আমাদের জীবনে অনেক ঘটনার সাক্ষী আমাদের হতে হয়। সেখান থেকে কিছু নীতিশিক্ষা আমরা অর্জন করে ফেলি। আজ থাকছে আপনাদের জন্য ৩ টি ছোট শিক্ষণীয় গল্প। এই শিক্ষামূলক গল্প গুলি থেকে অনেক কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পাড়বেন, এমনটাই আশা রাখি।

ছোট শিক্ষণীয় গল্প। বাংলা নীতিকথার গল্প। ছোট গল্প।

ছোট শিক্ষণীয় গল্প ০১

মাথার উপড়ে গনগনে রোদ, গ্রীষ্মকাল বলে কথা। চারিদিক ধু ধু ফাঁকা মাঠ, একটা পিঁপড়ের দেখা পর্যন্ত নেই। গরমের দিন গরম হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু সূর্যটা আজ বুঝি তার বউয়ের সাথে ঝগড়া করেছে, তাই হয়ত বেজায় ক্ষেপে গেছে, আর তার রাগ প্রকাশ করছে মর্ত বাঁশির উপর। এদিকে এক সিংহ জলের সন্ধানে হন্নে হয়ে ঘুরছে। এত বড় জঙ্গল অথচ কোথাও জল নেই, সব পুষ্করিণী শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

শেষে তার মনে হল বনের মধ্যভাগে একটি বিশাল পুকুর আছে, এই গরমে সেই পুকুরে গেলে হয়ত জল পাওয়া যেতে পাড়ে। সে পুকুরের কাছে গিয়েই দেখে, একটু বিশাল দাঁতওয়ালা বুনো শুকর জলের জন্য পুকুরে নামছে। সিংহ পুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখে, পুকুরে অনেকটাই জল আছে। সিংহ গর্জন করে উঠল। সিংহের গর্জন শুনে বুনো শুঁয়োর থেমে গেল ঠিকই কিন্তু ভয় পেল না। সিংহ দৌড়ে সেখানে গিয়ে বলল-

“আমি এই বনের রাজা, তাই এই পুকুরের জল আমার প্রাপ্য।“

বুনো শুঁয়োর বলল- “কিন্তু পুকুরে আমি আগে নেমেছি।“

এরপর দুইজনের মধ্যে শুরু হয়ে গেল কথা কাটাকাটি। এরপর বেঁধে গেল তুমুল ঝগড়া। কয়েক মিনিটেই তাদের ঝগড়া মারামারির রূপ নিয়ে নিল। বুনো শুঁয়োর আর সিংহের সাথে পেড়ে উঠবে কিভাবে? সিংহ আর শুয়োরের ধ্বস্তাধ্বস্তিতে বুনো শুয়োরের বিশাল দাঁত সিংহের শরীর ভেদ করে অপর পাশে চলে আসে। আর সিংহের মুখের দাঁতের কামড়ে শুয়োরের শ্বাসনালী বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, কিছুক্ষণ পড় দুইজনই রক্তাক্ত অবস্থায় কাতারাতে কাতরাতে মারা যায়।

বাংলা নীতিকথার গল্প। শিক্ষণীয় গল্প। ছোট গল্প। সিংহের গল্প
বাংলা নীতিকথার গল্প। শিক্ষণীয় গল্প। ছোট গল্প। সিংহের গল্প

এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার কিছু সময় পড়, জলের সন্ধানে এক শেয়াল সেই পুকুরে আসে, সে এসেই দেখে সিংহ আর বুনো শুঁয়োর মরে পড়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে সে বেজায় খুশি হয়, কারণ সে জীবনে এরকম দুটি বড় পশুর মাংসের স্বাদ গ্রহণ করেনি। এরপর সে পরম আনন্দে কড়মড় করে চিবিয়ে মাংস খেয়ে পুকুরের জল খেয়ে লেজ দুলাতে দুলাতে বনের ভেতর চলে গেল।

নীতিকথাঃ- দ্বন্দ্ব না করে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নেওয়া ভালো। যদি সিংহ আর বুনো শুঁয়োর দুইজনই একসাথে জল পান করে নিত, তাহলে তারা মারা যেত না, আর শেয়ালও তাদের মাংসের স্বাদ নিতে পাড়ত না। নিজেদের দুর্বলতা যেন অন্যের কাছে সুবিধার কারণ না হয়ে দ্বারায় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ছোট শিক্ষণীয় গল্প ০২

কিছু কুকুর আছে, যারা অনেক শান্ত স্বভাবের। আবার কিছু ছিঁচকে কুকুর আছে, যারা মানুষ দেখলে তাড়া করবেই করবে। আর নাগাল পেলে কামড় দিবেই। এটাই ওর স্বভাব।

কোনো এক জায়গায়, এরকমই এক কুকুর থাকত। তবে তার কামড়ানোর অভ্যেস টা একটু আলাদা। মানুষকে দেখলেই সে তার পাশ দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে যাওয়ার ভান করবে। এরপর কাছে এসে পায়ে একটা কামড় মেড়েই লেজ উঠিয়ে দে দৌড়। তাই সবাই এই কুকুরকে দেখে আগে থেকেই সরে যেত।

কিন্তু মানুষ খুব ব্যস্ত, কখন কুকুর আসবে, সে খেয়াল রাখে কে? তাই অনেক মানুষ এই কুকুরের কামড় থেকে রেহাই পেত না। এদিকে সেই কুকুরের মালিক বেজায় চিন্তায় পড়ে গেছেন। তার কুকুরকে নিয়ে প্রতিদিন অনেক অভিযোগ এসে জমা হয়। অনেকে তাকে শাসানিও দিয়ে যায়।

একবার কুকুরটির মালিক, কুকুরটিকে ধরে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন, কিন্তু পরের দিনই কুকুরটি বেপাত্তা। দাঁত দিয়ে সারারাত দড়ি কেটে তার লেজেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। সন্ধ্যে বেলা কুকুরটি বাড়ি ফিরতেই মালিক তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। কিন্তু কুকুরটি কয়েকদিন পড়েই শিকল ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এরপর মালিক কুকুরটিকে ধরে গলায় একটা ঘণ্টা লাগিয়ে দেন, যাতে মানুষ সহজেই বুঝতে পাড়েন যে সেই দজ্জাল কুকুর আসছে, আর আগে-ভাগেই তারা সতর্ক হয়ে যেতে পাড়েন। মানুষ কুকুরটির গলার ঘণ্টার শব্দ শুনে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে অন্যত্র সরে যেত।

 কুকুরটি বাজারের মধ্যে গিয়ে নিজের ইচ্ছে মত, যা খুশি খেয়ে আসতে থাকে, কেউ লাঠি নিয়ে তেড়ে এলেই, তার অবস্থা শেষ হবেই হবে।

এতে কুকুরটির ধীরে ধীরে অহংকার হতে শুরু করল, সে ভাবতে লাগল, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ একটা সাধারণ কুকুরকে দেখে ভয় পাচ্ছে।

new amazing shikkhoniyo golpo bangla
new amazing shikkhoniyo golpo bangla

একদিন এক গ্রে-হ্যান্ড কুকুর তার কাছে এসে বলল- “ভাই তুমি ভাবছো মানুষ তোমাকে ভয় করে? যে ঘণ্টা তোমার গলায় ঝুলছে ভাবছো ওটা তোমার বীরত্বের মেডেল। কিন্তু না বন্ধু, মানুষ তোমাকে ভয় করে না, মানুষ তোমাকে ঘৃণা করে। মানুষ তোমাকে নিয়ে কথা বলে, এর মানে এই নয় যে, তুমি অনেক বিখ্যাত। মানুষ তোমাকে নিয়ে কথা বলে কারণ তুমি তাদের কাছে একজন ঘৃণার পাত্র।“

নীতিকথাঃ অনেকেই আছেন, যারা তাদের নিয়ে একটু চর্চা হলেই, তিনি বিখ্যাত হয়ে গেছেন ভেবে গর্ব করেন। কিন্তু তার এই ধারণা শুধু ধারনাই থেকে যায়।

ছোট শিক্ষণীয় গল্প ০৩

একটি ছোট্ট মেষ শাবক, ঘাসের গন্ধ নিচ্ছিল। কারণ সেও আর কয়েকদিন পড়, ঘাস খাবে, তাই আগে ভাগে একটু ঘাসের গন্ধটাও সয়ে নিচ্ছে। এদিকে একটি শেয়াল, সেই মেষ শাবককে দেখে ভাবল, এই কচি শাবকের মাংস একটু টেস্ট করলে মন্দ হয়না। এই ভেবে সে শাবকের দিকে ধীরে ধীরে পা বাড়াতে শুরু করল।

কিন্তু এবার সে চিন্তা করল, কোনো অজুহাত ছাড়া একে হত্যা করা ঠিক হবে না। তাই সে শাবককে ডেকে বলল-

“এই তুই আমার ঘাস খাচ্ছিস কেন?”

শাবকটি বলল- “না গো কাকু, আমি এখনও ঘাস খেতে শিখিইনি। আর কয়েকদিন পড়, আমি ঘাস খেতে শিখব।“

“তুই আগের বছর আমাকে অপমান করেছিলি।“

শাবকটি ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বলল- “কাকু, আগের বছর আমার জন্মই হয়নি। আমি তো এই পনেরো দিন আগেই জন্ম হলাম।“

“তুই আমার পুকুরের জল পান করিস।“

শাবকটি আরও জোড়ে কেঁদে উঠে বলল- “কাকু আমি এখনও আমার মায়ের দুধ ছাড়া কিছুই খাই না।“

“তাহলে তুই ঘাসের উপড়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস?”

“আসলে কাকু, আমি, আর কেয়কদিন পড় ঘাস খেতে শিখব তাই, আগে থেকেই ঘাসের গন্ধ টা সয়ে নিতে শিখছি।“

বাংলা নীতিকথার গল্প ছোট গল্প
বাংলা নীতিকথার গল্প ছোট গল্প image
<

শেয়াল বলল- “তবে রে, আমার অনুমতি ছাড়াই, তুই আমার ঘাসের গন্ধ নিচ্ছিস। তোর সাথে এত্ত কথা বলছি কেন?”

এই বলে শেয়াল মেষ শাবকটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, এবং তাকে মেরে ফেলল।

নীতিকথাঃ দুর্জনের ছলের অভাব হয়না। তাই সময় থাকতেই দুর্জনের সাথে বাক্য ব্যয় না করে দূরে সরে যাওয়াই মঙ্গল।

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপের লিংকঃ- https://t.me/charpatraOfficial

Spread the love

Leave a Reply