মাত্র কিছু দিনের প্রেম হলেও তার গভীরতা অনেক। আজকের ছোট অভিমানী ভালোবাসার গল্প টি সেটাই প্রমাণ করেছে।

অভিমানী ভালোবাসার গল্পঃ- ‘সমাপ্তি’

বলেছে তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না ? কে তুমি ? কদিনের এই বা আমাদের পরিচয় ?… কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রিভু গাড়ির হর্ন টা বাজিয়ে উঠলে নেহার তন্দ্রা ভঙ্গ হল।

‘এটুকু রাস্তা আসতে আসতেই মহারানীর ঘুম পেয়ে গেলো । সত্যি কি খেয়ে যে থাকো সবসময় !’
‘আরে না না সে রকম কিছু না । আসলে চোখ টা একটু লেগে গেছিলো , চলো এবার ভেতরে চলো।’
‘তোমার বন্ধু, তোমার পরিচিত, আর আমায় আগে ঢুকতে বলছো ?’
নেহা গাড়ি থেকে নামতেই সামনের বাড়ি থেকে এক মধ্য বয়স্ক ভদ্র মহিলা বেরিয়ে এলেন, কোমল কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন- “তুমি কে মা?”

অজান্তেই নেহার হাত দুটো নিজে থেকেই মহিলার পা স্পর্শ করলো। কাপা গলায় উত্তর দিলো ” আমি নেহা , তুহিন এর বন্ধু “।
নামটা শুনতেই মহিলার মুখটা একটু বিষণ্ণ হয়ে পরল, হয়তো ভদ্রতার খাতিরে বাড়ির ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলেন নেহা আর রিভু কে।

অভিমানী মেয়ে
অভিমানী মেয়ে

দরজায় ঢোকার মুখেই একটা সাদা জামা পরা ছেলেকে বেরিয়ে আসতে দেখে , নেহার পা গুলো কেপে উঠলো । রিভুর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, “বিয়ের কার্ডটা দিয়ে দাও । আমরা এক্ষুনি ফিরে যাবো।

রিভু বেশ অবাক হয়ে নেহার দিকে তাকিয়ে রইলো “যে বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সেই কলকাতা থেকে এতদূর নিয়ে এলো , সেই বন্ধুর সাথে দেখা না করেই যাবো বলছে !”

সেই সাদা জামা পরা ছেলেটা নেহাকে দেখে, একটু বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে বলে উঠলো ” তুমি তো নেহা তাই না ? তা এখানে কি করছো এতবছর পর ?”( অভিমানী সুর টা আর কেউ না বুঝতে পারলেও নেহা ঠিক বুঝতে পারলো)।

হুমম তুহিন, আমি নেহা , তোমাকে নিমন্ত্রণ করতে এসেছি । একমাস পর আমার বিয়ে এই রিভূর সাথে । তুমি না এলে সব আয়োজন বৃথা , তাই তোমাকেই প্রথম কার্ড টা দিতে এলাম ।

অদ্ভুত রকমের একটা হাসি , তুহিনের মুখে ফুটে উঠল, কার্ড টা নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো । দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা গুলো, যেন ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো…

পড়ুনঃ- ভালোবাসার গল্প- প্রেমের স্মৃতি 

আমার আর নেহার পরিচয় টা হয়েছিল খুব অদ্ভুত ভাবে । আমি থাকতাম ভৈরবপুরে আর নেহা আসানসোলে । দুজনেই সোশ্যাল মিডিয়া সেভাবে ব্যবহার করতাম না তাই পরিচয় টা ওখানেও হয়নি । হয়েছিল পরীক্ষা দিতে গিয়ে । বরাবর মেয়েদের সাথে ইয়ার্কি ঠাট্টা করার স্বভাব ছিল আমার। আর নেহার ছিল গম্ভীর স্বভাব । আর সেই স্বভাবের গুণেই পেয়েও হারিয়েছিলাম , জীবনের একটা বিশেষ অধ্যায়কে।

তাই সেবারের পরীক্ষা টা আমার কাছে পড়াশোনা কম , জীবনের পরীক্ষা ছিল বেশি ।

প্রথম দিন এক্সাম দিতে গিয়ে দেখি একটি মেয়ের সাথে সিট পরেছে আমার । মেয়েটি দূরে তার বাকি বন্ধুদের সাথে বই খাতা নিয়ে ব্যস্ত ছিল । তবে মেয়েটির থেকেও ওর পাশে থাকা বান্ধবীটি বেশি নজর কেড়েছিল । বেল পড়তেই সে আমার পাশে এসে বসলো । কিছু উত্তর না পারলে অন্যদের জিজ্ঞাসা করার আগেই , নিজে থেকে সাহায্য করলো । এভাবেও কেউ সাহায্য করে ভেবে, মেয়েটার প্রতি একটা অদ্ভুত অনুভূতি জন্মেছিল।

পরের দিন এক্সাম দিতে গেলে সে নিজে থেকেই নাম্বার টা চেয়ে নিলো । আমি তো সোনায় সোহাগা উপভোগ করলাম । বলতে পারেন “মেঘ না চাইতেই জল ” যাকে বলে । শুরু হলো হোয়াটসঅ্যাপে কথা বার্তা । প্রথম দুই দিন ওকে ইমপ্রেস করার জন্য নানার পন্থা অবলম্বন করেছিলাম । তবে বারবার মাথায় আসছিল আর তো মাত্র দু দিন, তারপর তো আর দেখা হবে না । সম্পর্কটা বাড়িয়ে কি লাভ ?

 ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসার গল্প

তাও মেয়েটা মানে নেহা আমাকে নিয়ে কি ভাবে , সেটা একবার হলেও আমার জানা দরকার, এই ভেবে ওকে যাচাই করার জন্য একটা পন্থা অবলম্বন করলাম। ওর যে বান্ধবী টা কে ভালো লেগেছিলো, তাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম । এমনকি তার নাম্বার টাও জোগাড় করার আর্জি জানালাম । মনে মনে বেশ আনন্দ হচ্ছিল নেহাকে না পেলেও , নেহার সাহায্যে যদি ওর বান্ধবীকে পাই তাহলে বেশ ভালো হয়। কিন্তু হলো ঠিক বিপরীত , সে তো বেশ রোখা মেজাজে অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিল আমায়। যা তা ভাষায় অপমান করে রেহাই পেলো। তাই আমিও ভাবলাম হয়তো সবটাই হিংসে তে করছে । তারমানে ওর পক্ষ্ থেকেও কিছু আশা করা যায় ।

তবে শুধুমাত্র আশাতে বাঁচা সম্ভব নয় ,তাই অশান্ত মন কে শান্তনা দিতে , সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি সত্যি আমায় বন্ধু ভাবো তো, না অন্যকিছু?

সে উত্তরে বলেছিল বন্ধু শুধুমাত্র বন্ধু । যদি ও বন্ধুই ভাবে তাহলে অন্য মেয়েদের নিয়ে বললে এত হিংসে কিসের! এই প্রশ্ন করাতে উত্তর এসেছিল , বন্ধুত্বের মাঝে নাকি মান অভিমান হিংসে টাই মজার বিষয় । তারপর থেকে দিদি , বোন বলে ডেকে জ্বালাতন করা শুরু করলাম । কিন্তু এতেও কোনো সুফল পেলাম না । বরঞ্চ সে নিজেই আমার নাম্বার টা ভাই বলে সেভ করে যোগ্য জবাব দিয়ে দিল । বন্ধু থেকে ভাই, মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে , তাই কথাও শুনিয়েছিলাম । এভাবেই ঝগড়া ঝাটি খুনসুটি মিলিয়ে পরীক্ষার দিন গুলো কেটে গেলো ।

পড়ুনঃ- কষ্টের লাভ স্টোরি

তবে আমি হাল ছাড়িনি , ওকে বারেবারে জ্বালাতন করতাম অন্য মেয়েদের নাম্বার খুঁজে , ঠিকানা খুঁজে । ও হয়তো এসব বিষয় গুলো পছন্দ করতো না । তাই এক্সাম এর শেষ দিন লম্বা একটা ম্যাসেজ দিয়ে শেষে বললো “ভাই চার দিনের পরিচয় ছিল , একসাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো খুব সুন্দর ছিল, কিন্তু আমার পক্ষে তোমার আর্জি গুলো রাখা সম্ভব নয় , তাই এখানেই সমাপ্ত করলাম , নাম্বার টা ভাই বলে সেভ থাকলো, ভালো থেকো, good bye” খুব সাধারণ ভাবে জীবন থেকে বিদায় নিয়ে নিল । আমিও আর প্রতি উত্তর দেওয়ার মতো কিছু পেলাম না । হাসি মুখে মেনে নিলাম আমার ভাগ্যকে । ওখানেই সমাপ্ত হলো আমাদের দশদিনের সম্পর্ক ।

সেই দিনের পর ওর স্ট্যাটাস টুকুই চেক করতাম শুধু মাত্র । কথা বলার মত মনোভাব কোনোদিন জন্মায়নি । তবে আশা করিনি দশ বছর পরে ওর আমার কথা আবারও মনে পরবে।

নেহা দ্রুত গতিতে তুহিনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে রিভু কে বলে উঠলো “যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে নিয়ে চলো আমায়, দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার ।

অভিমানী ভালোবাসার গল্প
অভিমানী ভালোবাসার গল্প
<

রিভু সব কিছুর অজান্তেও এটুকু বুঝতে পারল, অতীতের এমন কিছু স্মৃতি হয়তো নেহার জীবনে আজও বর্তমান , যার জন্য নেহা হয়তো কোনোদিনও রীভুর হয়েও হতে পারবে না।

তুহিন জানালা থেকে গাড়ি টা বাড়ির সামনে থেকে পেরিয়ে যেতে দেখে , গড়িয়ে যাওয়া অশ্রুবিন্দু গুলোকে সাক্ষী রেখে বলে উঠলো ….
কোনো সন্ধ্যে বেলায় হঠাৎ করে দেখা হওয়ার আশা রাখি না,
আশা রাখি না , হাজারো ব্যবধান আর মন মালিন্যতাকে
কোনো ব্যস্ত শহরে একদিন হয়তো আবার দেখা হবে,
সব কিছু বদলে যাবে , কিন্তু সম্পর্কটা ?
সেটা হয়তো শেষের কবিতা হয়েই থেকে যাবে…।

আলোরানি মিশ্র

প্লটের ভাবনায়-
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
আলোরানির যে লেখা গুলি পাঠকের পছন্দ হয়েছে- 
হারানো ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার গল্প

কল্প বিজ্ঞানের কাহিনী- কুমিকম্প

একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে। 
Get in touch with ' ছাড়পত্র' 

ফেসবুক Group - গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- charpatraOfficial

WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)

অভিমানী ভালোবাসার গল্প। অভিমানী মেয়ে। 1 new bengali sad love story

Spread the love

Leave a Reply