চারটি ঈশপের গল্প নিয়ে আজকের এই লেখাটি। এখানে থাকা ঈশপের শিক্ষামূলক গল্পের শেষে শিক্ষণীয় নীতিকথা বলে দেওয়া রয়েছে। সুতরাং পাঠক গল্প থেকে কি শিক্ষা পাওয়া গেল সেটিও সহজেই বুঝতে পাড়বেন। এই নতুন শিক্ষামূলক গল্প গুলির নিহিত অর্থ অনুভব করতে থাকুন।
ঈশপের গল্প। নীতিকথার গল্প। নতুন শিক্ষামূলক গল্পঃ-
ঈশপের গল্প। নীতিকথার গল্পঃ- ০১
গ্রামের ধান আর ভুট্টা ক্ষেতের আড়ালে মাটি গর্ত করে এক ইঁদুর বাস করত। তার আবার সখ্যতা ছিল এক শহরের ইঁদুরের সাথে। একদিন গ্রামের ইঁদুর তার শহুরে ইঁদুর বন্ধুকে তার বাড়িতে তার জন্মদিন উপলক্ষে নিমন্ত্রণ জানাল।
শহুরে ইঁদুর, ভীষণ খুশি মনে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এল। কিন্তু খাবার দেখেই তার মুখ চুপসে গেল। রাশি রাশি ধান আর ভুট্টা! এ আবার কেমন খাবার রে বাবা! সে মুখে বলল না কিছুই, শুধু তার বন্ধুকে বলল- “একদিন আমাদের এলাকায় এসো, দেখবে ওখানে কত রকমের আইটেম আছে।”
কিছুদিন পড়, সেই গ্রামের ক্ষেতের ইঁদুরটি তার শহুরে বন্ধুর বাড়িতে গেল। গিয়েই সে দেখল, চারিদিকে দামি দামি খাবারের পশরা সাজানো। পিজ্জা, বার্গার, জ্যাম, জেলি, রুটি ইত্যাদি আরও কত কি! এই সব খাবারের ভাণ্ডার দেখে গ্রামের ইঁদুরটি অবাক হয়ে খাবারের দিকেই তাকিয়ে থাকল। এরকম খাবার খাওয়া তো দূর, সে কোনোদিনও চোখেও দেখেনি। সে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকে।
গ্রামের ক্ষেতের ইঁদুরটি শুধু ভাবছে, কখন খাওয়ার সময় হবে! কিছুক্ষণ পড় দুই বন্ধু মিলে খাবার খেতে বসল। গ্রামের ইঁদুরটি কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না, যে সে কোন খাবারটা খাবে আর কোন খাবারটা ছাড়বে। সে বারংবার তার দুর্ভাগ্যের কথা চিন্তা করে ব্যথিত হতে লাগল। সে ভাবত লাগল- “আমার ওখানে তো কিছুই নেই, সব সুখ তো এই শহরেই আছে।“
এবার তারা ও কয়েকজন অন্য ইঁদুর মিলে যেই না খাবার মুখে তুলতে যাবে, অমনি যেন কিসের শব্দ এল, সবাই দৌড় দিয়ে লুকিয়ে পড়ল। গ্রামের ইঁদুরটি দেখল, একজন লোক ঘড়ে আসছে। কিছুক্ষণ পড় লোকটি ঘড় থেকে চলে গেলে, সব ইঁদুররা মিলে আবার খাবারের কাছে এল, আবার যেই খাবার নিয়ে একটা কামড় দিয়েছে তেমনি একটা বেড়াল আসার আওয়াজ পেয়ে সবাই আবার দৌড়ে লুকিয়ে পড়ল।
এভাবেই চলতে লাগল, কখনো এক কামড়, কখনো দুই কামড় এভাবে কি খাবার খাওয়া যায় নাকি! বারংবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে গ্রামের সেই ইঁদুরটি বিরক্ত হয়ে তার বন্ধুকে বলল- “থাক বন্ধু আমার এমন সুস্বাদু দামি খাবারের দরকার নেই, যেই খাবার খেতে গেলে এত্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। আমার এলাকায় এরকম দামি খাবার না থাকলেও, যা আছে তা খেতে গেলে আমাকে এরকম ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় না। হতে পাড়ে আমার সেই খাবারে এই খাবার গুলির মত স্বাদ নেই, কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় আমি শান্তিতে খেতে পাড়ি।
আমার ক্ষেতের ধান আর ভুট্টাই অনেক ভালো।“ এই বলে সেই ইঁদুরটি সেখান থেকে তার গ্রামে চলে এল।
শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ-
দারিদ্রতার মধ্যে বিলাসিতা নাও থাকতে পাড়ে, কিন্তু শান্তি থাকে। অন্যদিকে বিলাসিতার মধ্যে ক্ষণিকের সুখ থাকলেও শান্তি থাকে না। তাই নিজের যা কিছু আছে, তাইই নিয়েই সুখে-শান্তিতে থাকা ভালো।
পড়ুনঃ- মজার শিক্ষণীয় গল্প
ঈশপের গল্প। নীতিকথার গল্পঃ- ০২
ময়ূরের সুন্দর পেখম দেখতে কার না ভালো লাগে! আর পাখিদের মধ্যে শুধু ময়ূরেরই এরকম সুন্দর পেখম আছে। এটাই হয়ে উঠেছে তার গর্বের কারণ। তার পেখম নিয়ে সে সর্বদা অহংকার করে। অন্য পাখিদের দেখলেই সে তার পেখম মেলে দেয়, সে দেখাতে চায় যে সে কত সুন্দর।
একদিন সে দেখল একটি হ্রদে একটি বক, মাছ ধরছে। এটি দেখে সে বলল- “ইসস কি, বাজে পাখা তোমার! একদম বিচ্ছিরি দেখতে। আমার তো তোমার পাখা গুলি দেখলেই বমি আসে।“ এই বলতে বলতেই সে তার নিজের পেখম মেলে দিয়ে নাচতে থাকল।
নিজের এমন অপমান শুনে বক আর চুপ থাকতে পাড়ল না। সে বলল- “দেখো ভাই সৃষ্টি কর্তা যাকে যেমন বানিয়েছেন সে তেমনই। এতে অহংকার করার কিছুই নেই। হুম হতে পাড়ে, আমার পাখা গুলি বিচ্ছিরি। কিন্তু এই বিচ্ছিরি পাখা গুলিই আমাকে আকাশে উড়তে সাহায্য করে। আমাকে ওই মেঘের ভেলার মধ্যে দিয়ে উড়ে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু তোমার ওই সুন্দর রঙিন ডানা কি, তা পাড়ে? তাই নিজের রূপ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।“
শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ-
সুন্দরতা নিয়ে অহংকার করে কি লাভ, যদি সেই সুন্দরতা কোনো কাজেই না আসে!
পড়ুনঃ- মায়ের ভালোবাসা শিক্ষণীয় গল্প
ঈশপের গল্প। নীতিকথার গল্পঃ- ০৩
প্রকাশ নামে এক কৃষকের এক গাধা ছিল। সেই গাধা দিয়ে একসময় সে প্রচুর চাষ করত। কিন্তু এখন আর সেইরকম ভাবে গাধাটিকে সে কাজে লাগায় না, কারণ গাধাটি এখন বুড়ো হয়ে গেছে। একদিন প্রকাশ দেখল যে, রাত হতে চললেও, তার গাধাটি এখনও বাড়ি ফিরছে না। কিন্তু সে এতে বিন্ধুমাত্র বিচলিত হল না। কারণ বুড়ো গাধা, এমনিতেও ওটা আর কোনো কাজের না। সারাদিন শুধু থৈ থৈ করে বেড়ায়।
পড়ের দিন সকালে প্রকাশ তার গাধাটিকে খুঁজতে গেল। তার কানে বনের ভিতর থেকে গাধার চিৎকারের আওয়াজ এলো। সে গিয়ে দেখল, তারই গাধাটি একটি অগভীর কুয়োতে পড়ে গেছে। কিন্তু কিছুতেই সে কুয়ো থেকে উঠতে পাড়ছে না।
গাধাটিকে কুয়ো থেকে টেনে তোলার বদলে, প্রকাশ একটি কোদাল নিয়ে এসে কুয়োতে মাটি ফেলতে লাগল। তার কথা হল- ‘এমনিতেই গাধাটি বুড়ো হয়ে গেছে, এটা কোনো কাজের না। শুধু শুধু খাবার খায়। আর তাছাড়াও এটি আর কিছুদিন পড় মারাই যাবে, তখন আবার এটাকে তুলে নিয়ে এসে মাটি দিতে হবে। তার চেয়ে বরং এটাকে এখানেই পুতে দেওয়া ভালো। বেশি খাটুনি করতে হবে না। ওটা ওখানেই মারা যাবে।‘ এই ভেবে সে কুয়োতে গাধাটির উপড়ে মাটি ফেলতে লাগল।
গাধা বলে কি তার বুদ্ধি-শুদ্ধি নেই! প্রকাশ একদিকে মুখ করে কুয়োতে মাটি ফেলেই যাচ্ছে। যখন তার মনে হল, কুয়োটি ভড়ে গেছে, তখন সে কুয়োর দিকে তাকিয়ে দেখল গাধাটি মাটির উপড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে প্রকাশ যখন গাধাটির শরীরের উপর মাটি ফেলছিল, তখন গাধাটি গা ঝাড়া দিয়ে, সেই মাটি ফেলে দিতে থাকে, এতে করে মাটি ধীরে ধীরে কুয়োতে জমা হতে হতে কুয়োটি বন্ধ হতে থাকে আর এভাবেই গাধাটি উপড়ে উঠে যায়।
শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ-
আপনি মানুষের যতই উপকার করুন না কেন, প্রয়োজন শেষ হলে তারাই আপনাকে ত্যাগ করতে চাইবে। আপনাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে। হতেও পাড়ে আপনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতেও সে দ্বিধা বোধ করবে না। এমতাবস্থায় নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে, এদের থেকে দূরে সরে যাওয়াই মঙ্গল।
ঈশপের গল্প। নীতিকথার গল্পঃ- ০৪
আমাদের গ্রামের শেষে যে জঙ্গলটা রয়েছে, সেখানে রয়েছে একটা আস্ত বিশাল গাছ। যেমন সুবিশাল এর ডালপালা, তেমনই গভীর এর শিকড়। চারিদিকে যখন প্রচণ্ড রোদে সবাই নাজেহাল হয়ে পড়ে, তখন সেই গাছের তলায় গেলে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভূত হয়। এই গাছটি যেমন প্রকাণ্ড, তেমনই প্রকাণ্ড এর বেড়।
এই বিশাল গাছটির নিচেই রয়েছে একটি হলুদ গাছ। হলুদ গাছ, বেচারির অত শক্তি নেই, একটি হাওয়াতেই সে এদিক ওদিক দুলতে থাকে। একদিন এই গাছ দুটির মধ্যে কথা হচ্ছিল- “আরে ও হলুদ ভাই, তোমার শিকড় গুলি এত ক্ষুদ্র কেন, তোমার শিকড় গুলিকে মাটির আরও ভিতরে প্রবেশ করাও, আর আমার মত মাথা উঁচু করে থাকো।
এটি শুনে হলুদ গাছটি বলল- “আসলে দাদা, আমি এভাবেই নিরপদ অনুভব করি।“ এটি শুনে সেই প্রকাণ্ড গাছটি হেঁসে উঠল, এবং বলল- “আমার শেকড় কত গভীরে রয়েছে, তুমি জানো! লোকেরা চেষ্টা করলেও আমাকে সহজে উপড়ে ফেলতে পাড়বে না। আর তোমাকে তো একটানেই আগা গোঁড়া শুদ্ধ উঠিয়ে ফেলবে।“
এই বার্তালাপের কিছুদিন পড়, সেই এলাকায় প্রচণ্ড কালবৈশাখীর দাপটে গোটা জঙ্গল ছারখার হয়ে গেল। বাদ যায়নি সেই বিরাট বলে অহংকার করা গাছটাও। সেও এই ঝড়ের দাপটে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু সেই হলুদ গাছটি, সেটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। হুম তার উপড়েও ঝড়ের দাপট পড়েছে বটে, সেও এদিক-ওদিক নুয়ে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু সে অক্ষত আছে, আর তার সেই প্রতিবেশী বিশাল গাছটা, যে কিছুদিন আগেও নিজের বিশালতা নিয়ে গর্ব করেছিল, সে আজ মাটিতে মিশে গেছে।
শিক্ষণীয় নীতিকথাঃ-
কখন কার ভাগ্যে কি ঘটে, তা বলা মুশকিল। তাই অতিক্ষুদ্রকেও কক্ষনোই ক্ষুদ্র বলে তাচ্ছিল্য করতে নেই।
FOR TELEGRAM UPDATES:- CharpatraOFFICIAL
FOR FACEBOOK UPDATES:- গল্প আর গল্প
“ঈশপের গল্প। ঈশপের শিক্ষামূলক গল্প। নতুন শিক্ষামূলক গল্প। ঈশপের গল্প সমগ্র pdf. নীতিকথার গল্প। new 4 ishoper golpo. bengali best motivational story”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।