আজকের bhuter golpo টি একটু আলাদা ধরনের। আমি ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করি না, কিন্তু কয়েক বছর আগে আমার সাথে যে হাড় হিম করা ভুতের ঘটনাটি ঘটে গেছে, তারপর থেকে মনে হয়েছে ভূত বা তেমন কিছু হয়ত পৃথিবীতে আছে। এবার ভুতের গল্পটি বিস্তারিত জানানো যাক।

BHUTER GOLPO. রান্নাঘরে কার আত্মা?

কলেজ জীবনটা শেষ হতে না হতেই, “কিছু একটা কর বাবু”, বলে পরিবারের চাপ এসে পড়েছিল আমার মাথায়। মধ্যবিত্তের পরিবারের এটাই মূল সমস্যা। পৃথিবীটাকে ঠিক মত চিনতে না চিনতেই পরিবারের হালটা ধরার কাতর আবেদন চলে আসে। আর আসবে নাই বা কেন? এতদিন অনেক খরচ হয়ে গেছে আমার পেছনে, আর পাড়ছে না। ইচ্ছে ছিল, আরও পড়াশোনা করব, কারণ আমার রেজাল্ট কোনো মন্দ ছিল না। বাধ্য হয়েই পরিবারের কথা মেনে নিলাম।

একটা ভালো চাকরির খোঁজ করতে করতে চলে এলাম আমার শহর জলপাইগুড়ি ছেড়ে মহানগরী কলকাতায়। কলকাতার পরিবেশটা কেমন যেন ভূতুড়ে ভূতুড়ে মনে হল আমার কাছে। বিশেষত গলির পাশের সেই পুরানো বাড়ি গুলি, একেকটা দেখে গা শিউড়ে উঠে কখন যে হুরমুরিয়ে ভেঙ্গে পড়বে তার কোনো ঠিক নেই। তবে পুরো কলকাতা নয়, বরং কয়েকটা এলাকাতেই এরকম দৃশ্য নজরে আসবে।

অবশেষে আমার এক বন্ধুর সহায়তায় এক বেসরকারি আইটি কোম্পানিতে একটা চাকরি পেয়ে গেলাম। মাস গেলে মাইনে যা পাই তা বেশ ভালোই। তবে খাটুনিটা একটু বেশি। টানা নয় ঘণ্টা কাজ করতে হয়। প্রথম প্রথম কয়েক দিন বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। আর তার থেকেও বেশি অসুবিধা হচ্ছিল, আমার রাতের থাকার ব্যবস্থা নিয়ে। অফিসের আশেপাশে কোথাও ভালো মানের একটা বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না।

BHUTER GOLPO
BHUTER GOLPO ভুতের গল্প

আবার দ্বারস্থ হলাম আমার সেই বন্ধুর। প্রথম কয়েকমাসের বেতন দিয়ে অবশেষে একটা ফ্ল্যাট জোগাড় হল। বেশ কম দামেই মিলল। কারণ কলকাতায় এত কম দামে ফ্ল্যাট আশা করাই যায় না। উফফ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এতদিন ভালোমত ঘুমও হয়নি। এরপর সেই ফ্ল্যাটে বাড়ি থেকে মা-বাবা কাকুরা আসে আমার ফ্ল্যাট দেখতে।

এই ফ্ল্যাটটা নাকি অনেকদিন ধরে পড়ে ছিল। তাই জঞ্জাল গুলো পরিষ্কার করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। অবশ্য ফ্ল্যাটের মালিকও হাত লাগিয়েছিলেন। ফ্ল্যাটটার ভেতরটা দেখতে বেশ সুন্দর। বিশাল একটা হল-রুম আর তার ডান পাশেই রয়েছে রান্নাঘড়। রান্নাঘড়ের ঠিক উল্টোদিকে রয়েছে বাথরুম। বেশ ভালোই লাগলো দেখে।

আমি আবার একটু খোলা-মেলা বেশি পছন্দ করি। এই ফ্ল্যাটটারও ভেতরে দরজা প্রায় নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র চৌকাঠ লাগানো। আর বারান্দায় লাগানো কাঁচ দিয়ে বাইরেটা বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। তবে একটা জিনিস আমার পছন্দ হয়নি। সেটি হল বাঁদর। এই এলাকাটিতে এত বাঁদর রয়েছে, আর বলার মত না এই তো সেদিন দেখলাম কয়েকটা বাঁদর কার Under-wear নিয়ে যেন খেলা করছে। সে যাই হোক অনেক দিন থেকে পড়ে থাকার ফলে বাইরেটা যেমন অপরিষ্কার ভেতরেরটা ঠিক তার উল্টো। কারণ ভেতরটা দেখে মনে হবে। কেউ যেন কিছুক্ষণ আগেই পরিষ্কার করে রেখে গেছে। ভাবলাম ভিতরে হয়ত কাজের লোক এসে প্রতিদিন পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।

ভূতুড়ে জায়গা সত্য ভূতুড়ে ঘটনা

এরপর মা-বাবা আর কাকুরা বাড়ি ফিরে যায়। একদিন অফিস থেকে ফ্ল্যাটে ফিরছি। রাস্তায় আমাদের ব্লকের এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল। সে অন্য এক কোম্পানিতে কাজ করে। আমি ভাবতেই পারিনি যে এরকম কাউকে পেয়ে যাব। তবে সে আমার অনেক আগে থেকেই কলকাতায় কাজ করছে। তবে সে এখনও ভাঁড়া বাড়িতে থাকে। আমার সাথে দেখা হলে আমি তাকে জোর করে আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসি। আমি জানাই আজ এখানে থাক, কাল আবার তার অফিসে চলে যাবে।

কিন্তু সে যেতে নারাজ। কারণ সে জানায়, তার প্রতিদিন সকাল ৮ টায় কাজে যোগ দিতে হয়। আর আমি উঠি ৯ টায়। আমি জানাই- আমি সকাল ৬ টার অ্যালার্ম সেট করে দিব। তুই উঠে খাবার বানিয়ে চলে যাবি অফিসে।

বেজায় গরম। তাই আমরা ঠিক করি, হল রুমেই ঘুমাবো। খাওয়াদাওয়া শেষে, একটা খাটিয়া টেনে নিয়ে এসে দুইজনে গল্প করতে বসি। গল্প করতে করতে কখন যে ১২.০০ টা বেজে গেছে কিছুই বুঝতে পারিনি। তাকে খাটিয়া ছেড়ে দিয়ে আমি মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ি। হল ঘড়ে জ্বলছে ড্রিম লাইটের মিটিমিটি আলো। এরপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি কিছুই মনে নেই।

তখন রাত প্রায় তিনটে হবে। হঠাৎ কেন জানি না আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি আমার রান্নাঘড়ের দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে ছিলাম। চোখ খুলতেই দেখি, কেউ একজন আমার রান্নাঘরে ঢুকছে। আমি কিছু বলে উঠার আগেই দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল। তবে আমি তখনো অবাক হয়নি। কারণ আমি ভেবেছিলাম আমার সেই বন্ধু হয়ত এখনই তার টিফিন তৈরি করছে। কিছু না ভেবেই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। চোখ সবে মাত্র বন্ধ করব, তখনই দেখি কেউ একজন রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বাথরুমে চলে গেল। আবার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাথরুম থেকে রান্নাঘরে চলে গেল।

হাড় হিম করা ভুতের গল্প। বাংলা ভুতের গল্প। bhuter golpo
হাড় হিম করা ভুতের কাহিনী। বাংলা ভুতের গল্প। bhuter golpo

এবার আমি খুব বিরক্ত হয়ে গেলাম। মোবাইলে টাইম দেখি সবে মাত্র ৩ টে ৫ মিনিট। আমি বিরক্তির সুরেই বললাম- “আরে এখনও ছয়টা বাজতে তিন ঘণ্টা বাকি, আর এই অহম্মকটা এখনই উঠে পড়েছে।” বলতে বলতেই আমি উঠে বসি। আর তার খাটিয়ার দিকে তাকাই। কিন্তু একি, আমার বন্ধু তো দিব্যি সে ঘুমাচ্ছে। তাহলে রান্না ঘড়ে কে?

এরপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি আর কিছুই মনে নেই। পড়ের দিন সকাল হতে না হতেই, আমি রান্নাঘরে যাই, সবকিছুই ঠিক-ঠাক আছে। এই ঘটনা নিয়ে আমি কারো কাছেই মুখ খুলিনি।  কারণ হয়ত দেড়িতে ঘুমোতে যাওয়ার কারণে ঘুমের ঘোরেই আজব-গজব অবাস্তব কিছু দেখে ফেলেছি। আবার যদি কাউকে বলে ফেলি, তারা হয়ত আমার ফ্ল্যাটে আসতেই ভয় করবে। তাই আর কাউকেই এই ঘটনাটি জানাই নি।

এরপর কেটে গেছে তিন মাস। এই তিনমাসের মধ্যে আর কোনোদিনও সেদিনের রাতের মত অবাস্তব কিছু নজরে আসেনি। আমাদের পাড়ার ডাক্তার কাকু কলকাতায় আসে। সে তার ভাইকে কলকাতা বিমান বন্দরে দিতে গিয়েছিল। তার ভাই দুবাইতে থাকে।  কিন্তু প্লেন টেক-অফ করে গিয়েছিল। পরবর্তী প্লেন সোমবার সকালে তাই সে এবং তার ভাই  আমার ঠিকানা নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে এসে হাজির হয়ে যায়, এবং সেখানে দুই রাত কাটিয়ে পরশুদিন সকাল বেলা এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করে।  

কিন্তু আমার কাছে সেই রাত কাটানো বন্ধুর আজ জন্মদিন তাই সেখানে আমাকে যেতে হবে, আমি ডাক্তারকাকু ও তার ভাইকে বলে যাই, “আমি হয়ত আজ ফিরব না, তোমরা রান্না করে খেয়ে নিও। এরপর আমার সেই বন্ধুর বাড়িতে চলে যাই।

পড়ুনঃ- অ্যানাবেলা অভিশপ্ত পুতুলের সত্য কাহিনী 

পড়ের দিন সকাল বেলা আমি ফ্ল্যাটে আসতেই দেখি, তারা দুইজনে তৈরি হয়ে আমার জন্য বসে অপেক্ষা করছেন। তাদের মুখের দিকে দেখতেই আমি কেমন যেন বিস্মিত হলাম। তাদের মুখটা কেমন যেন, ভয়ের চোটে ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে, যেন কোনো ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেছে। তাদের চোখ ভিতরে ঢুকে গেছে। বোঝাই যাচ্ছিল, সারারাত তারা জেগে কাটিয়েছেন। আমাকে দেখতেই তারা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, তাহলে তুমি থাকো আমরা চলি।

আমি বললাম, আপনাদের ফ্লাইট তো সোমবার। আজ তো রবিবার। আজই কেন যাচ্ছেন? আজকের রাতটা কোথায় কাটাবেন? তারা বলল- “কোনোমতে হোটেলে কাটিয়ে দেব। দরকার হলে রাস্তা তেও কাটিয়ে দেব রাত, কিন্তু এই ঘড়ে আর এক মুহূর্তও থাকতে গা ঝিমঝিম করছে।“

তাদের এই কথা, মাস তিনেক আগে আমার সাথে ঘটে যাওয়া সেই দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দিল। আমি তাদের কাছে জানতে চাই, কি হয়েছিল তাদের সাথে! তারা জানায়- “খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা ঘুমিয়েছি, তখন রাত প্রায় তিনটে, এক লোক এসে আমাকে ডেকে তুলল, আর বলল- তাড়াতাড়ি আমার সাথে অফিসে চল, আমার মোবাইল ফোনটা সেখানেই ফেলে এসেছি। লোকটাকে দেখে বেশ ভদ্রই মনে হচ্ছিল। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকা সত্যেও সে কি করে এখানে এল কিছুই বুঝতেছিলাম না।

এরপর আমাদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পড় সে রান্নাঘড়ে চলে যায়। রাত কেটে সকাল হয়ে যায়, সেই যে লোকটা রান্নাঘরে গেল, সে আর ফিরে এল না। এরপর আমরা সেখানে যাওয়ার আর সাহস করিনি।“

তাদের এমন ভূতুড়ে কথা শুনে আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমি ঘামতে শুরু করে দিয়েছি। এরপর আমরা সবাই মিলে রান্নাঘড়ে যাই। সবকিছুই ঠিক-ঠাক আছে। আমি ফ্রিজ খুলে দেখি, সেখানে পনীর নেই। তবে অন্য কিছু না নিয়ে শুধুমাত্র পনীরই নেই কেন, তার কিনারা করতে পাড়লাম না।

এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে আমি ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে নতুন ফ্ল্যাটে উঠি। এরপর আমি জানতে পাড়ি যে, আগে আমি যে ফ্যাটটিতে ছিলাম সেটি ভূতুড়ে ফ্ল্যাট। আজ থেকে দশ বছর আগে, যখন ওই ফ্ল্যাটটা তৈরি হচ্ছিল, তখন একটি অঘটন ঘটে যায়। আসলে সেই ফ্ল্যাটটি যে জমির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে একটি হোটেল ছিল, জোর করেই তার জমি কিনে নেয় এক মাড়োয়ারি লোক। এরপর সেখানে ফ্ল্যাট বানানোর পরিকল্পনা করে।

HAR HIM KORA BHUTER GOLPO VOYANOK BHUTER GOLPO
HAR HIM KORA BHUTER GOLPO VOYANOK BHUTER GOLPO bangla image
<

কিন্তু সেই ছোট হোটেলের মালিকটি জানায় যদি ফ্ল্যাট বানাতেই হয় তাহলে তার মরদেহের উপর দিয়ে যেতে হবে। সে তার আস্তানা ছাড়তে নারাজ ছিল। এরপর জবরদস্তি সেখানে কাজ শুরু হয়। কে বা কারা রাতের অন্ধকারে এসে তাকে খুন করে পালিয়ে যায়। পড়ের দিন সকালে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। সে খুব ভালো মানুষ ছিল, সারাদিনের বেঁচে যাওয়া খাবার গরীব মানুষদের মধ্যে দিনশেষে সে বিলিয়ে দিত।

তাকে হত্যা করা হলেও, তার আত্মাকে কিছুতেই শান্ত করা যায়নি। সেই ফ্ল্যাটটির রান্না ঘড়ে এখনও তার আত্মা ঘুরে বেড়ায়। এর আগেও অনেকেই সেই ফ্ল্যাটে এসেছিল, কিন্তু কেউই দুই-তিন মাসের বেশি টিকতে পাড়েনি।    

লেখা-লেখি করা যদি আপনার নেশা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পাড়েন। কিভাবে যুক্ত হবেন, সেই সম্পর্কিত ভিডিওর লিঙ্ক এই পেজের একটু নীচে পেয়ে যাবেন।

হাড় হিম করা ভুতের কাহিনী। বাংলা ভুতের গল্প। bhuter golpo har him kora bhuter golpo. voyanok bhuter golpo.

Spread the love

Leave a Reply