ঐতিহাসিক মজার ঘটনা MOJAR GHOTONA
আমাদের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে বোঝা যায় যে কত কিছু ঐতিহাসিক মজার ঘটনাই না ঘটেছিলএই পৃথিবীতে। আর তার কতটুকুই বা আমরা জানি বলুন। হ্যাঁ আমাদের এই সাইটের উদ্দেশ্য কিন্তু সেই অজানা-অচেনা জগতটাকে যতটা সম্ভব, সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব আদরের মাতৃভাষা বাংলাতে সবার সামনে তুলে ধরা। আর এরই একটি বিষয় হিসেবে আজকের ব্লগটিতে কিছু ঐতিহাসিক মজার ঘটনা জানাতে চলেছি। ঐতিহাসিক মজার ঘটনা
ফ্যারাও তুতেনখামেনের অজানা ঘটনা
আজ থেকে প্রায় ৩৩০০ বছর আগে মিশরের ফ্যারাও এর আসনে আসীন ছিলেন, তুতেনখামেন। তাকে মাত্র নয় বছর বয়সে মিশরের দায়িত্ব নিতে হয়। যদিও তিনি মাত্র ১০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১৯ বছর তখনই তিনি মারা যান। মিশরের ফ্যারাওদের পিরামিডে যে সমস্ত কবর গুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল, তাদের মধ্যে তুতেনখামেনের কবরটি, অনেক সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। বিশেষকরে তার মমির মুখটি সোনা দিয়ে বাঁধানো ছিল। তার পিরামিডটি ১৯২২ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল।
তার কবরে এত পরিমাণ সোনা এবং ধন-সম্পদ দেখে অনেক গবেষক তাকে Golden boy of Egypt বলে উল্লেখ করেছিলেন। যদিও এই বিষয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। তাঁর মমির উপর করা একটি DNA রিপোর্টে দেখা যায় যে, তিনি ছিলেন শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল একজন ফ্যারাও। তিনি নাকি হাড়ের সমস্যায় ভুগতেন এবং ম্যালেরিয়া ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী।
অনেক গবেষকের মতে, তাঁর এই দুর্বলতার পেছনে, মূল কারণ ছিল তাঁর বাবা-মা। কারণ তাঁর বাবা-মা ছিলেন পরস্পর ভাই-বোন। যার কারণে একই DNA এর সংমিশ্রণ ঘটে ও DNA স্থানান্তর হয়নি। যার ফলে তাদের তুতেনখামেনের মত দুর্বল সন্তানের জন্ম হয়।
৩৮ মিনিটের যুদ্ধ( ঐতিহাসিক মজার ঘটনা)
আমরা জানি যুদ্ধ কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধকেই ধরুন না ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, এবং শেষ হয়েছিল ১৯১৮ সালে অর্থাৎ প্রায় চার বছর যুদ্ধ চলেছিল। আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকেই দেখুন না, শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে শেষ হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। অর্থাৎ কোনো যুদ্ধই স্বল্পস্থায়ী নয়।
কিন্তু ইতিহাসের রেকর্ড অনুযায়ী পৃথিবীর সবথেকে কম সময় স্থায়ী হয়েছিল, এমন যুদ্ধের নাম হল- Anglo- Zanzibar war. এই যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩৮ মিনিট। এটি আসলে একটি দন্দ মূলক যুদ্ধ। এটি ১৮৯৬ সালে আফ্রিকার Zanzibar উপদ্বীপ এবং ব্রিটেনের মধ্যে এই ৩৮ মিনিটের যুদ্ধের মাধ্যমে এই দন্দের অবসান ঘটে। সবথেকে কম সময় ধরে চলা যুদ্ধ হিসেবে এটি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে। এই যুদ্ধে Zanzibar দ্বীপের প্রায় ৫০০ জন আদিবাসী মারা যান।
আলবার্ট আইনস্টাইন নবনির্মিত ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার অফার পেয়েছিলেন, কিন্তু তবুও তিনি সেই সুযোগটি ছেড়ে দেন। তিনি একজন ইহুদী ছিলেন, কিন্তু তিনি ইজরায়েলের নাগরিক ছিলেন না, তা সত্ত্বেও তাকে সেখানকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আমন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছিলেন, কারণ তাঁর মতে- “আমি নবনির্মিত ইজরায়েল রাষ্ট্রের অফারটি পেয়ে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি, কিন্তু তার সাথে সাথে আমি অনেক লজ্জা এবং দুঃখের সাথে সেটি ফিরিয়ে দিয়েছি কারণ আমি আমার সারাটা জীবন এই সব বস্তু পদার্থ ইত্যাদি নিয়েই মাথা ঘামিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। কিভাবে মানুষের সাথে মিশতে হয়, কিভাবে সরকারে দায়িত্ব সামলাতে হয়, তার কোনো ধারনাই আমার জানা নেই, এব্যাপারে আমার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা এই দুইয়েরই অনেক অভাব রয়েছে।
ইমু এবং অস্ট্রেলিয়ার লড়াই (হাসির ঘটনা)
সময়টা ছিল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ অস্ট্রেলিয়াতে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। তাই অস্ট্রেলিয়ার সরকার সেখানকার কৃষকদের উপর একটু বেশি নজর দিচ্ছিল, যাতে ফসল উৎপাদন ভাল হয়। সেইসময় অস্ট্রেলিয়াতে চলছিল গমের চাষ। কিন্তু আফ্রিকার জঙ্গল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইমুর দল ফার্ম গুলিতে হানা দেয়। যার কারণে সেখানকার সরকারের কাছে এই ইমুদের মোকাবিলা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান George Pearce প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফেরত সৈনিকদের ইমু দমনের কাজে নামিয়ে দেন। এবং তিনি সমস্ত ইমুকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এরপর সৈনিকরা প্রায় ১০০০ ইমুর একটি দল খুঁজে পায়, এবং তাদের হত্যা করার জন্য ছুটে যায়। ব্যাস এরপরেরই শুরু হয়ে যায়, ইমু এবং সৈনিকদের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই।
সৈনিকরা ইমুদের উপর open firing শুরু করে এবং ১০,১২ টি ইমুকে তারা হত্যা করেছিল। গুলির শব্দে ইমুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ঠিক এরপরই সৈনিকদের মেশিন গান আঁটকে যায়। এবার শুরু হয় সেই ছড়িয়ে পড়া ইমুদের চারদিক থেকে আক্রমণ। বাধ্য হয়ে সৈনিকদের দল বন্দুক ফেলে নিজের জীবন বাঁচাতে গাড়িতে উঠে যায়।
এভাবেই সেদিন ইমুরা সমস্ত সৈনিকদের পরাজিত করে।
আজ ২৫ শে বৈশাখ। কবিগুরুর আগমন দিবস, আজ কবিগুরুকে ছেড়ে কথা বলা যায় কি করে? নিচে থাকছে কবিগুরুর কিছু মজার ঘটনাঃ-
রবীন্দ্রনাথের মজার ঘটনা
সাহিত্যিক শ্রী বলাইচাঁদ, লোক মধ্যে তিনি বনফুল নামেই অধিক পরিচিত। তাঁর এক ছোট ভাই ছিল। তাঁর ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করার জন্য শান্তিনিকেতনে গমন করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অন্যদের কাছে বিস্তারিত জানছিলেন। তখনই কেউ একজন তাকে বলে যে, রবীন্দ্রনাথ কানে কম শোনেন। এরপর তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাকে দেখে রবীন্দ্রনাথ মুচকি হেসে বললেন- “কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ছোট ভাই কানাই নাকি?” তখন বলাইচাঁদ-এর ভাইয়ের মাথায় চলে আসে যে, রবীন্দ্রনাথ কানে কম শোনেন। তাই তিনি জোরে চেঁচিয়ে বললেন-“ আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।“ রবীন্দ্রনাথ হেঁসে বলে উঠলেন- “ না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে শানাই।“
আরও পড়ুনঃ-
ঐতিহাসিক মজার ঘটনা
রবীন্দ্রনাথের লেখা- “আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে….”গানটি আমরা সবাই শুনেছি। এই গানটির সঙ্গে একটি দারুন মজা লুকিয়ে রয়েছে। ইংল্যান্ডের মরিস সাহেব শান্তিনিকেতনে ইংরেজী এবং ফরাসি পড়াতেন। তিনি প্রায়ই রবীন্দ্রনাথের গান গুন গুন করতেন। একদিন তিনি তাঁর তৎকালীন ছাত্র প্রমথনাথ-কে ডেকে বললেন- “আমাদের গুরুদেব চিনির( তিনি খবার চিনির কথা ভেবেছিলেন) উপর একটি দারুন গান লিখিয়াছেন, গানটি দারুন মিষ্টি” এরপর তিনি গানটি গাওয়া শুরু করে দিলেন-“আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাকো সিন্ধুপারে” এই কথাটি শুনে প্রমথনাথ মনে মনে হেঁসে বললেন- “চিনির গান তো মিষ্টি হবেই, কিন্তু এরকম ব্যাখ্যা আপনাকে কে দিয়েছে?” মরিস সাহেব বলে উঠলেন_ “স্বয়ং গুরুদেব আমাকে এই গানের ব্যাখ্যা দিয়াছেন”
ঐতিহাসিক মজার ঘটনা top amazing 4 funny historical incidents
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।