আধুনিক বিশ্বে যতই দিন যাচ্ছে ততই GIS এর ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাহায্যে পৃথিবী চলে এসেছে আমাদের দোরগরায়। এককথায় কোনো বস্তুকে সরাসরি স্পর্শ না করে, দূর থেকেই সেই বস্তুটি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করাকেই বলা হয় Remote Sensing. আর এই Remote Sensing এরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল GIS. তাই আজকের ব্লগটিতে থাকছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জিআইএস এর ব্যবহার বা Application Of GIS (In Bengali)

GIS এর ব্যবহার।। GIS এর প্রয়োগ application of gis in bengali

ম্যাপিং এর জন্যঃ-

 সমগ্র পৃথিবীকে ম্যাপের মাধ্যমে তুলে ধরাই হল GIS এর অন্যতম প্রধান কাজ। এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের চিত্র সহজেই তুলে ধরা যায়। যার মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের দৃশ্যগত বর্ণনা সহজেই দেওয়া যায়, এবং এর জন্য বিশেষভাবে দক্ষ না হলেও চলবে, কারণ ম্যাপগুলি সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার উপর ভিত্তি করেই বানানো হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ- Google Map এর কথা বলা যেতেই পারে।

টেলিকম ও নেটওয়ার্কঃ-

GIS এর দৌলতে টেলিকম এবং নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি সাধন হয়েছে। এর সাহায্যেই টেলি-কমিউনিকেশন ব্যবস্থা এত উন্নত করা সম্ভব হয়েছে।

gis এর ব্যবহার।। gis এর প্রয়োগ application of gis in bengali জিআইএস এর ব্যবহার।। top new 23 uses of gis bengali
জিআইএস এর ব্যবহার gis এর ব্যবহার

ট্রাফিকঃ-

GIS এর সাহায্যেই বিভিন্ন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সহজতর হয়েছে। রাস্তায় চলাচলের নিরাপত্তা, ট্রাফিক সিগন্যাল ইত্যাদি সবই GIS এর সহায়তায় করা সম্ভব হয়েছে। এর দৌলতেই আমরা নিজেদের Smartphone- এই কোনো অঞ্চলের ট্রাফিক সম্পর্কে ধারনা খুব সহজেই লাভ করতে পারি।

নগর পরিকল্পনাঃ-

GIS এর সহায়তায় নগর পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা সহজ হয়ে উঠেছে। উপযুক্ত জায়গা খোঁজা থেকে শুরু করে বাড়িঘরের প্রকৃতি সবই GIS এর সাহায্যে করা সম্ভব হয়ে উঠেছে।

পরিবহণ পরিকল্পনাঃ-

পরিবহণ দপ্তর জিআইএস এর সহায়তায় খুব সহজেই রাস্তা, রেলপথ, ইত্যাদি নির্মাণের পরিকল্পনা করতে পারে। কোন কোন স্থানের উপর দিয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা যায়, এবং কোন অঞ্চলের রাস্তার অবস্থা বা প্রকৃতি কি পর্যায়ে রয়েছে, তা সবই GIS এর সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।

পরিবেশগত প্রভাবঃ-

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের কার্যাবলী প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলছে, বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তাঘাট নির্মাণ (বিশেষত পাহাড়ি অঞ্চলে) সেখানকার স্থানীয় পরিবেশের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং মানুষের কার্যাবলীর সাথে পরিবেশের সম্পর্ক নির্ণয় করতে GIS ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

gis এর ব্যবহার।। gis এর প্রয়োগ application of gis in bengali জিআইএস এর ব্যবহার।। top new 23 uses of gis bengali
gis এর ব্যবহার APPLICATION OF GIS Image by Gerd Altmann from Pixabay

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ-

এর সাহায্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দুর্যোগ প্রবন অঞ্চলগুলির মানচিত্র নির্মাণ এবং সেই সমস্ত অঞ্চল গুলিতে ঝুঁকির মাত্রা এবং ঝুঁকির প্রবণতা নির্ণয় করা যায়। GIS কে কাজে লাগিয়েই কোনো অঞ্চলের বিপর্যয়ের পূর্বাভাষ দেওয়া যায়, যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়ে উঠে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই দুর্যোগ প্রবন অঞ্চলে দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানো যায়।

জনসংখ্যা মানচিত্রঃ-

U.S Census Bureau ভৌগোলিক তথ্যপ্রণালীর মাধ্যমে জনসংখ্যা মানচিত্র তৈরি করার চেষ্টা করছে, এবং অনেকটাই সম্পূর্ণ করেছে।

ভূমিরূপ বিদ্যায় GIS এর ব্যবহারঃ

বিভিন্ন অঞ্চলে মৃত্তিকার গঠন, মৃত্তিকার স্তর, মৃত্তিকা এবং শিলার প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, শিলার সছিদ্রতা ইত্যাদি নির্ণয়ের জন্য GIS- কে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এর সাহায্যেই বাঁধ তৈরির জন্য উপযুক্ত জায়গা তৈরি করা সহজ হয়ে উঠে।

জলাভূমির মানচিত্র প্রস্তুতঃ-

মানুষ বা বাস্তুতন্ত্রের রক্ষার জন্য জলাভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলের গুনগতমান বজায় রাখা, জীববৈচিত্র রক্ষা করা, পানীয় জলের জোগান, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জলাভূমির সংরক্ষণ একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই উদ্দেশ্যেই জলাভূমির মানচিত্রায়ণ করা দরকার। এই মানচিত্রায়নের জন্য GIS প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

gis এর ব্যবহার।। gis এর প্রয়োগ application of gis in bengali জিআইএস এর ব্যবহার।। top new 23 uses of gis bengali
APPLICATION OF GIS BENGALI gis এর ব্যবহার
<

গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্যঃ-

GIS ব্যবহার করে, সমুদ্রক্ষেত্রে মৎস্যের অবস্থান জানা যায়, যার ফলে কম সময়েই অধিক মৎস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এই তথ্যের সাহায্যে মৎস্যজীবীরা শুধুমাত্র সম্ভাব্য মৎস্যচারণ ক্ষেত্র গুলিতেই মৎস্য ধরার চেষ্টা চালাতে পারেন। যার ফলে মৎস্যচারণ ক্ষেত্র অনুসন্ধানের সময় কমানো যায় এবং সেইসঙ্গে জাহাজের জ্বালানি থেকে শুরু করে সবরকম খরচ কমানো যায়।

পর্যটন শিল্পে GIS এর ব্যবহারঃ

GIS প্রযুক্তি পর্যটন শিল্পে প্রভূত সাহায্য করে থাকে। কোনো tourist spot এর অবস্থান, যাত্রার গতিপথ, নিকটবর্তী হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্থানটির উচ্চতা ইত্যাদি সবকিছু তথ্য GIS এর সাহায্যেই জানা যায়। Google Map এর সাহায্যে কোনো স্থানের যাবতীয় তথ্য এক ক্লিকেই আদায় করা যায়, যা GIS এর দৌলতেই সম্ভব হয়ে উঠেছে।

GIS বা Remote Sensing সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের জন্য সরাসরি আমাকে message করতে পারো, আমি অতি অবশ্যই তোমার প্রশ্নের উত্তর দিব।

সন্ত্রাস বিবেচনাঃ

ভৌগোলিক তথ্যপ্রণালীর মাধ্যমে অবস্থান ও সময়ের ভিত্তিতে Crime Record এর মানচিত্র তৈরি করা হয়। ফলে বিভিন্ন অপরাধের কারণও বিশ্লেষণ করা যায়। সম্প্রতি ২০০৭ সালে বামিং-হাম উগ্রপন্থী গ্রেপ্তার হওয়া এবং ২০১১ সালে লন্ডনে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নজরে এনে গ্রেপ্তার করা, পর্যবেক্ষণের ফলেই সম্ভব হয়েছে। ভারতীয় সেনারা সীমান্ত অঞ্চলে অনুপ্রবেশ রুখতে বর্তমানে GIS প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকেই হাঁটছে।

YOU CAN ALSO READ:-

DEVELOPMENT OF GIS BENGALI GIS এর অগ্রগতি

অবাক মানুষ।। ১০ জন অবাক মানুষ

অবাক করা তথ্য সমূহ

পরিবহণ ব্যবস্থাপনাঃ-

গবেষণার জন্য মানচিত্র, সরকারি তথ্য প্রভৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ভৌগোলিক তথ্যপ্রণালীর মাধ্যমে এগুলি সহজেই পাওয়া যায়। বর্তমানে ভারতের প্রায় 40 টি শহরের 3D মানচিত্র এই প্রযুক্তির সাহায্যেই তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সমগ্র ভারতের 1:50,000 স্কেলের প্রায় 4800 Topographical Map তৈরি করা হয়েছে।

পৃথিবীপৃষ্ঠের অবস্থাঃ-

ভৌগোলিক তথ্যপ্রণালীর Digital 3D মানচিত্রের দ্বারা সাধারণ মানুষও ভূপৃষ্ঠের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। যেমন- কোনো সড়কের অস্তিত্ব আছে কি নেই? ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে সেই অঞ্চলটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের একটি সুষ্ঠূ ধারণা জন্মে।

ভৌমজলের অবস্থানঃ

কোনো অঞ্চলের ভৌমজলের প্রকৃতি, অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ভৌগোলিক তথ্য প্রণালী থেকে জানা যায়। ভারতের দিল্লীতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে GIS এর ব্যবহারঃ-

শত্রুর তৎপরতা, বিভিন্ন কর্মপন্থা সহজেই এর সাহায্যে লক্ষ্য করা যায়। যেমন- কিছুদিন আগেই ২০২০ সালে খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় চিনের নতুন সেনানিবাস এবং ছাউনি নির্মাণ ও নতুন যুদ্ধ জাহাজ ঘাটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আর চিনের এই তৎপরতা GIS প্রযুক্তির সাহায্যেই নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছিল।

gis এর ব্যবহার।। gis এর প্রয়োগ application of gis in bengali জিআইএস এর ব্যবহার।। top new 23 uses of gis bengali
gis এর ব্যবহার।। gis এর প্রয়োগ

পরিবেশের সুরক্ষায় GIS এর ব্যবহারঃ-

বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশের অবক্ষয়, দূষণের মাত্রা নির্ণয় করে সেই অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দ্রুত ক্রিয়াশীল হওয়া যায়। GIS প্রযুক্তির সহায়তায় এই মাত্রা নির্ণয় করা সহজতর হয়ে উঠেছে।

এছাড়াও কোনো অঞ্চলে কোনো প্রজাতির বিলুপ্তির প্রবণতা নির্ণয় করে, সেই প্রজাতিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

বৃক্ষছেদন রোধঃ –

কোনো অরণ্যে ব্রিক্ষচ্ছেদনের মাত্রা নির্ণয় করে, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সেই সমস্ত অঞ্চলগুলিতে পুনরায় যাতে আর বৃক্ষচ্ছেদন না হয় সেইদিকে নজর দেওয়া যায়। এবং শূন্য স্থানগুলি নির্ণয় করে সেই সমস্ত স্থানে পুনরায় বৃক্ষরোপণ করা যায়।

GIS এর সাহায্যে আবহাওয়ার অবস্থা নির্ণয়ঃ-  

বায়ুর উষ্ণতা, চাপ, বায়ু প্রবাহের দিক,বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, বায়ুর গতিবেগ এবং ইত্যাদি আরও নানান উপাদান, কোনো অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, পূর্বাভাষ, মেঘের প্রকৃতি, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন অবস্থা, ঝড়ের গতিবেগ, গতিপথ, অবস্থান ইত্যাদি আবহাওয়া সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য খুব সহজেই GIS পদ্ধতিতে পাওয়া যায়।

সাংস্কৃতিক তথ্যঃ-

কোনো অঞ্চলে জনবসতির বিস্তার, প্রকৃতি, আবাসস্থল, শিল্পের অবস্থান, ধর্মক্ষেত্র ইত্যাদি নানান বিষয়ে নানান তথ্য GIS প্রযুক্তির সাহায্যে সংগ্রহ করা যায় এবং প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক তথ্য সমূহের বর্ণনাও দেওয়া যায়।

অবস্থানগত তথ্য[Location Based Service(LBS)]:-

অবস্থানভিত্তিক পরিষেবা অর্থাৎ LBS প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী যে কোনো জায়গার অবস্থানগত সূচনা পেতে পারে। যেমন- নিকটবর্তী ATM, Police Station, হোটেল ইত্যাদি।

gis এর ব্যবহার।। gis এর প্রয়োগ application of gis in bengali জিআইএস এর ব্যবহার।। top new 23 uses of gis bengali
USE OF GIS gis এর ব্যবহার

ভূমির ব্যবহার এবং ভূমির আবরণ মানচিত্র প্রস্তুত করতে GIS এর ব্যবহারঃ-

নির্দিষ্ট কোনো ভূখণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের ক্রিয়াকলাপ বোঝাতে ভূমির ব্যবহার কথাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কোনো অঞ্চলের কতটা ভূমি পৌরক্ষেত্রে, আবাসিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে তার প্রয়োজনীয় মানচিত্র প্রস্তুত করা যায় GIS প্রযুক্তির সাহায্যে।

ভূপৃষ্ঠের উপর বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যের ধরণ বর্ণনা করার জন্য ভূমির আবরণ কথাটি ব্যবহার করা হয়। শহরাঞ্চলে ঘরবাড়ি, হ্রদ, গাছ, হিমবাহ ইত্যাদি হল ভূমির আবরণ বা Land Cover এর উদাহরণ। GIS প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কোনো অঞ্চলের ভূমির আবরণের ধরণ এবং মাত্রা সহজেই নির্ণয় করা যায়।

সুতরাং দেখা গেল যে, আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে GIS অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে যুক্ত, বিশেষত আধুনিক বিশ্বের গতিশীল সমাজ ব্যবস্থায়।

Spread the love

Leave a Reply