health tips bangla, বর্তমান দিনে আমাদের শরীর একটুতেই রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সাধারণ কিছু নিয়ম বা বিষয় যদি আমরা মাথায় রাখি, তাহলে আমরা রোগ সংক্রমণের হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাব। কথায় আছে Health is Wealth, আর এই Health যদি ঠিক না থাকে, তাহলে কার মেজাজটা ভাল থাকে বলুন তো? তাই আজ ছাড়পত্রের পাঠকদের জন্য থাকছে, সাধারণ কিন্তু বিশেষ দরকারি কিছু হেলথ টিপস। এই টিপস গুলিকে প্রতিদিনের স্বাস্থ্য টিপস -ও বলতে পাড়েন।

health tips bangla, স্বাস্থ্য টিপসঃ-

০১. প্রতিদিন সকালে ৫ টার আগেই বিছানা ছেড়ে উঠুন। কারণ আপনি যদি দেড়ি ঘুম থেকে উঠেন, তাহলে আপনার মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সাথে সাথে, কোনো কাজেও মন টিকতে চাইবে না। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন যে, যে সমস্ত মানুষেরা দেড়িতে ঘুম থেকে উঠেন, তাদের মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে হয়, এরা একটুতেই রেগে যান। সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব এদের মধ্যে থাকে।

০২. সকালে উঠে, মুখ ধোয়ার আগেই একগ্লাস, শীতল জল পান করুন, কারণ সারা রাতে আমাদের মুখের মধ্যে একপ্রকার পাচক এনজাইম (স্যালাইভা) উৎপন্ন হয়, এই এনজাইম খাদ্য পরিপাকে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে, জল পান করলে জলের সাথে এটি পেটে চলে যাবে। প্রতিদিন এটি করে দেখুন, দেখবেন আপনার পেটের পাচন জনিত সমস্যা অনেকটাই লাঘব হয়েছে।

৩. ব্রেকফাস্ট অবশ্যই করবেন, মনে রাখবেন ব্রেকফাস্টে যেন, হালকা খাবার থাকে।

৪. ঘুমের ঝোঁক কাঁটাতে চা কিংবা কফি অত্যন্ত কার্যকরী। কফিতে প্রাপ্ত ক্যাফাইন আমাদের মস্তিষ্কের ঘুমন্ত কোষ গুলিকে, জাগাতে সাহায্য করে। তাই বলে অতিরিক্ত চা কিংবা কফি খেতে যাবেন না, কারণ এর ফলে আপনার খিদে অনেক কম পাবে। এতে শরীরের ক্ষতি হবে।

৫. সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার চেয়ে আগের দিন রাতেই ডিনারের কিছুক্ষণ পর ব্রাশ করে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ মুখে থাকা সারাদিনের অবশিষ্ট খাবার রাতে ব্রাশ করলে, মুখ থেকে বেড়িয়ে যাবে, ফলে সারারাত সেগুলি আপনার দাঁতের কোনো ক্ষতি করতে পাড়বে না। রাতে ব্রাশ করার মাধ্যমে আপনি দাঁতের ক্ষয় রোগ কমাতে পাড়েন।

৬. সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার আগে মনে রাখতে হবে যে, আপনার ঘুম যেন পরিমিত এবং পর্যাপ্ত হয়। রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকারি। এর কম বা বেশি নয়। ব্যাক্তির কাজের উপর নির্ভর করে, তার কতটা ঘুম প্রয়োজন! যাদের সারাদিন বেশি খাটুনি হয়, স্বাভাবিক ভাবেই তাদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন, তবে মনে রাখবেন ৮ ঘণ্টার বেশি কক্ষনোই ঘুমাবেন না।  

health tips bangla
স্বাস্থ্য টিপস health tips bangla

৭. সকালে সূর্যের কোমল প্রভাকে গায়ে মাখতে ভুলবেন না যেন, এতে আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা ঠিক থাকবে। কড়া রোদে বাইরে বেরোনোর সময় অবশ্যই লুজ ক্যাপ পড়বেন।

৮. রাতে ১০-১০.৩০ এর মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। বেশি রাতে ঘুমাতে গেলে, পরের দিন ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে যাবে।

৯. খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল পান করবেন না, কারণ খাবার খাওয়ার সময়, আমাদের পাচনতন্ত্র খাবার থেকে শ্বেতসার নির্যাস করতে ব্যস্ত থাকে, এই সময় জল পান করলে এই শ্বেতসার তৈরি অনেকটাই বাধাপ্রাপ্ত হয়।

১০. যদি সম্ভব হয়, রিফাইন তেল ব্যবহার বন্ধ করুন। কারণ রিফাইন তেল, অতিরিক্ত উষ্ণতায় গরম করে প্রস্তুত করা হয়, এটি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক, এর পরিবর্তে কাচ্চি-ঘানি সর্ষের তেল ব্যবহার করুন।

১১. প্রাণের মায়া থাকলে, ধূমপান এবং খৈনি জাতীয় তামাক দ্রব্য ত্যাগ করতে হবে। কারণ তামাকের স্টার ফুসফুসের ক্ষতি করে। হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বৃদ্ধি করে।

১২. মোবাইল নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ১৫-৩০ মিনিট আগে মোবাইল বা টিভি বা ল্যাপটপ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলুন। পরিবর্তে ঘুমাতে যাওয়ার ১৫-৩০ মিনিট আগে আপনার পছন্দের বই পড়ুন। এর ফলে আপনার যেমন দ্রুত ঘুম আসবে, ঠিক তেমনি ঘুমও গভীর হবে।

বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার অনেকক্ষণ পড়ে ঘুম আসার মূল কারণই হল মোবাইল বা ল্যাপটপের প্রভাব।

পড়ুনঃ- কিছু দরকারি ডেইলি লাইফ হ্যাকস 

প্রতিদিনের স্বাস্থ্য টিপসঃ-

১৩. আপনি লক্ষ্য করবেন যে, যখন কেউ মোবাইলের দিকে বা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম বার চোখের পলক ফেলে, এটি আপনার চোখের পক্ষে ক্ষতিকারক। চোখ সুস্থ রাখতে ফলো করুন 20-20-20- rule এই রুল অনুসারে, মোবাইল বা ল্যাপটপে কাজ করার সময় প্রত্যেক ২০ মিনিট অন্তর অন্তর অন্তত ২০ ফুট দূরে থাকা নানান বস্তু (হতে পাড়ে গাছ, বা রাস্তায় চলতে থাকা গাড়ি)-র দিকে অন্তত ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন।

১৪. শরীরকে সুস্থ রাখতে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়াও অনেক দরকারি। আবার অনেকেই চিনি মিশ্রিত জল খেতে ভালবাসেন। কিন্তু এতে সুগারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর মানব মস্তিষ্কের জন্য জল কতটা দরকারি, সেটি হয়ত আপনি আমাদের পূর্বে প্রকাশিত পোষ্টের মাধ্যমে জেনেই গেছেন।

বাংলা হেলথ টিপস
বাংলা হেলথ টিপস স্বাস্থ্য টিপস

১৫. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করুন। সপ্তাহে একদিন উপবাস করার চেষ্টা করুন। কারণ এই উপবাসের ফলে আপনার পাচন্তন্ত্র কিছুটা আরাম পেয়ে যাবে, আর এটি শরীরের পক্ষে একটি শুভ দিক।

১৬. নিজের পরিবার এবং বন্ধুদের অবশ্যই সময় দিন। যেসব বন্ধুরা আপনাকে নিয়ে অযথা প্রশ্ন তোলে, বা আপনার ক্ষতি চায়, তাদের সঙ্গ ছাড়তে হবে, এতে আপনার মানসিক প্রশান্তি আসবে।

১৭. পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ স্নানের সময় স্ট্রোক করেন, কিন্তু তারা এটি বুঝতেও পাড়েন না। আপনি শুনে থাকবেন, গরমে স্ট্রোক করেছে, এটি ভুল ভাবনা। আসলে অতিরিক্ত গরমে মাথায় হঠাৎ ঠাণ্ডা জল ঢালায় স্ট্রোক করেছে। তাই স্নান শুরু করুন পা থেকে, অর্থাৎ প্রথমে মাথায় জল ঢালবেন না। প্রথমে পা ভিজিয়ে নিন, ততক্ষণে আপনার নার্ভ মস্তিষ্ককে সজাগ করে দিবে যে, ঠাণ্ডা কিছু আসতে চলেছে, ফলে আপনার মস্তিষ্ক আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে। তবে মাথা থেকে পা না ভিজিয়ে ধীরে ধীরে পা থেকে উপড়ে মাথা পর্যন্ত ভিজিয়ে স্নান শুরু করার কথাই বিজ্ঞান বলে থাকে।

১৮. অতি দ্রুত খাবার শেষ করে ফেলার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ধীরে ধীরে ভালভাবে চিবিয়ে খাবার খান, এতে আপনার পাচন্তন্ত্রের এবং গলবিলের ক্ষতি হবে না, তার সাথে সাথে খাদ্যরস সংগ্রহ করতে আপনার শরীরের সুবিধা হবে।

১৯. প্রতিদিন বাইরে থেকে আসার পড়, ভালভাবে ঠাণ্ডা জলে চুল ধুয়ে ফেলুন। সারদিনের ব্যস্ততায় অনেক ধুলোবালি আমাদের চুলে এসে জমা হয়, তাছাড়া ঘামের কারণে চুলের গোঁড়ায় লবণ জমে যায়, যেটি চুলের পক্ষে ক্ষতিকারক, তাই বাইরে থেকে (কর্মস্থলের ব্যস্ত জীবন) থেকে আসার পড়ে চুল ধুয়ে ফেলুন, তবে এক্ষেত্রে শ্যাম্পু বা সেই জাতীয় কিছু ব্যবহার না করারই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ প্রতিদিন শ্যাম্পুর ব্যবহার চুলকে রুক্ষ করে তোলে।

২০. শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে যোগ-ব্যায়াম অত্যন্ত দরকারি, এটি শরীরের সাথে সাথে মনের সুস্থতা বজায় রাখে। তবে কঠিন ব্যায়াম করতে যাবেন না। আপনার শরীরের সহন ক্ষমতার উপযোগী ব্যায়াম করুন।

২১. গরম খাবার খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। হুম জানি গরম খাবার খেতে অনেক ভাল লাগে, কিন্তু জিহ্বার ক্ষণিক স্বাদের জন্য শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে যাবেন না। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা আমাদের সবারই জানা, তার সাথে সাথে আপনি যদি খাবারের মাধ্যমে বাহ্যিক তাপমাত্রা যোগ করেন, তাহলে শরীরের ক্ষতি ডেকে আনছেন নিজেরই অজ্ঞাতে। তাই খাবার গরম নয়, কিছুটা ঠাণ্ডা করে খান।

২২. গরম বস্তুতে হঠাৎ জল দিলে সেটি সংকুচিত হয়ে গিয়ে ফেটে যায়, আমাদের শরীরের ক্ষেত্রেও অনেকটা প্রায় সেই রকমই বলতে পাড়েন, প্রচণ্ড গরমে, ফ্রিজ থেকে বেড় করা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা জল পান করার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে

২৩. চেয়ারে বসার সময় বা সোফাতে বসে টিভি দেখার সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। এরফলে আপনার শরীরে স্ট্রেস হরমোন কম নিঃসৃত হবে এবং সেরোটোনিন এর নির্গমন বাড়বে, যার ফলে শরীর সুস্থ থাকবে।

২৪. নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। কারণ আমাদের মাথায় খারাপ ভাবনা-চিন্তা তখনই আসে, যখন আমরা চুপচাপ বসে থাকি। সারাদিন ব্যস্ত থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক, খারাপ চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আসার সময়ই পাবে না।

২৫. বাইরে থেকে কিনে আনা ফল (যেমন-আম) ভালভাবে পরিস্কার করে তবেই খাবেন। আপনি চাইলে আম বা সেই জাতীয় ফলকে একটি পাত্রে কিছুটা জল নিয়ে ডুবিয়ে রেখে দিতে পাড়েন।

২৬. বেশি নিউজ দেখবেন না, বর্তমান দিনের প্রতিটি নিউজ চ্যানেল মানুষের মাথা খারাপ করার যথেষ্ট শক্তি রাখে, পরিবর্তে আপনার পছন্দের মুভি, বা গল্প পড়তে পাড়েন।

পড়ুনঃ- পড়া মুখস্ত করার সাধারণ কিছু টিপস

২৭. খাবার সবসময় মেঝেতে ভালভাবে বসে খান।

২৮. ষ্ট্রীট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। যত লোভনীয় খাবারই হোক না কেন, বিশেষত ফাস্ট ফুড, এগুলি শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। বর্তমান দিনে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পেটের অসুখ বেশি দেখা দেয়, কারণ তারা ছেলেদের তুলনায় ফাস্ট ফুডে বেশি আগ্রহী। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড মেয়েদের জীবনে সন্তান লাভের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। উঁহু এটা আমার কথা নয়, অনেক অনুসন্ধানের পরই এই লেখাটি লিখতে বসেছি, mind it. 

২৯. মনকে স্ট্রেস মুক্ত রাখতে নিয়মিত গান শুনুন, চাইলে স্পিকারে গান শুনতে পাড়েন, তবে বেশি জোড়ে নয়। আর হেডফোনের ব্যাবহার কমাতে হবে। কারণ অতিরিক্ত হেডফোনের ব্যবহারে কানে বায়ু চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ব্যবহারকারী অচিরেই কানের নানান সমস্যায় ভোগেন।

৩০. শরীর সুস্থ রাখতে সবুজ শাক-সবজির বিকল্প নেই, তাই খাওয়ার পাতে সবুজ শাক-সবজি রাখতে ভুলবেননা যেন।

শাক-সবজি স্বাস্থ্য টিপস
শাক-সবজি স্বাস্থ্য টিপস health tips bangla
<

৩১. মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় অবশ্যই blue-cut lens যুক্ত চশমার ব্যবহার করুন।  

৩২. রাতের খাবার ১০ টার মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। খাওয়ার কিছুক্ষণ পড় হাঁটাচলা করতে ভুলবেন না যেন।

****টিপস গুলি শুধুমাত্র বড়দের জন্য

আপাতত এই কয়েকটিই টিপস থাকছে। শরীর সুস্থ রাখতে এই প্রতিদিনের স্বাস্থ্য টিপস গুলি অবশ্যই অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। প্রথম অবস্থায় একটু অসুবিধে হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু ধীরে ধীরে এগুলি আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে, আর শরীর সুস্থ রাখতে এটুকু কষ্ট তো করা যেতেই পাড়ে।

আপনি পড়তে পাড়েনঃ- 

চোখ সুস্থ রাখতে অবশ্যই ফলো করুন এই টিপস

রিলেশনশিপ টিপস
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবেঃ- 
ফেসবুক-ছাড়পত্র

টেলিগ্রাম- CharpatraOFFICIAL

WhatsApp- ছাড়পত্র

“health tips bangla, প্রতিদিনের স্বাস্থ্য টিপস বাংলা হেলথ টিপস”

Spread the love

Leave a Reply