আজকের আধুনিক শিক্ষনীয় গল্প টিতে পাঠক খুঁজে পাবেন বাবা-মায়ের দেওয়া অতিরিক্ত স্বাধীনতায় মোবাইলে আসক্ত হয়ে শিশুরা কিভাবে বাবা- মায়ের কোল থেকে সরে যাচ্ছে তারই একটি উদাহরণ।
আধুনিক শিক্ষনীয় গল্পঃ-
কয়েকদিন হলো ছেলেটা ঠিকঠাক কথা শুনছে না, খাচ্ছেও না ঠিকঠাক । বাড়ি ফিরলে এক ছুট্টে এসে জড়িয়ে ধরে সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ” মা জানো আজ এই হয়েছে ?” , ” মা জানো আজ ও এই বলেছে ” , সেসব কিছুই করছে না। হঠাৎ করে কেমন যেন বদলে যাচ্ছে ছেলেটা ।
না আর নয় …. এবার ওর সাথে কথা বলতেই হবে।
সারা বাড়ি খুঁজে দেখলেন মিনু দেবী , কিন্তু কোত্থাও ছেলেকে খুঁজে পেলেন না। একটা অদ্ভুত রকমের ভয়ে তার গলা শুকিয়ে এল। কিন্তু হাতের কাছে জলের বোতল টা আগিয়ে দেওয়ার মতোও কেউ নেই । বা…ব….উউউ বলে চিৎকার করে ডাকতে গিয়েও তার আওয়াজ বের হলো না। চিত হয়ে সেখানেই পড়ে গেলেন ।
মিনু দেবী অর্থাৎ মৃণালিনী দেবী যখন কলেজের ছাত্রী ছিলেন তখন এক কথায় জোরের ওপরেই তার পরিবার , এক উচ্চশিক্ষিত , চাকুরিজীবীর হাতে তার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল । প্রথমে নিরাশ মনে সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেও , তার স্বামী তাকে পড়াশোনা করার অধিকার টা দেয়। তাই গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবার পরেও, স্বামীর ইচ্ছেতে পড়াশোনা টা চালিয়ে যান তিনি। এর মাঝেই তাদের জীবনে ঘর উজ্জ্বল করে আসে তাদের ছেলে । যেন হাসি খুশি আর আনন্দে জোয়ার বয়ে যায় তাদের জীবনে। তিন জনের ছোট্ট সংসার তবে ভীষণ সুখের ।দেখতে দেখতে ছয়টা মাস কেটে যায়।
সকাল থেকে লোকজনের সমাগম থেকে শুরু করে , পুরো বাড়িটাকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল আসলে মিনু দেবীর ছেলের অন্নপ্রাশন ছিল সেদিন । তবে সেই দিনেও কাজের চাপে তার স্বামী বাড়ি ফিরতে পারেননি। রাত্রের ট্রেনে বাড়ি ফেরার কথা ছিল ।
পায়েসের বাটি টা হাতে করেই সন্ধ্যা থেকে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন মিনু দেবি। হঠাৎ করে কে যেন খবরের চ্যানেলটা অন করল , সেই মুহূর্তেই বৈধব্য যন্ত্রণা নেমে এলো মিনু দেবীর জীবনে , ট্রেন টা পাল্টি খেয়েছে তাই অনেকেই নিহত আবার অনেকেই আহত। ক্যামেরার সামনে ঝলসে উঠলো তার স্বামীর রক্ত রঞ্জিত মুখটা। ” হাত থেকে পায়েসের বাটিটা পড়ে গেলো “। পড়ে রইলেন শুধু তিনি আর তার ছয় মাসের শিশু সন্তান ।
পড়ুনঃ- জীবন নিয়ে ৪৯ টি উক্তি
এরপর নিজের ছেলেকে আদর যত্ন ভালোবাসা সবটুকু দিয়ে বড়ো করে তুলেছেন। নিজে সংসার চালোনোর জন্য একটা কোম্পানিতেও join করেছেন। ছেলের সমস্ত আবদার তিনি মেনে নেন। কারণ তার শেষ সম্বল টুকু তার কাছে নিজের জীবনের চেয়েও দামী । তাই তার সীমাহীন ভালোবাসার কাছে শাসনের কোনো স্থানেই নেই। ছোট থেকেই মা কম, বন্ধু হিসেবে , নিজের মা কে পেয়েছে ছেলেটি।
এই তো মাত্র আট মাস আগে মিনু দেবী অফিসের সবাইকে আমন্ত্রণ জানালেন তার বাড়িতে । উপলক্ষ্য ছিল তার ছেলের জন্মদিন। ওই কম রোজগারেও, কি সুন্দর সবটা আয়োজন করেছিলেন । আর ছেলের আবদার রাখতে নিজে কি – প্যাড ফোন টা নিয়ে, নিজের ফোন বিক্রি করে , কিছু টাকা দিয়ে , একটা নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন উপহার দিলেন , সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরত নিজের ছেলেকে। ছেলে তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল।
এদিকে ফোন পাওয়ার পর মা পাগল ছেলে , দিনদিন ফোন পাগলে পরিণত হলো। ছোট বাচ্চা স্কুল গিয়ে যেখানে যা শুনতো তাই ফোন এ দেখতো । ছুটির দিনে , দিনভর গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকত। ছেলের দুষ্টুমি ভেবে , সব খারাপ অভ্যাস গুলোকে প্রশ্রয় দিতে দিতে হয়তো, নিজেই নিজের ছেলের খারাপ দিক গুলো আড়াল করে গেলেন মিনু দেবী ।
বেশ কয়েকদিন পর কলোনির এক মহিলা মিনু দেবীকে বিস্ময়ের সুরে জিজ্ঞাসা করলো “ছেলেটি স্কুল যাচ্ছে না, টিউশন যাচ্ছে না,খেলার জন্য মাঠেও আসে না , ওর কি শরীর খারাপ ? নাকি অন্য কিছু অসিবিধা হয়েছে ?”
মিনু দেবী সম্পূর্ণ ভাবে অবাক হয়ে গেলেন , কারণ প্রতিদিন তার ছেলে তাকে স্কুল , টিউশন ,খেলা এসব নিয়ে বলে । এমনকি সেই নাকি স্কুলের ফার্স্ট বয় , খেলাধুলাতও তার ভীষণ মনোযোগ , আরো কত কি ! মনে তার প্রশ্ন জাগে ” বাবু কি তাহলে আমায় মিথ্যা কথা বলে ?” সেই মহিলার কোনো প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই , তাই তিনি নিশ্চুপ ভাবেই পাশ কাটিয়ে যান।
বাড়ি ফিরে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতে গেলে , ছেলের চোখে জল দেখে তিনি থমকে জান। কোলে তুলে তার চোখের জল মুছে , বারেবারে এসবের কারণ জানতে চান। কিন্তু ছেলে উত্তর দেওয়ার জায়গায় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে তাই আর তার কিছু জানার উপায় থাকে না।
লাগাম হিন ঘোড়াকে জব্দ করে লাগাম দেওয়া যে কতটা কঠিন, তিনি সেদিন সেটা উপলব্ধি করেন।
এরপর ছেলের প্রতি নজর রাখার চেষ্টা করলেও কাজের চাপে তা হয়ে উঠে না । প্রতিদিন যখন বাড়ি ফেরেন , ইতিমধ্যে ছেলে খেয়ে বা খালি পেটে ঘুমিয়ে পড়েছে । কিছু প্রশ্ন করার বা জানার ইচ্ছে থাকলেও , ছেলের অবজ্ঞা তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। সবটা যেন এলোমেলো হয়ে যায়।
পড়ুনঃ- সফল রা কেন সফল আর অসফল রা কেন অসফল !
এরপর হঠাৎ করে একদিন অফিস পৌঁছে তার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই কাজের থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে , ছেলের খোঁজ করলে কোথাও ছেলেকে খুঁজে পান না । তার পর অদ্ভুত ভাবে স্বরবদ্ধ হয়ে পড়ে যান চিত হয়ে । প্রায় এক ঘণ্টা এভাবে পড়ে থাকার পরেও তার ছেলের দেখা মেলেনি। শেষ নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে চোখ বুজে ধীরে ধীরে অন্ধকার জগতে ডুবে যান ‘বাবু…উ …উ’ বলে ডাকতে ডাকতে, ঠিক তার স্বামীর মতো ।
জানতে পারলেন না শেষ সময়েও ছেলের জীবনে ঠিক কি চলছে ?
পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এ আবিষ্কার করলো বিষের জন্য মৃত্যু হয়েছে মিনু দেবীর । ধীরে ধীরে প্রাণ নিয়েছে সেই বিষ, মিথাইলমারকারি নামের সেই বিষ ছিল প্রাণঘাতী। পুলিশ যখন রহস্যের উদঘাটন করতে তৎপর ঠিক সেই সময় , ছেলেটিও বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করলো। পুলিশ তদন্তের পর জানালো ” ছেলেটি ব্লু হোয়েল নামে একটি গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছিল, যার ফলাফল সচক্ষে দৃশ্যমান। তাকে যে টাস্ক গুলি দেওয়া হতো সেগুলি পূরণ করার পথে তার মা বাধা হয়ে দাড়ালে , সে নিজেই তার মায়ের খাবারে বিষ মিশিয়ে ছিল।
এই বিষটি সে নিজে জোগাড় করেনি ,এতেও তাকে সহায়তা করা হয়েছিল। একাকীত্বে ভরা জীবনে বাচ্চাটি রাত ছাড়া কোনসময় তার মা কে কাছে পেতো না। তাই একাকিত্ব থেকে বাঁচতে এই গেমের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে ছিল। শেষমেশ তাদের দেওয়া লাস্ট টাস্ক অনুযায়ী সে সুইসাইড এর মাধ্যমে মিশন কমপ্লিট করেছে । সব প্রমাণ তার ওই ফোনে পাওয়া গেছে আর ডেস্কের নিচে লুকিয়ে রাখা তার পার্সোনাল ডায়রি তে ।
আবদার রাখতে গিয়ে মিনু দেবী ঠিক কতো বড়ো ভুল টা করেছিলেন, তা জানারও সুযোগ পেলেন না । শুধুমাত্র দেখতে দেখতে চোখের পলক পড়ার মতো সমাজ থেকে মুছে গেলো এক আদর্শ মহিলা ও দেশের এক ভবিষ্যত।
তবে অল্প বয়সে বাচ্চাকে লাগামহীন স্বাধীনতা দিয়ে তথাকথিত স্মার্ট বানাতে স্মার্ট ফোন হাতে তুলে দেওয়ার আগে একবার হলেও ভাবা উচিত ” বাচ্চাটির ভবিষ্যত , অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত , দেশের ভবিষ্যত অর্থাৎ জনগণের ভবিষ্যত , ঠিক কতটা বিপথগামী আর বিপদমুখী। বাচ্চাকে স্মার্ট বানাতে স্মার্ট ফোন নয় ,গুরুজনদের শিক্ষা আর আদর্শই যে যথেষ্ট তা সমাজের উচ্চশিক্ষিত মানুষেরাও আজ ভুলতে বসেছেন। যা সমাজ কে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারের দিকে।।
be aware of your surroundings
ইতিবাচক বার্তা বহনে-
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
পড়ুনঃ- বাবাকে নিয়ে গল্প- অসম্পূর্ণ বাবা প্রেরণা মূলক গল্প- বিজয়ী
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
আধুনিক শিক্ষনীয় গল্প। শিক্ষা মূলক গল্প। মোবাইল আসক্তি
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।