আজ একটি অদ্ভুত প্রেমের গল্প আপনাদের নিকট তুলে ধরছি। তবে এটি কোনো রটনা নয় এটি আসলে একটি স্যতি প্রেমের গল্প। স্যতি প্রেমের গল্প বলাটা ভুল হবে। এটি আসলে একটি অন্ধ প্রেমের ঘটনা। প্রেমে যে বুদ্ধি নাশ হয় তার আদর্শ উদাহরণ এই গল্পটি।
অদ্ভুত প্রেমের গল্প। অন্ধ প্রেমঃ-
চন্দ্রিমা এক ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী। সামনের বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। বাড়িতে বাবা-মা-ভাই নিয়ে চারজনের সুখী সংসার। বাবা একজন সরকারী কর্মকর্তা। বাড়ি থেকে টিউশন আর স্কুল এইই ছিল চন্দ্রিমার জীবন। সব মিলিয়ে সাধা-সিধে স্বচ্ছল একটি পরিবার। কিন্তু সে পরিবার আজ বিধ্বস্ত। ঘটনার মূলে সেই মেয়ে চন্দ্রিমা। এই পুড়ো ঘটনাটি জানার জন্য আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে আজ থেকে প্রায় আট মাস আগে। টেকনোলজি যে আমাদের সাহায্য করার সাথে সাথে, অনেক দুশ্চিন্তাও বাড়িয়েছে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এই ঘটনাটি।
স্কুলের সব বন্ধুরা মোবাইল নিয়েছে, চন্দ্রিমা বাবার কাছে মোবাইলের জন্য বায়না ধরেছিল। বাবাও কিছু না বুঝে কিনে দিয়েছিলেন একটি স্মার্টফোন। ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে চন্দ্রিমার মায়ের। কয়েকদিন থেকেই মেয়ের মতিগতি ভালো দেখছিলেন না তিনি। ইদানিং মেয়ে মোবাইলে অনেক সময় কাটাচ্ছে। আগে সবার সামনেই মোবাইলে ভিডিও দেখত, বন্ধুদের সাথে কথা বলত সে। কিন্তু, ইদানিং সবকিছু যেন বদলে গিয়েছে। ফোনে টাইপ করতে দেখা যায়, আর একাকী মিটি মিটি হাঁসতে থাকে।
আগে বই পড়ার সময় মোবাইল দূরে রাখত সে, কিন্তু ইদানিং সে বই পড়ার টেবিলেই মোবাইল রাখছে। একদিন চন্দ্রিমার মা তাঁকে অনেকক্ষণ মোবাইলে টাইপ করতে দেখে বললেন- “কি রে তোর সামনেই না পরীক্ষা। মোবাইলে এত্ত সময় কাঁটালে পরীক্ষা কি দিবি। কার সাথে ম্যাসেজে এত কথা বলিস চন্দ্রি? এই তুই আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছিস না তো? তোর হাব-ভাব কিন্তু কিছুতেই আমার ভালো ঠেকছে না।“
এরপর চন্দ্রিমা, তার মাকে বলে- “উফ মা, তোমার খালি সন্দেহ। আমি বইই পড়ছি।“
কথাটাতে চন্দ্রিমার মায়ের কেমন যেন একটু খটকা লাগে। একদিন চন্দ্রিমা মোবাইল চার্জে রেখে খাবার খেতে গেছে। মোবাইলটা হঠাৎ-ই বেজে উঠল। চন্দ্রিমাকে অনেক বার তার বাবা ডাকলেও কোনো সাড়া পেলেন না। শেষে নিজেই মোবাইলটা রিসিভ করলেন। ওপার থেকে একজন ছেলের কণ্ঠ ভেসে এল- “বেড়িয়েছ?”

এরপর কিছুক্ষণের জন্য চন্দ্রিমার বাবা থমকে যায়। তিনি বলেন- “চন্দ্রিমা খেতে গেছে, তুমি কে বাবু?” সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে গেল। এরপর চন্দ্রিমাকে এই কথা বলা হলে সে বলল- “উফফ তোমরা শুধুই সন্দেহ কর আমাকে। আমার স্কুলের একজন বন্ধু। ওর নাম তনু। ওই ফোন করেছে। ও মেয়ে হলেও ওর গলাটা অনেকটা ছেলের মত শোনায়।
বাবা- “কিন্তু তাই বলে আমার কথার উত্তর না দিয়েই, ফোনটা কেটে দিল!” চন্দ্রিমা কিছু জবাব দিল না। স্কুলে চলে গেল। “না ব্যাপারটা কেমন যেন আমার কাছে খটকা লাগছে, বুঝলে চন্দ্রির মা।“
“তোমাকে আমি আগেই বলেছিলুম, মেয়েকে এই বয়সে মোবাইল কিনে দিও না। তোমারতো আবার মেয়ের প্রতি দরদ একটু বেশিই যেন উগলে পড়ছে। চাকরির বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে মেয়েকে মোবাইল কিনে দিলে। আমার কথা তো শুনলে না। এখন বোঝো বাপু ঠেলা!”
চন্দ্রিমার বাবা কিছুই জবাব দিলেন না। মুখ গম্ভীর করে, চিন্তামগ্ন হয়ে রইলেন। এরপর সেদিন চন্দ্রিমা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলে তাঁকে অনেক বোঝানো হয় যে, এভাবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। সে যেন পড়াশোনায় মননিবেশ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না এরপর তার থেকে মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়।
পড়ুনঃ- প্রেমের ছোট গল্প। বিরহের গল্প।
রূপকথার প্রেমের গল্প। রূপকথার রাজকন্যার গল্প
এর কিছুদিন পড়ে চন্দ্রিমার মা লক্ষ্য করলেন তার মানিব্যাগ থেকে কিছু কিছু টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে। একদিন তিনি দেখলেন তার সোনার চেনটি যেটির মূল্য প্রায় পঞ্চাশ হাজার হবে, সেটি তিনি পাচ্ছেন না। কিন্তু তখনও তিনি ভাবছিলেন হয়ত, যখন তারা ঘড় মেরামত করেছিলেন তখন কোনো মিস্ত্রীর হাঁতে পড়ে গেছে।
কিন্তু আসল ঘটনা কিছুদিন পড়ে ধরা পড়ল। একদিন চন্দ্রিমা তাড়াতাড়ি খাওয়া সেরে তার ঘড়ে চলে যায়। সে জানিয়ে যায়, তার নাকি ঘুম পাচ্ছে সে ঘুমাবে। কিছুক্ষণ পড় ঘড়ের লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে। এদিকে তার মা চুপিচুপি তার রুমে দরজা দিয়ে দেখে, চন্দ্রিমা বিছানায় শুয়ে মোবাইল টিপছে।
আশ্চর্য! এই মোবাইল কোথায় পেল সে? পড়ের দিনই তার কাছে থেকে একটি মোবাইল উদ্ধার হল। মেয়ে এত বড় হলেও কোনোদিন চন্দ্রিমার বাবা মেয়ের গায়ে হাত তোলেন নি। সেদিন প্রথম বাড়ের মত চন্দ্রিমার বাবা চন্দ্রিমাকে আচ্ছা সে পিটালেন। কিন্তু চন্দ্রিমা কিছুতেই মুখ খোলেনি।
এরপর চন্দ্রিমার রুমে খোঁজ শুরু হয়। উদ্ধার হয় পাঁচটি লাভ লেটার। সেগুলিতে একটি দোকানের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। যখন সেই দোকানের উদ্দেশ্যে খোঁজ শুরু হল তখন দেখা গেল যে, সেটি একটি রেস্টুরেন্ট। কিন্তু অনেক জিজ্ঞাসার পড়েও যখন রেস্টুরেন্টের মালিক মুখ খুলছিলেন না, তখন তাঁকে পুলিশের ভয় দেখানো হয়। এরপর তিনি জানান- “চন্দ্রিমা কয়েক মাস থেকেই এখানে বসে কার সাথে যেন ম্যাসেজ করে ঘণ্টার পড় ঘণ্টা।“ যখন চন্দ্রিমার স্কুলে খোঁজ খবর নেওয়া হয় তখন জানা যায় যে, চন্দ্রিমা কয়েক মাস থেকে রেগুলার স্কুলে আসেনি। অনেকবার নোটিশ দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।
কিন্তু চন্দ্রিমা তো বাড়িতে কোনো নোটিশ দেইই নি। এরপর টিউশনে খোঁজ নেওয়া হলে, টিউশন টিচার জানান- “কয়েকমাস হল চন্দ্রিমা টিউশন ছেড়ে দিয়েছে।“ আশ্চর্য তাহলে প্রতি মাসে তার বাবা যে টিউশন ফিস টা চন্দ্রিমার দ্বারা পাঠান সেটা কোথায় যায়?




এমন পরিস্থিতিতে একজন সাধারণ মেয়ের এরূপ কর্মকাণ্ড দেখে আর কয়েক জন বাবা-মেয়র মত চন্দ্রিমার বাবা-মায়ের পায়ের নীচের মাটিও সড়তে থাকে। তারা কিছুই বুঝছিলেন না যে, আসলে হচ্ছে টা কি! চন্দ্রিমার কাছ থেকে দ্বিতীয় মোবাইলটিও নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর চন্দ্রিমা নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয়।
এরপর যখনই বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ত, সে তার রুম থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে চিল্লাতে চিল্লাতে বলতে থাকে- “তোমরা আমার জীবনকে নরক বানিয়ে দিয়েছ। আমিও তোমাদের জীবনকে নরক বানিয়ে দিব। তোমাদের কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দিব না।“ এভাবেই কিছুদিন চলতে থাকল। সারাদিন নিজের রুমে পড়ে থাকত সে, আর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেই বাইরে বেড়িয়ে এসে একই ভাবে চিৎকার করতে থাকত সে।
চন্দ্রিমার পাগলামিপনা এত দূরে গড়িয়ে যায় যে, সে বাড়ির বিভিন্ন জিনিস রাতে ভাঙ্গতে শুরু করে দেয়। সে কারও সাথে কথা বলেনা। এমনকি তার ভাইয়ের সাথেও না। পাড়ার মানুষ জন চন্দ্রিমাকে অনেক বোঝালেও সে কারও কথা শোনে না, বরং তাদেরই অপমান করে। এদিকে চন্দ্রিমার বাবার অবস্থাও এইসব চিন্তায় বিগড়ে যেতে থাকে।
যেটুকু জানতে পাড়া যায় যে, ছেলেটির সাথে চন্দ্রিমার পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমেই। ছেলেটা নাকি চন্দ্রিমার চাওয়া-পাওয়াকে অনেক গুরুত্ব দেয়। ছেলেটা অবশ্য অন্য রাজ্যের।
পাড়ার প্রতিবেশীদের চন্দ্রিমা অপমান করায়, তারা তার বাবাকে দোষারোপ করে বলতে থাকেন- “কেমন মেয়ে জন্ম দিয়েছেন দাদা, আপনাদের সাথে সাথে আমাদেরও অপমান করে ছাড়ছে। আপনারা উচিত শিক্ষা দিতে পাড়েন নি মেয়েকে। মেয়েকে আপনারাই বিগড়ে দিয়েছেন। চন্দ্রিমার বাবা কারও কথার উত্তর দেয় না। ঈশ যদি সে সেদিন মেয়ের একটা জেদ পূর্ণ না করত তাহলে মেয়ে আজ হয়ত এত জেদি হত না। এত সাহস পেত না।
এদিকে চন্দ্রিমার বাবা তাকে একবার ছেলেটির সাথে দেখা করাতে বলে। কিন্তু চন্দ্রিমা কিছুতেই ছেলেটির সাথে তার বাবা-মাকে দেখা করতে দিবে না। কারণ এতে নাকি তার ক্ষতি হবে। সত্যি পাগলামির একটা সীমা আছে। কিন্তু চন্দ্রিমা সেই সীমাটিও পাড় করে ফেলেছে।
এটা আবার কেমন ভালোবাসা। যেই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের মা বাবাকে অপমান করতে হয়! ভালোবাসা মানে শান্তির বার্তা, কিন্তু চন্দ্রিমার কাছে সেই ছেলেটিই তার কাছে সব। জন্ম দেওয়া বাবা-মা তার কাছে কিছুই নয়। যে মেয়েকে নিজের ছেলের থেকেও বেশি ভালো বাসতেন, তারই এমন রূপ দেখে চন্দ্রিমার বাবার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়।
শোনা যায়, ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে যখন চন্দ্রিমার বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছিল, তখনই চন্দ্রিমা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং সেই ছেলেটির সাথে বিয়ে করে নেয়। বুঝুন তাহলে এ কেমন ভালোবাসা। একদিকে বাবা হসপিটালে ভর্তি, অন্যদিকে মেয়ে বিবাহ করছে!
তবে সেখানে টিকতে পাড়েনি চন্দ্রিমা। কারণ তার আবদার পূরণ করার ক্ষমতা তার সেই ভালোবাসার ছেলেটির ছিল না। শোনা যায় যে, শ্বশুর বাড়িতে সারাদিন কাজ করতে হত তাঁকে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিপুল কাজের চাপ সহ্য করতে পাড়েনি সে। কাজের জ্বালায় পালিয়ে সে তার বাপের বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু সেখানে তালা ঝুলছিল। কারণ তার বাবা-মা-ভাই প্রতিবেশীদের অপমান সহ্য করতে না পেড়ে সেই তল্লাট ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। কোথায় চলে গেছেন, সেই ঠিকানা কেউই বলতে পাড়েনা।




মোট কথা, বাবা-মাকে দুঃখ দিয়ে পৃথিবীর কেউ সুখী হতে পাড়েনি আর ভবিষ্যতেও পাড়বে না। বাবা মা সর্বদা আমাদের ভালোটাই খোঁজেন, কিন্তু আমাদের জেদের কাছে তাদের সেই ভালো চাওয়াটা শুধু বেঁচে থাকায় পরিণত হয়। এটা শুধু একটা গল্প নয়, একটি সত্য প্রেমের ঘটনা। যেটা আদতে প্রেম নয় ছিল আসলে অন্ধ ভালোবাসা।
মোট কথা একজন মেয়ে তার বাবার কাছে অবশ্যই রাজকন্যা কিন্তু তার স্বামীর কাছে সে মহারাণী নাও হতে পাড়ে। বাবা কোনোদিনও তার সন্তানের খারাপ চাইবেন না। কিন্তু আমাদের জেদের কাছে তাদের সেই ভালো চাওয়া কোনো মূল্যই পায় না।
তোমাদেরও যদি এরকম কোনো জানা ঘটনা থাকে, অবশ্যই আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবে না।
“অদ্ভুত প্রেমের গল্প। অদ্ভুত প্রেম কাহিনী। প্রেমের শেষ পরিণতি। ভালোবাসার শেষ পরিণতি। 1 true sad love story bangla. odvut premer golpo”
নিয়মিত আপডেটের জন্য- ফেসবুক-গল্প আর গল্প
TELEGRAM:- CharpatraOFFICIAL




কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।