আজ আমি আমার অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প তোমাদের কাছে তুলে ধরছি। একটা কথা আছে- টাকার কাছে ভালোবাসা হেরে যায় সত্যি কি তাই? আজ আমি তারই প্রমান দিতে চলেছি আমার এই ব্যর্থ প্রেমের গল্প- এর মাধ্যমে।
অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প। ব্যর্থ প্রেমের গল্প:-
“আমার অনেক আগেই বুঝে যাওয়া উচিত ছিল।“ ও হো, প্রথম থেকেই বলি গল্পটা। আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল আমার এক বন্ধুর দাদার বিয়েতে। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা, একে অপরের প্রেমে পড়া। এরপর এভাবেই তার আবদার, চাওয়া-পাওয়া ভালো লাগার জিনিস জোগাড় করতে করতে কখন যে একটা বছর পেড়িয়ে গেছে কিছুই বুঝতে পারিনি। এদিকে অনেক চেষ্টা করেও আমি একটা ভালো চাকরি খুঁজে পাইনি। অনেক আশা নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী কমপ্লিট করেছিলাম, ভেবেছিলাম স্বপ্ন পূরণ হবে। কোর্স কমপ্লিট করাতে গিয়ে বাবাকে বিকিয়ে দিতে হয়েছে আমাদের একমাত্র সম্বল রাস্তার পাশের জমিটুকুও।
এই পরিস্থিতিতেই কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটে পড়ল, যখন শুনলাম তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের দিনও নাকি ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের তিনদিন আগে আমরা পালিয়ে কলকাতায় চলে আসি। এরই মধ্যে বাড়িতে একদিন তাকে নিয়ে যাই। কিন্তু বাবা আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন- “আমি কার জন্য এত কষ্ট করি বলতো? তোর জন্য। পায়ের ব্যথায় বেশিক্ষণ ঠেলা গাড়ীটা নিয়ে চলতে পাড়ি না, চলতে চলতে রাস্তায় বসে পড়ি। কিন্তু কখনো কি তোকে বলেছি এইসব কথা? রাতে তোর মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, সেই খবর রাখিস? তোর পড়াশোনার খরচা জোগাড় করতে গিয়ে তোর মায়ের ওষুধ কিনার টাকা পর্যন্ত বেঁচে থাকে না। আর তুই কিনা অবশেষে এভাবে আমাদের সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিলি? আমি বেঁচে থাকতে কোনো দিনও আমার সামনে আসবি না।“
অনেকটা রাগ, আর অভিমান নিয়েই নিজের ভালবাসাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়লাম। হাতে কিছু টাকা ছিল, সেই টাকা দিয়ে আবারও চলে এলাম কলকাতায়। চারিদিকটা মানুষের ভীড়। কিন্তু আমাদের রাত কাটানোর ব্যবস্থা যে করতেই হবে। হাতে যা টাকা বেঁচে ছিল, তা দিয়ে শ্রুতির জন্য একটা মোটামুটি ভালো ধরণের হোটেল ভাঁড়া করলাম। কিন্তু আমি ঠিক করলাম আমার মাথা গোঁজার মত একটা চালা থাকলেই হল, কারণ দুইজনে সেই হোটেলে থাকতে গেলে অনেক খরচ হয়ে যাবে।
এদিকে কাজের খোজ করেও কাজ পাচ্ছি না। এভাবে প্রায় কেটে গেল পনেরোটা দিন। এদিকে খরচ চালানোর তাগিদে, মায়ের দেওয়া সোনার চেনটাও বিক্রি করে দিলাম। যা টাকা পেলাম তা দিয়ে দিন কয়েক চলল। সারাদিন হন্যে হয়ে শহর কলকাতার রাস্তা ধরে কাজের খোঁজে হেটেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে আমার কাছে থাকা আমার শেষ সম্বল প্রিয় মোবাইলটাও বিক্রি করে দিতে হল। এরই মধ্যে একটা আশার আলো খুঁজে পেলাম।
একটা রেস্তোরাতে অর্ডার বয়ের কাজ পেয়ে গেলাম। কিন্তু এখানে বেড়ে গেল দূরত্ব। শ্রুতি ও এই রেস্তোরার মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই প্রতিদিন দেখা হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ভেবেছিলাম একটু টাকা জমিয়ে কিছু করব। এরই মধ্যে একদিন রেস্তোরাতে এলেন এক নামী ভদ্রলোক। যখন খাওয়া শেষ করে তিনি বিদায় নিচ্ছিলেন তখন আমাকে কাছে ডেকে হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললেন- “তোমার ব্যবহার আমার খুবই ভালো লেগেছে, রেস্তোরার মালিকের কাছে শুনলাম তোমার মাস্টার্স করা আছে। তুমি কাল আমার অফিসে এসে দেখা কর।“
পরের দিন গেলাম সেই ভদ্র লোকটির অফিসে। সেখানে তিনি আমাকে একটি ভালো প্যাকেজের কাজের অফার দিলেন। মাস শেষে ২৫,০০০ টাকা মাইনে। তার উপর আবার থাকা খাওয়া একদম ফ্রি। আমি ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম। ভাবলাম শ্রুতিকে গিয়ে এই সুখবরটা দিয়ে আসি। সে জানলে অনেক খুশি হবে। ৫ ঘণ্টা যাত্রা শেষে শ্রুতিকে যে হোটেলে রেখেছিলাম সেই হোটেলে গেলাম।
গিয়ে দেখি শ্রুতির ঘড়ে তালা দেওয়া। এরপর হোটেলের একজন সেবিকা, যার দায়িত্বে শ্রুতিকে রেখেছিলাম তার কাছে গেলাম। সে বলল- “দাদাবাবু, দিদি তো চারদিন আগেই এই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন তার বাবার কাছে।“
আমি অবাক হয়ে যাই, বাবার কাছে গেছে মানে! “যাওয়ার আগে কিছু বলে গেছে কি?” সেবিকা ড্রয়ার থেকে একটা খাম বেড় করে আমার হাতে দিলেন। খাম খুলে দেখি, তাতে লেখা আছে-
“শুধু ভালবাসলেই হয় না, ভালবাসার মানুষের চাওয়া- পাওয়ার দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। যদি সুখে রাখতে পাড়বেই না, তাহলে কেন আমাকে সেদিন পালিয়ে নিয়ে এসেছিলে? জানো তো, যেই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেই ছেলেটা অনেক বড়লোক, বাড়িতে তিনটে প্রাইভেট কার আছে। দুইতালা বাড়ি। কিন্তু এত কিছু জানা সত্যেও আমি তোমার সাথে পালিয়ে এসেছিলাম কেন জানো? ভেবেছিলাম তোমার না হয়, একটু কমই থাকবে, এটুকু না হয় Adjust করে নেওয়া যাবে, কিন্তু তোমার কাছে তোমার ওই পড়াশোনার ডিগ্রী ছাড়া যে আর কিছুই নেই, সেটা আগে জানলে কক্ষনোই তোমার সাথে আসতাম না। আর হ্যাঁ মন খারাপ করো না, কারণ জীবনে সুখে থাকাটাই আমার জীবনের মূল উদ্দেশ্য। এই থার্ড ক্লাস হোটেলে আমি জীবন কাঁটাতে পাড়ব না।“
নিজের অজান্তেই চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জলে মাটিতে পড়ল। যার জন্য আমি আমার বাবা-মা কে ছেড়ে দিয়েছি, আমার ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই যাকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি, অচেনা এই কলকাতায়, সেইই শুধুমাত্র আমার দরিদ্রতার অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমি তো ভালো একটা কাজ পেয়েই গেছি, আর মাত্র কিছুদিন অপেক্ষা করতে পাড়ল না সে! এতদিন শুনে আসতাম, টাঁকা বড়। সত্যি আজ তার প্রমানও পেয়ে গেলাম, টাঁকা না থাকলে প্রেম ভালোবাসা সব জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর থেকে আমার জীবনের মূল লক্ষ্যই হয়ে দাঁড়াল টাঁকা ইনকাম করা। প্রচুর প্রচুর টাঁকা ইনকাম করা। নিজের ডিগ্রী নিয়ে নয়, এবার স্কিল দিয়ে টাঁকা ইনকাম করব। হ্যাঁ এখন ইনকামও বেশ ভালোই হচ্ছে। সেই কোম্পানিটা থেকে বেড়িয়ে এসে, নিজেই একটা কোম্পানি করার পরিকল্পনা আমার মাথায় বরাবর ঘুরছিল। এরই মাঝে একদিন হঠাৎ বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। চার বছর হতে চলল, তাদের সাথে যোগাযোগ নেই, দেখা নেই, কিজানি কেমন আছেন তারা। তাই একদিন চলে গেলাম আমার সেই ছায়ায় ঘেরা গ্রামে।
আমাকে দেখা মাত্রই মা বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। বাবার মুখোমুখি হতেই, বাবা আমার গালে ঠাটিয়ে চর কষে দিয়ে বললেন- “বড় হয়ে গেছিস না! না বলে না কয়ে কোথায় চলে গেছিলি? একটু বকা না হয় দিয়েইছিলাম। রাগের চোটে না হয় বলেই ফেলেছিলাম সেই সব কথা, আর তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেছিস? জানিস এই কয়েকটা বছর আমি হন্যে হয়ে তোকে খুজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। যাকে দেখি, তাকেই জিজ্ঞেস করি, আমার ছেলেকে কি তোমরা দেখেছো? কিন্তু সবাই বলে তারা দেখেনি” বাবা আর বলতে পাড়লেন না, আওয়াজ ভাঁড়ি হয়ে এল। আমি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে ফেলেছিলাম।
যে আমার সাথে থেকে সারাজীবন পাশে থাকার কথা দিয়েছিল, যার জন্য আমি পরিবার ছেড়েছিলাম, সে টাঁকার কারণে আজ অন্যের স্ত্রী। আর যে পরিবার অতীতে আমার জন্যে অনেক কিছু করেছে, তাদের মনে কষ্ট দেওয়ার পরেও, এতদিন পর আমার দেখা পেয়ে আমার কথাই শুধু জিজ্ঞাসা করে গেছে। কিন্তু তারা কখনো জানতে চায়নি যে, আমি কত টাঁকা ইনকাম করি।
সেদিনই বুঝেছিলাম, অর্থ ছাড়া ভালোবাসা হয়না। প্রেমিকার ভালোবাসাকে টাঁকা দিয়ে কেনা গেলেও, পরিবারের ভালোবাসাকে কোনো দিনও কিনতে পাড়বেন না, এই ভালোবাসাটি এমন ভালোবাসা, যেটা আপনি বাজারেও পাবেন না। ছেলের পকেটে অজস্ত্র টাঁকা থাকলে দুই সেকেন্ডেই প্রেমিকা পাওয়া যায়।
আমি গিফট না নিয়ে যাওয়ায় যেদিন শ্রুতি আমার উপর রাগ করে, কোনো কথা না বলেই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল, সেইদিনই আমার বুঝে যাওয়া উচিত ছিল যে, শ্রুতির কাছে আমার ভালোবাসার চেয়েও গিফটের মূল্য অনেক বেশি। সোজা কথায়, আমার ভালোবাসার চেয়েও শ্রুতির কাছে টাঁকার মূল্য ছিল সবথেকে বেশি।
কেন জানিনা, এরপর থেকে আর কোনো মেয়েকেই ভালো লাগে না, মেয়েদের দেখলেই কেমন জানি লোভী লোভী মনে হয়। আমার শুধুই মনে হয়, টাঁকা ছাড়া মেয়েদের কাছে ছেলেদের কোনো মূল্যই নেই। কিন্তু আমার মনকে কিছুতেই বোঝাতে পাড়িনা যে, সব মেয়ে সমান হয়না। কিন্তু যে একবার ধাক্কা খেয়েছে, সেটাই তার পক্ষে উচিত শিক্ষা নয় কি?
টাকার কাছে ভালোবাসা হেরে যায়, এটা আজ প্রমাণিত। হয়তবা হাঁতে গোণা কিছু মেয়ে থাকতে পাড়ে, যারা টাকার চেয়ে প্রেমিককে ভালোবাসা। তার কাছে টাকার চেয়েও, ভালোবাসার মূল্য অনেক বেশি।
পড়ুনঃ- ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প। শরীর নাকি প্রেম?
For Telegram updates:– charpatraOfficial
for Facebook updates:- গল্প আর গল্প
“অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প। ব্যর্থ প্রেমের গল্প। ভীষণ কষ্টের প্রেমের গল্প। টাকার কাছে ভালোবাসা হেরে যায়। পরিবার vs প্রেম। bangla sad premer golpo.”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।