কম্পাস যেমন আমাদের দিক নির্ণয়ে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই একজন প্রকৃত বন্ধু আপনাকে শুভ দিকেই চালিত করতে চাইবে। আজ রইল এরকমই একটি সেরা বন্ধুত্বের গল্প। কিছু কিছু বন্ধুত্ব আছে, যেগুলির মুল্যায়ন করা যায় না, বন্ধুত্ব এমন একটি বিষয় যেটি তথাকথিত Relationship এরও অনেক অনেক উপরে।

সেরা বন্ধুত্বের গল্প। বন্ধুত্বের কষ্টের গল্পঃ- রুনিমা-

কথায় আছে জীবনের চলার পথে প্রতিটা মুহূর্তে যে মানুষটাকে সবসময় পাশে পাওয়া যায় সেই নাকি শ্রেষ্ঠ জীবন সঙ্গী হওয়ার যোগ্যতা রাখে। তাই যদি হয়, তাহলে প্রেমের সম্পর্কটা সবার কাছে মানান সই হয়ে উঠতে পারে না কেন? কেন সমাজ আজও সম্পর্কটাকে অত্যন্ত নীচ চোখে দেখে! কিছু দিন আগে অব্দিও জানতাম, ভালোবাসাটা সবার ব্যক্তিগত অধিকার। কিন্তু বাস্তবে আসলে পরিবারের ইচ্ছেকেই নিজের ইচ্ছে হিসেবে মেনে নিতে হয়, মেনে নিতে হয় সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে নিজের বলে!

তবে রুহি আর তনিমা হয়ত অত গভীর ভাবে বিষয়টা ভাবেনি। প্রকৃত ভালোবাসার মানেটা ওরা স্বচ্ছ করে দিয়েছে। কিভাবে! এটি জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে।

রুহি আর তনিমার চৌম্বকের মত বন্ধুত্ব তাদের নাম দুটিকেও একসঙ্গে টেনে নিয়েছে। সবার কাছে তারা রুনিমা (রুহি+তনিমা= রুনিমা) নামেই পরিচিত।

সেরা বন্ধুত্বের গল্প
সেরা বন্ধুত্বের গল্প

ভদ্র শান্ত স্বভাবের মেয়ে তনিমা, ক্লাস ১১ এ এসে ভর্তি হয় MNS girl’s High school এ। তার ছোট বেলার সঙ্গী অর্থাৎ ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হলো সাইনি, তার ভরসাতেই তনিমার মা তনিমাকে এতদুরের স্কুলে ভর্তি করেছে । সেই স্কুলেরই পুরোনো, আর ম্যাম দের প্রিয় ছাত্রী রুহি, সে খুব মিশুকে। তার কাছে হাসি জীবন হাসিই মরণ। তনিমার সাথে রুহি আগের থেকে কথা বলতে শুরু করে। সবসময় তার সাথেই থাকার বাহানা খোঁজে আর নির্দ্বিধায় তাকে তার জীবনের সব সিক্রেট গুলো শেয়ার করে। কিছুদিনের চেনা একটা মানুষ কে, কিভাবে যে এতটা বিশ্বাস করা যায় তার উত্তর রুহির নিজের কাছেও ছিল না। এভাবেই ওদের সম্পর্কটা দিন দিন খুব গভীর হয়।

অপরদিকে রুহি আর তনিমার বন্ধুত্ব মোটেও মেনে নিতে পারেনি সাইনি। সে সবসময় তাদের মধ্যে বিবাদ বাধানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকত। কিন্তু তার সেই চেষ্টা সিন্ধুতে বিন্ধুর মতনই! মাঝখানে তনিমা আর রুহির মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে কিছুটা বিবাদ থাকলেও, তাদের বন্ধুত্বের কাছে সেই বিবাদ হার মানে। বেশ ভালই চলছিল সবকিছু। এরই মাঝে তনিমার জীবনে, ঋষি নামে এক ছেলের আবির্ভাব হয়।  

পড়ুনঃ- জীবনের চরম বাস্তবতার গল্প 

বান্ধবীর এই ভাবে সম্পর্কে জড়ানো মোটেও পছন্দ হয়নি রুহির। সে তনিমাকে এই সব বিষয়ে সচেতন করে। অবশেষে সে সফলও হয়, তনিমা আর রুহি আবার আগের মত বন্ধুত্বের সাগরে ডুবে যায়।

দুই বান্ধবীর মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়, স্কুল শেষে গ্রাজুয়েশন আর গ্রাজুয়েশন শেষে তারা সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি করবে। কিন্তু এরই মাঝে তনিমার জীবনে নেমে আসে যবনিকা! তনিমার এক্স বয়ফ্রেন্ড ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে তাকে ম্যাসেজ করতে থাকে। সে হুমকি দিতে থাকে- ‘তনিমা তার জীবনে না ফিরলে সে তাদের সব ফটো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করবে।”

ম্যাসেজ পাওয়ার পর পরিবর্তন হয়ে যায় তনিমার জীবন ধারা। সে আর আগের মত হাসিখুশি থাকে না। প্রিয় বান্ধবীর সাথেও ঠিক মত কথা বলে না। ধীরে ধীরে সেই চুপচাপ থাকা অবস্থাটা ডিপ্রেশনের রূপ গ্রহণ করল। আর শেষে ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যা!

friendship story in bengali
friendship story in bengali

জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে প্রিয় বান্ধবীর উদ্দেশ্যে একটি বার্তা পাঠিয়ে দেয় সে। তাতে লেখা ছিল- “ক্ষমা করিস রে, আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছি না। আমাদের সিভিল সার্ভেন্ট হয়ে উঠার যে স্বপ্ন, একসাথে  পথ চলার যে কথা আমি তোকে দিয়েছিলাম সেটা আমি আর রাখতে পারছি না! তোর মত বান্ধবীর কথা না শুনে, যেদিন অন্য জনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম, যেদিন তোর মত সহায় হাত ছেড়ে নির্জীবের মত একটি নির্মম হাঁতে হাত রেখেছিলাম, সেই দিনই আমার বুঝে যাওয়া উচিত ছিল যে আমি ভুল হাঁতে হাত রাখছি! আর সেই দিনই হয়ত আমার মৃত্যু ঘটে গিয়েছিল। তোর মত বান্ধবীকে পাশে পেয়ে আমার জীবন সত্যি ধন্য।

কিন্তু, আমার জন্য আমার পরিবারের মুখে কালি পরুক, কেউ আমার পরিবারকে নিয়ে খোঁটা মারুক সেটা আমার সহ্য হবে না রে! স্কুলে তোর সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার মনে পরে যাচ্ছে। তোর মত বান্ধবীকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে সেই ছেলেটির ব্ল্যাকমেল! তোকে আগে জানালে তুই অবশ্যই কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতি। কিন্তু আমার জন্য তোর কোনো ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না রে! ভালো থাকিস।“ এখানেই ম্যাসেজটা শেষ হয়।

ম্যাসেজ পাওয়ার পর আর এক মুহূর্তও দেড়ি করেনি রুহি। দাদার স্কুটি টা নিয়ে বেরিয়ে পরে। যাওয়ার আগে রান্না ঘড় থেকে কিছু একটা যেন স্কুটির বক্স এ নিয়ে নেয়। সে স্কুটি ভালো করে চালাতেও শেখেনি! তবুও কোনরকমে তনিমার বাড়ি যখন সে পৌঁছে, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। তনিমার বাড়িতে তখন শুধু কান্নার আওয়াজ। কোনরকমে নিজেকে সামলে, স্কুটি টা নিয়ে ঋষির বাড়ির দিকে রওনা দেয় সে। তখনও ঋষি তনিমার মৃত্যুর খবর পায়নি।

বারবার কলিং বেলের আওয়াজে ঋষি বাইরে বেরোতেই একটা ছুরি তার পেট ভেদ করে পিঠের দিকে বেরিয়ে আসে , রক্ত মাখা শরীরে রুহি স্কুটিটা নিয়ে স্পীড এ শ্মশানের দিকে রওনা দিল। কিন্তু ভাগ্যের ঘূর্ণাবর্তে ডাম্পারের সাথে তার ধাক্কা লেগে যায়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে সোজা হসপিটালে।

অপারেশেন থিয়েটারে ডাক্তারকে দেখে সে বলে – “স্যার আমার শেষ ইচ্ছে ছিল তনিমাকে শেষ বারের মত দেখবো , তবে ভগবানের ইচ্ছে দেখুন শেষ বারের মত নয় আজন্ম কালের মত ওর সাথেই আমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আমার সব স্বপ্ন , ইচ্ছে , চাওয়া – পাওয়া আজ পূরণ হয়েছে । আজ আমি খুব সুখী খু উ ব ব ব। এই বলে সে অপারেশেনের আগেই মারা যায়। পুলিশ যথারীতি সব তদন্ত করে। দোষী ঋষিকে শাস্তি দেওয়ার আগেই , রুহির হাতে  সে শাস্তি পেয়ে গেছে তাই পুলিশ তার লাশটাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এভাবেই রুহির আর তনিমার বন্ধুত্বের শোচনীয় সমাপ্তি ঘটে । বেঁচে থাকলে হয়তো সমাজের জন্য কিছু করতো তারা! কিন্তু মৃত্যু ,তাদের বন্ধুত্বকে সমাজের কাছে চিরস্মরণীয় করে দিয়ে গেলো ।

বন্ধুত্বের কষ্টের গল্প
বন্ধুত্বের কষ্টের গল্প friendship story in bengali
<

এভাবেই অনেক জীবন শেষ হয়ে যায়  রক্ষনশীল সমাজের মানুষের ভয়ে। দুদিনের সোশ্যাল মিডিয়ার , so called (বাবু – সোনার) সম্পর্কের পরিণতি হয় মৃত্যু নয়তো সমাজচ্যুতি। অল্পতেই অচেনা অজানা কাউকে বিশ্বাস আর ভরসা করার ফলাফল স্বরূপ , তনিমার মতো অনেক মেয়েই নিজেদের জীবন শেষ করতে বাধ্য হয়। প্রেম বা ভালোবাসা শুধু মাত্র বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে নয় সম লিঙ্গের বন্ধুর মধ্যেও সম্ভব।

প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে ব্রেক-আপ হলেও বন্ধুত্বের কোনোদিনও ব্রেক-আপ হয়না। সামান্য মান অভিমান, খুনসুঁটি আর ঝগড়া এই নিয়েই তো বন্ধুত্ব। প্রিয় বন্ধুর জন্য বাজি রাখা যায় নিজের জীবনও। তাই সময়টা প্রেম ভালোবাসাতে নয় বরঞ্চ বন্ধুকে দেওয়া উচিত। হাজারটা নয় একটাই বন্ধু হোক, যে একাই হবে হাজারের সমান। রুহির মতো একটা বন্ধু জীবনে এলে সত্যি জীবন স্বার্থক। রুহি তনিমার বন্ধুত্বকে বলা যায় প্রকৃত বন্ধুত্ব ও প্রকৃত ভালোবাসা।

প্রেরক- আলোরানি মিশ্র

এই সেরা বন্ধুত্বের গল্প টি পরিপূর্ণতা পেয়েছে যায় কলমে-
More stories from Alorani Mishra- পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক গ্রুপ- গল্প Junction

ফেসবুক- ছাড়পত্র

WhatsApp- ছাড়পত্র ( ২)

টেলিগ্রাম - charpatraOfficial
পড়ুনঃ- সুন্দর শিক্ষণীয় গল্প

বাবাকে নিয়ে একটি শিক্ষামূলক গল্প

“সেরা বন্ধুত্বের গল্প।বন্ধুত্বের কষ্টের গল্প। friendship story in bengali”

Spread the love

Leave a Reply