স্বামী বিবেকানন্দের যে বাণী গুলি জীবন বদলাবে। চলুন জেনে নিই স্বামী বিবেকানন্দের বাণী গুলি।
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী। স্বামীজীর উক্তিঃ-
১. মনে রেখো, কাপুরুষ ও দুর্বলগনই পাপাচরণ করে ও মিথ্যা কথা বলে। সাহসি ও সবলচিত্ত ব্যক্তিগণ সর্বদাই নিতীপরায়ণ। নিতীপরায়ণ, সাহসী ও সহানুভূতিসম্পন্ন হওয়ার চেষ্টা করো।
২. সব হবে ধীরে ধীরে। তোমাদের কাছে এটাই চাই। হামবড়া বা দলাদলি বা ঈর্ষা একেবারে জন্মের মতো বিদায় করতে হবে। পৃথিবীর ন্যায় সবকিছু সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হবে। যদি এটি পার, দুনিয়া তোমাদের পায়ের তলায় আসবে।
৩. এসো, মানুষ হও। নিজেদের সংকীর্ণ গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে গিয়ে দেখো, সব জাতি কেমন উন্নতির পথে চলেছে। তোমরা কি মানুষকে ভালবাস? তোমরা কি দেশকে ভালবাস? তাহলে এসো, আমরা ভাল হবার জন্য-উন্নত হবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করি। পেছনে চেয়ো না- অতি প্রিয় আত্মীয়স্বজন কাঁদুক; পেছনে চেয়ো না, সামনে এগিয়ে যাও।
৪. ভারতমাতা অন্তত সহস্র যুবক বলি চান। মনে রেখো মানুষ চাই, পশু নয়।
৫. ধীর, নিস্তব্ধ অথচ দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে। খবরের কাগজে হুজুক করা নয়। সর্বদা মনে রাখবে, নামযশ আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
৬. তোমরা কি সাম্য, স্বাধীনতা, কার্য ও উৎসাহে ঘোর পাশ্চাত্য এবং ধর্মবিশ্বাস ও সাধনায় ঘোর হিন্দু হতে পার? এটাই করতে হবে এবং আমরাই তা করব। তোমরা সকলে এই কাজ করবার জন্যই এসেছ। আপনাতে বিশ্বাস রাখো। প্রবল বিশ্বাসই বড় বড় কাজের জনক। এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও। মৃত্যু পর্যন্ত গরিব ও পদদলিতদের উপর সহানুভূতি করতে হবে-এই আমাদের মূলমন্ত্র। এগিয়ে যাও, বীরহৃদয় যুবকবৃন্দ!
৭. বড় হতে গেলে কোনও জাতির বা ব্যক্তির পক্ষে এই তিনটি জিনিসের প্রয়োজন-
ক) সাধুতার শক্তিতে প্রগাঢ় বিশ্বাস।
(খ) হিংসা ও সন্দিগ্ধভাবের একান্ত অভাব।
(গ) যারা সৎ হতে বা সৎ কাজ করতে সচেষ্ট, তাদেরকে সহায়তা।
৮. কোনও ব্যক্তির বা কোনও কিছুর জন্য অপেক্ষা কোরো না। যা পার করে যাও, কারও উপর কোনও আশা রেখো না।’ বড় বড় কাজ কেবল খুব স্বার্থ ত্যাগ দ্বারাই হতে পারে। স্বার্থের প্রয়োজন নাই, নামেরও নয়, যশেরও নয়-তা তোমারও নয়, আমারও নয়, বা আমার গুরুর পর্যন্ত নয়। ভাব ও সংকল্প যাতে কাজে পরিণত হয়, তার চেষ্টা করো; হে বীরহৃদয় মহান বালকগণ! উঠে পড়ে লাগো! নামযশ বা অন্য কিছু তুচ্ছ জিনিসের জন্য পিছনে চেয়ো না। স্বার্থকে একেবারে বিসর্জন দাও ও কাজ করো।
৯. ওঠো, জাগো, যতদিন না লক্ষ্যস্থলে পৌঁচচ্ছ, থেমো না। জাগো, জাগো, দীর্ঘ রজনী প্রভাতপ্রায়। দিনের আলো দেখা যাচ্ছে। মহাতরঙ্গ উঠেছে। কিছুতেই তার বেগ রোধ করতে পারবে না।…উৎসাহ বৎস, উৎসাহ প্রেম বৎস, প্রেম। বিশ্বাস, শ্রদ্ধা। আর ভয় কোরো না, সবচেয়ে গুরুতর পাপ-ভয়!
১০. কাজের সামান্য আরম্ভ দেখে ভয় পেয়ো না, কাজ সামান্য থেকেই বড় হয়। সাহস অবলম্বন করো। নেতা হতে যেয়ো না, সেবা করো। নেতৃত্বের এই পাশব প্রবৃত্তি জীবনসমুদ্রে অনেক বড় বড় জাহাজ ডুবিয়েছে। এ-বিষয়ে বিশেষ সতর্ক হও অর্থাৎ মৃত্যুকে পর্যন্ত তুচ্ছ করে নিঃস্বার্থ হও এবং কাজ করো।
পড়ুনঃ- স্বামী বিবেকানন্দ ও চাণক্যের বাণী
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ছবিঃ-
১. খুব খাটো। সম্পূর্ণ পবিত্র হও উৎসাহাগ্নি আপনিই জ্বলে উঠবে।
২. হে বীরহৃদয় যুবকগণ, তোমরা বিশ্বাস করো যে, তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। কুকুরের ‘ঘেউ ঘেউ’ ডাকে ভয় পেয়ো না-এমনকী আকাশ থেকে প্রবল বজ্রাঘাত হলেও ভয় পেয়ো না খাড়া হয়ে ওঠো, ওঠো, কাজ করো।
৩. যে যা বলে বলুক, আপনার গোঁয়ে চলে যাও-দুনিয়া তোমার পায়ের তলায় আসবে, ভাবনা নেই। বলে-একে বিশ্বাস করো, ওকে বিশ্বাস করো; বলি প্রথমে আপনাকে বিশ্বাস কর দিকি।
৪. …বল্, আমি সব করতে পারি। ‘নেই নেই বললে সাপের বিষ নেই হয়ে যায়। ‘
৫. মহা হুঙ্কারের সহিত কার্য আরম্ভ করে দাও। ভয় কী? কার সাধ্য বাধা দেয়?…ডর? কার ডর? কাদের ডর ?
৬. ত্যাগ, ত্যাগ এইটি খুব প্রচার করা চাই। ত্যাগী না হলে তেজ হবে না। কার্য আরম্ভ করে দাও।
৭. অন্যে যাই ভাবুক আর করুক, তুমি কখনও তোমার পবিত্রতা, নৈতিকতা আর ভগবৎপ্রেমের আদর্শকে নিচু কোরো না।… যে ভগবানকে ভালবাসে তার পক্ষে চালাকিতে ভীত হবার কিছু নেই। স্বর্গে ও মর্তে পবিত্রতাই সবচেয়ে মহৎ ও দিব্য শক্তি।
৮. যে-ধর্ম বা যে-ঈশ্বর বিধবার অশ্রুমোচন করতে পারে না অথবা অনাথ শিশুর মুখে একমুঠো খাবার দিতে পারে না, আমি সে-ধর্মে বা সে-ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। মতবাদ যত বড়ই হোক, যত সুবিন্যস্ত দার্শনিক তত্ত্বই তাতে থাকুক, যতক্ষণ তা মত বা বইয়েই আবদ্ধ ততক্ষণ তাকে আমি ‘ধর্ম’ নাম দিই না। চোখ আমাদের পিঠের দিকে নয়, সামনের দিকে-অতএব সামনে এগিয়ে যাও, আর যে-ধর্মকে তোমরা নিজের ধর্ম বলে গৌরব কর, তার উপদেশগুলো কাজে পরিণত করো।
৯. বৎস, কোনও ব্যক্তি কোনও জাতিই অপরকে ঘৃণা করে জীবিত থাকতে পারে না। যখনই ভারতবাসীরা ‘ম্লেচ্ছ’ শব্দ আবিষ্কার করল ও অন্য জাতির সাথে সবরকম সংস্রব ত্যাগ করল, তখনই ভারতের অদৃষ্টে ঘোর সর্বনাশের শুরু হল। তোমরা ভারতেতর দেশবাসীদের প্রতি উক্ত ভাব পোষণ সম্বন্ধে বিশেষ সতর্ক থেকো। বেদান্তের কথা ফস্ ফস্ মুখে আওড়ানো খুব ভাল বটে, কিন্তু তার একটি ক্ষুদ্র উপদেশও কাজে পরিণত করা কী কঠিন!
১০. যে সন্ন্যাসীর অন্তরে অপরের কল্যাণ-সাধন-স্পৃহা বর্তমান নাই, সে সন্ন্যাসীই নয়-সে তো পশু মাত্র !
১১. যারা লক্ষ লক্ষ দরিদ্র ও নিষ্পেষিত নরনারীর বুকের রক্ত দিয়ে আয়। করা টাকায় শিক্ষিত হয়ে এবং বিলাসিতায় আকণ্ঠ ডুবে থেকেও তাদের কথা একটিবার চিন্তা করবার অবসর পায় না-তাদের আমি ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলি।
১২. কোথায় ইতিহাসের কোন যুগে ধনী ও অভিজাত সম্প্রদায়, পুরোহিত ও ধর্মধ্বজিগণ দীনদুঃখীর জন্য চিন্তা করেছে? তাদের ক্ষমতার জীবনীশক্তি এদের নিষ্পেষণ হতেই উদ্ভূত !
১৩. এই নির্যাতিত ও অধঃপতিত লক্ষ লক্ষ নরনারীর উন্নতির কথা কে চিন্তা করে? কয়েক হাজার ডিগ্রিধারী ব্যক্তি দিয়ে একটি জাতি গঠিত হয় না, অথবা মুষ্টিমেয় কয়েকটি ধনীও একটি জাতি নয়। আমাদের সুযোগ-সুবিধা খুব বেশি নাই-এ-কথা অবশ্য সত্য, কিন্তু যেটুকু আছে, তা ত্রিশ কোটি নরনারীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পক্ষে এমনকী বিলাসিতার পক্ষেও যথেষ্ট।
১৪. প্রেম ও সহানুভূতিই একমাত্র পন্থা। ভালবাসাই একমাত্র উপাসনা।
১৫. আমার দৃঢ় ধারণা কোনও ব্যক্তি বা জাতি অন্য জাতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা রেখে বাঁচতে পারে না। আর যেখানেই শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা বা নীতিসম্বন্ধীয় ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এমন চেষ্টা করা হয়েছে, যেখানেই কোনও জাতি নিজেকে পৃথক রেখেছে, সেখানেই তার পক্ষে ফল অতিশয় শোচনীয় হয়েছে।
পড়ুনঃ- স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের সঙ্গে যুক্ত অসাধারণ সব গল্প
স্বামী বিবেকানন্দের উক্তিঃ-
১. আদান-প্রদানই প্রকৃতির নিয়ম; ভারতকে যদি আবার উঠতে হয় তবে তাকে নিজের ঐশ্বর্য-ভাণ্ডার খুলে দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং পরিবর্তে অপরে যা কিছু দেয়, তাই নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সম্প্রসারণই জীবন সঙ্কীর্ণতাই মৃত্যু; প্রেমই জীবন-দ্বেষই মৃত্যু।
২. যে অপরকে স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়, সে কি নিজে স্বাধীনতা পাবার যোগ্য? আসুন, আমরা বৃথা চিৎকারে শক্তিক্ষয় না করে ধীরভাবে মানবতার সাথে কাজে লেগে যাই। আর আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি যে, কেউ কিছু পাবার ঠিক ঠিক উপযুক্ত হলে জগতের কোনও শক্তিই তাকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। আমাদের জাতীয়-জীবন অতীতে মহৎ ছিল, তাতে সন্দেহ নাই, কিন্তু আমি অকপটভাবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের ভবিষ্যৎ আরও গৌরবান্বিত।
৩. পরোপকারই জীবন, পরহিতচেষ্টার অভাবই মৃত্যু। শতকরা নব্বই জন নরপশুই মৃত, প্রেত-তুল্য, কারণ হে যুবকবৃন্দ, যার হৃদয়ে প্রেম নাই, সে মৃত ছাড়া আর কী? হে যুবকবৃন্দ, দরিদ্র, অজ্ঞ ও নিপীড়িত জনগণের ব্যথা তোমরা প্রাণে প্রাণে অনুভব করো, সেই অনুভবের বেদনায় তোমাদের হৃদয় রুদ্ধ হোক, মাথা ঘুরতে থাকুক, তোমাদের পাগল হয়ে যাবার উপক্রম হোক।
৪. বৎস, ভয় পেয়ো না। উপরে তারকাখচিত অসীম আকাশের দিকে সভয়ে তাকিয়ে মনে কোরো না, ওটা তোমাকে পিষে ফেলবে। অপেক্ষা করো, দেখবে-অল্পক্ষণের মধ্যে দেখবে, সবই তোমার পদতলে। টাকায় কিছুই হয় না, নামেও হয় না, যশেও না, বিদ্যায়ও কিছু হয় না, ভালবাসায় সব হয়-চরিত্রই বাধাবিঘ্নের বজ্রদৃঢ় প্রাচীরের মধ্যে দিয়ে পথ করে নিতে পারে।
৫. অন্ন! অন্ন! যে ভগবান এখানে আমাকে অন্ন দিতে পারেন না, তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখবেন-এ আমি বিশ্বাস করি না। ভারতকে ওঠাতে হবে, গরিবদের খাওয়াতে হবে, শিক্ষার বিস্তার করতে হবে, আর পৌরোহিত্যের পাপ দূর করতে হবে। আরও খাদ্য, আরও সুযোগ প্রয়োজন।
৬. নিজের ভিতর উৎসাহাগ্নি প্রজ্বলিত করো, আর চারিদিকে বিস্তার করতে থাকো। উঠে পড়ে কাজে লাগো। নেতৃত্ব করার সময় সেবকভাবাপন্ন হও, নিঃস্বার্থপর হও; আর একজন গোপনে অপরের নিন্দা করছে, তা শুনো না। অনন্ত ধৈর্য ধরে থাকো, সিদ্ধি তোমার করতলে।
৭. হে বীরহৃদয় বালকগণ, কাজে এগিয়ে যাও। টাকা থাক বা না থাক, মানুষের সহায়তা পাও আর নাই পাও, তোমার তো প্রেম আছে? ভগবান তো তোমার সহায় আছেন? অগ্রসর হও, তোমার গতি কেউ রোধ করতে পারবে না।
৮. হঠাৎ কিছু করে ফেলা উচিত নয়। পবিত্রতা, সহিষ্ণুতা ও অধ্যবসায়- এই তিনটি, সর্বোপরি প্রেম সিদ্ধিলাভের জন্য একান্ত আবশ্যক। তোমার সামনে তো অনন্ত সময় পড়ে আছে, অতএব তাড়াতাড়ি হুড়োহুড়ির কোনও প্রয়োজন নেই। তুমি যদি পবিত্র ও অকপট হও, সবই ঠিক হয়ে যাবে। তোমার মতো শত শত যুবক চাই, যারা সমাজের উপর গিয়ে মহাবেগে পড়বে এবং যেখানে যাবে সেখানেই নবজীবন ও আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চার করবে।
৯. খবরের কাগজের আহাম্মকি বা কোনও প্রকার সমালোচনার দিকে মন দিও না। মন মুখ এক করে নিজের কর্তব্য করে যাও-সব ঠিক হয়ে যাবে। সত্যের জয় হবেই হবে !
১০. কায়মনোবাক্য ‘জগদ্ধিতায়’ দিতে হইবে। পড়েছ, ‘মাতৃদেবো ভব, পিতৃদেবো ভব’; আমি বলি, ‘দরিদ্রদেবো ভব, মূর্খদেবো ভব’। দরিদ্র, মুখ, অজ্ঞানী, কাতর ইহারাই তোমার দেবতা হউক, ইহাদের সেবাই পরমধর্ম জানিবে।
১১. কারও উপর হুকুম চালাবার চেষ্টা করো না-যে অপরের সেবা করতে পারে, সে-ই যথার্থ সর্দার হতে পারে। যতদিন না শরীর যাচ্ছে, অকপটভাবে কাজে লেগে থাকো। আমরা কাজ চাই নামযশ টাকাকড়ি কিছু চাই না।
১২. তোমরা যদি আমার সন্তান হও, তবে তোমরা কিছুই ভয় করবে না, কিছুতেই তোমাদের গতিরোধ করতে পারবে না। তোমরা সিংহতুলা হবে। ভারতকে সমগ্র জগৎকে জাগাতে হবে। এ না করলে চলবে না, কাপুরুষতা চলবে না—বুঝলে? মৃত্যু পর্যন্ত অবিচলিতভাবে লেগে পড়ে থেকে আমি যেমন দেখাচ্ছি, করে যেতে হবে-তবে তোমার সিদ্ধি নিশ্চিত।
১৩. যদি শাসন করতে চাও, সকলের গোলাম হয়ে যাও। এই হল আসল রহস্য।
১৪. …মনে রেখো-মেয়ে-মদ্দ দুই চাই, আত্মাতে মেয়ে-পুরুষের ভেব নেই।… হাজার হাজার পুরুষ চাই, স্ত্রী চাই যারা আগুনের মতো হিমাচল থেকে কন্যাকুমারী-উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়বে। ছেলেখেলার কাজ নেই ছেলেখেলার সময় নেই যারা ছেলেখেলা করতে চায়, তফাত হও এই বেলা; নইলে মহা আপদ তাদের অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।’ ভারতে একটা জিনিসের বড়ই অভাব-একতা বা সংহতিশক্তি, তা লাভ করবার প্রধান রহস্য হচ্ছে আজ্ঞানুবর্তিতা।
১৫. বীরের মতো এগিয়ে চলো। একদিনে বা একবছরে সফলতার আশা কোরো না। সবসময় শ্রেষ্ঠ আদর্শকে ধরে থাকো। দৃঢ় হও, ঈর্ষা ও স্বার্থপরতা বিসর্জন দাও। নেতার আদেশ মেনে চলো; আর সত্য, স্বদেশ ও সমগ্র মানবজাতির কাছে চিরবিশ্বস্ত হও; তা হলেই তুমি জগৎ কাঁপিয়ে তুলবে। মনে রাখবে-ব্যক্তিগত ‘চরিত্র’ এবং ‘জীবন’ই শক্তির উৎস, অন্য কিছু নয়।
১৬. চতুর্দিকে অন্ধকার যতই ঘনিয়ে আসে, উদ্দেশ্য ততই নিকটবর্তী হয়, ততই জীবনের প্রকৃত অর্থ-জীবন যে স্বপ্ন, তা পরিস্ফুট হয়ে ওঠে; কেন যে মানুষ এটা বুঝতে পারে না, তাও বোঝা যায়-তারা যে কেবলই চেষ্টা করে এসেছে যা অর্থহীন তার মধ্যে থেকে অর্থ খুঁজে নিতে। … ‘সবই ক্ষণিক, সবই পরিবর্তনশীল’-এইটুকু নিশ্চয়ই জেনে জ্ঞানী ব্যক্তি সুখ-দুঃখ ত্যাগ করে জগৎবৈচিত্রের সাক্ষিমাত্ররূপে অবস্থান করেন, কোনওকিছুতে আসক্ত হন না।
১৭. কেবল সংখ্যাধিক্য দিয়েই কোনও মহৎ কাজ সম্পন্ন হয় না; অর্থ, ক্ষমতা, পাণ্ডিত্য কিংবা বাক্চাতুরী-এদের কোনোটারই বিশেষ কোনও মূল্য নাই। পবিত্র, খাঁটি এবং প্রত্যক্ষানুভূতি-সম্পন্ন মহাপ্রাণ লোকেরাই জগতে সব কাজ করে থাকেন। যদি প্রত্যেক দেশে এমন দশ-বারোটা মাত্র সিংহবীর্যসম্পন্ন লোক জন্মগ্রহণ করেন, যাঁরা নিজেদের সমুদয় মায়াবন্ধন ছিন্ন করেছেন, যাঁরা অসীমের স্পর্শ লাভ করেছেন, যাঁদের চিত্ত ব্রহ্মানুধ্যানে নিমগ্ন, অর্থ যশ ও ক্ষমতার স্পৃহামাত্রহীন-তবে এই কয়েকজন লোকই সমগ্র জগৎ তোলপাড় করে দেবার পক্ষে যথেষ্ট।
১৮. আমরা যেন নাম, যশ ও প্রভুত্ব-স্পৃহা বিসর্জন দিয়ে কাজে ব্রতী হই। আমরা যেন কাম, ক্রোধ ও লোভের বন্ধন থেকে মুক্ত হই। তা হলেই আমরা সত্য বস্তু লাভ করব।
১৯. বড় বড় ব্যাপার কি কখনও সহজে নিষ্পন্ন হয়? সময়, ধৈর্য ও অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে কাজ হয়। আমি তোমাদের এমন অনেক কথা বলতে পারতাম, যাতে তোমাদের হৃদয় আনন্দে লাফিয়ে ওঠে, কিন্তু তা আমি বলব না। আমি লোহার মতো দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও হৃদয় চাই, যা কিছুতেই কাঁপে না। দৃঢ়ভাবে লেগে থাকো।
২০. আমি কাপুরুষতাকে ঘৃণা করি। আমি কাপুরুষদের সঙ্গে এবং রাজনৈতিক আহাম্মকির সঙ্গে কোনও সংস্রব রাখতে চাই না। আমি কোনওরকম রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। ঈশ্বর ও সত্যই জগতে একমাত্র রাজনীতি, আর সব বাজে।
২১. সকলে উঠিয়া-পড়িয়া না লাগিলে কি কাজ হয়? ‘উদ্যোগিনাং পুরুষসিংহমুপৈতি লক্ষ্মীঃ’ (উদ্যোগী পুরুষসিংহেরই লক্ষ্মী লাভ হয়) ইত্যাদি। পেছু দেখতে হবে না এগিয়ে চলো। অনন্ত বীর্ষ, অনন্ত উৎসাহ, অনন্ত সাহস ও অনন্ত ধৈর্য চাই, তবে মহাকার্য সাধন হবে। দুনিয়ায় আগুন লাগিয়ে দিতে হবে।
২২. পবিত্রতা, অধ্যবসায় এবং উদ্যম-এই তিনটে গুণ আমি একসঙ্গে চাই।
২৩. … পবিত্রতা, ধৈর্য ও অধ্যবসায় দ্বারা সব বিঘ্ন দূর হয়। সব বড় বড় ব্যাপার অবশ্য ধীরে ধীরে হয়ে থাকে।
২৪. সাহস অবলম্বন করো ও কাজ করে যাও। ধৈর্য ও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে যাও এই একমাত্র উপায়।
পড়ুনঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষামূলক বাণী
স্বামীজীর বাণীঃ-
১. যিনি হুকুম তামিল করতে জানেন, তিনিই হুকুম করতে জানেন। প্রথমে আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করো। … আমরা সকলেই হম্বড়া, তাতে কখনও কাজ হয় না। মহা উদ্যম, মহা সাহস, মহা বীর্য এবং সকলের আগে মহতী আজ্ঞাবহতা-এই সকল গুণ ব্যক্তিগত ও জাতিগত উন্নতির একমাত্র উপায়।
২. দেশে কি মানুষ আছে? ও শ্মশানপুরী। যদি নিম্নশ্রেণিদের শিক্ষা দিতে পার, তা হলে উপায় হতে পারে। জ্ঞানবলের চেয়ে বল আর কী আছে-বিদ্যা শেখাতে পার? বড়মানুষেরা কোন কালে কোন দেশে কার কী উপকার করেছে? সকল দেশেই বড় বড় কাজ গরিবেরা করে। টাকা আসতে কতক্ষণ? মানুষ কই? দেশে কি মানুষ আছে ?
৩. কারুর উৎসাহ ভঙ্গ করতে নাই। বিরুদ্ধ সমালোচনা একেবারে ত্যাগ করবে। যতদূর ভাল বোধ হয়, সকলকে সাহায্য করবে; যেখানটা ভাল না বোধ হয় ধীরে বুঝিয়ে দিবে। পরস্পরকে সমালোচনা করাই সকল সর্বনাশের মূল! দল ভাঙবার ঐটি মূলমন্ত্র। ‘ও কী জানে?’ ‘সে কী জানে?’ ‘তুই আবার কী করবি?’- আর তার সঙ্গে ঐ একটু মুচকে হাসি, ঐগুলো হচ্ছে ঝগড়া-বিবাদের মূলসূত্র।
৪. চালাকি দ্বারা কোনও মহৎ কার্য হয় না। প্রেম, সত্যানুরাগ ও মহাবীর্যের সহায়তায় সকল কার্য সম্পন্ন হয়। সুতরাং পৌরুষ প্রকাশ করো।
৫. নিজেরা কিছু করে না এবং অপরে কিছু কিছু করতে গেলে ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেয়-এই দোষেই আমাদের জাতের সর্বনাশ হয়েছে। হৃদয়হীনতা, উদ্যমহীনতা সকল দুঃখের কারণ। অতএব ঐ দুইটি পরিত্যাগ করবে।
৬. পেছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নাই। আগে চলো! আমাদের চাই অনন্ত শক্তি, অফুরন্ত উৎসাহ, সীমাহীন সাহস, অসীম ধৈর্য, তবেই আমরা বড় বড় কাজ করতে পারব।
৭. যে সকলের দাস, সেই সকলের প্রভু। যার ভালবাসায় ছোট বড় আছে, সে কখনও অগ্রণী হয় না। যার প্রেমের বিরাম নাই, উচ্চ নীচ নাই, তার প্রেম জগৎ জয় করে।
৮. জগতের ধর্মগুলো এখন প্রাণহীন মিথ্যা অভিনয়ে পর্যবসিত। জগতের এখন একান্ত প্রয়োজন হল চরিত্র। জগৎ এখন তাঁদের চায়, যাঁদের জীবন প্রেমদীপ্ত এবং স্বার্থশূন্য। সেই প্রেম প্রতিটি কথাকে বজ্রের মতো শক্তিশালী করে তুলবে।
৯. পবিত্র হও ও সর্বোপরি অকপট হও; মুহূর্তের জন্যও ভগবানে বিশ্বাস হারিও না-তা হলেই আলো দেখতে পাবে। যা-কিছু সত্য, তাই চিরস্থায়ী; কিন্তু যা সত্য নয়, তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
১০. ….আমি চাই এমন লোক যাদের পেশী লোহার মতো দৃঢ় ও স্নায়ু ইস্পাত দিয়ে তৈরি, আর তার মধ্যে থাকবে এমন একটা মন, যা বজ্রের উপাদানে গঠিত। বীর্য, মনুষ্যত্ব ক্ষাত্রবীর্য, ব্রহ্মতেজ !”
১১. সকলে নিজেদের আদর্শ ধরে থাকো, আর অন্য কিছুর প্রতি খেয়াল কোরো না সত্যের জয় হবেই হবে। সর্বোপরি, তুমি যেন অপরকে চালাতে বা তাদের শাসন করতে, অথবা ইয়াঙ্কিরা যেমন বলে অপরের উপর ‘boss’ (মাতব্বরি) করতে যেও না, সকলের দাস হও।
১২. ঐ যে কানে কানে গুজোগুজি করা-তা মহাপাপ বলে জানবে; ঐটা ভায়া, একেবারে ত্যাগ দিও। মনে অনেক জিনিস আসে, তা ফুটে বলতে গেলেই ক্রমে তিল থেকে তাল হয়ে দাঁড়ায়। গিলে ফেললেই ফুরিয়ে যায়।”
১৩. …পরোপকারই ধর্ম, বাকি যাগযজ্ঞ সব পাগলামো নিজের মুক্তি- ইচ্ছাও অন্যায়। যে পরের জন্য সব দিয়েছে, সেই মুক্ত হয়, আর যারা ‘আমার মুক্তি, আমার মুক্তি’ করে দিনরাত মাথা ভাবায় তাহারা ‘ইতো নষ্টস্ততো ভ্রষ্টঃ’ হয়ে বেড়ায়।”
১৪. পরোপকারই ধর্ম, পরপীড়নই পাপ। শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম, দূর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ। স্বাধীনতাই ধর্ম, পরাধীনতাই পাপ। অপরকে ভালবাসাই ধর্ম, অপরকে ঘৃণা করাই পাপ। ঈশ্বরে ও নিজ আত্মাতে বিশ্বাসই ধর্ম, সন্দেহই পাপ। অভেদ-দর্শনই ধর্ম, ভেদ-দর্শনই পাপ।
১৫. হে বীরহৃদয় বালকেরা, অধ্যবসায় করো। আমাদের কাজ সবেমাত্র। আরম্ভ হয়েছে। কখনও নিরাশ হয়ো না, কখনও বোলো না, ‘আর না, যথেষ্ট হয়েছে।’
১৬. আমি চাই, আমার সব ছেলেরা, আমি যত বড় হতে পারতাম, তার চেয়ে শতগুণ বড় হোক। তোমাদের প্রত্যেককেই এক একটা ‘দানা’ হতেই হবে-আমি বলছি,-অবশ্যই হতে হবে। আজ্ঞাবহতা, উদ্দেশ্যের উপর অনুরাগ ও সবসময় তৈরি হয়ে থাকা এই তিনটে যদি থাকে, কিছুতেই তোমাদের হটাতে পারবে না।
১৭. টাকা-ফাকা সব আপনা-আপনি আসবে। মানুষ চাই, টাকা চাই না। মানুষ সব করে, টাকায় কী করতে পারে? মানুষ চাই-যত পাবে ততই জগতের সমস্ত ধনসম্পদের চেয়ে ‘মানুষ’ হচ্ছে বেশি মূল্যবান।”” হে বৎস, যথার্থ ভালবাসা কখনও বিফল হয় না। আজই হোক, কালই হোক, শত শত যুগ পরেই হোক, সত্যের জয় হবেই, প্রেমের জয় হবেই।”
।। জয় স্বামীজি ।।
গল্প পাঠাতে পারেন- charpatrablog@gmail.com -এ অথবা সরাসরি WhatsApp -এর মাধ্যমে এখানে ক্লিক করে।
সমস্ত কপিরাইট ছাড়পত্র দ্বারা সংরক্ষিত। গল্পটির ভিডিও বা অডিও বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যত্র প্রকাশ আইন বিরুদ্ধ। ছাড়পত্র এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে।
নিচে দেওয়া wp গ্রুপ টি শুধু মাত্র অ্যাক্টিভ মেম্বারদের জন্য। যাদের মনে হবে ব্যস্ত জীবনের অল্প সময় ও এখানে ব্যয় করতে পারবেন আড্ডা আলোচনার মধ্যে তাদের জন্য।
বি.দ্র. - ইউটিউবার দাদা দিদিরা যারা কনটেন্ট খুঁজতে গ্রুপ এ আসেন তারা এখানে ভিড় জমাবেন না অহেতুক নিজেদের ক্ষতিসাধনে।
WHATSAPP GROUP LINK- ছাড়পত্রিয়ানস (CHARPATRIANS) 👈🏻 ক্লিক করুন
পড়ুনঃ- জীবনমুখী শিক্ষণীয় গল্প মা কে নিয়ে লেখা একটি গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক Group - গল্প Junction
ফেসবুক- ছাড়পত্র
টেলিগ্রাম- charpatraOfficial
স্বামী বিবেকানন্দের যে বাণী গুলি জীবন বদলাবে। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী। স্বামীজীর বাণী ছবি সহ। best inspirational swami vivekananda quotes in bengali
কি কেন কীভাবের উপর গড়ে ওঠা মানুষের জিজ্ঞাসু মন সর্বদাই নতুন দিগন্তের সন্ধানে পা বাড়ায় ৷ প্রতিটি পদক্ষেপেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের ঝুলিতে জমা হয় ৷ সেই অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে এক অফুরন্ত আনন্দ লুকিয়ে থাকে ৷ আর সেই কাজেই হাত বাড়িয়েছে ছাড়পত্রের টিম।
ধন্যবাদ।।