(এক তরফা প্রেমের গল্প শিক্ষকের সাথে প্রেমের গল্প) কখনো কখনো আমাদের প্রেম গুলি হয়ে যায়, one sided love story-র মত। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে, কলেজ পড়ুয়া স্মৃতির সাথে।। সে তার শিক্ষকের সাথে প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু যতক্ষণে তার এই নেশা কাটে ততক্ষণে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে পৃথিবীতে। তাহলে চলো স্মৃতির সেই এক তরফা প্রেমের গল্পটি পড়া যাক।
শিক্ষকের সাথে প্রেমের গল্প। এক তরফা প্রেমের গল্প।
বর্ধমান কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী স্মৃতি। অনেকটা হাবাগোবা সহজ সরল প্রকৃতির। গ্রামের মেয়ে, শহরে পড়াশোনার জন্য থাকে, কিন্তু একটা বছর পেড়িয়ে গেলেও, শহরের পরিবেশের সাথে ঠিক মত মানিয়ে নিতে পাড়েনি সে। এখনও অন্যদের সাথে কথা বলতে বলতে গ্রামের কথার ছাপ চলে আসে। পড়াশোনায় সে মন্দ নয়, তবে শহরের ব্যস্ত জীবনের সাথে সে মানিয়ে নিতে পাড়ছে না। কেউই তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় না, কারণ একটাই, সে নাকি অনেক গ্রামীণ স্বভাবের। সে নাকি আডভান্স নয়। কিন্তু তাতে স্মৃতির কোনো মাথা ব্যাথা নেই, সে একা থাকতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
দিনটা ছিল সোমবার, কলেজের একজন শিক্ষক আজ অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন, তার পরিবর্তে নতুন শিক্ষক আসবেন। লম্বা ভাষণের পড় শিক্ষক বিদেয় নিলেন। শিক্ষকের লম্বা ভাষণের সুরে স্মৃতির ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে। কিন্তু নতুন শিক্ষকের গলার আওয়াজ শুনে তার সেই ভ্রম কেটে গেল। বাঃ অসাধারন গুছিয়ে কথা বলেন তিনি। কথা বলার ভঙ্গিম দেখলে যে কেউ তার কথার প্রেমে পড়তে বাধ্য। দারুন লাগল স্মৃতির। এতদিন তো সে এরকমই একজন শিক্ষকের সন্ধানে ছিল।
দুইমাস বেশ কেটে গেল। স্মৃতির ইতিহাস বিভাগ একটি ট্যুর এর আয়োজন করল, দার্জিলিং-এ। সাতদিনের ট্যুর। সবাই তো সবার মত বন্ধু পেয়ে গেছে, কিন্তু মুশকিলটা হল স্মৃতির। কারণ তার যে কোনো বন্ধু নেই। একা একা সে কিভাবে সেখানে সাতটা দিন কাটাবে? তাই সে ঠিক করে সে ট্যুর-এ যাবে না। সে শিক্ষককে জানাতেই, নতুন শিক্ষক জানায়, বন্ধু নেই তো কি হয়েছে, আমরা তো আছি। কেউ তোমার সাথে না ঘুরলে তুমি আমার সাথেই ঘুরতে পারো।

সেই নতুন শিক্ষকের প্রতি স্মৃতির আগ্রহ আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। স্মৃতিদের ইতিহাস বিভাগ এখন দার্জিলিং-এ। সবাই নিজের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরছে। ফটো ক্লিক করছে, সেলফি নিচ্ছে, কিন্তু স্মৃতি! সে আছে নতুন শিক্ষকের সাথে।
-আচ্ছা স্মৃতি সবাই তো ফটো তুলতে ব্যস্ত, তুমিও যাও তাদের সাথে ফটো তুলো।
-না,স্যার তারা আমার সঙ্গে কথা বলে না।
-কেন? তুমি কি কিছু ভুল কাজ করেছো। লজ্জা করো না, আমাকে এখানে বন্ধুর মতই ভাবতে পারো।
-না, স্যার আমার অপরাধ একটাই, আমি নাকি ঠিক মত কথা বলতে পাড়ি না। আমাকে তারা গেয়ো ভূত বলে ক্ষ্যাপায়।
-তাই নাকি, এসব তো মোটেই ভালো নয়।
-আচ্ছা, যাক গে, তোমার মোবাইলটা দাও আমি ফটো ক্লিক করে দিচ্ছি।
-উঁহু, এরকম ভাবে না, গাছে একটু হেলান দাও,
-হুম পারফেক্ট,
– বাঃ স্যার আপনি তো খুব সুন্দর ফটো ক্লিক করেন।
-এবার চলো ওই ঝরনাটার সামনে দাড়াও। আরেকটু ডান দিকে সরে যাও। হুম একদম পারফেক্ট।
এভাবেই, সেই নতুন শিক্ষকের সাথে আনন্দে কেটে যায়, ট্যুরে আসার চারটা দিন। পঞ্চম দিন, সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। কিন্তু স্মৃতি নেই। সব শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্মৃতির খোঁজ শুরু করে দিলেন, কিন্তু কেউই স্মৃতির কোনো কিনারা করতে পাড়লেন না। তার সহপাঠীরাও কিছু বলতে পারলো না। ফোন করলেও স্মৃতি ফোন তুলছে না।
পড়ে রইল খাবার টেবিল, পড়ে রইল খাবার। সবাই স্মৃতির খোঁজ করতে হোটেল ছেড়ে বাইরে চলে গেল। কিন্তু এই অচেনা জায়গা, চারিপাশে এত উঁচু উঁচু পাহাড়, আর খাত, এখানে একজন মানুষ কোথায় আছে সেটা বেড় করা খুবই মুশকিল। অবশেষে দার্জিলিং পুলিশের সহায়তায়, স্মৃতির ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে খুঁজে পাওয়া গেল। স্মৃতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, মাথা দিয়ে বিপুল পরিমাণে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে।
দার্জিলিং-এর এত ঠাণ্ডাতেও সব শিক্ষক-শিক্ষিকারা ঘামতে শুরু করে দিয়েছেন। কারণ স্মৃতির কিছু হয়ে গেলে তার পরিবারের কাছে তারা কি জবাব দিবেন? স্মৃতিকে দার্জিলিং জেলা হসপিটালে পাঠানো হল। নতুন শিক্ষকটি, স্মৃতির সব সহপাঠীদের আচ্ছা সে বকা দিতে শুরু করে দিলেন। একজন সহপাঠীকে এভাবে নীচ চোখে দেখা একদম অনুচিত। সে গ্রামের হলে কি হবে, তারও তো মন আছে, তারও তো ইমোশন আছে, সেও তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। এইসব বলতে বলতেই শিক্ষকের কাছে ফোন আসে, তাড়াতাড়ি B+ রক্ত দরকার, নাহলে স্মৃতির জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে।




সব শিক্ষক-শিক্ষিকারা ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যস্ত। এখানে ৪৫ জন ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা আছে কারও রক্ত কি B+ নয়। সবাই চিন্তিত। সহপাঠীদের মধ্যে এই গ্রুপের রক্তের থাকলেও তারা কিছু বলছে না। অবশেষে সবার নীরবতা কাটিয়ে সেই নতুন শিক্ষক বলে উঠলেন-
রক্ত পেয়ে গেছি, এত ভাবনা করছি কেন আমরা? তখন থেকে প্রবল চিন্তায় আমার নিজেরই ব্লাড গ্রুপ ভুলে গেছি, আমার তো মনেই নেই যে, আমার নিজেরই ব্লাড গ্রুপ B+. বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকারা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। সেই নতুন শিক্ষক দ্রুত চলে গেলেন হসপিটালে। সেখানে দুই ব্যাগ রক্ত দিলেন। ট্যুরের মজাটাই যেন মাটি হয়ে গেল। নিরাশ হয়ে সবাই বাড়ির পথে পা বাড়াল।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্মৃতি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল। আবার শুরু হয়ে গেল সেই প্রতিদিনের রুটিন। তবে এবারের রুটিনের নতুন সংযোজন হল, সেই নতুন শিক্ষক প্রতিদিনই কিছু সময় স্মৃতির জন্য ব্যয় করত। তিনি চাইছিলেন, স্মৃতিকে আরেকটু অ্যাডভান্স করতে, আরেকটু পরিবেশের সাথে অভিযোজন ঘটাতে সাহায্য করতে। প্রতিদিন তিনি স্মৃতিকে, কিভাবে সবার সাথে কথা বলতে হয়, কোন পরিবেশে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় ইত্যাদি সব কিছুর প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন।
ধীরে ধীরে স্মৃতি সেই নতুন শিক্ষকের প্রেমে পড়ে যায়, নিজের অজান্তেই তার ভালোলাগা শুরু হয়ে যায়। তবে সে কখনো বলার সাহস পায়নি, কারণ- হাজার হলেও শিক্ষক বলে কথা। যতই দিন যায়, ততই সেই শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসাটাও বেড়ে যায়। কিন্তু সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ সে কিছুতেই করতে পাড়ে না।
এভবেই আবারও কেটে যায় পুরো বছর। স্মৃতি তৃতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হয়। সেই নতুন শিক্ষকের জন্য, এক আমুল পরিবর্তন চলে আসে স্মৃতির মধ্যে। সে শিখে যায়, কিভাবে কোন পরিবেশে কেমন করে মানিয়ে নিতে হয়।
রবিবার ছিল, স্মৃতি ঠিক করে, কাল অর্থাৎ সোমবার কলেজ ছুটির পড়, সে সেই শিক্ষককে তার মনের কথা বলবেই বলবে, কারণ সে আর তার ভালোবাসা চেপে রাখতে পাড়ছে না। হাজার হলেও শিক্ষক এই কথাটা বেশিদূর বাড়াবেন না। স্মৃতি ঠিক করে, সে বাজারে গিয়ে একটি ফুলের বাকেট কিনবে, তারপর একটি চিঠি লিখে, ফুলের মধ্যে সেটি লুকিয়ে রাখবে। শিক্ষককে দিয়েই সে দৌড়ে পালিয়ে যাবে। এই কথা ভেবে স্মৃতি কয়েক বছর থেকে জমানো তার মাটির ভাঁড়ার টা ভেঙ্গে কিছু টাঁকা সেখান থেকে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
পড়ুনঃ- স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প
কারণ, কাল ১২ টার আগে দোকান খুলবে না। বিকেল বেলা স্মৃতি বাজারে গিয়ে একটি সুন্দর ফুলের বাকেট কিনে পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। কি মনে করে সে হাঁতে ফুল নিয়েই পার্কের ভিতরে ঢুকে গেল। একি ইনি তাদের সেই নতুন শিক্ষক না! হুম তিনিই, কিন্তু তার সাথে ওটা কোন মেয়ে। স্মৃতি ভাবল, স্যারের কোনো বন্ধু হবে হয়ত, আরেকটু এগিয়ে যেতেই, স্মৃতির নজরে এল, না না বন্ধু নয়, একান্ত আপন কেউ, কারণ দুইজনে অনেকটা কাছাকাছি, আর হাত ধরে বসে আছেন, আর মেয়েটার মাথা স্যারের কাঁধে, আর মেয়েটা কি যেন বলছে, ঠিক মত বোঝা যাচ্ছে না।
শিক্ষক স্মৃতিকে লক্ষ্য করেননি। কারণ স্মৃতি পিছন দিক দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল। এবার স্মৃতি নিশ্চিত হয়ে যায়, যে সেই মেয়েটা স্যারের একদম কাছের কেউ, হতে পাড়ে স্যারের পরিণীতা। কিন্তু সে যে স্যারের প্রেমে পড়ে গেছে, স্যার কি এতদিন কিছুই বোঝেন নি! স্মৃতির পা একটা ভাঙ্গা ডালে পড়তেই শব্দ করে উঠল, স্যার শুনতে পেড়ে পিছনে মাথা ঘুড়িয়ে স্মৃতিকে দেখলেন।
স্মৃতি কি করবে কিছুই বুঝে, উঠতে পাড়ছিল না।
-আরে স্মৃতি তুমি এখানে?
-হ্যাঁ স্যার ভাবলাম একটু এদিকে ঘুরে যাই। কাঁপা গলায় স্মৃতির উত্তর।
-তা হাঁতে এত ফুল কিসের জন্য?
-না, স্যার তেমন কিছু না, এমনিই। আমার ভালো লেগেছে তাই বাজার থেকে কিনে নিয়েছি।
-এদিকে এসো তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই।
-ধৃতি এ, হল আমার ছাত্রী স্মৃতি, আর স্মৃতি, ইনি হলেন আমার পরিণীতা ধৃতি।
-বাঃ স্যার আপনাদের বেশ মানিয়েছে।
-হাঁ হাঁ হাঁ। তাই বুঝি,




এরপর স্মৃতি, তাদের সাথে কিছুক্ষণ কাঁটায়, এতক্ষণ সে জোর করে চোখের জল ধরে রেখেছিল। এদিকে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছে, স্যারের কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে সে রাস্তায় নেমে আকাশের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে। শুকতারাটাও যেন, স্মৃতির বেদনার মজা নিচ্ছে, কেমন যেন মিটিমিটি হাসছে, আর বলছে, “প্রেম সোজা নয় রে, মামনি, সোজা নয়”
রাস্তার পাশে একটা ডাস্টবিন দেখে, ফুলের বাকেটটি স্মৃতি সেখানে ফেলে দিয়ে, নিজে নিজেই বলতে থাকে, প্রেম হয়নি তো কি হয়েছে, তার মত মহান মানুষের রক্ত তো আমার শরীরে বইছে, এটাই অনেক। এরপর চাঁদের আলোর, হালকা নিস্তব্ধতায়, ধীরে ধীরে, সেই গ্রামের মেয়ে স্মৃতি নতুন দিগন্তের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
আমাদের টেলিগ্রামে আড্ডা দেওয়ার গ্রুপ :- https://t.me/charpatraOfficial
© All copyright reserve to ADMIN. You don't have the right to use this story for creating videos or such like things. You have to take permission and license from admin.
গল্প বা কবিতা লিখতে ভালোবাসো? যুক্ত হতে পারো আমাদের সাথে, আর তোমার ভাবনা চিন্তা প্রকাশ করতে পারো। কিভাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে, সেই সম্পর্কিত ভিডিওর লিঙ্ক এই পেজের একটু নীচে পেয়ে যাবে।
শিক্ষকের সাথে প্রেমের গল্প। ওয়ান সাইড লাভ। এক তরফা প্রেমের গল্প। one sided love story. দুঃখের প্রেমের গল্প।




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।