস্তায় যাচ্ছে, তাহলে আপনার গতিপথ বদলে ফেলুন। ভিড় কি করছে সেটি কখনো অনুসরণ করতে যাবেন না। মনে রাখবেন সেরা সবাই হয় না, ভীরের মধ্য থেকে যে একটু ভিন্ন সেইই সেরার আসন পায়।
পড়ুনঃ- শিক্ষণীয় মোটিভেশনাল গল্প।
অনুপ্রেরণা মূলক গল্প ০৩ঃ-
গ্রামের নাম প্রতাপ গড়। সেই গ্রামেরই একজন খুব চালাক এবং ধূর্ত বালক হল বাবলু। তার চালাকি আর কথা বলার কৌশল দেখে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। একদিন বাবলুর মা তাকে বাজার থেকে কিছু ফল কিনে নিয়ে আসতে বলে, কারণ বাড়িতে পুজো হবে।
বাজারে গিয়ে বাবলু দেখে মাত্র একটিই ফলের দোকান খোলা রয়েছে। আর যে দোকানটি খোলা রয়েছে সেই দোকানী অনেক অসাধু এবং বেইমান। সে মানুষকে ওজনে কম দেয়, ফুসলিয়ে ফাঁসলিয়ে পচা ফল মানুষকে দিয়ে দেয়। আর দামও অনেক বেশি নেয়। কিন্তু বাবলুকে তো ফল নিতেই হবে। সে সেই দোকনীর কাছে গেল এবং ফল কিনতে চাইল।
সে দেখল দোকানী তাকে ৯০০ গ্রাম ফল দিচ্ছে, কিন্তু সে চাইছিল এক কেজি। সে প্রতিবাদ করে বলে-“আরে আরে কাকু আমি তো এক কেজি চেয়েছি, আপনি ৯০০ গ্রাম দিলেন কেন?” দোকানী বলল- “শোনো বাবু, এখানে এক কেজি ফলই আছে, আর কম দিয়েছি তাতে কি হয়েছে, তোমার বাড়ি নিয়ে যেতে তো সুবিধা হবে, আর টাঁকা তো আর তোমার নয় তোমার মায়ের যাবে, তুমি তো আরাম করে বাড়ি যেতে পাড়বে।“ দোকনী বাবলুকে বাচ্চা ভেবে ঠকাতে চেয়েছিল।
বাবলু আর বেশি কিছু বলে না, কারণ সে জানে এখানে তর্ক করে কোনো লাভ নেই। সে ফল গুলি হাঁতে নিয়ে ৯০০ গ্রাম ফলেরই দাম দিল। দোকানী রেগে গিয়ে বলল- “পয়সা কম দিলে কেন, আরও পয়সা লাগবে।“
বাবলুও সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে বলল- “কি যে বলেন কাকু, আমি পয়সা একদম ঠিকই দিয়েছি। আর কম দিয়েছি তো তাতে কি হয়েছে, আপনার গুনতে তো সুবিধাই হবে। আর তাছাড়াও আপনি আরাম করেই গুনতে পাড়বেন। এখন আমি চলি।“ এই বলে সে সেখান থেকে চলে যায়।
নীতিকথাঃ– সবসময় তর্ক করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তর্ক তো তারাই করে যাদের বোঝার ক্ষমতা কম। বুদ্ধিমানের লক্ষণই হল শান্ত মাথায় সমস্যাকে সমাধানে পরিণত করা। তাই সব সমস্যা শান্ত মাথায় এবং বুদ্ধি দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করুন।
আমাদের ফেসবুক পেজ – অবাক বিশ্ব ।-
জ্ঞান মূলক গল্প। নতুন অনুপ্রেরণা মূলক গল্প। top 3 new bengali motivational stories. bangla onuprerona mulok golpo.
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।