বিজ্ঞানের দৌলতে অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অদ্ভুত কিছু ঘটনা আছে, যার ব্যাখ্যা করা বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব হয়নি। রয়েছে এমন কিছু রহস্যময় ঘটনা যা বিজ্ঞান সমাধান করতে পারেনি। আজ কথা বলব এমনই কিছু অমীমাংসিত রহস্য, অদ্ভুত কিছু ঘটনা নিয়ে যার ব্যাখ্যা আজও মেলেনি।
অদ্ভুত কিছু ঘটনা। রহস্যময় ঘটনা। অমীমাংসিত রহস্য। mysterious incident:-
খুনি নদীঃ-
ভারতের রাজধানী শহর দিল্লী। এই নগরীর পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে ছোট্ট নদী রোহিণী। স্থানীয় মানুষজনের কাছে নদীটি খুনি নদী নামে পরিচিত। এই নদীতে মাঝে-মধ্যেই মানুষের মৃত দেহ ভেসে আসতে দেখা যায়। অতীতে অনেক এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই নদীটি। স্থানীয় দের মতে অনেক সময় এই নদীর পাড়ে মানুষের চিল্লানোর আওয়াজ ভেসে আসে।
ভয়ংকর সেই আওয়াজের উৎস খুঁজতে খুঁজতে যখন সবাই সেখানে পৌঁছে যায়, তখন সেখানে দেখা যায়, কোনো মানুষ পড়ে আছে অথবা জনশূন্য। স্থানীয়দের মতে অনেক মানুষ নাকি এখনে আত্মহত্যা করেছেন। স্থানীয়দের মতে এই নদীর পাশে কেউ একা গেলে, এই নদীটি নাকি নিজের দিকে সেই ব্যক্তিকে টেনে নেয়, এবং সেই ব্যক্তি ভেসে যান নদীর স্রোতযুক্ত জলে। তবে স্থানীয়দের এই কথা কতটা সত্যি তা শুধু ঈশ্বরই জানেন।
সারাবছর জলে থাকে যে গির্জাঃ-
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে অবস্থিত শেত্তিহাল্লি চার্চ। স্থানীয় মানুষেরা এই চার্চটিকে ডুবন্ত চার্চ বা ভাসমান চার্চ বলে থাকেন। অতীতে যে কলা-কৌশলে মানুষ কম পারদর্শী ছিল না, তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ হল এই চার্চটি।
শোনা যায় যে ১৮৬০ সালে ফ্রেঞ্চ মিশনারিরা এই চার্চটি বানিয়েছিলেন। ভগ্নপ্রায় এই চার্চটি কর্ণাটকের হেমাবতি নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। এই চার্চটি বানানোর কিছুকাল পড়ে হেমাবতি নদীর পাড়ে এই বিশালাকার বাঁধ তৈরি করা হয়। বর্ষার সময় যখন নদীটি কানায় কানায় জলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, তখন বাধের পাশে অবস্থিত এই চার্চটিও ধীরে ধীরে জলের তলায় যেতে থাকে। আগে শুধু বর্ষার সময় এই চার্চটি জলের তলায় যেত, তবে বর্তমানে চারিদিকে এত বিপুল পরিমাণ জল সারাবছর ধরে থাকে, যে বছরের প্রায় প্রতিটি দিন চার্চটি থাকে জলে ঘেরা।
যদি আপনি বর্ষার মরশুমে সেখানে যান, দেখবেন যে চার্চটির শুধু মাথাটি দেখা যাচ্ছে, বাকি অংশটি জলের তলায় ডুবে রয়েছে। এই চার্চটিতে গেলে আপনি দেখবেন নানান পাখী সেখানে নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলেছে। শহুরে কোলাহল থেকে দূরে অসাধারণ শান্তিময় এই জায়গাটি। আর সাথে তো প্রকৃতির সৌন্দর্য রয়েছে। এই কারণেই প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান এই স্থানটিতে।
এমন একটি গ্রাম যেখানে সাপের সাথে বাচ্চারা খেলা করেঃ-
সাপ দেখলেই তাঁকে মেরে ফেলা, বর্তমানে আমাদের এই রীতি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কোনো ব্যক্তি সাপ দেখলে হয় সেটিকে দেখে ভয়ে পালাবে নয়ত, সেই সাপটিকে মাড়তে উদ্যত হবে।
কিন্তু ভারতের অঙ্গরাজ্য মহারাষ্ট্রের শেতপালের চিত্রটা একদম ভিন্ন রকম। এখানে পাওয়া যায় প্রচুর সাপ, উঁহু যেমন তেমন সাপ নয়। সাপের রাজা নামে খ্যাত বিষধর কিং কোবরাই এখানে বেশি দেখা যায়। কিন্তু তাই বলে কি মানুষেরা সাপকে মেরে ফেলবেন? উঁহু চিত্রটি একটু ভিন্ন রকম। এখানে বাচ্চারাও সাপের সাথে খেলা করে। অন্যদিকে সাপগুলিও বাচ্চাগুলির সাথে বিনা দ্বিধায় খেলা করে।
এখানে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের বাড়িতে অন্তত একটি পোষ্য সাপ দেখতে পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং বাড়িতে সাপ পোষাটা এখানকার রীতি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আজ পর্যন্ত এখানে সাপের কামড়ে মানুষের মারা যাওয়ার কোনো খবর সামনে আসেনি।
পড়ুনঃ- দুনিয়ার অমীমাংসিত রহস্য
রহস্যময় ঘটনা
যমজের গ্রামঃ-
পৃথিবীতে সাধারণত যমজ মানুষের সংখ্যা খুবই কম হয়ে থাকে। দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত একটি গ্রাম হল মালালাপুরম। জায়গাটি কম রহস্যময় নয়! এখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আপনি যমজ দেখতে পাবেন। অনেক বিজ্ঞানী এখানে এসে অনেক গবেষণা করে গেছেন। কিন্তু এই যমজ হওয়ার কারণটি তারা খুঁজে বেড় করতে পাড়েননি।
প্রচুর সংখ্যক যমজ থাকায় এই গ্রামটি যমজের গ্রাম নামেও পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু কেউই জানে না যে শুধুমাত্র এই গ্রামটিতেই কেন যমজ বাচ্চার জন্ম হয়! আন্তর্জাতিক স্তর থেকেও কিছু গবেষক এখানে কিছুদিন থেকে গ্রামটির মৃত্তিকা, তাদের খাবার-দাবার ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে এর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে কিন্তু তাদের গবেষণা থেকে তারা বিশেষ কিছু খুঁজে পাননি।
দিল্লীর জমালি-কমালি মসজিদঃ-
নামটাই কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে, তাই নয় কি! সে আপনি এই নাম দুটি শুনে ভূত-প্রেত ভাবতে পাড়েন, কিন্তু এই জমালি-কমালি হলেন দুইজন সুফি সন্ত। শোনা যায় যে, তাদের নাকি এখানেই কবর দেওয়া হয়েছিল।
এই মসজিদে এমন কিছু রহস্য তো অবশ্যই রয়েছে যেটির ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায় নি। এই মসজিদে একা চলতে থাকা অনেক ব্যক্তিকেই অদৃশ্য কোনো শক্তি এসে থাপ্পড় মেরে যায়। সমান জায়গাতেও ধাক্কা খায় মানুষেরা। উঁহু একজন বা দুইজন নয়, অনেক মানুষ এরকম রহস্যময় ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন এই মসজিদে এসে। আর মনে হয়না তারা দ্বিতীয়বার সেখানে যাওয়ার সাহস করবেন।
মানুষেরা এও বলেন যে, সূর্যাস্তের পড় সেখানে যাওয়া আর নিজের বিপদ নিজেই বরণ করে নিয়ে আসা, একি ব্যাপার।
পড়ুনঃ- বিশ্বের সেরা ৭ টি কাকতালীয় ঘটনা
ভারসাম্য যুক্ত পাথর (balancing Rock):-
তামিলনাডুর মহাবলিপুরম রথ মন্দিরের কথা হয়ত আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন। এই মহাবলিপুরমেই রয়েছে একটি বিরাট রহস্যময় পাথর। এই পাঁথরটির নাম হল The Balancing Rock. প্রথম দেখাতেই আপনার মনে হবে পাঁথরটি হয়ত এক্ষনি নীচে গড়িয়ে পড়বে। কিন্তু কয়েক শতক থেকে এই পাথরটি এমন অবস্থায় রয়েছে। মনে করা হয় যে, এই পাঁথরটির উচ্চতা ২০ ফুটের মত হবে। এত বিশাল বড় একটা পাথর কিভাবে ভারসাম্য যুক্ত অবস্থায় রয়েছে সেটাই ভাবার বিষয়।
তবে এই পাঁথরটিকে এখান থেকে সরানোর চেষ্টা যে করা হয়নি তা কিন্তু নয়! ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ সরকার এই পাঁথরটিকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন। দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক রহস্যময় এই পাঁথরটিকে দেখতে ভিড় জমান।
অনেকেই এটিকে krishna’s butter ball নামেই জেনে থাকেন।
ডান্সিং প্লেগঃ–
সময়টা ১৫১৮ সাল, স্থান ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গ শহর। মাথার উপরে গনগন করছে সূর্য। হঠাৎ করেই রাস্তায় চলে এলেন এক মহিলা। শুরু করলেন রোদের মধ্যে ভয়ানক রকমের নাচ। এদিকে দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেল, সেই মহিলা কিছুতেই থামছেন না, নেচেই যাচ্ছেন। আশেপাশের লোকজন এই পাগলামি নাচ দেখে অনেক কিছুই বললেন তাকে, কিন্তু সে আর কার কথা শোনে? সে তো নাচ নিয়েই ব্যস্ত। এদিকে আবার ৩৪ জন মহিলা তার সঙ্গে এসে নাচ জুড়ে দিলেন। আশেপাশের মানুষজন কিছুই বুঝছিলেন না, যে কি চলছে?
একমাসের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন লোক তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এদের দেখে মানুষজন ভাবছিল, এদের শরীরে বোধহয় কোনো আত্মা প্রবেশ করেছে। আর এরকম মনে করবে নাই বা কেন বলুন? এই পাগলামি নাচের না ছিল কোনো কারণ, না ছিল কোনো উদ্দেশ্য। একমাস না খেয়ে কি আর থাকা যায় বলুন? তাও আবার প্রায় সবসময় নাচতে নাচতে? কয়েকজন তো সেখানেই লুটিয়ে পড়লেন, তারপর আর কি, চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সেখানে নাচতে থাকা, মানুষদের অবস্থা খুবই খারাপ হতে থাকে, এরপর সেখানে পুরোহিত, ডাক্তার, গবেষকদের ডাকা হয়, তারা কেউ এটাকে মৃগী রোগ বলেছেন, আবার কেউ এটাকে বলেছেন মানসিক রোগ। কিন্তু এটা যদি মৃগী বা মানসিক রোগই হয়, তাহলে এতজনের একসাথেই কি মানসিক রোগ হওয়া কোনোদিনও সম্ভব? আপনার কি মনে হয়? সে যাই হোক এরকম আচরণের পেছনে, অনেক জন অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু কোনো সন্তোষজনক কারণ আজ পর্যন্ত কেউই দিতে পারেননি। আজও এই আচরণের পেছনের কারণ আমাদের কাছে এক অমীমাংসিত রহস্য হিসেবেই থেকে গেছে।
ওয়াও সিগন্যাল রহস্যঃ-
১৫ আগস্ট ১৯৭৭, জেরি এহম্যান ওহাইও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আকাশে নজর রাখছিলেন। মূলত তার কাজ ছিল, মহাকাশের দূরবর্তী প্রান্তে রেডিও সংকেত পাঠানো, মহাকাশের কোনো প্রান্তে যদি অন্য কোনো প্রাণীর বাস থাকে, তার অনুসন্ধানের জন্যই এই রেডিও সংকেত। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো অপর প্রান্ত থেকে কোনো প্রত্যুত্তর পাননি। এভাবেই তার রাত কাটত, অপর প্রান্ত থেকে সিগন্যাল পাওয়ার আশায়।
১৫ আগস্টও তিনি এভাবেই তার কাজ করছিলেন এবং হঠাৎই তার বেতার যন্ত্রটি তীক্ষ্ণ আওয়াজে বেজে উঠল, জেরির ঘুম ভাব হঠাৎ করেই কেটে গেল, তিনি দেখলেন, তার বেতার যন্ত্রটি সিগন্যাল রিসিভ করা শুরু করেছে। জেরি লক্ষ্য করলেন, একটানা সংকেত আসতেছেই, অবাক হয়ে তিনি রিসিভারের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এও কি সম্ভব?
পরবর্তী ৭২ সেকেন্ড ধরে এই সিগন্যালটি আসতে থাকে, এবং আবার হারিয়ে যায়। হতভম্ব জেরি প্রিন্ট হওয়া গ্রাফটি হাতে নিয়ে, নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বিস্মিত হয়ে এই প্রিন্ট হওয়া কাগজটিতে তিনি লিখলেন WoW. সেদিন থেকেই এই সিগন্যাল “ওয়াও সিগন্যাল” নামেই সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে।
৭২ সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া এই সিগন্যালটি এসেছিল, পৃথিবী থেকে প্রায় ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত স্যাগিট্টেরিয়াস নক্ষত্র থেকে। আলোর গতিতে গেলেও এই নক্ষত্রে পৌঁছাতে প্রায় ১২০ বছর লেগে যাবে। তাই সেখানে কোনো মানুষ পৌছাতে পারে না। কিন্তু সেখানে হয়ত মানুষের মতনই বা মানুষের থেকেও কোনো উন্নত প্রাণী আছে, যারা এই সিগন্যালটি পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে এই সিগন্যালটি গ্রহণের অনেক চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু আর কোনোদিনই এটি পাওয়া যায়নি।
এই সিগন্যালের কোড গুলিকে ডিকোড করাও আজ পর্যন্ত হয়ে উঠেনি। কোনো বিজ্ঞানীই এই সংকেতের কোড গুলিকে এখনও বিশ্লেষণ করতে পারেননি। এই কোড গুলিতে কি বলা হয়েছিল, সেই রহস্য উন্মোচন করা যেদিন সম্ভব হবে, সেদিন হয়ত আরেক নতুন সভ্যতার খোজে মানুষের চেষ্টাও আরেকধাপ এগিয়ে যাবে।
পড়ুনঃ- পৃথিবীতে প্রাপ্ত ৭ টি রহস্যময় বস্তু
পৃথিবীর রহস্যময় ৩ টি জায়গা
“অদ্ভুত কিছু ঘটনা। রহস্যময় ঘটনা। অমীমাংসিত রহস্য। রহস্যজনক ঘটনা যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারেনি। amazing unsolved mysterious incident bengali”
FOR FACEBOOK UPDATES:- অবাক বিশ্ব আমাদের গ্রুপঃ- অজানা তথ্য (AMAZING FACTS)
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।