আজ থকাছে দুটি অসাধারণ Motivational গল্প। সম্পূর্ণ নতুন মোটিভেশনাল গল্প দুটিতে এমন কিছু উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যা বাস্তব জীবনে আপনার কাজে আসবে।
bengali motivational গল্পঃ-
নতুন মোটিভেশনাল গল্প- ১ঃ-
হস্তিনাপুরের ছেলে সুমিত। সে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ব্লকের মধ্যে প্রথম হয়েছে। কিন্তু তার মন ভাল নেই। কারণ তার স্কুলের কোনো শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাকে শুভেচ্ছা জানায় নি। এমন কি তার এতগুলি বন্ধু থাকা সত্ত্বেও মাত্র হাঁতে গোনা কয়েকজন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
অথচ ব্লকের অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্ম কর্তারা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টি মুখ করে গেলেন। যে স্কুলের নাম সে উজ্জ্বল করল, সেই স্কুলের শিক্ষক দের কাছ থেকে এরকম অবহেলা পেয়ে সে খুব ভড়কে গেছে। সময়ে সময়ে স্কুলের প্রতি তার রাগ ফেটে পড়ছে।
বাড়ি কিছুটা ফাঁকা হয়ে গেলে, সুমিতের বাবা তার কাছে এসে বলে- “আমার অর্থের খুবই অভাব, তুমি আমাদের পুরনো গাড়িটা নিয়ে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির দোকানে যাও, দেখ তারা কত দাম বলে। তাদের দাম শোনার পর তুমি আমাকে ফোন করবে।“
সুমিত- “কিন্তু বাবা…”
-উঁহু বেশি কথা নয়, যা বলছি সেটা কর।
সুমিত বাবার পুরনো গাড়িটা নিয়ে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির দোকানে যায়। এই গাড়িটার সঙ্গে তাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই গাড়িটা নাকি সুমিতের দাদুর বাবা কিনে দিয়েছিলেন সুমিতের দাদুকে।
সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির দোকানে গিয়ে সে গাড়িটা দেখিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করল। দোকানের মালিক বলল- “গাড়িটির দাম ৩০,০০০ টাকা। কারণ এটি খুব পুরনো। এই গাড়ির কাস্টমার পাওয়া খুবই মুশকিল হবে।“
এরপর সুমিত তার বাবাকে বিষয়টা জানায়। তার বাবা বলে- “ঠিক আছে। গাড়িটাকে নিয়ে এবার ভাঙ্গারি ওয়ালার দোকানে গিয়ে দেখ, সে কত দাম বলে।“
বাবার কথা মত, সুমিত ভাঙ্গারি ওয়ালার দোকানে গিয়ে, গাড়িটির দাম জিজ্ঞাসা করে। ভাঙ্গারি ওয়ালা বলেন- “এই পুরনো জীর্ণ গাড়িটির মূল্য বড়জোর ৫০০০ টাকা হতে পারে।“
সুমিত আবার বাবাকে ফোন করে বলে- “সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির দোকানিই বেশি দাম বলছে।“
সুমিতের বাবা প্রত্যুত্তরে জানান- “শহরের তিন রাস্তার মোড়ে একটি বিশাল বড় গাড়ির সংগ্রহশালা রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখ, ওরা কি বলে।“
সুমিত সেখানে গিয়ে গাড়িটিকে দেখাতেই, সেখানে উপস্থিত সবাই চমকে গেল। কারণ এই মডেলের গাড়ি বর্তমানে ভারত কেন পৃথিবীতে একটাও টিকে নেই। আজ থেকে কয়েক দশক আগেই কোম্পানি এই গাড়ির প্রোডাকশন বন্ধ করে দিয়েছে…।“ ইত্যাদি ইত্যাদি নানান কথা বলল তারা।
এরপর তারা সেখানেই গাড়িটিকে নিলাম করতে লাগল। সর্বোচ্চ নিলাম মূল্য উঠল ১৫০,০০০ টাকা। এই ঘটনা দেখে সুমিত খুবই অবাক। কারণ এই গাড়িটার ক্রয় মূল্যের চেয়ে নিলাম মূল্য অনেক বেশি। সুমিত তাড়াতাড়ি তার বাবাকে ফোন করে।
কিন্তু সুমিতকে অবাক করে দিয়ে তার বাবা জানায়- “গাড়িটাকে নিয়ে বাড়ি চলে আয়।“
সুমিত বাড়ি ফিরে আসতেই তার বাবা বললেন- “কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হল কি তোর?”
সুমিত বলল- “না, শুধু একেক জনের কাছে একেক রকম দাম শোনারই অভিজ্ঞতা হল।“
তার বাবা বললেন- “শোন, আমি তোকে আসলে বোঝাতে চেয়েছি যে, কেবল মাত্র সঠিক জায়গাতেই তুমি তোমার সঠিক মূল্য পাবে। তুমি ঠিক থাকলেও কেউ যদি তোমার দিকে ফিরেও না তাকায় তাহলে এতে রাগ করার কোনো কারণই হয় না। কারণ তুমি সঠিক জায়গায় নেই, অর্থাৎ সেই জায়গা থেকে তোমাকে সরে যেতে হবে।“
“যেখানে তোমার কদর নেই, সেই জায়গায় থেকে অযথা সময় নষ্ট করবে না। তোমাকে নিজে থেকেই এমন জায়গায় চলে যেতে হবে যেখানে মানুষ তোমার মূল্য বুঝবে, মানুষ তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করবে, এক কথায় মানুষ তোমাকে কদর করবে।“
পড়ুন- সেরা মোটিভেশনাল উক্তি
উপদেশ মূলক গল্প- ২ঃ-
অনেক কাল আগের কথা। অনেক কাল আগের বলতে এখানে বলা হচ্ছে রোমান সাম্রাজ্যের রাজত্ব কালের কথা। সেই সময় একটি বিশেষ দিনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত, আমরা সেটি সবাই জানি।
কখনো সেখানে মানুষের সাথে বাঘের লড়াই আবার কখনো হাতিয়ার যুক্ত মানুষের সাথে দাসের লড়াই, ইত্যাদি খুবই সাধারণ খেলা ছিল সেখানে। একদিন রোমান সম্রাট সাম্রাজ্য ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখলেন, কয়েকটি কুকুর একজন মানুষের পিছনে দৌড়াচ্ছে।
রোমান সম্রাট ঠিক করলেন তিনিও তার রাজ প্রাসাদে কতগুলি কুকুর রাখবেন। যাতে তারা দৌড়ে চোর-টোর ধরতে পারে। কিন্তু ইতিমধ্যে কেউ একজন বললেন- “সম্রাট প্রাণীকুলের মধ্যে চিতা সবথেকে বেশি জোরে দৌড়াতে পারে। তাই কুকুরের থেকে চিতাকে চোর ধরার কাজে নিয়োগ করলে বেশি লাভ হবে।“
কিন্তু সম্রাট আবার পরীক্ষা না করে কোনো কিছু মোতায়েন করেন না। তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইলেন না যে, চিতা প্রাণীকুলের মধ্যে সবথেকে তীব্র গতিবেগ সম্পন্ন। তিনি সমগ্র সাম্রাজ্যে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিলেন সামনের পূর্ণিমাতে কুকুর এবং চিতা বাঘের মধ্যে একটি দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এটি পরীক্ষা করতে যে, চিতা এবং কুকুরের মধ্যে কে সবথেকে বেশি জোরে দৌড়াতে পারে।
সমগ্র গ্যালারিতে উপচে পড়ছে ভিড়। গোটা সাম্রাজ্য তন্ন তন্ন করে খুঁজে নিয়ে আশা হয়েছে অনেকগুলি দ্রুতগামী কুকুর। সাথে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে একটি চিতা। সম্রাট ঘোষণা করলেন- “যে ব্যক্তির কুকুর সবথেকে বেশি জোরে দৌড়ে গিয়ে ফিনিসিং লাইন পর্যন্ত দৌড়াতে পারবে তার কুকুরটি সম্রাট চোর ধরার কাজে নিয়োগ করবেন এবং প্রতি মাসে সেই কুকুরের মালিক কয়েক হাজার শিলিং (মুদ্রা) পাবেন।
তবে যদি চিতা বাঘটি জিতে যায়, তাহলে সব কটা কুকুরকে চিতা বাঘের ভোজন হতে হবে। কুকুরের মালিকরা এককথায় রাজী হয়ে গেলেন।
দৌড় শুরুর বাঁশি বাজল, সব কুকুরগুলি নিজেদের মধ্যে বেশ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু সবার নজর গেল সেই চিতা বাঘটির দিকে, তার যেন রেস জেতার কোনো ইচ্ছাই নেই। তাকে খাচা থেকে বের করে দিতেই, সে আরামে গুটি গুটি পা য়ে কিছুদূর এগিয়ে থেমে গেল। এবং সে বসে তার পায়ের থাবা পরিষ্কার করতে লাগল।
এটি দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। এদিকে একটি গ্রে-হান্ট প্রজাতির কুকুর রেসটি জিতে নিয়েছে। সেই কুকুরটির মালিক আনন্দে আত্মহারা।
অন্যদিকে সম্রাট, যে ব্যক্তিটি বলেছিল- চিতা প্রাণীকুলের মধ্যে সবথেকে তীব্র, তাকে ধরে নিয়ে আসতে বললেন। সবার সামনেই তাকে তিনি মিথ্যে কথা বলার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন।
সেই বন্দী লোকটি বলল- “সম্রাট সর্ব ক্ষেত্রে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার কোনো মানেই হয় না। আর চিতাটিও তাইই করেছে।“
আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন যে, বুদ্ধিমান মানুষেরা খুবই কম কথা বলে। এরা তর্কে জড়ায় খুবই কম। কিন্তু অন্যদিকে একটু খেয়াল করে দেখবেন, কোনো বিষয়ে যাদের জ্ঞান পর্যাপ্ত নয়, তারা বেশি বেশি সবজান্তার মত গলা ফাটায়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও যে সবকিছু জানে সে চুপ করে থাকে। কারণ শরীরের জোর আর গলার তোড় দেখিয়ে সত্য কখনো বদলে যায় না।
আর এই অবস্থায় বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলাই সবথেকে উত্তম কাজ হিসেবে মনে করেন। কারণ সে জানে বাস্তবতা কি। তাই সর্বক্ষেত্রে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের প্রয়োজন হয় না।
© reserved by ADMIN of charpatra.com. Admin will take necessary action if this content will be used for making videos or any digital content!
পড়ুন- বাবাকে নিয়ে অসাধারণ একটি শিক্ষণীয় গল্প। আপনার গল্পের কিং আপনিই নাকি অন্য কেউ!
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক Group - গল্প Junction ফেসবুক- ছাড়পত্র টেলিগ্রাম- charpatraOfficial WhatsApp Group- ছাড়পত্র (২)
” নতুন মোটিভেশনাল গল্প।। উপদেশ মূলক গল্প।। motivational গল্প”
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।